বুড়ীর বাড়ী
গালভরা হাসিমুখে চালভাজা মুড়ি,
ঝুরঝুরে পড়ো ঘরে থুর থুরে বুড়ী।
কাঁথাভরা ঝুলকালি, মাথাভরা ধলো,
মিট্মিটে ঘোলা চোখ, পিঠখানা কুলো।
কাঁটা দিয়ে আঁটা ঘর- আঠা দিয়ে সেঁটে,
সুতো দিয়ে বেঁধে রাখে থুতু দিয়ে চেটে।
ভর দিতে ভয় হয় ঘর বুঝি পড়ে,
খ্কখক্ কাশি দিলে ঠ্কঠক্ নড়ে।
ডাকে যদি ফিরিওলা হাঁকে যদি গাড়ি,
খসে পড়ে কড়িকাঠ ধসে পড়ে বাড়ী।
বাঁকাচোরা ঘরদোর ফাঁকা ফাঁকা কত,
ঝাঁট দিলে ঝ’রে পড়ে কাঠকুটো যত।
ছাদ গুলো ঝুলে পড়ে বাদ্লায় ভিজে,
একা বুড়ি কাঠী গুজে ঠেকা দেয় নিজে।
মেরামত দিন রাত কেরামত ভারি,
থুরথুরে বুড়ী তার ঝুরঝুরে বাড়ী।
বোম্বাগড়ের রাজা
কেউ কি জান সদাই কেন বোম্বাগড়ের রাজা-
ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখে আমসত্ত্ব ভাজা?
রানীর মাথায় অষ্টপ্রহর কেন বালিশ বাঁধা?
পাঁউরুটিতে পেরেক ঠোকে কেন রানীর দাদা?
কেন সেথায় সর্দি হলে ডিগবাজি খায় লোকে?
জোছ্না রাতে সবাই কেন আলতা মাথায় চোখে?
ওস্তাদেরা লেপ মুড়ি দেয় কেন মাথায় ঘাড়ে?
টাকের পরে পন্ডিতেরা ডাকের টিকিট মারে।
রাত্রে কেন ট্যাঁক্ঘড়িটা ডুবিয়ে রাখে ঘিয়ে।
কেন রাজার বিছ্না পাতে শিরীষ কাগজ দিয়ে?
সভায় কেন চেঁচায় রাজা “হুক্কা হুয়া” বলে?
মন্ত্রী কেন কলসী বাজায় বসে রাজার কোলে?
সিংহাসনে ঝোলায় কেন ভাঙা বোতল শিশি?
কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেট খেলে কেন রাজার পিসী?
রাজার খুড়ো নাচেন কেন হুঁকোর মালা পরে?
এমন কেন ঘটছে তা কেউ বলতে পার মোরে?
ভালরে ভাল
দাদা গো! দেখ্ছি ভেবে অনেক দূর
এই দুনিয়ার সকল ভাল,
আসল ভাল নকল ভাল,
সস্তা ভাল দামীও ভাল,
তুমিও ভাল আমিও ভাল,
হেথায় গানের ছন্দ ভাল,
হেথায় ফুলের গন্ধ ভাল,
মেঘ-মাখানো আকাশ ভাল,
ঢেউ- জাগানো বাতাস ভাল,
গ্রীষ্ম ভাল বর্ষা ভাল,
ময়লা ভাল ফরসা ভাল,
পোলাও ভাল কোর্মা ভাল,
মাছপটোলের দোলমা ভাল,
কাঁচাও ভাল পাকাও ভাল,
সোজাও ভাল বাঁকাও ভাল,
কাঁসিও ভাল ঢাকও ভাল,
টিকিও ভাল টাক্ও ভাল,
ঠেলার গাড়ী ঠেলতে ভাল,
খাস্তা লুচি বেলতে ভাল,
গিট্কিরি গান শুনতে ভাল,
শিমুল তুলো ধুনতে ভাল,
ঠান্ডা জলে নাইতে ভাল।
কিন্তু সবার চাইতে ভাল-
পাঁউরুটি আর ঝোলা গুড়।
ভুতুড়ে খেলা
পরশু রাতে পষ্ট চোখে দেখনু বিনা চশমাতে,
পান্তভুতের জ্যান্ত ছানা করছে খেলা জোছ্নাতে।
কচ্ছে খেলা মায়ের কোলে হাত পা নেড়ে উল্লাসে,
আহাদেতে ধুপ্ধুপিয়ে কচ্ছে কেমন হল্লা সে।
শুন্তে পেলাম ভুতের মায়ের মুচ্কি হাসি কট্কটে-
দেখছে নেড়ে ঝুণ্টি ধ’রে বাচ্চা কেমন চট্পটে।
উঠছে তাদের হাসির হানা কাষ্ঠ সুরে ডাক্ ছেড়ে,
খ্যাঁশ খ্যাঁশানি শব্দে যেমন করাৎ দিয়ে কাঠ চেরে!
যেমন খুশি মার্ছে ঘুঁষি দিচ্ছে কষে কানমলা,
আদর ক’রে আছাড় মেরে শুন্যে ঝোলে চ্যাং দোলা।
বল্ছে আবার, “আয়রে আমার নোংরামুখো সুঁট্কো রে,
দেখ্ না ফিরে প্যাখ্না ধরে হুতোম-হাসি মুখ ক’রে !
ওরে আমার বাঁদর নাচন আদর গেলা কোঁৎকা রে!
অন্ধবনের গন্ধ-গোকুল, ওরে আমার হোঁৎকা রে!
ওরে আমার বাদলা রোদে জষ্ঠি মাসের বিষ্টিরে।
ওরে আমার হামান ছেচা যষ্টিমধুর মিষ্টিরে।
ওরে আমার রান্না হাঁড়ির কান্না হাসির ফোড়নদার,
ওরে আমার জোছনা হাওয়ার স্বপ্নঘোড়ার চড়নদার।
ওরে আমার গোব্রাগণেশ ময়দাঠাসা নাদুসরে,
ছিঁচকাঁদুনে ফোক্লা মানিক ফের যদি তুই কাঁদিস্রে-”
এই না ব’লে যেই মেরেছে কাদার চাপ্টি ফট্ করে,
কোথায় বা কি ভূতের ফাঁকি – মিলিয়ে গেল চট্ ক’রে!
ভয় পেয়ো না
ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না-
সত্যি বলছি কুস্তি ক’রে তোমার সঙ্গে পারব না।
মন্টা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগ্টি নেই,
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই!
মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না-
জানো না মোর মাথার ব্যারাম, কাউকে আমি গুঁতোই না?
এস এস গর্তে এস, বাস করে যাও চারটি দিন,
আদর ক’রে শিকেয় তুলে রাখব তোমায় রাত্রি দিন।
হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাক্বে না?
মুগুর আমার হাল্কা এমন মারলে তোমায় লাগবে না।
অভয় দিচ্ছি শুন্ছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?
বসলে তোমার মুন্ডু চেপে বুঝবে তখন কান্ডটা!
আমি আছি গিন্নি আছেন, আছে আমার নয় ছেলে-
সবাই মিলে কাম্ড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয় পেলে।
রামগরুড়ের ছানা
রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে,
“হাসব্ না-না, না-না”।
সদাই মরে ত্রাসে- ঐ বুঝি কেউ হাসে!
এক চোখে তাই মিট্মিটিয়ে
তাকায় আশে পাশে।
ঘুম নাহি তার চোখে আপনি বকে বকে
আপনারে কয়, “হাসিস্ যদি
মারব কিন্তু তোকে!”
যায় না বনের কাছে, কিম্বা গাছে গাছে,
দখিন হাওয়ার সুড়সুড়িতে
হাসিয়ে ফেলে পাছে!
সোয়াস্তি নেই মনে- মেঘের কোণে কোণে
হাসির বাস্প উঠ্ছে ফেঁপে
কান পেতে তাই শোনে।
ঝোপের ধারে ধারে রাতের অন্ধকারে
জোনাক্ জ্বলে আলোর তালে
হাসির ঠারে ঠারে ।
হাসতে হাসতে যারা হচ্ছে কেবল সারা
রামগরুড়ের লাগছে ব্যথা
বুঝছে না কি তারা?
রামগরুড়ের বাসা ধমক দিয়ে ঠাসা,
হাসির হাওয়া বন্ধ সেথায়
নিষেধ সেথায় হাসা।
লড়াই ক্ষ্যাপা
ওই আমাদের পাগলা জগাই, নিত্যি হেথায় আসে;
আপন মনে গুন্ গুনিয়ে মুচ্কি হাসি হাসে ।
চলতে গিয়ে হঠাৎ যেন ধমক লেগে থামে;
তড়াক্ করে লাফ দিয়ে যায় ডাইনে থেকে বামে।
ভীষন রোখে হাত গুটিয়ে সামলে নিয়ে কোচাঁ ;
“এইয়ো” বলে ক্ষ্যাপার মতো শুন্যে মারে খোচাঁ ।
চেঁচিয়ে বলে ,”ফাদঁ পেতেছ ? জগাই কি তায় পড়ে?
সাত জার্মান, জগাই একা, তবুও জগাই লড়ে।”
উৎসাহেতে গরম হয়ে তিড়িং বিড়িং নাচে,
কখনও যায় সামনে তেড়ে, কখনও যায় পাছে।
এলোপাতাড়ি ছাতার বাড়ি ধুপুস ধাপুস্ কত!
চক্ষু বুজে কায়দা খেলায় চর্কিবাজির মত।
লাফের চোটে হাঁপিয়ে ওঠে গায়েতে ঘাম ঝরে,
দুড়ুম ক’রে মাটির পরে লম্বা হয়ে পড়ে।
হাত পা ছুঁড়ে চেঁচায় খালি চোখ্টি ক’রে ঘোলা,
“জগাই মেলো হঠাৎ খেয়ে কামানের এক গোলা”!
এই না বলে মিনিট খানেক ছট্ফটিয়ে খুব,
মড়ার মত শক্ত হ’য়ে এক্কেবারে চুপ !
তার পরেতে সটান্ বসে চুলকে খানিক মাথা,
পকেট থেকে বার করে তার হিসেব লেখার খাতা।
লিখলে তাতে- “শোনরে জগাই, ভীষন লড়াই হলো
পাচ ব্যাটাকে খতম করে জগাই দাদা মোলো।”