পালোয়ান
খেলার ছলে ষষ্ঠি চরন হাতী লোফেন যখন তখন,
দেহের ওজন উনিশটি মন, শক্ত যেন লোহার গঠন।
একদিন এক গুন্ডা তাকে বাশ বাগিয়ে মারল বেগে-
ভাঙল সে বাশ শোলার মত মট্ ক’রে তার কনুই লেগে।
এইত সে দিন রাস্তা দিয়ে চল্তে গিয়ে দৈব বশে,
উপর থেকে প্রকান্ড ইট পড়্ল তাহার মাথায় খ’সে।
মুন্ডুতে তার যেম্নি ঠেকা অম্নি সে ইট্ এক নিমিষে
গুঁড়িয়ে হ’ল ধুলোর মত, ষষ্ঠি চলেন মুচকি হেসে।
ষষ্ঠি যখন ধমক হাঁকে কাঁপ্তে থাকে দালান বাড়ী,
ফুঁয়ের জোরে পথের মোড়ে উল্টে পড়ে গরুর গাড়ী।
ধুম্সো কাঠের তক্তা ছেঁড়ে মোচড় মেরে মুহুর্তেকে,
একশো জালা জল ঢালে রোজ স্নানের সময় পুকুর থেকে।
সকাল বেলার জল পানি তার তিনটি ধামা পেস্তা মেওয়া,
সঙ্গেতে তার চৌদ্দ হাঁড়ি দৈ কি মালাই মুড়কি দেওয়া ।
দুপুর হ’লে খাবার আসে কাতার দিয়ে ডেক্চি ভ’রে,
বরফ দেওয়া উনিশ কুঁজো সরবতে তার তৃষ্ণা হরে।
বিকাল বেলা খায়না কিছু গন্ডা দশেক মন্ডা ছাড়া,
সন্ধ্যা হলে লাগায় তেড়ে দিস্তা দিস্তা লুচির তাড়া ।
রাত্রে সে তার হাত পা টেপায় দশটি চেলা মজুত থাকে,
দুম্দুমাদুম্ সবাই মিলে মুগুর দিয়ে পেটায় তাকে।
বললে বেশি ভাব্বে শেষে এসব কথা ফেনিয়ে বলা-
দেখবে যদি আপন চোখে যাওনা কেন বেনিয়াটোলা।
প্যাঁচা আর প্যাঁচানি
প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি,
খাসা তোর চ্যাঁচানি!
শুনে শুনে আনমন
নাচে মোর প্রাণমন!
মাজা-গলা চাঁচা সুর
আহাদে ভরপুর!
গলা-চেরা গমকে
গাছ পালা চমকে,
সুরে সুরে কত প্যাঁচ
গিট্কিরি ক্যাঁচ্ ক্যাঁচ্!
যত ভয় যত দুখ
দুরু দুরু ধুক্ ধুক্,
তোর গানে পেঁচি রে
সব ভূলে গেছি রে-
চাঁদ মুখে মিঠে গান
শুনে ঝরে দু’নয়ান।
ফসকে গেল
দেখ বাবাজি দেখবি নাকি দেখ্রে খেলা দেখ্ চালাকি,
ভোজের বাজি ভেল্কি ফাঁকি পড়্ পড়্ পড়্ পড়বি পাখি – ধপ!
লাফ দিয়ে তাই তালটি ঠুকে তাক করে যাই তীর ধনুকে,
ছাড়ব সটান উর্ধ্বমুখে হুশ করে তোর লাগবে বুকে – খপ!
গুড় গুড় গুড় গুড়িয়ে হামা খাপ্ পেতেছেন গোষ্ঠ মামা
এগিয়ে আছেন বাগিয়ে ধামা এইবার বাণ চিড়িয়া নামা – চট্!
ঐ যা! গেল ফস্কে ফেঁসে – হেই মামা তুই ক্ষেপলি শেষে?
ঘ্যাচঁ করে তোর পাঁজর ঘেঁষে লাগ্ল কি বাণ ছটকে এসে- ফট্?
বাবুরাম সাপুড়ে
বাবুরাম সাপুড়ে,
কোথা যাস্ বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা!
যে সাপের চোখ্ নেই,
শিং নেই নোখ্ নেই,
ছোটে না কি হাঁটে না,
কাউকে যে কাটে না,
করে নাকো ফোঁস্ ফোঁস্,
মারে নাকো ঢুঁশ ঢাঁশ,
নেই কোন উৎপাত,
খায় শুধু দুধ ভাত-
সেই সাপ জ্যান্ত
গোটা দুই আনত?
তেড়ে মেরে ডান্ডা
করে দিই ঠান্ডা।
বিজ্ঞান শিক্ষা
আয় তোর মুন্ডুটা দেখি, আয় দেখি “ফুটোস্কোপ” দিয়ে,
দেখি কত ভেজালের মেকি আছে তোর মগজের ঘিয়ে।
কোন্ দিকে বুদ্ধিটা খোলে, কোন্ দিকে থেকে যায় চাপা;
কতখানি ভস্ ভস্ ঘিলু, কত খানি ঠক্ ঠকে কাপাঁ।
মন তোর কোন্ দেশে থাকে, কেন তুই ভুলে যাস্ কথা-
আয় দেখি কোন্ ফাঁক দিয়ে, মগজেতে ফুটো তোর কোথা।
টোল-খাওয়া ছাতাপড়া মাথা, ফাটামত মনে হয় যেন,
আয় দেখি বিশ্লেষ ক’রে- চোপ্ রও ভয় পাস কেন?
কাৎ হয়ে কান ধ’রে দাঁড়া, জিভখানা উল্টিয়ে দেখা,
ভালো ক’রে বুঝে শুনে দেখি- বিজ্ঞানে যে রকম লেখা।
মুন্ডুতে ম্যাগনেট ফেলে, বাশঁ দিয়ে “রিফ্লেকট” ক’রে,
ইট দিয়ে ভেলসিটি ক’ষে, দেখি মাথা ঘোরে কি না ঘোরে।
বুঝিয়ে বলা
ও শ্যামাদাস! আয় ত দেখি ব’স্ তো দেখি এখেনে,
সেই কথাটা বুঝিয়ে দেব পাঁচ মিনিটে দেখে নে।
জ্বর হয়েছে? মিথ্যে কথা! ওসব তোদের চালাকি-
এই যে বাবা চেঁচাচ্ছিলে, শুনতে পাইনি? কালা কি?
মামার ব্যামো? বদ্যি ডাকবি? ডাকিস না হয় বিকেলে;
না হয় আমি বা’লে দেব বাঁচ্বে মামা কি খেলে।
আজকে তোকে সেই কথাটা বোঝাবই বোঝাব-
না বুঝবি ত মগজে তোর গজাল মেরে গোঁজাব।
কোন্ কথাটা? তাও ভুলেছিস্? ছেড়ে দিছিস্ হাওয়াতে?
কি বলছিলেম পরশু রাতে বিষ্টু বোসের দাওয়াতে?
ভুলিস্নি ত বেশ করেছিস, আবার শুনলে ক্ষেতি কি?
বড় যে তুই পালিয়ে বেড়াস্, মাড়াসনে যে এদিক্ই!
বলছি দাঁড়া, ব্যস্ত কেন? বোস্ তাহলে নিচুতেই-
আজকালের এই ছোক্রা গুলোর তর্ সয় না কিছুতেই।
আবার দেখ! বসলি কেন? বই গুলো আন্ নামিয়ে-
তুই থাক্তে মুটের বোঝা বইতে যাব আমি এ?
সাবধানে আন, রছি দাড়া- আমাকেই ঘামালি-
এই খেয়েছে! কোন্ আক্কেলে শব্দকোষটা নামালি?
ঢের হয়েছে! আয় দেখি তুই বোস্ ত দেখি এদিকে-
ওরে গোপাল, গোটা কয়েক পান দিতে বল্ খেঁদিকে।
বলছিলাম কি, বস্তুপিন্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,
অর্থাৎ কিনা লাগছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে-
গোড়ায় তবে দেখ্তে হবে কোত্থেকে আর কি ক’রে,
রস জমে এই প্রপঞ্চময় বিশ্বতরুর শিকড়ে।
অর্থাৎ কিনা, এই মনে কর্ রোদ পড়েছে ঘাসেতে,
এই মনে কর্, চাঁদের আলো পড়লো তারি পাশেতে-
আবার দেখ! এরই মধ্যে হাই তোলবার মানে কি?
আকাশ পানে তাকাস্ খালি, যাচ্ছে কথা কানে কি?
কি বল্লি তুই? এ সব শুধু আবোল তাবোল বকুনি?
বুঝতে হলে মগজ লাগে, ব’লেছিলাম তখুনি।
মগজভরা গোবর তোদের হচ্ছে ঘুঁটে শুকিয়ে,
যায় কি দেওয়া কোন কথা তার ভিতরে ঢুকিয়ে?-
ও শ্যামাদাস! উঠলি কেন? কেবল যে চাস্ পালাতে!
না শুনবি ত মিথ্যে সবাই আসিস্ কেন জ্বালাতে?
তত্ত্বকথা যায় না কানে যতই মরি চেঁচিয়ে-
ইচ্ছে করে ডান্পিটেদের কান মলে দি পেঁচিয়ে।