ঠিকানা
আরে আরে জগমোহন- এস ,এস,এস-
বলতে পার কোথায় থাকে আদ্যনাথের মেশো?
আদ্যনাথের নাম শোননি? খগেনকে তো চেনো?
শ্যাম বাগচি খগেনেরই মামাশ্বশুর জেনো।
শ্যামের জামাই কেষ্টমোহন, তার যে বাড়ীওলা-
(কি যেন নাম ভুলে গেছি), তারই মামার শালা;
তারই পিশের খড়তুতো ভাই আদ্যনাথের মেশো-
লক্ষী দাদা ,ঠিকানা তার একটু জেনে এসো।
ঠিকানা চাও? বলছি শোন; আমড়াতলার মোড়ে
তিন-মুখো তিন রাস্তা গেছে তারি একটা ধ’রে,
চলবে সিধে নাক বরাবর, ডান দিকে চোখ রেখে;
চলতে চলতে দেখবে শেষে রাস্তা গেছে বেঁকে।
দেখবে সেথায় ডাইনে বায়ে পথ গিয়াছে কত,
তারি ভিতর ঘুরবে খানিক গোলকধাঁধাঁর মত।
তারপরেতে হঠাৎ বেঁকে ডাইনে মোচর মেরে ,
ফিরবে আবার বাঁয়ের দিকে তিনটে গলি ছেড়ে।
তবেই আবার পড়বে এসে আমড়া তলার মোড়ে-
তারপরে যাও যেথায় খুশি- জ্বালিয়ে নাকো মোরে ।
ডানপিটে
বাপ্রে কি ডানপিটে ছেলে!-
কোন দিন ফাঁসি যাবে নয় যাবে জেলে।
একটা সে ভুত সেজে আঠা মেখে মুখে,
ঠাঁই ঠাই শিশি ভাঙে শ্লেট দিয়ে ঠুকে।
অন্যটা হামা দিয়ে আলমারি চড়ে,
খাট থেকে রাগে ক’রে দুম্দাম্ পড়ে।
বাপরে কি ডানপিটে ছেলে!-
শিলনোড়া খেতে চায় দুধভাত ফেলে!
একটার দাঁত নেই, জিভ দিয়ে ঘষে,
একমনে মোমবাতি দেশলাই চোষে!
আরজন ঘরময় নীল কালি গুলে,
কপ্ কপ্ মাছি ধরে মুখে দেয় তুলে!
বাপরে কি ডানপিটে ছেলে!-
খুন হ’ত টম্ চাচা ওই রুটি খেলে!
সন্দেহে শুঁকে বুড়ো মুখে নাহি তোলে,
রেগে তাই দুই ভাই ফোঁস্ ফোঁস্ ফোলে!
নেড়াচুল খাড়া হয়ে রাঙা হয় রাগে,
বাপ্ বাপ্ ব’লে চাচা লাফ দিয়ে ভাগে।
দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্
ছুট্ছে মোটর ঘটর্ ঘরটর্ ছুট্ছে গাড়ী জুড়ি;
ছুট্ছে লোকে নানান্ ঝোকে করছে হুড়োহুড়ি ;
ছুট্ছে কত ক্ষ্যপার মত পড়্ছে কত চাপা-
সাহেব মেম থম্কে থেমে বলছে “মামা! পাপা!”
– আমরা তবু তবলা ঠুকে গাচ্ছি কেমন তেড়ে।
“দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম! দেড়ে দেড়ে দেড়ে!”
বর্ষাকালের বৃষ্টিবাদল রাস্তা জুড়ে কাদা,
ঠান্ডা রাতে সর্দিবাতে মরবি কেন দাদা?
হোক্ না সকাল হোক্ না বিকেল হোক্ না দুপুর বেলা,
থাক না তোমার আফিস যাওয়া থাক্ না কাজের ঠেলা-
এই দেখ না চাঁদ্নি রাতের গান এনেছি কেড়ে,
“দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্ ! দেড়ে দেড়ে দেড়ে!”
মুখ্যু যারা হচেছ সারা পড়্ছে ব’সে একা ,
কেউ বা দেখ কাঁচুর মাচুর কেউ বা ভ্যাবাচ্যাকা;
কেউ বা ভেবে হদ্দ হল, মুখটি যেন কালি ;
কেউ বা বসে বোকার মত মুন্ডু নাড়ে খালি।
তার চেয়ে ভাই, ভাবনা ভুলে গাও না গলা ছেড়ে,
“দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্ !দেড়ে দেড়ে দেড়ে!”
বেজার হয়ে যে যার মত কর্ছ সময় নষ্ট-
হাট্ছ কত খাট্ছ কত পাচছ কত কষ্ট!
আসল কথা বুঝছ না যে, করছ না যে চিন্তা,
শুনছ না যে গানের মাঝে তব্লা বাজে ধিনতা?
পাল্লা ধ’রে গায়ের জোরে গিট্কিরি দাও ঝেড়ে,
“দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্ !দেড়ে দেড়ে দেড়ে!”
নারদ! নারদ!
“হ্যাঁরে হ্যাঁরে তুই নাকি কাল, সাদাকে বলছিলি লাল?
(আর) সেদিন নাকি রাত্রি জুড়ে, নাক ডেকেছিস্ বিশ্রী সুরে?
(আর) তোদের পোষা বেড়ালগুলো, শুন্ছি নাকি বেজায় হুলো?
(আর) এই যে শুনি তোদের বাড়ি, কেউ নাকি রাখে না দাড়ি?
ক্যান্ রে ব্যাটা ইসটুপিড? ঠেঙিয়ে তোরে করব ঢিট্!”
“চোপরাও তুম্ স্পিকটি নট্, মার্ব রেগে পটাপট্-
ফের যদি ট্যারাবি চোখ, কিম্বা আবার কর্বি রোখ,
কিম্বা যদি অম্নি ক’রে, মিথ্যেমিথ্যি চ্যাঁচাস জোরে-
আই ডোন্ট কেয়ার কানাকড়ি- জানিস্ আমি স্যান্ডো করি?”
“ফের লাফাচ্ছিস্! অল্রাইট, কামেন্ ফাইট ! কামেন্ ফাইট!”
“ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখনি, টেরটা পাবে আজ এখনি!
আজকে যদি থাক্ত মামা, পিটিয়ে তোমায় করত ধামা।”
“আরে! আরে! মার্বি নাকি? দাঁড়া একটা পুলিশ ডাকি!”
“হাঁহাঁহাঁহাঁ! রাগ করো না, করতে চাও কি তাই বল না!”
“হাঁ হাঁ তাতো সত্যি বটেই, আমি তো চটিনি মোটেই!
মিথ্যে কেন লড়তে যাবি? ভেরি- ভেরি সরি মশলা খাবি?”
“শেক্হ্যান্ড আর দাদা বল, সব শোধ বোধ ঘরে চল।”
“ডোন্ট পরোয়া অল্ রাইট্, হাউ ডু য়ু ডু গুড্ নাইট।”
নোট বই
এই দেখ পেনসিল্ নোটবুক এ হাতে,
এই দেখ ভরা সব কিল্বিল লেখাতে।
ভালো কথা শুনি যেই চট্ পট্ লিখি তায়-
ফড়িঙের ক’টা ঠ্যাং, আরশুলা কি কি খায়।
আঙুলেতে আঠা দিলে কেন লাগে চট্চট্,
কাতুকুতু দিলে গরু কেন করে ছট্ফট্ ।
দেখে শিখে প’ড়ে শুনে ব’সে মাথা ঘামিয়ে
নিজে নিজে আগাগোড়া লিখে গেছি আমি এ।
কান করে কট্ কট্ ফোড়া করে টন্ টন্ –
ওরে রামা ছুটে আয়, নিয়ে আয় লন্ঠন।
কাল থেকে মনে মোর লেগে আছে খট্কা
ঝোলাগুড় কিসে দেয়? সাবান না পট্কা?
এই বেলা প্রশ্নটা লিখে রাখি গুছিয়ে
জবাবটা জেনে নেব মেজদাকে খুচিয়ে।
পেট কেন কাম্ড়ায় বল দেখি পার কে?
বল দেখি ঝাঁজ কেন? জোয়ানের আরকে?
তেজপাতে তেজ কেন? ঝাল কেন লঙ্কায়?
নাক কেন ডাকে আর পিলে কেন চমকায়?
কার নাম দুন্দুভি? কাকে বলে অরনি?
বলবে কি, তোমরা ও নোটবই পড়নি।
ন্যাড়া বেলতলায় যায় ক’বার
রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা, তার উপরে বস্ল রাজা-
ঠোঙাভরা বাদাম ভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিল্ছে না।
গায়ে আঁটা গরম জামা, পুড়ে পিঠ হচ্ছে ঝামা;
রাজা বলে, “বৃষ্টি নামা- নইলে কিচ্ছু মিলছে না”।
থাকে সারা দুপুর ধ’রে, ব’সে ব’সে চুপটি করে,
হাঁড়িপানা মুখটি ক’রে আঁকড়ে ধরে শ্লেটটুকু;
ঘেমে ঘেমে উঠছে ভিজে, ভ্যাবাচ্যাকা একলা নিজে,
হিজিবিজি লিখ্ছে কি যে বুঝ্ছে না কেউ একটুকু।
ঝাঁঝা রোদ আকাশ জুড়ে, মাথাটার ঝাঝ্রা ফুঁড়ে,
মগজেতে নাচ্ছে ঘুরে রক্তগুলো ঝ্ন্র ঝন:
ঠাঠা-পড়া দুপুর দিনে, রাজা বলে “আর বাঁচিনে,
ছুটে আন্ বরফ কিনে- ক’চ্ছে কেমন গা ছন্ছন্।”
সবে বলে, “হায় কি হল! রাজা বুঝি ভেবেই মোলো।
ওগো রাজা মুখ্টি খোল- কওনা ইহার কারণ কি?
রাঙামুখ পান্সে যেন, তেলে ভাজা আম্সি হেন,
রাজা এত ঘাম্ছে কেন- শুনতে মোদের বারণ কি”?
রাজা বলে, “কেইবা শোনে যে কথাটা ঘুরছে মনে,
মগজের নানান্ কোণে- আন্ছি টেনে বাইরে তায়;
সে কথাটি বলছি শোন, যতই ভাব যতই গোন,
নাহি তার জবাব কোন কুলকিনারা নাইরে হায়।
লেখা আছে পুথিঁর পাতে, ‘নেড়া যায় বেলতলাতে’,
নাহি কোনো সন্ধ তাতে – কিন্তু প্রশ্ন ক’বার যায়?
এ কথাটা এদ্দিনেও পারে নিকো বুঝতে কেও,
লেখে নিকো পুস্তকেও, দিচ্ছে না কেউ জবাব তায়।
লাখোবার যায় যদি সে, যাওয়া তার ঠেকায় কিসে?
ভেবে তাই পাইনে দিশে নাই কি কিচ্ছু উপায় তার?”
এ কথাটা যেম্মি বলা, রোগা এক ভিস্তিওলা
টিপ্ ক’রে বাড়িয়ে গলা প্রণাম করল দু’পায় তাঁর।
হেসে বলে, “আজ্ঞে সে কি?, এতে আর গোল হবে কি?
নেড়াকে তো নিত্যি দেখি আপন চোখে পরিষ্কার-
আমাদেরি বেলতলা যে, নেড়া সেথা খেলতে আসে
হরে দরে হয়তো মাসে নিদেন পক্ষে পঁচিশ বার”।