কাঠবুড়ো
হাঁড়ি নিয়ে দাড়িমুখো কে যেন কে বৃদ্ধ,
রোদে বসে চেটে খায় ভিজে কাঠ সিদ্ধ।
মাথা নেড়ে গান করে গুন গুন সংগীত
ভাব দেখে মনে হয় না জানি কি পন্ডিত!
বিড়্ বিড়্ কি যে বকে নাহি তার অর্থ-
“আকাশেতে ঝূল ঝোলে, কাঠে তাই গর্ত।”
টেকো মাথা তেতে ওঠে গায়ে ছোটে ঘর্ম
রেগে বলে , “কেবা বোঝে এ সবের মর্ম?
আরে মোলো, গাধাগুলো একেবারে অন্ধ,
বোঝেনাকো কোন কিছু খালি করে দ্বন্ধ।
কোন্ কাঠে কত রস জানে নাকো তত্ত্ব
একাদশী রাতে কেন কাঠে হয় গর্ত?”
আশে পাশে হিজি বিজি আঁকে কত অঙ্ক
ফাটা কাঠ ফুটো কাঠ হিসাব অসংখ্য;
কোন ফুটো খেতে ভাল, কোনটা বা মন্দ,
কোন্ কোন্ ফাটলের কি রকম গন্ধ।
কাঠে কাঠে ঠুকে করে ঠকাঠক শব্দ,
বলে, “জানি কোন্ কাঠ কিসে হয় জব্দ।
কাঠকুটো ঘেঁটেঘুঁটে জানি আমি পষ্ট,
এ কাঠের বজ্জাতি কিসে হয় নষ্ট।
কোন্ কাঠ পোষ মানে, কোন্ কাঠ শান্ত,
কোন্ কাঠ টিম্টিমে, কোন্টা বা জ্যান্ত।
কোন কাঠে জ্ঞান নাই মিথ্যা কি সত্য,
আমি জানি কোন্ কাঠে কেন থাকে গর্ত।”
কাতুকুতু বুড়ো
আর যেখানে যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার,
কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেও না খবরদার!
সর্বনেশে বৃদ্ধ সে ভাই যেও না তার বাড়ি-
কাতুকুতুর কুল্পি খেয়ে ছিঁড়বে পেটের নাড়ি।
কোথায় বাড়ি কেউ জানে না, কোন সড়কের মোড়ে,
একলা পেলে জোর করে ভাই গল্প শোনায় পড়ে।
বিদ্ঘুটে তার গল্পগুলো না জানি কোন্ দেশী,
শুনলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশী।
না আছে তার মুন্ডু মাথা, না আছে তার মানে,
তবুও তোমায় হাসতে হবে তাকিয়ে বুড়োর পানে।
কেবল যদি গল্প বলে তাও থাকা যায় সয়ে,
গায়ের উপর সুড়সুড়ি দেয় লম্বা পালক লয়ে।
কেবল বলে, “হোঃ হোঃ হোঃ, কেষ্টদাসের পিসি-
বেচ্ত খালি কুমড়ো কচু হাঁসের ডিম আর তিসি।
ডিমগুলো সব লম্বা মতন, কুমড়োগুলো বাঁকা,
কচুর গায়ে রঙ-বেরঙের আলপনা সব আঁকা।
অষ্ট প্রহর গাইত পিসি আওয়াজ ক’রে মিহি,
ম্যাও ম্যাও ম্যাও বাকুম বাকুম ভৌ ভৌ ভৌ চীহি।”
এই না বলে কুটুৎ করে চিমটি কাটে ঘাড়ে,
খ্যাংরা মতন আঙুল দিয়ে খোঁচায় পাঁজর হাড়ে।
তোমায় দিয়ে সুড়সুড়ি সে আপনি লুটোপুটি,
যতক্ষণ না হাসবে তোমার কিচ্ছুতে নাই ছুটি।
কি মুস্কিল
সব লিখেছে এই কেতাবে দুনিয়ার সব খবর যত,
সরকারী সব অফিস খানার কোন্ সাহেবের কদর কত।
কেমন ক’রে চাটনি বানায়, কেমন ক’রে পোলাও করে,
হরেক্ রকম মুষ্টিযোগের বিধান লিখ্ছে ফলাও করে ,
সাবান কালি দাঁতের মাজন বানাবার সময় সব কায়দাকেতা,
পূজা র্পাবণ তিথির হিসাব শ্রাদ্ধবিধি লিখ্ছে হেথা ।
সব লিখেছে, কেবল দেখ পাচিছনেকো লেখা কোথায়-
পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া কেমন করে ঠেকাব তায় !
কিম্ভুত
বিদঘুটে জানোয়ার কিমাকার কিম্ভুত,
সারাদিন ধ’রে তার শুনি শুধু খুঁৎ খুঁৎ।
মাঠ পারে ঘাট পারে কেঁদে মরে খালি সে,
ঘ্যান্ ঘ্যান আব্দারে ঘন ঘন নালিশে।
এটা চাই সেটা চাই কত তার বায়না-
কি যে চায় তাও ছাই বোঝা কিছু যায়না ।
কোকিলের মত তার কন্ঠেতে সুর চাই,
গলা শুনে আপনার বলে, “উহু, দুর ছাই!”
আকাশেতে উড়ে যেতে পাখিদের মানা নেই-
তাই দেখে মরে কেঁদে- তার কোন ডানা নেই!
হাতিটার কি বাহার দাঁতে আর শুন্ডে-
ও রকম জুরে তার দিতে হবে মুন্ডে!
কাঙ্গারুর লাফ দেখে ভারি তার হিংসে-
ঠ্যাং চাই আজ থেকে ঢ্যাংঢেঙে চিমসে!
সিংহের কেশরের মত তার তেজ কৈ?
পিছে খাসা গোসাপের খাজ কাটা লেজ কৈ?
একলা সে সব হলে মেটে তার প্যাখনা;
যারে পায় তারে বলে, “মোর দশা দেখ্না!”
কেদেঁ কেদেঁ শেষটায়- আষাঢ়ের বাইশে
হল বিনা চেষ্টায় চেয়েছে যা তাই সে।
ভুলে গিয়ে কাঁদাকাটি আহ্লাদে আবেশে
চুপিচুপি একলাটি ব’সে ব’সে ভাবে সে-
লাফ দিয়ে হুশ্ করে হাতি কভু নাচে কি?
কলাগাছ খেলে পরে কাঙ্গারুটা বাঁচে কি ?
ভোঁতামুখে কুহুডাক শুনে লোকে কবে কি?
এই দেহে শুঁড়ো নাক খাপ ছাড়া হবে কি?
“বুড়ো হাতি ওড়ে” ব’লে কেউ যদি গালি দেয় ?
কান টেনে ল্যাজ মলে “দুয়ো” ব’লে তালি দেয়?
কেউ যদি তেড়েমেরে বলে তার সামনেই-
কোথাকার তুই কেরে, নাম নেই ধাম নেই?
জবাব কি দেবে ছাই,আছে কিছু বলবার?
কাচুঁ মাচুঁ বসে তাই ,মনে শুধু তোলপার-
“নই ঘোড়া,নই হাতি, নই সাপ বিচছু
মৌমাছি প্রজাপতি নই আমি কিচছু।
মাছ ব্যাং গাছপাতা জলমাটি ঢেউ নই,
নই জুতা নই ছাতা,আমি তবে কেউ নই!”
কুম্ড়ো পটাশ
(যদি) কুম্ড়ো পটাশ নাচে-
খবরদার এসো না কেউ আস্তাবলের কাছে ;
চাইবে নাকো ডাইনে বাঁয়ে চাইবে নাকো পাছে;
চার পা তুলে থাকবে ঝুলে হট্টমূলার গাছে।
(যদি) কুম্ড়ো পটাশ কাঁদে-
খবরদার! খবরদার! বসবে না কেউ ছাদে।
উপুড় হয়ে মাচায় শুয়ে লেপ কম্বল কাঁধে:
বেহাগ সুরে গাইবে খালি ‘রাধে কৃষ্ণ রাধে’।
(যদি) কুম্ড়ো পটাশ হাসে-
থাকবে খাড়া একটি ঠ্যাঙে রান্নাঘরের পাশে;
ঝাপসা গলায় ফার্সি ক’বে নিশ্বাসে ফিস্ ফাসে;
তিনটি বেলা উপোস করে থাকবে শুয়ে ঘাসে!
(যদি) কুম্ড়ো পটাশ ছোটে-
সবাই যেন তড়বড়িয়ে জানলা বেয়ে ওঠে;
হুঁকোর জলে আলতা গুলে লাগায় গালে ঠোঁটে;
ভুলেও যেন আকাশ পানে তাকায় না কেউ মোটে!
(যদি) কুম্ড়ো পটাশ ডাকে-
সবাই যেন শাম্লা এঁটে গামলা চড়ে থাকে;
ছেঁচকি শাকের ঘন্ট বেটে মাথায় মলম মাখে;
শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা ঘষতে থাকে নাকে!
তুচ্ছ ভেবে এ-সব কথা করছে যারা হেলা,
কুম্ড়ো পটাশ জানতে পেলে বুঝবে তখন ঠেলা।
দেখবে তখন কোন্ কথাটি কেমন করে ফেলে,
আমায় তখন দোষ দিও না, আগেই রাখি বলে।