এই বিবেকানন্দই বোধহয় মানুষের হৃদয়মন্দিরে অনন্তকাল ধরে পূজিত হবেন।
——–
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
অচেনা অজানা বিবেকানন্দকে খুঁজতে গিয়ে একাল ও সেকালের জীবিত ও মৃত, চেনা-অচেনা কত ভক্ত এবং কত গবেষকদের দিকে ভিক্ষাপাত্র এগিয়ে দিয়েছি এই মুহূর্তে তার পুরো হিসেব দেওয়া সম্ভব নয়। অনুসন্ধানের কাজটা প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করে মনে হচ্ছে, এও একধরনের মাধুকরী। কারণ কোনো নতুন তথ্য আমি আবিষ্কার করতে সক্ষম হইনি। যা চেষ্টা করেছি তা হলো, জীবননাটকের রঙ্গমঞ্চে একটু নতুনভাবে আলোকসম্পাত।
প্রথমেই বলি, অনুপ্রেরণার উৎসমূলে রয়েছেন বহু গ্রন্থের লেখক সন্ন্যাসীগবেষক স্বামী প্রভানন্দ এবং ভক্তগবেষক আমার সাহিত্যগুরু শঙ্করীপ্রসাদ বসু! বসুমহাশয়ের মহাভারত ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’, ‘লোকমাতা নিবেদিতা’ ও ‘লেটারস্ অফ নিবেদিতা’ এই ভিক্ষাজীবীকে বহুবার উপাদানের অনশন থেকে রক্ষা করেছে।
এর পরেই রয়েছে বহুখণ্ডে বিভক্ত বাংলা ও ইংরিজি স্বামী বিবেকানন্দর বাণী, রচনা ও পত্রাবলী। বাংলা সংস্করণে পত্রাবলীর অংশটি এখনও অসম্পূর্ণ। ইংরিজি সংস্করণের পত্রাবলীতেও যে অপরিপূর্ণতা আছে তার কিছুটা পূরণ হয়েছে বেণীশঙ্কর শর্মার গবেষণায় এবং মেরি লুইস বার্ক সম্পাদিত ৬ খণ্ডে সম্পূর্ণ স্বামী বিবেকানন্দ ইন দ্য ওয়েস্ট নামক দিকদর্শন গ্রন্থমালায়।
আরও আছে এক স্বর্ণভাণ্ডার। স্বামী বিবেকানন্দর মধ্যম ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ দত্তর অর্ধশতাধিক গ্রন্থ। এই সুযোগে তাঁর রচনার মধ্য দিয়ে মহেন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করলাম এবং বুঝলাম কেন তাকে ‘পুণ্যদর্শন’ বলা হতো। আর এক মহামূল্যবান লেখক স্বামীজির কনিষ্ঠ ভ্রাতা ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, তার একটি বই ছাড়া (আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা) প্রায় সব বই পড়েছি। ভূপেন্দ্ররচনাও একালের বাঙালির অবশ্যপাঠ্য।
আর আছে ইংরিজি ও বাংলায় বেশ কিছু আকর গ্রন্থস্বামী সারদানন্দের শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ, ভগিনী নিবেদিতা গ্রন্থাবলী, রোমাঁ রোলাঁর বিবেকানন্দর জীবন, স্বামী গম্ভীরানন্দের যুগনায়ক বিবেকানন্দ, প্রমথনাথ বসুর বিবেকানন্দ এবং দ্য লাইফ অফ স্বামী বিবেকানন্দ, ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্যর বর্ণাঢ্য রচনাবলী, এস এন ধরের এ কমপ্রিহেনসিভ বায়োগ্রাফি অফ বিবেকানন্দ ইত্যাদি বেশ কয়েক ডজন গ্রন্থ। আরও রয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন সন্ন্যাসীর ও সংসারীর অমূল্য স্মৃতিকথা ও দিনলিপি কিছু ইংরিজিতে, কিছু বাংলায়। আদালতী ব্যাপারে সাহায্য পেয়েছি চিত্রগুপ্ত বিরচিত ছোট্ট বাংলা বই থেকে। স্বামী প্রভানন্দের ধৈর্যপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থগুলি সামনে না থাকলে আমার মতন ভিক্ষাজীবী লেখকের মনে সাহস জুটতো না।
আর এক মহামূল্যবান খবরাখবরের খনি ব্রহ্মবাদিন পত্রিকার পুরনো সংখ্যাগুলি। সেই সঙ্গে প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকার পুরনো সংখ্যাগুলি। এবং অবশ্যই উদ্বোধন পত্রিকা এবং শ্ৰীসারদা মঠ প্রকাশিত অপেক্ষাকৃত কম বয়সের নিবোধত পত্রিকা।
আরও বেশ কিছু কৃতজ্ঞতা-স্বীকারের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে মিস। জোসেফিন ম্যাকলাউড ও মিসেস ওলি বুলের সাম্প্রতিক জীবনীকার প্রব্রাজিকা প্রবুদ্ধপ্রাণা। এই বিদেশিনী সন্ন্যাসিনী আমার পরিচিত না হলেও তাকে দূর থেকে প্রণাম জানাই। সেই সঙ্গে বাংলাভাষায় শঙ্করাচার্য ও শ্রীচৈতন্যের জীবনী লেখকদের। আরও আছেন মার্কিন মুলুকের প্রাণবন্ত লেখক স্বামী চেতনানন্দ।
কিছুটা নেশার ঘোরেই শ’ দুয়েক বইয়ের অরণ্য থেকে অচেনা বিবেকানন্দ সম্বন্ধে সামান্য যা খুঁজে পেলাম তা এই বইতে একত্রে সংগ্রহ করে রাখা গেল, এই আশায় এবং এই বিশ্বাসে যে নানা দিক থেকে নানাভাবে খোঁজ খবর না করলে কোনো মহামানবকেই পুরো জানা যায় না।
ব্যক্তিগতভাবে উপদেশ দিয়ে এবং তথ্যসন্ধানে সাহায্য করেছেন রামকৃষ্ণ মিশনের পূজ্যপাদ স্বামী রমানন্দ, স্বামী বিশোকানন্দ, স্বামী সর্বগানন্দ, অদ্বৈত আশ্রমের স্বামী বোধসারানন্দ, স্বামী সত্যময়ানন্দ, গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার গ্রন্থাগারের গোপা বসুমল্লিক, ডাক্তার সুব্রত সেন, ডাক্তার তাপস বসু, বিশিষ্ট গবেষক সুনীলবিহারী ঘোষ, শ্রীহর্ষ দত্ত, শ্রীদিলীপ দে, শ্রীসুবীর মিত্র, শ্ৰীবাদল বসু, শ্রীরাকেশ দাস, শ্রীবঙ্কিম কোনার, নীরব অনুসন্ধানী শ্রীশিবশঙ্কর ঘোষ, শ্রীবিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে। এঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
কৃতজ্ঞতা জানাই বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ডক্টর মানস রায়, আনন্দবাজার পত্রিকার দিল্লি সংবাদদাতা জয়ন্ত ঘোষাল, সুখী গৃহকোণ পত্রিকার সুযোগ্যা সম্পাদিকা শুভা দত্ত এবং সংবাদ প্রতিদিন-এর সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এঁরা সারাক্ষণ উৎসাহ না দিলে এই বইয়ের শেষপ্রান্তে পৌঁছনো বেশ কঠিন হতো। আর একজন সর্বদা লুকিয়ে থাকতে চান–তার উল্লেখ উৎসর্গপত্রে করেছি।
সবার শেষে শতসহস্র ধন্যবাদ এই বইয়ের প্রকাশক শ্রীনির্মলকুমার সাহা ও তার সুযোগ্য পুত্র বিবেকানন্দ-অনুরাগী শ্রীপ্রদীপ সাহাকে। একই সঙ্গে ধন্যবাদ উৎসাহী কর্মী শ্রীসুখেন সাহাকে।
আরও একজন পাঠকের কাছে আমি ঋণী হয়ে রইলাম আমার প্রথম প্রকাশক নিউ এজ পাবলিশার্সের তরুণ কর্ণধার শ্রীশিলাদিত্য সিংহরায় সম্পাদনার কাজে নানাভাবে সাহায্য করেছেন।