আজিজা বেগম বললেন, ফজরের নামায পড়ে তোর সাড়া না পেয়ে এসে দেখি তুই মেঝেয় পড়ে আছিস। তারপর যা কিছু হয়েছে বললেন।
সুরাইয়া ঘড়ি দেখে বলল, তোমরা সব যাও, আমি এখন ফজরের কাযা নামায পড়ব।
সেখান থেকে এসে সুরাইয়া স্বামী, দেবর ও জায়েদেরকে বলল, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বড় আপা আমার ও আব্বার কথা-বার্তা শুনে রুমে এসে অজ্ঞান হয়ে সারারাত মেঝেয় পড়েছিল।
আব্দুর রসিদ বলল, আমারও তাই মনে হয়। তারপর বলল, এবার তোমরা সব যাও, অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের এখন কিছু করার নেই।
এরপর থেকে যতদিন যেতে লাগল, রুকসানা তত শুকিয়ে যেতে লাগল। মাস খানেকের মধ্যে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ল। আব্দুর মতিন মেয়ের পরিণতির কথা বুঝতে পেরেও এতটুকু নরম হলেন না। ছেলেদেরকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালের একজন বড় ডাক্তারকে নিয়ে এসে চিকিৎসা করাতে বললেন।
৯. হাসপাতালের কাজ সম্পূর্ণ
হাসপাতালের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রী আসতে পারবেন কিনা জানার জন্য হোসেন ঢাকায় খালেক চাচার বাড়িতে এসে উঠল। সবার সাথে সালাম ও কুশল বিনিময় করে বলল, আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোয়ার বরকতে হাসপাতালের কাজ শেষ হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাবার জন্য ওঁকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে এসেছি।
খালেক বলল, শুনে খুব খুশী হলাম। দোয়া করি, “আল্লাহ তোমার সব নেক মকসুদ পূরণ করুক, তোমাকে সুখী করুক, তোমার হায়াত দারাজ করুক।” তারপর স্ত্রীকে বলল, ইকবালকে নাস্তা দাও।
মালেকা কয়েকদিনের ছুটিতে গতকাল বাড়িতে এসেছে। সে তখন বাড়িতে ছিল না। কিছু কেনা-কাটা করতে মার্কেটে গিয়েছিল। হোসেন আসার কিছুক্ষণ পর ফিরল।
মেয়েকে ফিরতে দেখে খালেক বলল, ইকবাল এসেছে। তারপর কেন এসেছে। বলল।
মালেকা বলল, স্যার কোথায়?
খালেক বলল, গেষ্ট রুমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছি। সেখানে নাস্তা খাচ্ছে।
মালেকা উপরে গিয়ে মার্কেটিং জিনিসগুলো রেখে বোরখা খুলে কাপড় পাল্টাল। তারপর মুখে হাতে পানি দিয়ে ওড়না জড়িয়ে যখন গেষ্টরুমে এল তখন ইকবাল নাস্তা খেয়ে খবরের কাগজ পড়ছিল।
মালেকা সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন স্যার?
আজ প্রায় এগার বছরের বেশি হয়ে গেছে মালেকার সঙ্গে হোসেনের যোগাযোগ নেই। তার কথা যে মনে পড়ে না তা নয়। তাকে ভালবেসে মালেকা বিয়ে করেনি মনে পড়লে বেশ কষ্ট অনুভব করে। ভাবে রুকসানাকে যদি ভুলতে পারত, তাহলে মালেকাকে গ্রহণ করত।
এত বছর পর আজ তার কণ্ঠস্বর শুনে হোসেন চমকে উঠল। সামলে নিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে মৃদু হেসে বলল, এখনো স্যার বলে সম্বোধন করবে?
তা হলে কি বলে করব?
কেন? ইকবাল ভাই বলবে।
তা আমার পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। কেন?
যাকে ছোটবেলা থেকে স্যার বলে এসেছি, তার নামের সঙ্গে ভাই বলা আর কারো পক্ষে সম্ভব হলেও আমার পক্ষে নয়। তা কেমন আছেন বললেন না যে?
বস না, দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসার পর বলল, আল্লাহ এক রকম ভালই রেখেছেন। তুমি কেমন আছ বল?
আমাকেও আল্লাহ একরকম ভাল রেখেছেন। শুনলাম, হাসপাতাল করেছেন। হাসপাতাল উদ্বোধন করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে এসেছেন?
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ। তারপর বলল, তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য একবার ফরিদপুর গিয়েছিলাম, চাচার কাছে নিশ্চয় শুনেছ?
হ্যাঁ শুনেছি।
অধ্যাপনা কেমন লাগছে।
মন্দ না; তবে বলে থেমে গেল।
থামলে কেন বল?
না থাক।
ঠিক আছে, বলতে অসুবিধা থাকলে বলার দরকার নেই। একটা কথা জিজ্ঞেস করব, কিছু মনে করবে না তো?
আপনি আমার স্যার, নিশ্চয় মনে করার মতো কিছু বলবেন না। বলুন কি বলবেন।
তুমি একজন ধার্মিক ও শিক্ষিতা মেয়ে হয়ে মা-বাবার মনে অশান্তি দেওয়া কী ঠিক হচ্ছে?
মালেকা ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে অবাক কণ্ঠে বলল, আমি আবার তাদের মনে কি অশান্তি দিচ্ছি?
আমার তো মনে হচ্ছে, কথাটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করছ। তবু বলছি, প্রত্যেক মা-বাবা মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হতে চান। তুমি বিয়ে করতে রাজি না হয়ে তাদেরকে অশান্তি দিচ্ছ না কী?
আপনার কথা অবশ্য ঠিক। তবে আমারও মনে হচ্ছে, বিয়েতে রাজি না হওয়ার কারণ বুবতে পেরেও না বোঝার ভান করছেন। তবু বলছি, রাজি না হওয়ার কারণ একমাত্র আল্লাহপাক জানেন। আমার কথা থাক, এবার আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করব। অবশ্য ছাত্রী হয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করা বেয়াদবি হবে। তাই অনুমতি চাচ্ছি।
অনুমতি দিলাম।
হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “বিবাহ করা আমার সুন্নত যে ইহাকে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করিবে, সে আমার দলভুক্ত নহে।” [বেহেশতী জেওর ৪র্থ খণ্ড- ৬৫ পৃষ্ঠা]
হাদিসে আরো আছে, “বিবাহ করা ইন্দ্রিয়ের আধিক্যে ফরয, ওয়াজীব ও সুন্নত। হইয়া থাকে।” [বেহেশতী জেওর ৪র্থ খণ্ড- ৬৫ পৃষ্ঠা]
এই হাদিসগুলো আপনিও নিশ্চয় জানেন। তবু কেন বিয়ে করছেন না?
হ্যাঁ জানি। আর তাই বিয়ে করব না, এরকম সিদ্ধান্ত নিইনি। এবার আমিও যদি ঐ হাদিসগুলোর রেফারেন্স টেনে তোমাকে জিজ্ঞেস করি?
উত্তরে আপনার কথাটাই বলব। তারপর বলল, এতদিনে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, আমার অনুমান সত্য।
তা হলে এবার মা-বাবার ইচ্ছা নিশ্চয় পূরণ করবে?