তুই বড় স্বার্থপর। কোলের বাচ্চাকে নিয়ে এলি না কেন? দেখতাম কেমন হয়েছে।
আজ বিশেষ কাজে এসেছি। কয়েকদিন পর আবার যখন আসব তখন বাচ্চাকে নিয়ে এসে এক সপ্তাহ থাকব।
কি নাম রেখেছিস?
যয়নাব বিনতে দাইহান।
বাহ! খুব সুন্দর নাম তো!
বড় আপা, আব্বার রুমে ঢুকে যেতে সুরাইয়া ফিরে এসে তার ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল। তাকে দেখে আসমা সালাম বিনিময় করে বলল, ভাবি কেমন আছেন।
সুরাইয়া বলল, ভালো আপনি ভালো আছেন?
আসমা বলল, ভালো না থাকলে এলাম কি করে?
রুকসানা সুরাইয়াকে বলল, নিচে মেহমান আছে। করিমনের হাতে নাস্তা পাঠিয়ে আমাদের জন্যও পাঠাবে। তারপর রুমে ঢুকে বলল, মিটিং এর পরে তোর কাছে যাব ভেবেছিলাম, অফিসের দু’জন সঙ্গে ছিল তাই যেতে পারিনি।
আসমা বলল, আমি মনে করেছিলাম তুই মিটিং-এ আসিসনি। তারপর খাটের উপর পা ঝুলিয়ে দু’জনে পাশাপাশি বসল। প্রথমে আসমা বলল, তুই যে বললি, ভালো আছিস, আমিতো ভালোর কিছু দেখছি না। কত রোগা হয়ে গেছিস আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে দেখিসনি?
রুকসানা বলল, কিছুদিন থেকে একদম খেতে পারছি না, রাত্রেও চোখে এক ফোঁটা ঘুম আসে না। আমার কথা বাদ দে। তোদের দিন কেমন কাটছে বল।
আল্লাহর রহমতে ভালই। কিন্তু তোর অবস্থা দেখে আমার কান্না পাচ্ছে। তুই যে উপকার করেছিস, আমার গায়ের চামড়া দিয়ে তোর পায়ের জুতো বানিয়ে দিলেও। সেই ঋণ শোধ হবে না। তুই-ই বল, কিভাবে আমি তোকে সাহায্য করতে পারি? বছর খানেক আগে ইকবাল ভাই যেদিন আসে, সেদিনই আমি তাকে তোর কথা মনে আছে কিনা জিজ্ঞেস করি। তারপর তখন থেকে রুকসানার চিঠি পড়া পর্যন্ত এবং চিঠি নিয়ে পরের দিন রুকসানার সঙ্গে দেখা করে ফিরে এসে যা কিছু কথাবার্তা হয়েছে সবকিছু বলে বলল, তাই আজ এলাম তোর সাথে পরামর্শ করতে, কিভাবে তোদের স্বপ্ন সফল করা যায়।
সুরাইয়া করিমনকে নাস্তার কথা বলে ফিরে এসে দরজার বাইরে থেকে এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিল। করিমন নাস্তা নিয়ে এলে তার সাথে রুমে ঢুকে আসমাকে। উদ্দেশ্য করে বলল, আগে নাস্তা খেয়ে নিন, তারপর স্বপ্ন সফল করার পরামর্শে আমিও অংশগ্রহণ করব।
করিমন টেবিলের উপর নাস্তা রেখে জগ থেকে দু’টো গ্লাসে পানি ঢেলে রেখে চলে গেল।
সুরাইয়া ভাবির কথা শুনে আসমা রুকসানার মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।
করিমন চলে যেতে রুকসানা তাকে বলল, সুরাইয়া ছাড়া এ বাড়ির আর কেউ এসব কথা জানে না। নে নাস্তা খা। তারপর সুরাইয়াকে বলল, তুমিও বস।
নাস্তা খাওয়ার পর করিমন তিন কাপ চা দিয়ে গেল।
চা খাওয়ার সময় সুরাইয়া রুকসানার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি। তারপর আসমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটু আগে আমরা ঐ ব্যাপারে কথা বলছিলাম। আপনি এসে ভালই হল। তিনজনে পরামর্শ করে ওদের দুজনের স্বপ্ন। সফল করার উপায় বার করব।
রুকসানা কিছু বলতে যাচ্ছিল, আসমা তাকে থামিয়ে দিয়ে সুরাইয়াকে বলল, আপনি এ বাড়ির বড় বৌ। উপায়টা আপনাকেই বার করতে হবে।
সুরাইয়া বলল, আমি ভেবেছি, প্রথমে আপনার ভাইকে ওদের দুজনের সম্পর্কের কথা বলে রাজি করাব। তারপর দুজনে মিলে আব্বা-আম্মাকে জানিয়ে রাজি করাবার চেষ্টা করব।
এবার সুরাইয়া বাধা দেওয়া সত্ত্বেও রুকসানা বলল, তোমার কী মাথা খারাপ হয়েছে? এসর কথা…..।
আসমা তার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, তুই চুপ কর। সুরাইয়া ভাবি ঠিক কথা বলেছেন। ওদের আগে আজই আমি চাচি আম্মা ও চাচাকে সবকিছু বলে রাজি করাব। সেই জন্যে তো এলাম। হোসেন ভাইও অনেক নিষেধ করে আমাকে ভয় দেখিয়েছে। তার নিষেধ না শুনে এসেছি, তোর নিষেধও শুনব না।
রুকসানা ফুঁপিয়ে উঠে বলল, তোরা যদি আব্বা-আম্মাকে কিছু বলিস, তাহলে। কাল সকালে আমার মরা মুখ দেখবি।
সুরাইয়া চমকে উঠে বলল, তুমি ধার্মিক মেয়ে হয়ে এমন কথা বলতে পারলে বড় আপা?
আসমাও চমকে উঠেছিল। সুরাইয়া থেমে বলল, সই, তুই আমাকে এত কঠিন কথা শোনাতে পারলি? তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে বলল, জানিস না, একথা মুখে উচ্চারণ করাও গোনাহ? তারপর সামলে নিয়ে বলল, ঠিক আছে, আজ আমি কিছু বলব না; কিন্তু দু’একদিনের মধ্যে আব্বাকে পাঠাব। সে নিশ্চয় চাচাকে রাজি করাতে পারবে। তারপর সুরাইয়াকে বলল, আপনি এখন কিছু করতে যাবেন না। আব্বা এসে যদি রাজি করাতে না পারে, তখন আমি আপনার সঙ্গে পরামর্শ করে যা করার করব।
সুরাইয়া বলল, বেশ তাই হবে।
এমন সময় করিমন এসে নাস্তার প্লেট ও চায়ের কাপ নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় সুরাইয়াকে বলল, আপনাকে আম্মা ডাকছেন।
সুরাইয়া বলল, তুমি যাও, আমি আসছি।
রুকসানা ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। বলল, তোদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, এই ব্যাপার নিয়ে কোনো কিছু করিসনি। আব্বা এমনিই স্ট্রোক করে কত বছর পঙ্গু হয়ে আছে। এসব কথা শুনলে হয়তো হার্টফেল করবে। তাই তোদের কাছে হাত জোড় করে বলছি, আমাকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দে। ভাগ্যে যা আছে, তা তো তোরা বদলাতে পারবি না।
রুকসানার কথা শুনে সুরাইয়া ও আসমা আর কোনো কথা বলতে পারল না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সুরাইয়া বলল, আমি যাই আম্মা ডাকছেন।
সুরাইয়া চলে যাওয়ার পর আসমা ভিজে গলায় বলল, তোর শত নিষেধ মানতাম না, শুধু চাচার কথা চিন্তা করে আজ চলে যাচ্ছি। তবে শুনে রাখ, ভাগ্যে যা থাকে তা নিশ্চয় হবেই, তবু মানুষকে চেষ্টা করতে আল্লাহ বলেছেন। তাই আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও চেষ্টা চালিয়ে যাব। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, তুই আমার মুখ বন্ধ করে দিলি এটাই আমার দুঃখ।