আল্লাহপাকের দরবারে তোদের সবার সর্বাঙ্গীণ কুশল কামনা করে আজকের মতো বিদায় নিলাম।
ইতি
তোর সই
রুকসানা।
চিঠিটা পড়ে আসমা বালিসের তলায় রেখে দিয়ে সংসারের কাজে লেগে গেল।
মাগরিবের নামায পড়ে দাইহান ঘরে এলে চা-মুড়ি খেতে দিয়ে চিঠিটা এনে। তার হাতে দিয়ে বলল, পড়ে দেখ। রুকসানা ও পাড়ার আনোয়ারার হাতে পাঠিয়েছে।
দাইহান ফাঁইভ পর্যন্ত পড়লেও বিয়ের পরে আসমা তাকে পুরো একটা বছর ঘুমাবার আগে উঁচু ক্লাসের বাংলা ও ইংলিশ পড়িয়েছে। এখন দাইহান যেকোনো বাংলা ও ইংরেজি বই ভালোভাবে পড়তে পারে।
দাইহান চিঠিটা পড়ে বলল, হোসেন তার সম্বন্ধে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করেছে। এখন উত্তরে কী লিখবে?
আসমা বলল, চিঠি পড়ার পর থেকে চিন্তা করছি, কিন্তু আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।
দাইহান বলল, এক কাজ কর, চিঠিটা হোসেনকে দাও, সে কী বলে দেখ।
আসমা বলল, তুমি ঠিক বলেছ। এমন সহজ বুদ্ধিটা আমার মাথায় এল না কেন বলতে পার?
পারি?
বলতে শুনি?
বিয়ের আগে মেয়েদের বুদ্ধি বেশি থাকে; বিয়ের পরে সেই বুদ্ধি সংসার, স্বামী ও ছেলেমেয়েদের পিছনে খরচ করতে করতে কমে যায়। তোমারও তাই হয়েছে।
আসমা হেসে উঠে বলল, আর ছেলেদের বিয়ের আগে বুদ্ধি কম থাকে। বিয়ের পর স্ত্রীর উপর সবকিছু ছেড়ে দেয় বলে ছেলেদের বুদ্ধি বাড়তে থাকে তাই না?
নিশ্চয় বলে দাইহানও হাসতে লাগল।
এখন ইয়ার্কি রেখে যা বলছি শোন, এশার নামাযের পর হোসেন ভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে।
দাইহান বলল, সে তো দু’তিন দিন হল ঢাকা গেছে। ফিরে এলে ডেকে নিয়ে আসব।
পরের দিন আনোয়ারা স্কুলে যাওয়ার সময় আসমার কাছে এল।
তাকে দেখে আসমা বলল, কাজের জন্য চিঠিটা লিখতে সময় পাইনি। মনিরাকে বলিস, কয়েকদিন পরে তার বড় আপার চিঠির উত্তর দেব।
আনোয়ারা স্কুলে গিয়ে আসমা আপা যা বলতে বলেছিল মনিরাকে বলল।
মনিরার মুখে কথাটা শুনে রুকসানার প্রথমে আসমার উপর দুঃখ হল। ভাবল, এত কি কাজে ব্যস্ত যে দু কলম লিখবার সময়ও পেল না। পরক্ষণে মনে হল, কাজের ব্যস্ততা অজুহাত নয় তো? অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে? কয়েকদিন অপেক্ষা করেই দেখা যাক।
হোসেন আটদিন ঢাকায় থেকে যেদিন ফিরে এল, সেইদিন এশার নামাযের পর দাইহান তাকে ঘরে নিয়ে এল।
আসমা সালাম ও কুশল বিনিময় করে চিঠিটা দিয়ে বলল, আমার কথা সত্য কিনা পড়ে দেখ। পাঁচ দিন আগে পেয়েছি, কি জানাব ভেবে না পেয়ে উত্তর দিইনি। কয়েকদিন পরে দেব বলে জানিয়েছি।
হোসেন চিঠি পড়ে ভীষণ আনন্দিত হল। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে চিঠিটা পকেটে রেখে বলল, তোমাকে উত্তর দিতে হবে না। ইনশাআল্লাহ, আমিই কাল তার সঙ্গে দেখা করব। এখন আসি কেমন?
আসমা বলল, এক মুঠো খেয়ে যাও তোমার জন্য রান্না করেছি।
খাওয়ার পর আসমা বলল, দেখা করার পর সই কি বলল, আমাকে জানাবে তো ভাই?
জানাব বলে হোসেন বিদায় নিয়ে নিজের ঘরে চলে এল। তারপর অনেক রাত পর্যন্ত রুকসানার সঙ্গে কিভাবে আলাপ করবে চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
হাসপাতালের জন্য জমি কেনার পর গেঁদু মুন্সী, ফজল, দাইহান ও গ্রামের চার পাঁচজন গণ্যমান্য লোক নিয়ে হোসেন একটা কমিটি গঠন করেছে। তারা হাসপাতাল বিল্ডিং তৈরির কাজের তদারকি করছেন। ইতিমধ্যে বিল্ডিং এর কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। পরের দিন সকালে ফজরের নামায পড়ে হোসেন কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে কাজের অগ্রগতি শুনল। তারপর তাদেরকে বলল, আমি ঢাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। উনি আগামী মাসের পঁচিশ তারিখে হাসপাতাল উদ্বোধন করতে আসবেন। আজ দশ তারিখ, আমরা দেড় মাস সময় পাচ্ছি। এর মধ্যে হাসপাতালের কাজ কমপ্লিট করে ফেলতে হবে। আর আগামী সপ্তাহে একটা বড় ধরনের মিটিং ডাকুন। মিটিং এ যাতে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন আসে সেজন্য যে ব্যবস্থা করা দরকার করবেন। তারপর তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে রুগীদের বিদায় করে স্কুলে রওয়ানা দিল। আজ বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটি হওয়ার পর হোসেন মনিরাকে বলল, আজ পড়াব না, চল, তোমাদের বাড়িতে যাব।
মনিরা বলল, তাই চলুন স্যার। এই কয়েকদিন আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে বড় আপা প্রতিদিন আপনি ঢাকা থেকে ফিরেছেন কিনা জিজ্ঞেস করে। আব্বাও মাঝে মাঝে বলেন, তোর স্যারকে আসতে বলিস।
হোসেন কিছু না বলে তাকে নিয়ে হাঁটতে লাগল। কাঁচারী বাড়ির কাছে এসে হোসেন মনিরাকে বলল, তুমি যাও, আমি তোমার বড় আপার সঙ্গে দেখা করে তাকে নিয়ে আসছি।
পাঁচ ছয়দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন আসমার চিঠি পেল না তখন রুকসানা ভাবল, হোসেন স্যার যদি ইকবাল হয়, তাহলে আসমার তো জানার কথা। আর দাইহান ইকবালের বাবার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। তারও জানার কথা, তাছাড়া পাশা-পাশি ঘর। নিশ্চয় ঘনিষ্ঠতা আছে। তবু কেন আসমা চিঠি দিয়ে জানাচ্ছে না? তাহলে কি এর মধ্যে কোনো রহস্য আছে।
আজ ঢাকা থেকে মাল কেনার জন্য ট্রাক নিয়ে এক পার্টি এসেছিল। মাল ডেলেভারী দিয়ে বিদায় করতে তিনটে বেজে গেল। রুকসানা অফিসেই যোহরের নামায পড়ে খাওয়ার পর চেয়ারে বসে এইসব ভাবছিল। এমন সময় পিয়ন আতাহার এসে বলল, কিছুদিন আগে যে একজন দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক এসেছিলেন, উনি এসেছেন।