দাইহান বলল, বেশ তাই হবে। মাগরিবের নামাযে চৌদ্দ পনের জন মুসুল্লী নামায পড়তে এল।
আসরের সময় যারা এসেছিল, তারা ছাড়া সবাই দাইহানকে ইকবালের কথা জিজ্ঞেস করল।
ইকবাল আসরের সময় যা বলেছিল, দাইহান সেই কথা বলে বলল, উনি কয়েকদিন আমার কাছে থাকবেন। তারপর সমন্ধি, শ্বশুর ও আব্বাকে দরকার আছে। বলে ঘরে নিয়ে এল।
দাইহান স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে একরুমে থাকে। অন্য রুমে দাদি থাকে। আসমা মাগরিবের নামায পড়ে দাদির রুমের এক পাশে ইকবালের থাকার ব্যবস্থা করছে।
দাইহান সবাইকে নিয়ে সেই রুমে বসল।
ইকবাল দাইহানের কানে কানে বলল, তুমি দাদিকে ও আসমাকে ডেকে নিয়ে এস।
দাইহান পাশের রুমে গিয়ে তাদেরকে ইকবালের কথা জানাল।
আসমা দাদিকে বলল, তুমি যয়নাবকে নিয়ে যাও। আমি চা-এর ব্যবস্থা করে আসছি।
কিছুক্ষণের মধ্যে আসমা চোখ দুটো ছাড়া গায়ে মাথায় চার জড়িয়ে চা বিস্কুট নিয়ে এসে সবাইকে পরিবেশন করে চলে গেল। একটু পরে একটা বড় পিরিচে পান, সুপুরি, চুন ও জর্দা নিয়ে ফিরে এসে সবার সামনে রাখল।
গেঁদু মুন্সী ও ফজল আসমাকে ঢাকার লোকের সামনে আসতে দেখে বেশ অবাক হলেন। ভাবলেন, একটা পরপুরুষের সামনে আসা কী তার ঠিক হল?
চা-খাওয়ার পর পান মুখে দিয়ে গেঁদু মুন্সী জামাইকে বললেন, কি দরকারে ডেকে আনলে বল।
দাইহান কিছু বলার আগে ইকবাল বলল, আমি আপনাদের ডেকে আনতে বলেছিলাম। তারপর বলল, আসরের সময় মসজিদে যে কথা বলেছিলাম, তা ঠিক নয়। আমি কাজেমের ছেলে ইকবাল। প্রায় পনের বছর আগে এস.এস.সি. পাশ করে একবার এসে পাঁচদিন ছিলাম। সে কথা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। তারপর ঢাকায় গিয়ে আরো লেখাপড়া করে চাকরি নিয়ে আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম। চাকরি করার সাথে সাথে হোমিওপ্যাথিক কলেজে পড়াশোনা করে ডিগ্রি নিয়েছি। সেখানে দশ বছর থেকে কয়েকদিন হল ফিরেছি। আমার আব্বা-আম্মা একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। তাই ঠিক করেছি, তাদের নামে প্রথমে একটা দাঁতব্য চিকিৎসালয় খুলে গ্রামের গরিব লোকদের চিকিৎসা করব। তারপর আল্লাহ রাজি থাকলে, একটা হাসপাতাল খুলব। সেখানেও গরীবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা হবে। আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা না পেলে আমার একার দ্বারা কিছুই সম্ভব হবে না। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন।
ইকবালের কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কোনো কথা বলতে পারল না।
ইকবাল বলল, আপনারা কিছু বলছেন না কেন?
গেঁদু মুন্সী বললেন, কিন্তু বাবাজি, তুমি যা বললে তা করতে তো প্রচুর টাকা লাগবে, এতটাকা তোমাকে কে দেবে?
ইকবাল বলল, আল্লাহ দেবেন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দঃ) কে খুশি করার উদ্দেশ্যে যে কোনো মহৎ কাজে হাত দিলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। আমার বেশ কিছু টাকা আছে। তারপর আপনাদের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেলে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য চাইব। আপনারা রাজি আছেন কিনা বলুন।
গেঁদু মুন্সী বলল, ভালো কাজে রাজি হব না কেন?
ফজল, শাকিল ও দাইহান এক সঙ্গে বলে উঠল, আমরাও রাজি।
আসমা বলল, ইকবাল ভাই, তুমি আল্লাহর নাম নিয়ে কাজে নেমে পড়। আমিও ভাবি বাড়ি বাড়ি ঘুরে মেয়েদের কাছ থেকে সাহায্য চাইব।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ইকবাল বলল, এবার এখানে যে কয়জন আছেন, সবাইয়ের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, আমি যে মরহুম কাজেম সেখের ছেলে ইকবাল, একথা গোপন রাখতে হবে। আপনারা এই কয়েকজন ছাড়া একটা পশু পাখিও যেন আমার পরিচয় জানতে না পারে। আমার কথা শুনে আপনারা খুব অবাক হচ্ছেন বুঝতে পারছি। কিন্তু কেন আমার পরিচয় গোপন করতে বললাম, সে কথা ইনশাআল্লাহ সময় মতো একদিন সবাই জানতে পারবেন। আর একটা কথা আসবার সময় বাসে ফুকরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড মাস্টারের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, ঐ স্কুলের জন্য একজন ইংলিশের টিচার দরকার। আমি ঐ স্কুলে জয়েন করতে চাই। সে কথা হেডমাস্টারকে জানাতে উনি বললেন, আপনার কাগজপত্র নিয়ে কবে আসছেন বলুন। আমি কমিটিকে জানিয়ে সেদিন থাকতে বলব। পরশু বৃহস্পতিবার যাব বলেছি। স্কুলে মাস্টারীটা পেলে সেখানে কিছুদিন থেকে আমাদের ভিটেয় দু’কামরা ঘর তুলব। একটায় আমি থাকব, আর অন্যটায় ডিসপেন্সরী করব। তারপর ধীরে সুস্থে হাসপাতালের কাজে হাত দেব। অবশ্য তার আগে হাসপাতালের জন্য জমি কিনব। তারপর এই গ্রামের ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নিয়ে একটা সভা করব। এখন আপনাদেরকে কথা দিতে হবে, আমার পরিচয় গোপন রাখবেন।
সবাই আরো বেশি অবাক হল। প্রথমে গেঁদু মুন্সীই বলল, তুমি আমাদের কাজেমের ছেলে। গ্রামের মানুষের জন্য যখন এতকিছু করতে চাচ্ছ তখন তোমার কথা রাখাইতো আমাদের উচিত। তারপর ফজলের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কী। বল ফজল?
ফজল বলল, আপনি ঠিক কথা বলেছেন। ও আমার চাচাতো ভাই এর ছেলে। ওর কথা রাখব না তো কার কথা রাখব। তারপর ইকবালকে বলল, আমরা থাকতে তুমি অন্য জায়গায় থাকবে কেন? যতদিন না ঘর তৈরি হচ্ছে ততদিন তুমি দাইহানের কাছেই থাকবে।
ইকবাল বলল, পরিচয় গোপন রাখার জন্য কিছুদিন অন্য জায়গায় থাকা দরকার।
ফজল বলল, ঠিক আছে, তুমি যা ভালো বুঝো করো।
ফজল থেমে যেতে শাকিলও বলল, আমরাও তোমার পরিচয় গোপন রাখব।