ইকবাল বলল, না দাদি থাকা সম্ভব নয়। আবার যখন আল্লাহ নিয়ে আসবে তখন গেঁদু মুন্সীর সঙ্গে দেখা করব।
রুকসানা আজ স্কুলে আসার সময় ভেবেছিল, আসমার মুখে আমার কথা শুনে ইকবাল নিশ্চয় আসবে। কিন্তু আসমা যখন ঐ কথা বলল, তখন মন খারাপ হলেও কেন জানি তার মনে হয়েছিল ইকবাল আসবে। তাই ছুটির পর গেট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ মোড়ের কাছে কাঁঠাল গাছের তলায় একটা ছেলেকে স্কুলের গেটের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইকবাল বলে সন্দেহ করে। তারপর কাছে এসে তাকে আর দেখতে পায়নি। কারণ ইকবাল খুব সতর্কতার সাথে গাছের আড়ালে ছিল। তাই রুকসানা গাছের কাছে এসে বারবার সেদিকে দেখেছে। আর সেটাই দেখে সালেহা বলে কিরে রুকসানা কারো আসার কথা ছিল নাকি? উত্তরে ফাজলামী করতে নিষেধ করলেও গাছটার কাছে এসে ছেলেটাকে দেখার ইচ্ছা প্রবল হয়েছিল। কিন্তু সাথে মেয়েরা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ঘরে এসে চিন্তা করল, কাঁঠাল গাছের তলার ছেলেটা যদি ইকবাল হয় তা হলে আসমাকে ঐকথা বলার পরও এল কেন? আর এলই যদি আমার সামনে এল না কেন? তা হলে কী ছেলেটা ইকবাল নয়। এইসব চিন্তা করে রাত্রে ভালো করে পড়তে পারল না। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতেও পারল না। চোখ বন্ধ করলে ইকবালের কথা মনে পড়তে লাগল।
পরের দিন স্কুলে আসমা বলল, আজ সকালে ইকবাল ঢাকা চলে গেছে।
রুকসানা বলল, তোর দাইহান ভাইকে ঠিকানা দিয়ে গেছে কিনা জিজ্ঞেস করবি। যদি দিয়ে যায়, লিখে নিয়ে আসবি।
আসমা বলল, দাইহান ভাই যদি জিজ্ঞেস করে ইকবালের ঠিকানা তুমি কী করবে?
রুকসানা বলল, তুই বুদ্ধি খাঁটিয়ে পটিয়ে আদায় করবি। তারপর বলল, কিরে পিরীতের মানুষকে পটাতে পারবি না?
আসমা হেসে উঠে বলল, পারব।
ঐদিন ঘরে ফিরে নাস্তা খেয়ে আসমা দাইহানের ঘরে গেল।
দাইহান ঘরে ছিল না। আসমা জানার ভান করে রহিমন দাদিকে না বলল, দাদি, আপনার নতুন নাতিকে দেখছি না কেন?
রহিমন তার ও দাইহানের সম্পর্কের কথা জানে। তাই হেসে উঠে বলল, নতুন নাতির খোঁজ কেন লো? মনে ধরেছে নাকি? পুরোন নাতির কি হবে তাহলে?
আসমাও কম গেল না। সেও হেসে উঠে বলল, পুরোনো নাতি বেশি লেখাপড়া জানে না। তার উপর খেটে খাওয়া মানুষ। কোনোদিন ঢাকায় বেড়াতে নিয়ে যেতে পারবে না। নতুন নাতি শিক্ষিত, ঢাকায় থাকে। তাই পুরোনটাকে ছেড়ে নতুনকে ধরব। ভাবছি।
আসমা রসিকতা করছে রহিমন বুঝতে পেরে বলল, তোর কপাল খারাপ, নূতন নাতি সকালেই উড়াল দিছে।
আসমা মেকি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ম্লান মুখে বলল, কপাল যখন খারাপ তখন পুরানটাকে আঁকড়ে ধরব। সে আবার না অন্য মেয়ের জন্য উড়াল দেয়। কথা শেষ করে হাসিতে ফেটে পড়ল।
রহিমন হাসতে হাসতে বলল, বেশি লেখাপড়া করে তুই খচরী হয়ে গেছিস। দাঁড়া তোর বাপকে শায়েস্তা করতে বলব।
আসমা দাদির গলা জড়িয়ে বলল, জানি আপনি এসব কথা বলতে পারবেন না। শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছেন কেন? তাছাড়া আব্বা জেনে গেলে আপনার নাতিও পার পাবে না।
রহিমন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ লো বুন, তোদের দু’জনের কথা ভেবে রাতে নিদ আসে না। তোর বাপ কী দাইহানের হাতে তোকে দেবে?
এবার আসমা দাদিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমাদের জন্য আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আল্লাহ তকদিরে যা রেখেছে হবেই। আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া। করবেন। আচ্ছা দাদি, ইকবাল ভাই ঢাকার ঠিকানা দাইহান ভাইয়ের কাছে দিয়ে গেছে কিনা জানেন?
রহিমন বলল, দাইহান ঠিকানা লিখে দিতে বলেছিল। ইকবাল দেয়নি। বলল, আমি যাদের বাড়িতে থাকি তারা ঠিকানা দিতে নিষেধ করেছে।
এখন আসি দাদি স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে বলে আসমা ঘরে ফিরে এল। ঐদিন স্কুলে গিয়ে রুকসানাকে বলল, আজ সাকলে দাইহানের কাছে গেছলাম। সে ঘরে ছিল না। তারপর ইকবালের ঠিকানার ব্যাপারে দাদি যা বলেছে বলল।
রুকসানা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল, ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার যেটুকু আশা ছিল, তাও শেষ হয়ে গেল।
আসমা বলল, ইকবাল ভাইকে তোর ভুলে যাওয়া উচিত। ছোটবেলার কোনো দুর্ঘটনার জন্য তাকে নিয়ে সারাজীবন চিন্তা করা ঠিক নয়।
তুই দাইহানকে ভুলে যেতে পারবি?
আমাদের সঙ্গে তোদের তুলনা করা যায় না। কারণ আমরা ছোটবেলা থেকে একে অপরকে ভালবাসি। তোদের তো সেরকম না।
তাকে থামিয়ে দিয়ে রুকসানা বলল, ওসব কথা আর বলিসনি। আমার ভালো লাগছে না।
৫. ইংলিশে অনার্স থাকায়
ইংলিশে অনার্স থাকায় ইকবাল আমেরিকা গিয়ে খুব ভালো চাকরি পেল। সেখানে একটানা দশ বছর থেকে প্রচুর টাকা উপার্জন করে দেশে ফিরল। অবশ্য এর মধ্যে খালেককে মাঝে মাঝে বেশ কিছু টাকা পাঠিয়েছে। খালেক সেই টাকা দিয়ে প্রথমে চার কামরা করে আট কামরার দোতলা বাড়ি করেছে। তারপর মালেকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মালেকা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হল না, বলল, আমি এম.এ. পাশ করে শিক্ষকতা করব। এম.এ পাশ করা পর্যন্ত খালেক ও ফরিদা মেয়েকে বোঝাল, কিন্তু কোনো লাভ হল না। বড় ভাই হিসাবে রেফাতও বোনকে বোঝাতে কম করল না। তার কথাও শুনল না। তারা বুঝতে পারল, মালেকা ইকবালকে ভুলতে পারে নি। সে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তাই তার বিয়ের চেষ্টা বাদ দিয়ে রেফাতের বিয়ে দিয়েছে। অবশ্য খালেক রেফাতের বিয়ের আগে মালেকার বিয়েতে অমত ও পড়াশোনা করার কথা জানিয়ে রেফাতের বিয়েতে আসবার জন্য ইকবালকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। চিঠি পড়ে ইকবাল ভাবল, নিশ্চয় আমার জন্যই মালেকা বিয়েতে অমত করেছে। রেফাতের বিয়েতে কয়েকদিনের জন্য আসার ইচ্ছা থাকলেও মালেকার কথা জেনে আসেনি।