সবে আনন্দ করো
সবে আনন্দ করো
প্রিয়তম নাথে লয়ে যতনে হৃদয়ধামে ॥
সঙ্গীতধ্বনি জাগাও জগতে প্রভাতে
স্তব্ধ গগন পূর্ণ করো ব্রহ্মনামে ॥
সভায় তোমার থাকি সবার শাসনে
সভায় তোমার থাকি সবার শাসনে,
আমার কণ্ঠে সেথায় সুর কেঁপে যায় ত্রাসনে ॥
তাকায় সকল লোকে,
তখন দেখতে না পাই চোখে
কোথায় অভয় হাসি হাসো আপন আসনে ॥
কবে আমার এ লজ্জাভয় খসাবে,
তোমার একলা ঘরের নিরালাতে বসাবে।
যা শোনাবার আছে
গাব ওই চরণের কাছে,
দ্বারের আড়াল হতে শোনে বা কেউ না শোনে ॥
সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ
সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ–
হে ভৈরব, শক্তি দাও, ভক্ত-পানে চাহো ॥
দূর করো মহারুদ্র যাহা মুগ্ধ, যাহা ক্ষুদ্র–
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ প্রাণের উৎসাহ ॥
দুঃখের মন্থনবেগে উঠিবে অমৃত,
শঙ্কা হতে রক্ষা পাবে যারা মৃত্যুভীত।
তব দীপ্ত রৌদ্র তেজে নির্ঝরিয়া গলিবে যে
প্রস্তরশৃঙ্খলোন্মুক্ত ত্যাগের প্রবাহ ॥
সহজ হবি, সহজ হবি, ওরে মন, সহজ হবি
সহজ হবি, সহজ হবি, ওরে মন, সহজ হবি–
কাছের জিনিস দূরে রাখে তার থেকে তুই দূরে র’বি ॥
কেন রে তোর দু হাত পাতা– দান তো না চাই, চাই যে দাতা–
সহজে তুই দিবি যখন সহজে তুই সকল লবি ॥
সহজ হবি, সহজ হবি, ওরে মন, সহজ হবি–
আপন বচন-রচন হতে বাহির হয়ে আয় রে কবি।
সকল কথার বাহিরেতে ভুবন আছে হৃদয় পেতে,
নীরব ফুলের নয়ন-পানে চেয়ে আছে প্রভাত-রবি ॥
সারা জীবন দিল আলো সূর্য গ্রহ চাঁদ
সারা জীবন দিল আলো সূর্য গ্রহ চাঁদ
তোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু, তোমার আশীর্বাদ ॥
মেঘের কলস ভ’রে ভ’রে প্রসাদবারি পড়ে ঝ’রে,
সকল দেহে প্রভাতবায়ু ঘুচায় অবসাদ–
তোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু, তোমার আশীর্বাদ ॥
তৃণ যে এই ধুলার ‘পরে পাতে আঁচলখানি,
এই-যে আকাশ চিরনীরব অমৃতময় বাণী,
ফুল যে আসে দিনে দিনে বিনা রেখার পথটি চিনে,
এই-যে ভুবন দিকে দিকে পুরায় কত সাধ–
তোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু, তোমার আশীর্বাদ ॥
সার্থক কর সাধন
সার্থক কর’ সাধন,
সান্ত্বন কর’ ধরিত্রীর বিরহাতুর কাঁদন
প্রাণভরণ দৈন্যহরণ অক্ষয়করুণাধন ॥
বিকশিত কর’ কলিকা,
চম্পকবন করুক বচন নব কুসুমাঞ্জলিকা।
কর’ সুন্দর গীতমুখর নীরব আরাধন
অক্ষয়করুণাধন ॥
চরণপরশহরষে
লজ্জিত বনবীথিধূলি সজ্জিত তুমি কর’ সে।
মোচন কর’ অন্তরতর
হিমজড়িমা-বাঁধন
অক্ষয়করুণাধন ॥
সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
সীমার মাঝে, অসীম, তুমি বাজাও আপন সুর।
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর॥
কত বর্ণে কত গন্ধে, কত গানে কত ছন্দে,
অরূপ তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয়পুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর।
তোমায় আমায় মিলন হলে সকলি যায় খুলে–
বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে উঠে তখন দুলে।
তোমার আলোয় নাই তো ছায়া, আমার মাঝে পায় সে কায়া,
হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দরবিধুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর॥
সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে ভ্রমিছ দীনপ্রাণে
সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে ভ্রমিছ দীনপ্রাণে।
সতত হায় ভাবনা শত শত, নিয়ত ভীত পীড়িত–
শির নত কত অপমানে ॥
জানো না রে অধ-ঊর্ধ্বে বাহির-অন্তরে
ঘেরি তোরে নিত্য বাজে সেই অভয়-আশ্রয়।
তোলো আনত শির, ত্যজো রে ভয়ভার,
সতত সরলচিতে চাহো তাঁরি প্রেমমুখপানে ॥
সুখে আমায় রাখবে কেন
সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে।
যাক-না গো সুখ জ্বলে ॥
যাক-না পায়ের তলার মাটি, তুমি তখন ধরবে আঁটি–
তুলে নিয়ে দুলাবে ওই বাহুদোলার দোলে ॥
যেখানে ঘর বাঁধব আমি আসে আসুক বান–
তুমি যদি ভাসাও মোরে চাই নে পরিত্রাণ।
হার মেনেছি, মিটেছে ভয়– তোমার জয় তো আমারি জয়
ধরা দেব, তোমায় আমি ধরব যে তাই হলে ॥
সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে
সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে।
যাক-না গো সুখ জ্বলে॥
থাক-না পায়ের তলার মাটি, তুমি তখন ধরবে আঁটি—
তুলে নিয়ে দুলাবে ওই বাহুদোলার দোলে॥
যেখানে ঘর বাঁধব আমি আসে আসুক বান—
তুমি যদি ভাসাও মোরে চাই নে পরিত্রাণ।
হার মেনেছি, মিটেছে ভয়— তোমার জয় তো আমারি জয়
ধরা দেব, তোমায় আমি ধরব যে তাই হলে॥
সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত
সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত–
স্বর্ণে রত্নে শোভন লোভন জানি, বর্ণে বর্ণে রচিত॥
খড়্গ তোমার আরো মনোহর লাগে বাঁকা বিদ্যুতে আঁকা সে
গরুড়ের পাখা রক্ত রবির রাগে যেন গো অস্ত-আকাশে॥
জীবনশেষের শেষজাগরণসম ঝলসিছে মহাবেদনা–
নিমেষে দহিয়া যাহা-কিছু আছে মম তীব্র ভীষণ চেতনা।
সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত–
খড়্গ তোমার, হে দেব বজ্রপাণি, চরম শোভায় রচিত॥
সুন্দর বহে আনন্দমন্দানিল
সুন্দর বহে আনন্দমন্দানিল,
সমুদিত প্রেমচন্দ্র, অন্তর পুলকাকুল॥
কুঞ্জে কুঞ্জে জাগিছে বসন্ত পুণ্যগন্ধ,
শূন্যে বাজিছে রে অনাদি বীণাধ্বনি॥
অচল বিরাজ করে
শশীতারামণ্ডিত সুমহান সিংহাসনে ত্রিভুবনেশ্বর॥
পদতলে বিশ্বলোক রোমাঞ্চিত,
জয় জয় গীত গাহে সুরনর॥
সুর ভুলে যেই ঘুরে বেড়াই কেবল কাজে
সুর ভুলে যেই ঘুরে বেড়াই কেবল কাজে
বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ত্সনা যে॥
উধাও আকাশ উদার ধরা সুনীল-শ্যামল-সুধায়-ভরা
মিলায় দূরে, পরশ তাদের মেলে না যে—
বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ত্সনা যে॥
বিশ্ব যে সেই সুরের পথের হাওয়ায় হাওয়ায়
চিত্ত আমার ব্যাকুল করে আসা-যাওয়ায়।
তোমায় বসাই এ-হেন ঠাঁই ভুবনে মোর আর-কোথা নাই,
মিলন হবার আসন হারাই আপন মাঝে—
বুকে বাজে তোমার চোখের ভর্ত্সনা যে॥