হে তাপস তব শুষ্ক কঠোর রূপের গভীর রসে
হে তাপস, তব শুষ্ক কঠোর রূপের গভীর রসে
মন আজি মোর উদাস বিভোর কোন্ সে ভাবের বশে॥
তব পিঙ্গল জটা হানিছে দীপ্ত ছটা,
তব দৃষ্টির বহ্নিবৃষ্টি অন্তরে গিয়ে পশে॥
বুঝি না, কিছু না জানি
মর্মে আমার মৌন তোমার কী বলে রুদ্রবাণী।
দিগ্দিগন্ত দহি দুঃসহ তাপ বহি
তব নিশ্বাস আমার বক্ষে রহি রহি নিশ্বসে॥
সারা হয়ে এলে দিন
সন্ধ্যামেঘের মায়ার মহিমা নিঃশেষে হবে লীন।
দীপ্তি তোমার তবে শান্ত হইয়া রবে,
তারায় তারায় নীরব মন্ত্রে ভরি দিবে শূন্য সে॥
হে মাধবী দ্বিধা কেন
হে মাধবী, দ্বিধা কেন, আসিবে কি ফিরিবে কি–
আঙিনাতে বাহিরিতে মন কেন গেল ঠেকি॥
বাতাসে লুকায়ে থেকে কে যে তোরে গেছে ডেকে,
পাতায় পাতায় তোরে পত্র সে যে গেছে লেখি॥
কখন্ দখিন হতে কে দিল দুয়ার ঠেলি,
চমকি উঠিল জাগি চামেলি নয়ন মেলি।
বকুল পেয়েছে ছাড়া, করবী দিয়েছে সাড়া,
শিরীষ শিহরি উঠে দূর হতে কারে দেখি॥
হে সন্ন্যাসী
হে সন্ন্যাসী,
হিমগিরি ফেলে নীচে নেমে এলে কিসের জন্য।
কুন্দমালতী করিছে মিনতি, হও প্রসন্ন॥
যাহা-কিছু ম্লান বিরস জীর্ণ দিকে দিকে দিলে করি বিকীর্ণ।
বিচ্ছেদভারে বনচ্ছায়ারে করে বিষণ্ন– হও প্রসন্ন॥
সাজাবে কি ডালা, গাঁথিবে কি মালা মরণসত্রে!
তাই উত্তরী নিলে ভরি ভরি শুকানো পত্রে?
ধরণী যে তব তাণ্ডবে সাথি প্রলয়বেদনা নিল বুকে পাতি।
রুদ্র, এবারে বরবেশে তারে করো গো ধন্য– হও প্রসন্ন॥
হেমন্তে কোন্ বসন্তেরই বাণী
হেমন্তে কোন্ বসন্তেরই বাণী পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি॥
বকুল ডালের আগায় জ্যোৎস্না যেন ফুলের স্বপন লাগায়।
কোন্ গোপন কানাকানি পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি॥
আবেশ লাগে বনে শ্বেতকরবীর অকাল জাগরণে।
ডাকছে থাকি থাকি ঘুমহারা কোন্ নাম-না-জানা পাখি।
কার মধুর স্মরণখানি পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি॥
হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে
হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে
সেই সজল কাজল আঁখি পড়িল মনে॥
অধর করুণা-মাখা, মিনতিবেদনা-আঁকা
নীরবে চাহিয়া থাকা বিদায়খনে॥
ঝরঝর ঝরে জল, বিজুলি হানে,
পবন মাতিছে বনে পাগল গানে।
আমার পরানপুটে কোন্খানে ব্যথা ফুটে,
কার কথা জেগে উঠে হৃদয়কোণে॥