ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান–
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান–
আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ॥
তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
তোমার ঝাউয়ের দোলে
মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান॥
পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাপতির পাখা
আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন-স্বপন-মাখা।
তোমার চাঁদের আলোয়
মিলায় আমার দুঃখসুখের সকল অবসান॥
ফাগুন-হাওয়ায় রঙে রঙে
ফাগুন-হাওয়ায় রঙে রঙে পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
গোলাপ জবা পারুল পলাশ পারিজাতের বুকের ‘পরে॥
সেইখানে মোর পরানখানি যখন পারি বহে আনি,
নিলাজ-রাঙা পাগল রঙে রঙিয়ে নিতে থরে থরে॥
বাহির হলেম ব্যাকুল হাওয়ার উতল পথের চিহ্ন ধরে–
ওগো তুমি রঙের পাগল, ধরব তোমায় কেমন করে।
কোন্ আড়ালে লুকিয়ে রবে, তোমায় যদি না পাই তবে
রক্তে আমার তোমার পায়ের রঙ লেগেছে কিসের তরে॥
ফাগুন-হাওয়ায় রঙে রঙে পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
ফাগুন-হাওয়ায় রঙে রঙে পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
গোলাপ জবা পারুল পলাশ পারিজাতের বুকের ‘পরে॥
সেইখানে মোর পরানখানি যখন পারি বহে আনি,
নিলাজ-রাঙা পাগল রঙে রঙিয়ে নিতে থরে থরে॥
বাহির হলেম ব্যাকুল হাওয়ার উতল পথের চিহ্ন ধরে–
ওগো তুমি রঙের পাগল, ধরব তোমায় কেমন করে।
কোন্ আড়ালে লুকিয়ে রবে, তোমায় যদি না পাই তবে
রক্তে আমার তোমার পায়ের রঙ লেগেছে কিসের তরে॥
ফাগুনের নবীন আনন্দে
ফাগুনের নবীন আনন্দে
গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে॥
দিল তারে বনবীথি কোকিলের কলগীতি,
ভরি দিল বকুলের গন্ধে॥
মাধবীর মধুময় মন্ত্র
রঙে রঙে রাঙালো দিগন্ত।
বাণী মম নিল তুলি পলাশের কলিগুলি,
বেঁধে দিল তব মণিবন্ধে॥
ফাগুনের পূর্ণিমা এল কার লিপি হাতে
ফাগুনের পূর্ণিমা এল কার লিপি হাতে।
বাণী তার বুঝি না রে, ভরে মন বেদনাতে॥
উদয়শৈলমূলে জীবনের কোন্ কূলে
এই বাণী জেগেছিল কবে কোন্ মধুরাতে॥
মাধবীর মঞ্জরী মনে আনে বারে বারে
বরণের মালা গাঁথা স্মরণের পরপারে।
সমীরণে কোন্ মায়া ফিরিছে স্বপনকায়া,
বেণুবনে কাঁপে ছায়া অলখ-চরণ-পাতে॥
ফাগুনের শুরু হতেই শুকনো পাতা ঝরল যত
ফাগুনের শুরু হতেই শুকনো পাতা ঝরল যত
তারা আজ কেঁদে শুধায়, ‘সেই ডালে ফুল ফুটল কি গো,
ওগো কও ফুটল কত।’
তারা কয়, ‘হঠাৎ হাওয়ায় এল ভাসি
মধুরের সুদূর হাসি হায়।
খ্যাপা হাওয়ায় আকুল হয়ে ঝরে গেলেম শত শত।’
তারা কয়, ‘আজ কি তবে এসেছে সে নবীন বেশে।
আজ কি তবে এত ক্ষণে জাগল বনে যে গান ছিল মনে মনে।
সেই বারতা কানে নিয়ে
যা ই যাই চলে এই বারের মতো।’
বকুলগন্ধে বন্যা এল দখিন হাওয়ার স্রোতে
বকুলগন্ধে বন্যা এল দখিন হাওয়ার স্রোতে।
পুষ্পধনু, ভাসাও তরী নন্দনতীর হতে॥
পলাশকলি দিকে দিকে তোমার আখর দিল লিখে,
চঞ্চলতা জাগিয়ে দিল অরণ্যে পর্বতে॥
আকাশপারে পেতে আছে একলা আসনখানি,–
নিত্যকালের সেই বিরহীর জাগল আশার বাণী॥
পাতায় পাতায় ঘাসে ঘাসে নবীন প্রাণের পত্র আসে,
পলাশ-জবায় কনকচাঁপায় অশোকে অশ্বথে॥
বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা আষাঢ় তোমার মালা
বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা, আষাঢ় তোমার মালা।
তোমার শ্যামল শোভার বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা ॥
তোমার মন্ত্রবলে পাষাণ গলে, ফসল ফলে–
মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফুলের ডালা ॥
মরোমরো পাতায় পাতায় ঝরোঝরো বারির রবে
গুরুগুরু মেঘের মাদল বাজে তোমার কী উৎসবে।
সবুজ সুধার ধারায় প্রাণ এনে দাও তপ্ত ধারায়,
বামে রাখ ভয়ঙ্করী বন্যা মরণ-ঢালা ॥
বন্ধু রহো রহো সাথে
বন্ধু, রহো রহো সাথে
আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে।
ছিলে কি মোর স্বপনে সাথিহারা রাতে॥
বন্ধু, বেলা বৃথা যায় রে
আজি এ বাদলে আকুল হাওয়ায় রে–
কথা কও মোর হৃদয়ে, হাত রাখো হাতে॥
বসন্ত তার গান লিখে যায় ধূলির ‘পরে
বসন্ত তার গান লিখে যায় ধূলির ‘পরে কী আদরে॥
তাই সে ধূলা ওঠে হেসে বারে বারে নবীন বেশে,
বারে বারে রূপের সাজি আপনি ভরে কী আদরে॥
তেমনি পরশ লেগেছে মোর হৃদয়তলে,
সে যে তাই ধন্য হল মন্ত্রবলে।
তাই প্রাণে কোন্ মায়া জাগে, বারে বারে পুলক লাগে,
বারে বারে গানের মুকুল আপনি ধরে কী আদরে॥
বসন্ত তোর শেষ করে দে
বসন্ত, তোর শেষ করে দে, শেষ করে দে, শেষ করে দে রঙ্গ–
ফুল ফোটাবার খ্যাপামি, তার উদ্দাম তরঙ্গ॥
উড়িয়ে দেবার, ছড়িয়ে দেবার মাতন তোমার থামুক এবার,
নীড়ে ফিরে আসুক তোমার পথহারা বিহঙ্গ॥
তোমার সাধের মুকুল কতই পড়ল ঝরে–
তারা ধুলা হল, তারা ধুলা দিল ভরে।
প্রখর তাপে জরোজরো ফল ফলাবার শাসন ধরো,
হেলাফেলার পালা তোমার এই বেলা হ’ক ভঙ্গ॥
বসন্তে আজ ধরার চিত্ত হল উতলা
বসন্তে আজ ধরার চিত্ত হল উতলা,
বুকের ‘পরে দোলে দোলে দোলে দোলে রে তার পরানপুতলা ॥
আনন্দেরই ছবি দোলে দিগন্তেরই কোলে কোলে,
গান দুলিছে দোলে দোলে গান দুলিছে নীল-আকাশের হৃদয়-উতলা ॥
আমার দুটি মুগ্ধ নয়ন নিদ্রা ভুলেছে।
আজি আমার হৃদয়দোলায় কে গো দুলিছে।
দুলিয়ে দিল সুখের রাশি লুকিয়ে ছিল যতেক হাসি–
দুলিয়ে দিল দোলে দোলে দুলিয়ে দিল জনম-ভরা ব্যথা অতলা ॥