শোন্ রে শোন্ অবোধ মন
শোন্ রে শোন্ অবোধ মন,–
শোন্ সাধুর উক্তি, কিসে মুক্তি সেই সুযুক্তি কর্ গ্রহণ।
ভবের শুক্তি ভেঙে মুক্তিমুক্তা কর্ অন্বেষণ,
ওরে ও ভোলা মন ।।
সখা, সাধিতে সাধাতে কত সুখ
সখা, সাধিতে সাধাতে কত সুখ
তাহা বুঝিলে না তুমি— মনে রয়ে গেল দুখ।।
অভিমান-আঁখিজল, নয়ন ছলছল—
মুছাতে লাগে ভালো কত
তাহা বুঝিলে না তুমি— মনে রয়ে গেল দুখ ।।
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে ।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময় ।
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ ।
আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত ।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।
আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে—
সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ ।
প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা—
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।।
খী, আর কত দিন সুখহীন শান্তিহীন
সখী, আর কত দিন সুখহীন শান্তিহীন
হা হা করে বেড়াইব নিরাশ্রয় মন লয়ে ।
পারি নে, পারি নে আর— পাষাণ মনের ভার
বহিয়া পড়েছি, সখী, অতি শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে ।
সম্মুখে জীবন মম হেরি মরুভূমিসম,
নিরাশা বুকেতে বসি ফেলিতেছে বিষশ্বাস ।
উঠিতে শকতি নাই যে দিকে ফিরিয়া চাই
শূন্য—শূন্য—মহাশূন্য নয়নেতে পরকাশ ।
কে আছে, কে আছে সখী, এ শ্রান্ত মস্তক মম
বুকেতে রাখিবে ঢাকি যতনে জননীসম ।
মন, যত দিন যায়, মুদিয়া আসিছে হায়—
শুকায়ে শুকায়ে শেষে মাটিতে পড়িবে ঝরি ।।
সাধ ক’রে কেন, সখা, ঘটাবে গেরো
সাধ ক’রে কেন, সখা, ঘটাবে গেরো ।
এই বেলা মানে-মানে ফেরো ফেরো ।
পলক যে নাই আঁখির পাতায়,
তোমার মনটা কি খরচের খাতায়—
হাসি ফাঁসি দিয়ে প্রাণে বেঁধেছে গেরো ।
সখা, ফেরো ফেরো ।।
সে আসি কহিল, ‘প্রিয়ে, মুখ তুলে চাও
সে আসি কহিল, ‘প্রিয়ে, মুখ তুলে চাও।’
দুষিয়া তাহারে রুষিয়া কহিনু, ‘যাও !’
সখী ওলো সখী, সত্য করিয়া বলি, তবু সে গেল না চলি।
দাঁড়ালো সমুখে; কহিনু তাহারে, ‘সরো !’
ধরিল দু হাত; কহিনু, ‘আহা, কী কর !’
সখী ওলো সখী, মিছে না কহিব তোরে, তবু ছাড়িল না মোরে।
শ্রুতিমূলে মুখ আনিল সে মিছিমিছি।
নয়ন বাঁকায়ে কহিনু তাহারে, ‘ছি ছি !’
সখী ওলো সখী, কহি লো শপথ ক’রে তবু সে গেল না স’রে ।
অধরে কপোল পরশ করিল তবু।
কাঁপিয়া কহিনু, ‘এমন দেখি নি কভু।’
সখী ওলো সখী, একি তার বিবেচনা, তবু মুখ ফিরালো না।
আপন মালাটি আমারে পরায়ে দিল।
কহিনু তাহারে, ‘মালায় কী কাজ ছিল !’
সখী ওলো সখী, নাহি তার লাজ ভয়, মিছে তারে অনুনয়।।
আমার মালাটি চলিল গলায় লয়ে।
চাহি তার পানে রহিনু অবাক হয়ে।
সখী ওলো সখী, ভাসিতেছি আঁখিনীরে— কেন সে এল না ফিরে।।
হা-আ-আ-আই
হা-আ-আ-আই।
নাই কাজ নাই।
দিন যায়, দিন যায়।
আয় আয়, আয় আয়।
হাতে কাজ নাই।।
রাগ: পূরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1340
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1933
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ
এই গানটি “তাসের দেশ” গ্রন্থে আছে
হৃদয়ে রাখো গো দেবী, চরণ তোমার
হৃদয়ে রাখো গো দেবী, চরণ তোমার ।
এসো মা করুণারানী, ও বিধুবদনখানি
হেরি হেরি আঁখি ভরি হেরিব আবার ।
এসো আদরিনী বাণী, সমুখে আমার ।।
মৃদু মৃদু হাসি হাসি বিলাও অমৃতরাশি,
আলোয় করেছ আলো, জ্যোতিপ্রতিমা—
তুমি গো লাবণ্যলতা, মূর্তি-মধুরিমা ।
বসন্তের বনবালা অতুল রূপের ডালা,
মায়ার মোহিনী মেয়ে ভাবের আধার—
ঘুচাও মনের মোর সকল আঁধার ।।
অদর্শন হলে তুমি ত্যেজি লোকালয়ভূমি
অভাগা বেড়াবে কেঁদে গহনে গহনে ।
হেরে মোরে তরুলতা বিষাদে কবে না কথা,
বিষণ্ণ কুসুমকুল বনফুলবনে ।
‘হা দেবী’ ‘হা দেবী’ বলি গুঞ্জরি কাঁদিবে অলি,
ঝরিবে ফুলের চোখে শিশির-আসার—
হেরিব জগত শুধু আঁধার—আঁধার ।।