ড়ো থাকি কাছাকাছি
বড়ো থাকি কাছাকাছি,
তাই ভয়ে ভয়ে আছি ।
নয়ন বচন কোথায় কখন
বাজিলে বাঁচি না-বাঁচি।।
ভাঙা দেউলের দেবতা
ভাঙা দেউলের দেবতা,
তব বন্দনা রচিতে, ছিন্না বীণার তন্ত্রী বিরতা ।
সন্ধ্যাগগনে ঘোষে না শঙ্খ তোমার আরতিবারতা ।
তব মন্দির স্থিরগম্ভীর, ভাঙা দেউলের দেবতা ।।
তব জনহীন ভবনে
থেকে থেকে আসে ব্যাকুল গন্ধ নববসন্তপবনে ।
যে ফুলে রচে নি পূজার অর্ঘ্য, রাখে নি ও রাঙা চরণে,
সে ফুল ফোটার আসে সমাচার জনহীন ভাঙা ভবনে ।।
পূজাহীন তব পূজারি
কোথা সারা দিন ফিরে উদাসীন কার প্রসাদের ভিখারি ।
গোধূলিবেলায় বনের ছায়ায় চির-উপবাস-ভুখারি
ভাঙা মন্দিরে আসে ফিরে ফিরে পূজাহীন তব পূজারি ।
ভাঙা দেউলের দেবতা,
কত উৎসব হইল নীরব, কত পূজানিশা বিগতা ।
কত বিজয়ায় নবীন প্রতিমা কত যায় কত কব তা—
শুধু চিরদিন থাকে সেবাহীন ভাঙা দেউলের দেবতা ।।
ভালো যদি বাস, সখী, কী দিব গো আর
ভালো যদি বাস, সখী, কী দিব গো আর—
কবির হৃদয় এই দিব উপহার ।।
এত ভালোবাসা, সখী, কোন্ হৃদে বলো দেখি—
কোন্ হৃদে ফুটে এত ভাবের কুসুমভার ।।
তা হলে এ হৃদিধামে তোমারি তোমারি নামে
বাজিবে মধুর স্বরে মরমবীণার তার ।
যা-কিছু গাহিব গান ধ্বনিবে তোমারি নাম—
কী আছে কবির বলো, কী তোমারে দিব আর ।।
ভালোবাসিলে যদি সে ভালো না বাসে কেন সে দেখা দিল
ভালোবাসিলে যদি সে ভালো না বাসে কেন সে দেখা দিল ।
মধু অধরের মধুর হাসি প্রাণে কেন বরষিল ।
দাঁড়িয়ে ছিলেম পথের ধারে, সহসা দেখিলেম তারে—
নয়ন দুটি তুলে কেন মুখের পানে চেয়ে গেল ।।
ভিক্ষে দে গো, ভিক্ষে দে
ভিক্ষে দে গো, ভিক্ষে দে ।
দ্বারে দ্বারে বেড়াই ঘুরে, মুখ তুলে কেউ চাইলি নে ।
লক্ষ্মী তোদের সদয় হোন, ধনের উপর বাড়ুক ধন—
আমি একটি মুঠো অন্ন চাই গো, তাও কেন পাই নে ।
ওই রে সূর্য উঠল মাথায়, যে যার ঘরে চলেছে ।
পিপাসাতে ফাটছে ছাতি, চলতে আর যে পারি নে ।
ওরে তোদের অনেক আছে, আরো অনেক হবে—
একটি মুঠো দিবি শুধু আর কিছু চাহি নে ।।
ভুলে ভুলে আজ ভুলময়
ভুলে ভুলে আজ ভুলময় ।
ভুলের লতায় বাতাসের ভুলে
ফুলে ফুলে হোক ফুলময় ।
আনন্দ-ঢেউ ভুলের সাগরে
উছলিয়া হোক কূলময় ।।
মধুঋতু নিত্য হয়ে রইল তোমার মধুর দেশে
মধুঋতু নিত্য হয়ে রইল তোমার মধুর দেশে–
যাওয়া-আসার কান্নাহাসি হাওয়ায় সেথা বেড়ায় ভেসে ।
যায় যে জনা সেই শুধু যায়, ফুল ফোটা তো ফুরোয় না হায়–
ঝরবে যে ফুল সেই কেবলই ঝরে পড়ে বেলাশেষে ।।
যখন আমি ছিলেম কাছে তখন কত দিয়েছি গান–
এখন আমার দূরে যাওয়া, এরও কি গো নাই কোনো দান ।
পুষ্পবনের ছায়ায় ঢেকে এই আশা তাই গেলেম রেখে–
আগুন-ভরা ফাগুনকে তোর কাঁদায় যেন আষাঢ় এসে ।।
রাগ: অজ্ঞাত
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1322
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1916
মধুর মিলন। হাসিতে মিলেছে হাসি, নয়নে নয়ন
মধুর মিলন।
হাসিতে মিলেছে হাসি, নয়নে নয়ন।।
মরমর মৃদু বাণী মরমর মরমে,
কপোলে মিলায় হাসি সুমধুর শরমে— নয়নে স্বপন।।
তারাগুলি চেয়ে আছে, কুসুম গাছে গাছে—
বাতাস চুপিচুপি ফিরিছে কাছে কাছে।
মালাগুলি গেঁথে নিয়ে, আড়ালে লুকাইয়ে
সখীরা নেহারিছে দোঁহার আনন—
হেসে আকুল হল বকুলকানন, আ মরি মরি ।।
মা আমার, কেন তোরে ম্লান নেহারি
মা আমার, কেন তোরে ম্লান নেহারি—
আঁখি ছলছল, আহা।
ফুলবনে সখী-সনে খেলিতে খেলিতে হাসি হাসি দে রে করতারি।।
আয় রে বাছা, আয় রে কাছে আয়।
দু দিন রহিবি, দিন ফুরায়ে যায়—
কেমনে বিদায় দেব’ হাসিমুখ না হেরি।।
যখন দেখা দাও নি, রাধা, তখন বেজেছিল বাঁশি
যখন দেখা দাও নি, রাধা, তখন বেজেছিল বাঁশি !
এখন চোখে চোখে চেয়ে সুর যে আমার গেল ভাসি !
তখন নানা তানের ছলে
ডাক ফিরেছে জলে স্থলে,
এখন আমার সকল কাঁদা রাধার রূপে উঠল হাসি ।।
রাগ: অজ্ঞাত
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1322
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1915
এই গানটি “ঘরে বাইরে” গ্রন্থে আছে
যে ভালোবাসুক সে ভালোবাসুক সজনি লো, আমরা কে
যে ভালোবাসুক সে ভালোবাসুক সজনি লো, আমরা কে !
দীনহীন এই হৃদয় মোদের কাছেও কি কেহ ডাকে ।।
তবে কেন বলো ভেবে মরি মোরা কে কাহারে ভালোবাসে !
আমাদের কিবা আসে যায় বলো কেবা কাঁদে কেবা হাসে !
আমাদের মন কেহই চাহে না, তবে মনখানি লুকানো থাক্—
প্রাণের ভিতরে ঢাকিয়া রাখ্ ।।
যদি, সখী, কেহ ভুলে মনখানি লয় তুলে,
উলটি-পালটি ক্ষণেক ধরিয়া পরখ করিয়া দেখিতে চায়,
তখনি ধূলিতে ছুঁড়িয়া ফেলিবে নিদারুণ উপেখায়।
কাজ কী লো, মন লুকানো থাক্, প্রাণের ভিতরে ঢাকিয়া রাখ্—
হাসিয়া খেলিয়া ভাবনা ভুলিয়া হরষে প্রমোদে মাতিয়া থাক্ ।।
যেখানে রূপের প্রভা নয়ন-লোভা
যেখানে রূপের প্রভা নয়ন-লোভা
সেখানে তোমার মতন ভোলা কে ঠাকুরদাদা ।
যেখানে রসিকসভা পরম-শোভা
সেখানে এমন রসের ঝোলা কে ঠাকুরদাদা ।
যেখানে গলাগলি কোলাকুলি
তোমারি বেচা-কেনা সেই হাটে,
পড়ে না পদধূলি পথ ভুলি
যেখানে ঝগড়া করে ঝগ্ড়াটে ।।
যেখানে ভোলাভুলি খোলাখুলি
সেখানে তোমার মতন খোলা কে ঠাকুরদাদা ।।
যোগী হে, কে তুমি হৃদি-আসনে
যোগী হে, কে তুমি হৃদি-আসনে !
বিভূতিভূষিত শুভ্র দেহ, নাচিছ দিক্-বসনে ।।
মহা-আনন্দে পুলক কায়, গঙ্গা উথলি উছলি যায়,
ভালে শিশুশশী হাসিয়া চায়—
জটাজূট ছায় গগনে ।।