যদি দেখি, না,-
নারী তার অলঙ্কার
মাঠ তার তৃণের সবুজ
শিশু তার ত্রিভুজ-শুভ্রতা পেয়ে গেছে;
যদি দেখি, না,
পৃথিবীর কোথাও এখন আর যুদ্ধ নেই, ঘৃণা নেই, ক্ষয়ক্ষতি নেই।
তাহলেই হাসতে হাসতে যে যার আপন ঘরে
আমরাও ফিরে যেতে পারি!
হাসতে হাসতে যে যার গন্তব্যে আমরা ফিরে যেতে পারি!
*
সাইকেল
সাইকেল ছিল প্রতিবেশীর কলেরা রোগে দ্বিপ্রহরে কাফন মতো রৌদ্র খুলে
শ্যাম ডাক্তারকে ডেকে আনা;
সাইকেল ছিল মেঘমাখানো বিকেলে খালার পাহাড়ভূমির সে স্থলপদ্ম!
রাত্রিবেলা নারীশরীরের শৌখিন ঘর! আঙ্গিনাতে কাঠবাদাম!
সাইকেল ছিল মরণদাসীর বৈষ্ণবআখড়া, শীতকল্যাণে
খুলনা গিয়ে ছবিঘরে সচল দৃশ্য!
লম্বালম্বি গাছের মতো মর্মরিত সেই লোকটা,
সন্তপুরুষ বাল্মীকিকে দেখিনি, কিন্তু তাকে দেখে মনে হতো,
বাল্মীকি কি অমন ছিলেন?
সাইকেল ছিল বাঁশবেড়িয়ার বাঁশের সাঁকো,
কুমারী মেয়ের আত্মহত্যা,
যুক্তফ্রন্টের ইলেকশনে কিশোর ক’জন
স্কুলবোর্ডিং-এ শরণার্থী সারাটা রাত কাটিয়ে দিলুম হরিণ নিয়ে!
সেই হরিণটা আর দেখিনা, বুকেও নয় বনেও নয়!
সে জ্যোৎস্নাও আর আসে না!
সাইকেল ছিল পরস্পরের কুশলবার্তা, নম্রতায়িত
লঞ্চে কোরে হরিদাশপুর, একহপ্তাকার কবিগানের গৃহীত শ্রোতা,
সাইকেল ছিল যেদিন ওরা মানুষ মারলো মানুষ মারলো অপকৃষ্ট
সেদিন স্বর্গ ধর্ম ভাঙা লাথি মেরে ঈশ্বরমূলে।
*
ক্লান্ত কিশোর তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়
দুপুর ঘুরে কিশোর তুমি বিকেলবেলায়
বাড়ি ফিরলে ক্লান্ত দেখায় ক্লান্ত দেখায়।
ক্লান্ত মুখটি ক্লান্ত দেখায়, ক্লান্ত চোখটি ক্লান্ত দেখায়।
দুপুর ঘুরে কিশোর তুমি বিকেলবেলায়
বাড়ি ফিরলে ক্লান্ত দেখায়! ক্লান্ত দেখায়!
কোথায় ঘোরে সারাদুপুর, ক্লান্ত কিশোর কোথায় ঘোরে?
বুকের মধ্যে কিসের একটা কঠিন দুঃখ রুক্ষ দুপুর শাসন করে,
কিশোর তুমি তার ভিতর বসেই থাকো বাড়ি ফেরোনি… বাড়ি ফেরোনা!
একহারা শরীর দোহারা জামা, দু’হাত যেনো দগ্ধ তামা,
অভিমানে বাড়ি ফেরোনা, রক্ত চক্ষু শক্ত চোয়াল
সূর্য ঘেরা সকল দেয়াল ভেঙে তুমি কোথায় যে যাও…
অভিমানে বাড়ি ফেরোনা বাড়ি ফেরোনা!
উত্তোলিত হাতের মুষ্ঠি, কী তুমি চাও?
সর্বনাশ? না সুহৃদ আকাশ? ফিরে তাকাওনা, রাস্তা চলো?
কিসের একটা কঠিন দুঃখ যেনো তোমাকে পাথর ছোড়ে
যেনো তোমাকে আউছি করে?
অভিমানে বাড়ি ফেরোনা, সারাদুপুর বাড়ি ফেরোনা বাড়ি ফেরোনা
কোথায় যে যাও…
বিকেলবেলায় যখোন ফেরাও পা দুটিকে, ক্লান্ত দেখায়
ক্লান্ত কিশোর তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়,
ক্লান্ত দেখায়! তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়!
*
স্রোতে রাজহাঁস আসছে
পুনর্বার স্রোতে ভাসছে হাঁস, ভাসতে দাও
কোমল জলের ঘ্রাণ মাখুক হাঁসেরা;
বহুদিন পর ওরা জলে নামছে, বহুদিন পর ওরা কাটছে সাঁতার
স্রোতে রাজহাঁস আসছে, আসতে দাও,
বহুদিন পর যেনো রোদ আসছে, আসতে দাও
নত হতে দাও আকাশকে,
আর একটু নত হোক আলো
আর একটু নির্জন হোক অন্ধকার!
আজ তুমি, পরে নাও তোমার গহনা, দুল
তোমার আঙ্গুল হোক হেমন্তের ফুল,
আমি শুঁকি, শুঁকতে দাও!
বহুদিন পর যেনো শুঁকছি বকুল!
বহুদিন তোমার ভিতরে যাইনা, বহুদিন বকুল ফুলের ঘ্রাণ।
পাইনা এ মনে!
মনে করতে দাও তবু কোনখানে বকুলবাগান ছিল
গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি
উঁচু আসন, সিংহাসন
মনে করো, মনে কোরে নাও
আমাদেরও সিংহাসন আছে আজও
আমাদের হাজার দুয়ারী বাড়ি আছে
মাটির ময়ূর, ঠোঁটে ঠোঁটে, ফুলে ফুল
লুকোনো ডাকবাকস আছে সবুজের কাছে
মনে করো আমাদেরও ভালোবাসা আছে
খাগের কলমে লেখা তাদের অক্ষরগুলি
ধানের শীষের মতো টলমলায় সেখানে শরীরে
তুমি মনে করো, মনে করে নাও
তোমার শরীরে শাড়ি,
গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি
আলো আর অন্ধকার মনে করো, মনে করে নাও
আমরা নৌকার জলে ভাসতে ভাসতে যেনো প্রতীকের হাঁস
ঐ রাজহাঁস
জল থেকে আরো জলে,
ঢেউ থেকে আরো ঢেউয়ে ছড়াতে ছড়াতে
পৌঁছে যাবো আগে।
*
মানুষ
(মুশাররফ রসুলকে)
আমি যেনো আবহমান থাকবো বসে
ঠুকরে খাবো সূর্যলতা গাছের শিকড়
অন্ধকারের জল!
আমি যেনো অনাদিকাল থাকবো বসে
বিশ্রুতিময় জীবনে কল্লোল।
আমি যেনো আবহমান থাকবো বসে
আবহমান আমিই কল্লোল
সময় থেকে সভ্যতাকে রাখবো ঢেকে
যুদ্ধ মড়ক নগ্ন ফলাফল।