প্রথম যে কার ঠোঁটে চুমু খাই মনে নেই
প্রথম কোনদিন আমি স্নান করি মনে নেই।
কবে কাঁচা আম নুন লঙ্কা দিয়ে খেতে খেতে
দাঁত টক হয়েছিল মনে নেই
মনে নেই কবে যৌবনের প্রথম মিথুন আমি ঘটিয়েছিলাম
মনে নেই…
যা কিছু আমার মনে নেই তাই হলো সুখ!
আহ! সে সুখ…
*
অসভ্য দর্শন
(নির্মলেন্দু গুণকে)
দালান উঠছে তাও রাজনীতি, দালান ভাঙছে তাও রাজনীতি,
দেবদারু কেটে নিচ্ছে নরোম কুঠার তাও রাজনীতি,
গোলাপ ফুটছে তাও রাজনীতি, গোলাপ ঝরছে তাও রাজনীতি!
মানুষ জন্মাচ্ছে তাও রাজনীতি, মানুষ মরছে তাও রাজনীতি!
বোন তার বেণী খুলছে যৌবনের অসহায় রোদে মুখ নত কোরে
বুকের ভ্রমর হাতে রাখছে লুকিয়ে- তাও রাজনীতি
তরুণেরা অধঃপাতে যাচ্ছে তাও রাজনীতি পুনরায়
মারামারি যুদ্ধ আর অত্যাচার, হত্যার আগ্রসী খুন মানুষের
ছাড়ানো বীর্যের ব্যথা, বিষণ্ণ মিথুন
মহিলার রক্তের ভিতরে ভ্রুণ, সমস্যার ছদ্মবেশে আবার আগুন
উর্বর হচ্ছে, রাজনীতি, তাও রাজনীতি!
আমি পকেটে দুর্ভিক্ষ নিয়ে একা একা অভাবের রক্তের রাস্তায় ঘুরছি
জীবনের অস্তিত্বে ক্ষুধায় মরছি রাজনীতি, তাও রাজনীতি আর
বেদনার বিষবাষ্পে জর্জরিত এখন সবার চতুর্দিকে খাঁ, খাঁ, খল,
তীব্র এক বেদেনীর সাপ খেলা দেখছি আমি; রাজনীতির তাও কি
রাজনীতি?
*
একটা কিছু মারাত্মক
(মামুনুর রশীদকে)
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে ডাইনীর মতোন কেন কোমর বাঁকানো
একটি চাঁদ উঠব্র জ্যোৎস্নায়
উলুকঝুলুক গাছ,
মানুষের খোলা, আকাশের নীচে রেস্তোরাঁয়
এখানে সেখানে,
সবদিকে
কেন এত রক্তপাত হবে? গুপ্তহত্যা হবে?
কেন জীবনের দ্রব্যমূল্য বাড়বে এত শনৈঃ শনৈঃ
কেন ফুরাবে এমন আমাদের পকেটে সিগ্রেট,
খাদ্য, রূপালী আত্মার ঘ্রাণ রমণী ও টাকা?
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে কেন পাওয়া যায় না প্রেমিকা?
কেন মোমের আলোর শিখা আজকাল
ধীরে জ্বলে,
ধীরে জ্বলে, মাঝরাতে
মহিলার শাড়ি কেন সভ্যতার শোভার মতন
খুলে যায়।
নেমে যায়, আজকাল
কেন এত সহজেই ভেঙে পড়ে কালো চোখ, কোমল যৌবন?
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে কিশোর চেনেনা কেন ঘাস ফুল? ঘাস কেন সবুজের বদলে হলুদ?
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে নয়টি অমল হাঁস
থেঁতলে যায় ট্রাকের চাকায়?
ভালোবাসা, কেবলি…কেবল একটি
বাজেয়াপ্ত শব্দের তালিকা হয়?
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে মানুষের দরোজায় টোকা দিলে কেন আজ দরোজা খোলে না?
‘বৃষ্টি হলে গা জুড়োবে’ কেউ কেন বলেনা এখন?
*
দূরযাত্রা
(আবিদ, শেহাব, সুকান্ত, মনোয়ার ও মাশুককে)
আমি কার কাছে যাবো? কোনদিকে যাবো?
অধঃপতনের ধুম সবদিকে, সভ্যতার সেয়ানা গুণ্ডার মতো
মতবাদ; রাজনীতি, শিল্পকলা শ্বাস ফেলছে এদিকে ওদিকে,
শহরের সবদিকে সাজানো রয়েছে শুধু শাণিত দুর্দিন, বন্যা অবরোধ
আহত বাতাস!
আমি কার কাছে যাবো? কোনদিকে যাবো?
কোন শহরের দিকে যাবো আমি? যৌবনের জ্বলন্ত শিরায় আজ
এই যে জ্বলছে চাঁদ জ্যোৎস্না, চাঁদ জ্যোৎস্না আর জ্যোৎস্নাফুল,
হৃদয়ের ভিতরে ব্যাকুল,
জলছে এই যে স্বপ্ন, স্মৃতি, শব্দ, অলঙ্কার
অভাবের মরীচিকা, এ শহর কার?
এ শহরে জন্মদিবস হয় না? সোনালি যুবতী নেই? চন্দ্রহার
বাহুর বৃত্তের বহ্নি, পিপাসার রক্তসাগরমাখা সমস্যার
সাম্রজ্যে এখানে বুঝি বাজে.না সানাইয়ের সুর?
বসে না উদার তাবু? লাল নীল কার্ণিভাল, আসে না ময়ূর?
এখানে কেবলি ক্ষুধা, মহামারী, মৃত্যুভয়
অবচেতনায়ও যদি আলো-কে নেভায় বলো আমার কি আসে যায় তাতে?
আমি নই ক্রীতদাস, হৃদয়ের আমি তো সম্রাট, আমি
এক লক্ষ রাজহাঁস ছেড়েছি শহরে, আমি জয়ী, আমি জয়ী!
আমি সভ্যতার পরোয়া করি না; সমস্যায় শূন্যতায় এ শহর যদি ফেরে
শত্রু কবলিত হয়,- হলে হোক- মহামারী বাড় ক পাঁজরে আর
মাংসের ভিতরে তার অন্ধকার আগ্রাসী আভায়
ঝরে যায় যদি সব, পুড়ে যায় যদি প্রেম, থোকা থোকা
আমাদের সে উদ্ধত অভিজ্ঞান, ধন্য সব আশা কুহকিনী,
আমি তবু পরোয়া করিনা আমি যে শহরে যাবো,
সে তো শিল্প, সে তো ‘সারাদিন’- পুনর্বার বাংলাভাষার।
সে তো ভোর, রঙ্গীন জলের আয়না, মধ্যরাত, সোনালি সুদিন!
*
মিসট্রেস : ফ্রি স্কুল স্ট্রীট
প্লাস্টিক ক্লিপের মতো সহস্র কোকিল যেই বনভূমি গেঁথে নেয়
সবুজ খোঁপায় ভোরবেলা- ময়ূরের পেখমের মতো খোলা রোদে বসে
ব্লাউসের বোতাম লাগিয়ে মিসট্রেস আসে ইশকুলে আর
কয় ঝাঁক বালকের নির্দোষ নিখিল ভরা ক্লাসরুমে এসেও সে শোনে
বনখোঁপা বাঁধা কোকিলের কাজল কূজন তার চুলে, চমৎকার
চিরোল গ্রীবায়, শেষে গৌর লাজুক শিয়রে শিহরিত শুধু
পেতে গিয়ে এক হারানো প্রেমের ঘ্রাণ, বয়ে নেয় সে তখন
কী যে এক আর্দ্র পরাজয় তার আত্মব্যস্ত অতীতের অথই সীমায়!
দেরি কোরে এসে ইশকুলে ক্লান্ত কর্ণেও ভরে নিতে হয় তাকে মাঝে মাঝে
হেড মিসট্রেসের শ্লীলতাবিহীন সাধুভাষা- আর তাই দেখে করুণাতে
আর্দ্র হও কখনো কি তুমি হে স্ট্রীট? বুঝে নিতে পারো তার বি
খ্যাত বেদনা? নারী, নারীই কেবল যদি বোঝে কোনো নারীর হৃদয়- তবে
তুমি ভূখণ্ডের মানে এই ঢাকা শহরের এক সবুজ তনয়া, নারী
তুমি কি বোঝোনা তার তিরিশ বছর কাল কুমারী থাকার অভিশাপ?
বোঝো না কি
তিরিশ বছর কত কাঁদায় যৌবন ঐ কোকিলের পাষণ্ড রোদন!
মিসট্রেস, কালো মিসট্রেস, করুণকোমল ঐ রোদনরূপসী মিসট্রেস!
যেনো কোনো রেফ্রিজারেটারে তার তুমুল হৃদয় রেখে আসে ইশকুলে,
ক্লান্ত! এখন অধীরা, যেনো কতদিন সে তার নিজের মুখ মোছেনা
আনন্দ অভিধায়!
অভিমানী, সর্বস্ব খোয়োনো ঐ মেয়ে
মানসিক শ্রমে জব্দ জীবনধারিণী!
ওকে দয়া করো,
হে ভোর,
হে স্ট্রীট,
শিশুক্লাস,
আর্ট খাতা,
বনের বিজন
সাঁঝবেলা!
বিষণ্ণ ও কুমারীকে দয়া করো!
দয়া করো!
দয়া করো!
*