কমলালেবুর মধুরবিকাশ স্মৃতি পাল্টে বোলতে চাচ্ছে
দেখে নাওতো কিশোর বেলায় কোন পাগলটা ছিঁড়েছিল প্রথম ফলটা!
ভাঙা বয়স, ভাঙা আয়না, গ্রীবা রেখায় ধুলো জমছে একই বৃত্তে একই সঙ্গে
দেখে যাচ্ছি সত্য বলি সবাই কেমন আত্মগ্রস্থঃ শবাযাত্রীও বোলতে পারো,
এখন আমরা কেউই কাউকে চিনতে চাই না; স্বজন বন্ধু অন্নদাত্রী,
আমরা কেউই চিনিনা কাউকে ব্যক্তিগত পোশাক পরলে!
*
মেঘেরও রয়েছে কাজ
মেঘেরও রয়েছে কাজ
ওকে ছুটি দাও
ওকে দিয়ে দাও ওর কালো আমব্রেলাটি,
ফিরে যাক ও তার তল্লাটে!
প্রকৃতির সব চেয়ে নিম্ন, বেতনভোগী কর্মচারী
ঐ মেঘ,
ওরও তো রয়েছে বহু শিল্পকর্ম,
এবং বাসনা!
ওকে ছুটি দাও,
ওকে দিয়ে দাও ওর কালো আমব্রেলাটি,
ফিরে যাক ও তার তল্লাটে!
*
একলা বাতাস
নোখের ভিতর নষ্ট ময়লা,
চোখের ভিতর প্রেম,
চুলের কাছে ফেরার বাতাস
দেখেই শুধালেম,
এখন তুমি কোথায় যাবে?
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে
রক্তে কি প্রব্লেম?
হঠাৎ তাহার ছায়ায় আমি যেদিকে তাকালেম
তাহার শরীর মাড়িয়ে দিয়ে
দিগন্তে দুইচক্ষু নিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে আমি আমাকে শুধালেম
এখন তুমি কোথায় যাবে?
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে
রক্তে কি প্রব্লেম?
*
গাছগুলো
(শহীদ কাদরীকে)
সজীব গাউন পরা অই গাছগুলো কী রগড় করে যে
হাওয়ার সাথে প্রতিদিন!
সবুজ পাতার মুদ্রা তুলে তুলে নাচে, বক্ষোবাস খুলে খুলে নাচে
নিপুণ নটীর সহোদরা।
সকালে কাঠের খোপ থেকে বের হয়ে মুরগীগুলো
যখোন শস্যকণা খোঁজে,
কাক ও চড়াই চঞ্চু দিয়ে খুঁটে খুঁটে তুলে আনে
টাটকা সুগন্ধী ভোর;
তখনো কোচড় থেকে সোমত্ত সুন্দর গাছগুলো
ঢেলে দেয় মিহি অকসিজেন!
সারারাত শয়নিতা পাখিনীর শয়ন গড়িয়ে রাখে ওরা
প্রাতঃরাশ সাজিয়ে সকালে
সূর্য ওঠার আগে দাঁড়িয়েই থাকে ঠায় পাখির ঘরের কাছে
প্রাকৃতিক চাকর, খানসামা!
সচ্ছল সিন্দুক থেকে বের কোরে দেয় রোজ
ভেষজ ওষুধ ফল,
প্রাণপ্রতিশোধক নির্যাস!
আমরা যখোন শার্টের তলায়
নিজস্ব গোপন ছুরি নিয়ে চলা ফেরা করি
প্রতিমূহুর্তের আয়নায় আত্মহত্যা করি আর
প্রতিমুহূর্তের অবিশ্বাসে।
এর ওর সাথে কথা বলি,
সে মুহূর্তে ওরা বিলায় ওদের নিজস্ব সম্পদ
নির্বিশেষে চুপিচাপি,
বড় মায়া হয় যখোন ওদের দেখি।
কুঠারের ক্রুশে বিদ্ধ মেরীর সন্তান!
*
শীতে ভালোবাসা পদ্ধতি
কনক তুমি শীতে এবার কার্ডিগানটা পরো কেমন?
আমাকে তুমি শিখিয়ে দিও লালঝুটো সেই পাখির নামটি?
কনক আমরা এবার শীতে নদীর তীরে হো হো হাসবো,
সন্ধেবেলা তোমার চুলে শিশির ভরে রাখবো লক্ষ্মী
তোমার অনামিকায় কামড় দিয়ে আমি হঠাৎ আবার
‘যাহ-কী-দুষ্টু’ ওষ্ঠে তোমার ওষ্ঠ ছোবো সকাল বেলায়
সূর্যোদয়ের কাছে কেবল শান্তি চাইবো, বুঝলে কনক
তোমার মাথাধরাও আমি এক চুমোতে সারিয়ে দেবো!
*
স্মৃতিকথা
(হেলাল, কাঞ্চন, ওয়ালী, বাচ্চু ও রাব্বীকে)
যে বন্ধুরা কৈশোরে নারকেল বনের পাশে বসে
আত্মহত্যার মতো বিষণ্ণ উপায়ে উষ্ণ মেয়েদের গল্প কোরতো
শীতকালে চাঁদের মতোন গোল বোতামের কোট পরে
ঘুরতো পাড়ায়,
যে বন্ধুরা থিয়েটারে পার্ট কোরতো,
কেউ সাজতো মীরজাফর, কেউবা সিরাজ
তারা আজ, এখন, কোথায়?
রোমেনা যে পড়াতো ইশকুলে ছোট মনিদের বিদ্যালয়ে
রোমেনা যে বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাস পড়ে তার।
নায়িকার মতো জ্বরে ভুগতো,
আর মিহি শরীরের সাথে মিল রেখে
কপালে পরতো টিপ,
শাদা কোমরের কাছে দীর্ঘচুল ঝুলিয়ে রাখতে
ব্লু কালারের ব্যাগ,
দুবৎসর আগে শুনেছি বিবাহ হ’য়ে গেছে তার,
এখন কোথায়?
রুনী তার মাতাল স্বামীর কাছে না গিয়ে নিজেই একরাতে
একে একে শূন্যতায় সলজ্জ কাপড়গুলি খুলে ফেলে কুয়াশায়
উন্মাদিনী কোথায় পালালো!
নিজস্ব ভ্রুণের হত্যা গেঁথে দিয়েছিল তাকে মানসিক হাসপাতালের এক কোণে!
কোথায় সে? এখন কোথায়?
অনেকেই চলে গেছে, অনেক নারকেল গাছ হয়ে গেছে বুড়ো
অনেক প্রাঙ্গণ থেকে উঠে গেছে
গোলাপ চারার মতো সুন্দর বয়সমাখা প্রসিদ্ধা তরুণী,
মধ্যরাতে নারকেল বনের কাছে ভেঙে যায় আমারও গল্পগুলি
স্মৃতিকথা সেখানে নিশ্চুপ!
*
প্রতাবর্তনের সময়
আমি আবার ফিরে এলাম, আমাকে নাও,
ভাঁড়ার ঘরের নুন মরিচ আবার মশলাপাতা গেরুয়া ছাই
আমায় তুমি গ্রহণ করো।
আমি আবার ফিরে এলাম,
স্নিগ্ধ কাক, আলাপচারী তালচড়াই
আমাকে আজ গ্রহণ করো।
বহুদিনের নির্বাসনের কাতরতার চিহ্ন আমার সর্ব অঙ্গে
বহুদিনের দৃশ্য দেখার উৎসাহ তাই
এক জোড়া চোখ নিয়ে এলাম নিজের সঙ্গে
আমি আবার ফিরে এলাম আমাকে নাও,
আমাকে নাও, ডুবতে ডুবতে বেঁচে গিয়েছি
নকশী কাঁথা, নদীর বালিশ অনেক রকম গ্রাম্য শালিস
মনে কি পড়ে, মনে কি পড়ে?
পারদমাখা শয্যা আমায় শান্তি দেয়নি, নারী আমায় নিদ্রা দেয়নি
গ্রন্থ এখন কেবলি শুধু ছাপার হরফ, সভ্যতা যে অধঃপতন,
অমল কোনো পাইনি মানুষ যাকে ধারণ কোরলে আমি আলো পেতাম!
শুধু শুধুই দুপুর গেছে মানুষ গেছে ব্যর্থ মানুষ,
শিল্প এখন সুবিধাবাদ!
তাইতো আমি ফিরে এলাম, আমাকে নাও
আমাকে আজ গ্রহণ করো,
মাছের আঁশটে, হলুদ রৌদ্রে ভাঁড়ার ঘরের নুন মরিচ আর
মশলা পাতা গেরুয়া ছাই, শালিধানের গন্ধ তুমি,
ভেজা মাটির বৃষ্টি তুমি গ্রহণ করো আমাকে নাও, আমাকে নাও!
*