বিয়ে বাড়ির মজা
বিয়ে বাড়িঃ বাজছে সানাই, বাজছে নানান বাদ্য
একটি ধারে তৈরি হচ্ছে নানা রকম খাদ্য;
হৈ-চৈ আর চেঁচামেচি, আসছে লুচির গন্ধ,
আলোয় আলোয় খুশি সবাই, কান্নাকাটি বন্ধ,
বাসরঘরে সাজছে কনে, সকলে উৎফুল্ল,
লোকজনকে আসতে দেখে কর্তার মুখ খুললঃ
“আসুন, আসুন-বসুন সবাই, আজকে হলাম ধন্য,
যৎসামান্য এই আয়োজন আপনাদেরই জন্য;
মাংস, পোলাও, চপ-কাটলেট, লুচি এবং মিষ্টি।
খাবার সময় এদের প্রতি দেবেন একটু দৃষ্টি।”
বর আসে নি, তাই সকলে ব্যস্ত এবং উৎসুক,
আনন্দে আজ বুক সকলের নাচছে কেবল ধুক্-ধুক্,
‘হুলু’ দিতে তৈরী সবাই, শাঁক হাতে সব প্রস্তুত,
সময় চলে যাচ্ছে ব’লে মনটা করছে খুঁত-খুঁত।
ভাবছে সবাই কেমন ক’রে বরকে করবে জব্দ;
হঠাৎ পাওয়া গেল পথের মোড়ে গাড়ির শব্দঃ
হুলুধ্বনি উঠল মেতে, শাঁক বাজলো জোরে,
বরকে সবাই এগিয়ে নিতে গেল পথের মোড়ে।
কোথায় বরের সাজসজ্জা? কোথায় ফুলের মালা?
সবাই হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে, পালা, পালা, পালা।
বর নয়কো, লাল-পাগড়ি পুলিশ আসছে নেমে।
বিয়েবাড়ির লোকগুলো সব হঠাৎ উঠল ঘেমে,
বললে পুলিশঃ এই কি কর্তা, ক্ষুদ্র আয়োজন?
পঞ্চাশ জন কোথায়? এ যে দেখছি হাজার জন!
এমনি ক’রে চাল নষ্ট দুর্ভিক্ষের কালে?
থানায় চলো, কাজ কি এখন এইখানে গোলমালে?
কর্তা হলেন কাঁদো-কাঁদো, চোখেতে জল আসে,
গেটের পাশে জড়ো-হওয়া কাঙালীরা হাসে।।
ব্ল্যাক-মার্কেট
হাত করে মহাজন, হাত করে জোতদার,
ব্ল্যাক-মার্কেট করে ধনী রাম পোদ্দার,
গরীব চাষীকে মেরে হাতখানা পাকালো
বালিগঞ্জেতে বাড়ি খান ছয় হাঁকালো।
কেউ নেই ত্রিভুবনে, নেই কিছু অভাবও
তবু ছাড়ল না তার লোক-মারা স্বভাবও।
একা থাকে, তাই হরি চাকরটা রক্ষী
ত্রিসীমানা মাড়ায় না তাই কাক-পক্ষী।
বিশ্বে কাউকে রাম কাছে পেতে চান না,
হরিই বাজার করে, সে-ই করে রান্না।
এমনি ক’রেই বেশ কেটে যাচ্ছিল কাল,
হঠাৎ হিসেবে রাম দেখলেন গোলমাল,
বললেন চাকরকেঃ কিরে ব্যাটা, কি ব্যাপার?
এত টাকা লাগে কেন বাজারেতে রোজকার?
আলু তিন টাকা সের? পটল পনেরো আনা?
ভেবেছিস বাজারের কিছু বুঝি নেই জানা?
রোজ রোজ চুরি তোর? হতভাগা, বজ্জাত!
হাসছিস? এক্ষুণি ভেঙে দেব সব দাঁত।
খানিকটা চুপ করে বলল চাকর হরিঃ
আপনারই দেখাদেখি ব্ল্যাক-মাকের্ট করি।
ভাল খাবার
ধনপতি পাল, তিনি জমিদার মস্ত;
সূর্য রাজ্যে তাঁর যায় নাকো অস্ত
তার ওপর ফুলে উঠে কারখানা-ব্যাঙ্কে
আয়তনে হারালেন মোটা কোলা ব্যাঙকে।
সবার “হুজুর” তিনি, সকলের কর্তা,
হাজার সেলাম পান দিনে গড়পড়তা।
সদাই পাহারা দেয় বাইরে সেপাই তাঁর,
কাজ নেই, তাই শুধু ‘খাই-খাই’ বাই তাঁর।
এটা খান, সেটা খান, সব লাগে বিদ্ঘুটে,
টান মেরে ফেলে দেন একটু খাবার খুঁটে;
খাদ্যে অরুচি তাঁর, সব লাগে তিক্ত,
খাওয়া ফেলে ধমকান শেষে অতিরিক্ত।
দিনরাত চিৎকারঃ আরো বেশি টাকা চাই,
আরো কিছু তহবিলে জমা হয়ে থাকা চাই।
সব ভয়ে জড়োসড়ো, রোগ বড় প্যাঁচানো,
খাওয়া ফেলে দিনরাত টাকা ব’লে চেঁচানো।
ডাক্তার কবিরাজ ফিরে গেল বাড়িতে;
চিন্তা পাকালো জট নায়েবের দাড়িতে।
নায়েব অনেক ভেবে বলে হুজুরের প্রতিঃ
কী খাদ্য চাই? কী সে খেতে উত্তম অতি?
নায়েবের অনুরোধে ধনপতি চারিদিক
দেখে নিয়ে বার কয় হাসলেন ফিক-ফিক্;
তারপর বললেনঃ বলা ভারি শক্ত
সবচেয়ে ভালো খেতে গরীবের রক্ত।
ভেজাল
ভেজাল, ভেজাল, ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়,
ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিস মিলবে নাকো চেষ্টায়!
ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা,
‘কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হায় ফয়দা।’
ভেজাল পোষাক, ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা,
ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা
ভেজাল কথা- বাংলাতে ইংরেজী ভেজাল চলছে,
ভেজাল দেওয়া সত্যি কথা লোকেরা আজ বলছে।
‘খাঁটি জিনিস’ এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে,
‘ভেজাল’ নামটা খাটি কেবল আর সকলই মিথ্যে।
কলিতে ভাই ‘ভেজাল’ সত্য ভেজাল ছাড়া গতি নেই,
ছড়াটাতেও ভেজাল দিলাম, ভেজাল দিলে ক্ষতি নেই।।
মেয়েদের পদবী
মেয়েদের পদবীতে গোলমাল ভারী,
অনেকের নামে তাই দেখি বাড়াবাড়ি;
‘আ’কার অন্ত দিয়ে মহিলা করার
চেষ্টা হাসির। তাই ভূমিকা ছড়ার।
‘গুপ্ত’ ‘গুপ্তা’ হয় মেয়েদের নামে,
দেখেছি অনেক চিঠি, পোষ্টকার্ড, খামে।
সে নিয়মে যদি আজ ‘ঘোষ’ হয় ‘ঘোষা’,
তা হলে অনেক মেয়ে করবেই গোসা,
‘পালিত’ ‘পালিতা’ হলে ‘পাল’ হলে ‘পালা’
নির্ঘাৎ বাড়বেই মেয়েদের জ্বালা;
‘মল্লিক’ ‘মল্লিকা’, ‘ দাস’ হলে ‘দাসা’
শোনাবে পদবীগুলো অতিশয় খাসা;
‘কর’ যদি ‘করা’ হয়, ‘ধর’ হয় ‘ধরা’
মেয়েরা দেখবে এই পৃথিবীটা- “সরা”।
‘নাগ’ যদি ‘নাগা’ হয় ‘সেন’ হয় ‘সেনা’
বড়ই কঠিন হবে মেয়েদের চেনা।।
রেশন কার্ড
রঘুবীর একদিন দিতে গিয়ে আড্ডা,
হারিয়ে ফেলল ভুলে রেশনের কার্ডটা;
তারপর খোঁজাখুজি এখানে ও ওখানে,
রঘু ছুটে এল তার রেশনের দোকানে,
সেখানে বলল কেঁদে, হুজুর, চাই যে আটা-
দোকানী বলল হেঁকে, চলবে না কাঁদা-কাঁটা,
হাটে মাঠে-ঘাটে যাও, খোঁজো গিয়ে রাস্তায়
ছুটে যাও আড্ডায়, খোঁজো চারিপাশটায়;
কিংবা অফিসে যাও এ রেশন এলাকার,
আমার মামার পিসে, কাজ করে ছেলে তার,
তার কাছে গেলে পরে সবই ঠিক হয়ে যাবে,
ছ’মাসের মধ্যেই নয়া এক কার্ড পাবে।
রঘুবীর বলে কেঁদে, ছ’মাস কি করব?
ছ’মাস কি উপবাস ক’রে ধুঁকে মরব?
আমি তার করব কী?- দোকানী উঠল রেগে-
যা খুশি তা করো তুমি- বলল সে অতি বেগে;
পয়সা থাকে তো খেও হোটেলে কি মেসেতে,
নইলে সটান্ তুমি যেতে পার দেশেতে।।