নয়না আজ
নয়না আজ হেসে বেড়ায়,
হালকা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়,
মনে খুশির ঢেউ।
যতই হাসুক, যতই নাচুক,
বকবে নাকো কেউ।
নয়না আজ দিন কাটাবে
খুশির বালুচরে,
মাঝে-মাঝে দেবে উঁকি
দাদুর পড়ার ঘরে।
নয়না আজ দেবে যে তার
পুতুল-ছেলের বিয়ে।
সেই বিয়েতে ঢোল বাজাবে
সাতটি সবুজ টিয়ে।
নয়না আজ দাদুর মুখে
সেমাই দেবে পুরে।
তাই-না দেখে প্রজাপতি
আসবে হঠাৎ উড়ে।
নয়না ও হলদে পাখি
নয়না এক ছোট্র মেয়ে,
দেখতে ওকে চাও?
তবে এসো ভাসিয়ে তুমি
ময়ূরপঙ্খি নাও।
হলদে পাখি, হলদে পাখি
কোথায় তুমি যাও?
নয়না আজ মুড়কি দেবে,
পেটটি ভরে খাও।
হলদে পাখি, হলদে পাখি,
একটু জিরিয়ে নাও,
নয়না সুর ছড়িয়ে দেবে
বনের গানটি গাও।
হলদে পাখি, হলদে পাখি,
কোথায় তোমার ছাও?
জলদি তুমি তাকে এনে
নয়নাকে দাও।
নয়না ওই বাচ্চাটাকে
বলবে, ‘মধু খাও’।
দেবে ওকে ছোলা, মোয়া,
দেবে পুতুলটাও।
হলদে পাখি, হলদে পাখি,
কোথায় তোমার গাঁও?
নয়না খুব ডাকছে তোমায়,
তার কাছেই যাও।
নয়নার চাওয়াগুলো
নয়না চায় এই গলিতে
যাক বয়ে যাক একটি নদী।
এক পলকে বইছে নদী
নয়নাদের ঘর অবধি।
নয়না চায় আকাশ থেকে
ঝরুক তারা বাগানে তার,
বাগান জুড়ে তারার মেলা,
দেখছে সবাই চমৎকার।
নয়না চায় তাদের ঘরে
আসুক দোয়েল, কোয়েল, টিয়ে
এক নিমেষে নয়না এই
খেলছে ব’সে ওদের নিয়ে।
নয়না চায় ভিড়ুক দোরে
মনপবনের সোনালি নাও,
চোখের পাতা কাঁপার সাথেই
নায়ের পালে লাগছে বাও।
নয়নার এই চাওয়াগুলো ফলছে কেমন
ক’রে, জানো?
কিছু তুলি, রঙের বাক্সো
দোকান থেকে কিনে আনো।
এনে সেসব ইচ্ছেমতো
কাগজ জুড়ে আঁকো ছবি,
দেখবে তুমি চাইছ যা যা
একে একে হচ্ছে সবই।
ভোট
ছোট্রে সবাই ছোট,
হেসে-খেলে
শান্ত থেকে
দলে দলে
ছোট্রে সবাই ছোট।
দিতে হবে ভোট।
ভোট পাওয়ার জন্যে
কারা বাঁধে জোট?
কারা পাকায় ঘোঁট?
ভোট কেনার জন্যে
কারা হল হন্যে?
এদিক ওদিক
রাতবিরেতে
কারা ছড়ায় নোট?
লোভের ফাঁদে
কেউ দিয়ো না পা।
খোলা মনে
নাচো তা ধিন তা।
ছোট্রে সবাই ছোট
ঠিক লোককে
দিতে হবে ভোট।
চাই না কোনো কাড়াকাড়ি,
মারামারি,
কাতারবন্দি ভায়েরা কেউ
বোনেরা কেউ
পায় না যেন চোটা।
শান্তভাবে ভদ্রভাবে
দিয়ো সবাই ভোট।
মাছ-শিকারি পানকৌড়ি
কুচকুকে এক কালো পাখি,
পানকৌড়ি তাকেই ডাকি’।
চুপ, চুপ, চুপ
পানিতে এই শব্দ কিসের
ঝুপ, ঝুপ, ঝুপ?
গাঁয়ের বিলে দাঁড় বাইছে কেউ কি?
মাটিভাঙা ঢেউ কি?
চুপ, চুপ, চুপ,
পানকৌড়ি এই দিয়েছে ডুব।
বিলের তলে ঠাণ্ডা জলে
কেন এই কসরত?
জল কি আর শরবত?
তবে বলো কী করতে?
মাছ ধরতে।
চুপ, চুপ, চুপ,
মাছ-শিকারি পানকৌড়ি এই দিয়েছে
ডুব।
জেনে রাখো পানকৌড়ি
মাছের ভক্ত খুব।
দেখতে দেখতে দিন ফুরাল,
সুয্যি ডোবে ডোবে।
ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর
বিয়ে খাবার লোভে।
দুলা-টিয়ে আসবে কখন?
পালকি গেল কই?
কোথায় গেল মণ্ডা মিঠাই,
গামছা-পাতা দই?
টিয়ে-কনে কখন থেকে
ব’সে আছে সেজে,
ফিঙেগুলো রং মেখেছে
শেয়ালভায়ার লেজে।
টিয়ে-কনে ক্লান্ত হয়ে
ঘুমে পড়ে ঢ’লে;
বর আসে না দেখে শেষে
নয়না যায় চ’লে।
ময়না, শালিক
ময়না-শালিক বন্ধু দু’জন,
সকল সময় থাকে অনেক কাছে।
ময়না যখন সুরে মাতে,
শালিক তখন মনের সুখে নাচে।
ময়না-শালিক বন্ধু দু’জন,
রৌদ্র-ছায়ায় ঝগড়া তাদের নেই।
বিপদ এলে লুকায় তারা
একই সাথে এক আস্তানাতেই।
ওদের খুশি দেখে হঠাৎ
হিংসুটে এক কাদা রঙের পাখি
ওদের মাঝে উড়ে এসে
কড়া স্বরে জুড়ল ডাকাকাডি।
কী যে হ’ল, ময়না-শালিক
ঝগড়া করে ভীষণ দিল আড়ি-
কেউ কারুর মুখ দ্যাখে না,
আগের মতো যায় না কারো বাড়ি।
লাঠি
সোনার জাদুর হাতে আছে
লাঠির মতো লাঠি
সেই লাঠিটা অনেক বছর
তেল খেয়েছে খাঁটি।
তার ঘুমানোর জন্যে লাগে
মস্ত শীতল পাটি।
সেই লাঠিটা কখনো হয়
সোনা-রূপার কাঠি।
সোনার জাদুর লাঠির বলে
বুক ফুলিয়ে হাঁটি।
ঘুরলে লাঠি যায় গুঁড়িয়ে
দৈত্যদানোর ঘাঁটি।
লাঠি খসায় বারো ভূতের
পুতের দাঁতের পাটি।
সেই লাঠিটা ফসল বাঁচায়
বাঁচায় দেশের মাটি।
লালন সাঁই
ছেউড়িয়াতে ছিলেন এক বাউল কবি,
নামটি যে তাঁর লালন সাঁই।
গান বেঁধে তাঁর দিন কেটেছে রাত কেটেছে,
এই ভুবনে তুলনা তাঁর নাই।
থাকত হাতে দোতারা তাঁর, বাজত সুরে
মেঠো পথে, গাছতলাতে ভাই;
গানের কথা শুনে লোকে বলত নেচে
আমরা সবাই এমনতরোই চাই।
লালন ফকির বড় মাপের মানুষ
ছিলেন,
তাঁরই গানে হয় যে মন রোশনাই।
লালন বলেন সবচে’ দামি মানুষ
রতন-
চলো আমরা ছেউড়িয়াতে যাই।