• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
সোমবার, জুন 9, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

মেঘলোকে মনোজ নিবাস – শামসুর রাহমান

Meghluke Monuz Nibash by Shamsur Rahman

দুই যাত্রী

আমরা দু’জন ছিলাম দু’দিকের যাত্রী, অথচ তড়িঘড়ি উঠে পড়ি
বেঠিক ট্রেনের এক্‌ ভুল কম্পার্টমেন্টে। যখন ভুল বুঝতে পারলাম,
তখন ট্রেন বেশ জোরে চলতে শুরু করেছে। আমরা পরস্পরের দিকে
ঘনঘন তাকাচ্ছিলাম, যেন দূরের দু’টি গ্রহ। ট্রেন যখনই একটি
ইস্টিশানকে ছোঁয় গাঢ় অন্তরঙ্গতায়, ভাবি এখানে নেমে পড়ব।
অথচ নামা হয় না। আমাদের দুজনের মধ্যে কোনও বাক্য, পুরো
কিংবা টুকরো, নিবিময়ে সম্ভাবনাই জাগে না। বাক্য উচ্চারণ
ছাড়াও কথা বলার জন্যে অন্য ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার জীব সমাজে প্রচলিত।
আমরা দুজন আপাতত চোখের সহযোগিতা গ্রহণ করি। অন্য যাত্রীরা
আমাদের লক্ষ করছে কি করছে না-বিষয়টিকে তেমন আমল
দিচ্ছি না। আমার ব্যাকুলতা সারসের মতো গ্রীবা বাড়ায় আমার
সিটের উল্টো দিকে, যেখানে সে বসে আছে প্রার্থনার মতো। সারসের
চঞ্চু প্রার্থনার প্রবাহে ডোবে, ভিজে ওঠে স্নিগ্ধতায়।

হঠাৎ প্রার্থনা কেমন ছড়িয়ে পড়ে শ্রাবণের ভেজা রোদের
ধরনে। রোদের মুকুলগুলো কুড়িয়ে নিই। হ্যান্ডব্যাগ হাতে
নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসা ইস্টিশানে নেমে পড়ার উদ্যোগ
নিই মনে-মনে। আর দেরি করা ঠিক হবে না, ভাবি। ট্রেন
প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে কিছুক্ষণের জন্যে জিরোয় তৃষ্ণার্ত ঘোড়ার মতো।
এদিক ওদিক তাকাই, হ্যান্ডব্যাগ অলস কেরানির মতো আগের
জায়গাতেই ঝিম ধরে বসে থাকে। সে-ও শাড়ির আঁচল ঈষৎ
গুছিয়ে নিয়ে নিজের সিটে অনড়।

আখেরে ট্রেন এসে থামে সব শেষের ইস্টিশানে। এই
অন্ধকার, ছন্নছাড়া জায়গাটির পর আর কোনও গন্তব্যের
হদিশ ট্রেনের ড্রাইভার, গার্ড কিংবা ইস্টিশান মাস্টার
কারুরই জানা নেই। ট্রেনের কামরায় তখন শুধু আমরা দু’জন
মুখোমুখি বসে আছি নিশ্চুপ নিষ্পৃহ। কয়েক মুহূর্ত পর
আমরা ধূসর, নির্জন প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়ি। দু’জন হাঁটতে
থাকি ছায়া-পোহানো কোনও প্রাণীর পিঠের মতো
প্ল্যাটফর্মের দুদিকে।

কিন্তু এ কী, চোখ ফেরাতেই দেখি, আমরা দু’জন
পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি। হাওয়ায় নড়ছে ওর কানের
দুল আর কালো চুলের ঢালে জোনাকির জ্বলা আর
নেভা, নেভা আর জ্বলা। একটি শক্ত আর একটি নরম
অন্য রকম সঙ্গীত পিপাসু হাতে বেজে ওঠে যুগলবন্দি।
১৬.৮.৯৭

দুপুর, তুমি এবং পাখি

দুপুরটার যেন গায়ে হলুদ আজ। আমি জানি, একটু পরেই তুমি
নরম পায়ে তোমাদের দোলনায় ছায়াটে বারান্দায় এসে বসবে।
দৃষ্টি ছড়িয়ে দেবে সামনের দিকে, চোখে পড়বে একটি কি দু’টি
ছুটন্ত মোটারকার, রিক্‌শা। কোনও কোনও পথচারীও হবেন দৃশ্যমান।
এরই মধ্যে হয়তো আমার কথা ভাববে তুমি দূরের গাছটির প্রতি
মনোযোগী হয়ে। হয়তো তোমার কোনও বান্ধবীকে আজ টেলিফোন
না করার লজ্জা তোমাকে খানিক বিব্রত করবে, একটু পরে চোখ
ফেরাতেই তুমি হঠাৎ আবিষ্কার করবে তোমার খুব কাছে একটি পাখিকে।
তোমাকে আমার একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে পাখিকে জানিয়েছিলাম।
বিনীত অনুরোধ। ওকে বলেছি, ‘তোমাদের কথা এত লিখেছি, তার
বিনিময়ে তুমি কি আমার দয়িতার কাছে বয়ে নিয়ে যাবে না একটি
বার্তা?’ আমার কণ্ঠস্বরে আকুলতা পাঠ করে পাখি তার পাখা ছড়িয়ে
দেয় আমার সামনে। আমি প্রসারিত পাখায় লিখলাম, ‘আজ সন্ধ্যায়
এসো, প্রতীক্ষায় থাকব। তুমি এখন নিশ্চয় পড়ে উঠতে পেরেছ বিহঙ্গবাহিত
লিপি। মনে-মনে বলছ, ‘কবির আদিখ্যেতা দেখে বাঁচিনে; টেলিফোন না
করে পাখির পালকে খবর পাঠিয়েছেন। এক সময় বার্তাবাহক পক্ষীটিকে
তুমি আদর বুলোতে থাকবে। সেই স্পর্শ আমাকেই প্রজ্বলিত করবে আর
আমি লেখার টেবিলে বসে একটি প্রেমের কবিতা লেখার জন্যে শব্দের
ঝর্ণাধারাকে ডেকে আনব খাতায় পাতায়, ভাসব আনন্দ-প্লাবনে।
৯.৭.৯৭

 ধুলোমাখা জলরঙ

১
নব্বই-এর গণআন্দোলন, তার বিজয়, রূপান্তরিত করেছে আমাদের।
তোমাকে দেখলাম ‘জনতার জয়’ মঞ্চে কিছুক্ষণের জন্যে। ভিন্ন এক তুমি
এরই মধ্যে এক ফাঁকে কানে কানে বললে, ‘এই উৎসবে তোমাকে কিছু
উপহার দিতে মন চাইছে। ‘কী? আমার এই প্রশ্ন রৌদে ঝলসে ওঠে
শঙ্খচিলের ডানার মতো। তুমি কোনও উত্তর না দিয়ে ঠোঁটে হাসি খেলিয়ে
কোথায় উধাও। দিন যায়, রাত যায়; উৎসবের আনন্দ এখন ধুলোমাখা
জলরঙ। বর্বরদের পুনরুত্থানের কাল অনেকের আত্মত্যাগকে উপহাস করে
এসে গেল বলে। দিন যায়, দিন যায়। তোমার উপহাস আজও পাইনি।
প্রতিশ্রুতি আর কথা না রাখার মাঝখানে ভাসমান ক’জন শহীদের মুখ।
আমার না পাওয়ার তুচ্ছতায় লজ্জাবনত আমি ক্ষমা প্রার্থী তাঁদের কাছে, যাঁরা
রক্তের কালজয়ী আল্পনা এঁকে দিয়েছেন আমাদের আগামীর করোটি চিহ্নিত
বন্ধুর পথে।

২
কত রাত ভালো ঘুম হয় না। চেয়ে চিন্তে আনা মুশকিল, চোখের পাতা
জোড়া লাগে না। বিছানায় শুয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনও কখনও বিক্ষুব্ধ
মনে ক্যাপ্টেন আহারের মতো বহুক্ষণ পায়চারি জারি রাখি। দু’চোখে কেউ
যেন শুকনো মরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেয়। পানির ছিটা নয় নিদান। সমুদ্র উথাল
পাথাল করে ভেসে উঠলো অতিকায়, সাদা মবি ডিক? অনেকগুলো প্রেতমূর্তি
নাচতে থাকে ঘরময়। শব্দহীন , উদ্ভট সেই নাচ দেখি শুধু আমি। আরো কত
কিছু ঘটে নির্ঘুম ঘরে; কাউকে বললে, তুমি মেরে উড়িয়ে দেবে, যেন গাঁজাখুরি
গল্প। ভাবি, কবে রাত হবে কাবার? ভাবার আর কিছু থাকে না অনিদ্রার
ক্রুশকাঠে বিদ্ধাবস্থায়। কখনও তুমি আমাকে ঘুমোতে দাও না, কখনও না-
লেখা কবিতা আমার চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে সরায় ঘুমের পাতলা কুয়াশা।
অথচ তোমাদের দু’জনের কাউকেই কাছে পাই না সেসব অত্যাচারী মুহূর্তে।
কবিতা তবুও দয়াপরবশ হয়ে মাঝে-মধ্যে উঁকিঝুঁকি দেয়, তুমি একেবারে ধরা
ছোঁয়ার বাইরে। কতকাল এভাবে না ঘুমিয়ে কাটাতে হবে এই বয়েসী কবিকে?

৩
চোখ বন্ধ করলেই সে দেখতে পেতো জঙ্গলের প্রান্তসীমার ঝিল, তৃষ্ণার্ত
হরিণের পাল। ওর হাত প্রসারিত হলেই হাতে চক্ষু ঘষতো রঙ বেরঙের
পাখি। এই মুহূর্তে তার দুটো চোখ রুদ্ধ জানালার মতো, হাতে প্রসারিত হবার
ক্ষমতা গায়েব, এমন নিস্পন্দ। এখন সে মৃত্যুর উপত্যকায়। মাটির নিচে
পোকামাকড় তাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়। টেবিলে কিছু বইপত্তর ,
চায়ের শূন্য পেয়ালা, যার গায়ে কিটস্‌-এর বাড়ি, আর একটি উজাড় শিশি।
কবিতার খাতায় সারিবন্দি হরফ নয়, কাটাকুটির বিক্ষোভ মিছিল। ডাক্তার
ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিলেন আত্মহত্যাকে মুছে ফেলে, ঝুট ঝামেলার
ফাঁকফোকর বন্ধ করার উদ্দেশ্যে। মর্গে পাঠানো হবে না একে একে অনেকে
এসে জড়ো হয়েছে প্রান্তিক বাড়িতে কবিকে শেষবারের মতো এক ঝলক
দেখার জন্যে। কারও কারও বুক ডুকরানো; হু হু বিলাপের সঙ্গে লোবানের
ঘ্রাণ জড়ানো কোরানের আয়াতের ধ্বনি ঊর্ধগামী। রহস্যময়ী একজন কবির
বাড়ির দোরগোড়া থেকেই চলে গেল সকলের অগোচরে। গাছের একরাশ
পাতার প্রশ্ন, ‘কে তুমি নিষ্ঠুরতমা এভাবে ফিরে যাচ্ছো কবিকে এক নজর না
দেখেই?’ ‘একালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা আমি, যার জন্যে কবি মাথা কুটে মরেছে
রাতভর। আমার আগমনের আগেই তার অন্তর্ধান; সে প্রকৃত প্রতীক্ষা
শেখেনি,’ নির্বিকার কণ্ঠস্বর স্পর্শ করে রক্তজবার একগুচ্ছ সজীবপাতাকে, ঝুল
বারান্দাকে।

৪
আজকাল চেনা রাস্তাগুলো বড় অচেনা মনে হয়। যে গলিতে ছিল আমার
নিত্যদিনের আসা-যাওয়া তার ভেতরে ঢুকলে একটা লম্বা সাপের সন্ধান পাই,
যাকে দেখিনি কোনওদিন। গলির মোড়ে বসতো যে দোকানদার সে
গরহাজির, ওর জায়গায় অন্য কেউ হিসেবনিকেশে ব্যস্ত, যার চুল তেল
চুকচুকে এবং ঢেউ খেলানো। বহুবার-পড়া কবিতার বইয়ের পঙ্‌ক্তিমালা
আমার পরিচয়ের গণ্ডি ছড়িয়ে ঝুঁকে থাকে অপরিচয়ের ভরসন্ধ্যায়। বস্তুত এই
ডামাডোলে দুঃসাধ্য কাউকে সঠিক শনাক্ত করা। একজনের মুখ অন্যজনের
মুখে মিশে যাচ্ছে অতি দ্রুত। অচেনা ঘরদোর, ভিডিও ক্লাব, ছাত্রাবাস,
সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সবচেয়ে বেশি অচেনা লাগে নিজেকে, এই অচেনা
আমি-কে নিয়ে কী করি?

৫
মধ্যরাতে এক নেকড়ে ধর্ষণ করে স্তব্ধতাকে; চমকে ওঠে শহর, জেগে
থাকা কবির কলম থেমে যায়, ছিনতাইকারীদের আস্তানায় ঝাঁকুনি। চাঁদ
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মেঘের আঁচলে মুখ ঢাকে তাড়াতাড়ি; বিষণ্ন নারীর শাড়ি
থেকে খসে পড়ে লম্পটের রোমশ হাত। নিঃশব্দতার মাঝখানে নেকড়ের পথ
চলা টহলদার পুলিশের নাকের ডগার নিচে। নিমেষে সে পৌঁছে যায় শহরের
শেষপ্রান্তে। ছিনতাইবাজদের আখড়ায় পুনরায় মাতলামি, ইতরামি, লম্পটের
হাত ক্রিয়াশীল। বিনিদ্র কবি জানলা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মনোযোগী কবিতার
খাতায়, গড়ে উপমা, চিত্রকল্প। নিঃসঙ্গ বেগানা এক নেকড়ে প্রগাঢ় ছায়া রেখে
যায় নিশাকালীন রচনায়।

৬
শরীরে ফাল্গুনের উজ্জ্বলতা নিয়ে তুমি ভোরবেলা জানালে, ‘আজ বসন্তের
প্রথম দিন। ইচ্ছে হয়, তোমাকে এক গাদা গাঁদা ফুল উপহার দিই। কেন তুমি
এই বিশেষ ফুলের নাম উচ্চারণ করলে? গাঁদা বললে আমার হরিদ্রাভ
পেলবতার কথা মনে পড়ে না, এমনই স্বভাব আমার, গাধা শব্দটি জিভের
ডগায় নাচতে শুরু করে, হয়ত মিলের প্ররোচনা। এ কথা তোমাকে
জানানোর সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনে হাসি ছড়িয়ে দিলে, বসন্ত দিনের রঙের
ফোয়ারা। সেই মুহূর্তে তোমার পরনে কি ছিল গাদা ফুল রঙের শাড়ি? ‘এমন
দিনে তোমাকে অন্য কিছু উপহার দেয়ার সাধ জাগে’; আমার উচ্চারিত
শব্দগুচ্ছের জবাবে তোমার ওষ্ঠ থেকে ঝরে, ‘বুঝেছি, আর কিছু বলার দরকার
নেই। কোনও কিছুই আমাদের দূরত্বের সীমা মুছে ফেলতে পারে না। আমরা
দু’জন দাঁড়িয়ে আছি দুই মেরুতে-তুমি উচ্ছ্বসিত বসন্তের রঙিন প্রান্তরে, আমি
প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মাঝখানে, চতুর্দিকে নেকড়ের বরফ ফাটানো চিৎকার।
তোমাদের বাসায় অতিথির ভিড়। টেলিফোনী সংলাপে পড়ে ছেদ। ঘরের
মেঝেতে গাঁদা ফুলের স্তূপ। কোথাকার এক গর্দভ দার্শনিক ভঙ্গিতে এসে
তড়িঘড়ি চুমো খেতে শুরু করে ফুলগুলোকে, অনন্ত তার চিবিয়ে খাবার পালা।
গাধার আচরণ আমাকে বিস্ময়ের ওপারে দাঁড় করিয়ে রাখে, বলা যাবে না।

৭
তোমাকেই উত্তমর্ণ বলে জানি। তোমার টুকরো টুকরো কথা আমার
কবিতার খাতাকে মুখর করে তোলে। যখন তুমি সামান্য কোনও কথা বলো
আমাকে-এই ধরো, ‘আজ ভোরবেলার মুহূর্তগুলো চমৎকার’ কিংবা ‘কাল তুমি
কোথায় ছিলে সন্ধ্যাবেলা’, তখন কবিতার পঙ্‌ক্তি জ্বলে ওঠে অবসাদের
অন্ধকারে। বারান্দায় তোমার দাঁড়িয়ে থাকা সৃজনশীলতার খরায় আনে প্রবল
বর্ষণ। তোমার চকিত স্পর্শ আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় এমন কোনো কবিতা,
যা আমার মৃত্যুর পরেও যুবক-যুবতীরা পড়বে মুগ্ধাবেশে। জানতেও পারো না
আমি কীভাবে ক্রমাগত ঋণী চলেছি তোমার কাছে।

৮
যখন গোলাপ মাটিতে শুকনো পাপড়ির জটলা, তখন কি আমার নিজের
মৃত্যুর কথা মনে পড়ে? আমার বয়স দ্রুতগামী খরগোশ, অনিবার্য মৃত্যুর দিকে
এগিয়ে যাওয়া। তবু এখন, এই মুহূর্তে বেঁচে আছি, পড়ছি মনের মতো বই,
ভাবতে পারছি তার কথা, যে আমাকে হাত ধরে নিয়ে যায় স্বর্গপথে; ভাবতে
পারছি ফেরেশতাগণ জ্যোৎস্নাপ্লাবিত কণ্ঠে আবৃত্তি করেন আমার কবিতা,
বেঁচে আছি বলেই কান পেতে শুনি সমাজ বদলের দূরাগত ঘণ্টাধ্বনি; আমার
অপন হৃদয় বারবার দুলে ওঠে প্রিয়তমার চোখের চাওয়ায়, দিনরাত্রি হয়ে যায়
গুণীর তান। আমার সদ্যমৃত অনুজ কোনও কোনও মধ্যরাতে দাঁড়িয়ে জেমস
ডিনের ধরনে দরজায় হাত রেখে, যখন লিখি টেবিলে ঝুঁকে, সে পেছন থেকে
চোখ বুলায় আমার পঙ্‌ক্তিমালায়। আমি তাকে কিছুতেই বলতে পারি না, ‘বস
এখানে আমার পাশে’, অথবা ‘চলে যা’, এই নিষ্ঠুরতাও উচ্চারিত হয় না
মধ্যরাতে। দৃষ্টিভ্রম আমাকে পীড়িত করে। কে যেন দরজা ঠেলে ঘন ঘন ঘরে
ঢোকার জন্যে। মৃত্যু? হ্যাঁ, মৃত্যু প্রত্যহ তার ঠাণ্ডা, বিশীর্ণ, পাথুরে আঙ্গুল দিয়ে
ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে আমাকে। তার কোনও ভব্যতা, সমাজ সচেতনতা কিংবা
বিবেচনাবোধ নেই।

Page 7 of 15
Prev1...678...15Next
Previous Post

মানব হৃদয়ে নৈবদ্য সাজাই – শামসুর রাহমান

Next Post

যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে – শামসুর রাহমান

Next Post

যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে - শামসুর রাহমান

রূপের প্রবালে দগ্ধ সন্ধ্যা রাতে - শামসুর রাহমান

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In