• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

মেঘলোকে মনোজ নিবাস – শামসুর রাহমান

Meghluke Monuz Nibash by Shamsur Rahman

রাত আড়াইটার পঙ্‌ক্তিমালা

এখন রাত আড়াইটা। টেবিলে ঝুঁকে আমি লিখছি। মৃত্যুশয্যাপ্রতিম গলিতে
হঠাৎ কুকুরের হাসি না কান্না, বোঝা দায়। কান খাড়া করে কিছুক্ষণ বাইরের
অন্ধকারে তাকিয়ে থাকি। আবার একটি বাক্যের খণ্ডাংশকে পুরো সাজিয়ে
তুলতে কলম ধরি। কয়েক মিনিট কাগজ আর কলমের মোহন ঘর্ষণ চলে,
এমন সময় আমার মার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠি। এক শ’ পাঁচ ডিগ্রির জ্বরতপ্ত
কপালে ন্যস্ত শীতল পানিপট্রির মতো স্নেহার্দ্রে হাত আমার কাঁধে রেখে মা
বললেন, ‘বাচ্চু, তুই এত রাত জেগে লিখছিস? তোর চোখে না ভয়ঙ্কর অসুখ?
আজকাল তোর বাম ফুসফুস তো ঘন ঘন ভোগাচ্ছে তোকে। ফজর হতে
এখনও অনেক দেরি। যা, সূর্য না ওঠা পর্যন্ত ভালো করে ঘুমিয়ে নে। এভাবে
রাজ জেগে লিখলে তুই তো জলদি সব আন্ধার দেখতে শুরু করবি। চোখ
দুটোই খুইয়ে বসবি। বিমারি আরও বেশি খুবলে খাবে তোকে। আয় বাচ্চু,
তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই যেমন দিতাম তোর সুদূর গোলাপ গাছের সবুজ
কোমল পাতা আর ভোরের কচি, মধুর রোদের মতো ছেলেবেলায়। অনন্তর
মা মিলিয়ে গেল রাতের হাওয়ায়।

মার মৃত্যুর পর দেখতে-দেখতে সাত মাস কেটে গেছে। তাঁর চলে যাওয়ার
পর কয়েকদিন গোরস্তানে গিয়েছি, দাঁড়িয়েছি তাঁর কবরের পাশে বিষণ্ন
হৃদয়ে। এর পর বহুদিন যাওয়া হয়নি। এক সময় এমন ছিল যখন একদিন
তাঁর জ্যোতির্ময়ী মুখ না দেখলে ভালো লাগত না আর আজকাল তাঁকে না
দেখে দিব্যি মেতে আছি নানা কাজে। হায়, তাঁর সমাধিও কেমন ধূসর হয়ে
উঠছে আমার স্মৃতির কবরস্তানে। প্রাণের স্পন্দনই মানুষের চির-কাঙ্ক্ষনীয়,
মৃত্যুর শৈত্য তাকে ক্রমাগত দূরে সরিয়ে দেয়।

লেখার খাতা থেকে চোখ সরিয়ে দেখি, দিগন্তের অন্ধকারকে অধিক
অন্ধকারাচ্ছন্ন করে অ্যাপোকোলিপসের চার ঘোড়সওয়ার ছুটে আসছে। ওদের
ঘোড়ার ক্ষুর থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে সর্বব্যাপী সর্বনাশের হল্‌কা। কবরখানার
সমাধিগুলো ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়েছে অগণিত মুর্দা জীবিতদের ঘরবাড়ি
জবরদখল করবার জন্যে। হে স্নেহময়ী মা আমার, এ কী দেখাচ্ছ তুমি
আমাকে! প্রতারক স্মৃতি-স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল থাকতে হবে আমাকে?

আম্মা, হে আমার জন্মদাত্রী, সাত মাস পর তোমাকেই আমি যন্ত্রণাকাতর
স্মৃতিগর্ভ থেকে জন্ম দিয়েছি আজ রাত আড়াইটায়। আর কতবার তোমার
জন্মদাতা হব বাস্তবের কাঁকর আর ধুলোবালিতে দাঁড়িয়ে, কে জানে? মা,
আমার এই পঙ্‌ক্তিমালায় তুমি কি কোনও এতিমের ফোঁপানি শুনতে পাচ্ছ?
১৮.৮.৯৭

 সারা জীবনই গোধূলির-আকাশ

১
জংধরা তোরঙের ঢোস্‌কা জঠর থেকে বের করে নেড়ে-চড়ে উল্টে-পাল্টে
দেখি ওদের। চমৎকার ঝনৎকাররহিত, উজ্জ্বলতা গানের, বহুকাল এক বিঘৎ
ডোবায় কচুরিপানার জটলায় ছিল মশক-ডিম্বের সংশ্রমে। রোদ্রে শুকিয়ে, ঘষে
ঘষে অনেক আগেকার রূপোর টাকার মতো বাজিয়ে দেখি, বোবা। শোভা না
ল্যক, ধ্বনির ও ধাত্রী নয়, এ তো ভারী মুশকিল। ঢিল ছুঁড়ি অন্ধকার রাত্রির
ঝিলে, কম্পন তোলে নিমজ্জিত নুড়ি। দৈবের উপহারের আশায় উপবিষ্ট,
তীর্থের কাক; খনি ভেবে নিজেকেই খুঁড়ি, মনে পড়ে আগুন-চুরির পরান। কী
দণ্ড শেষতক লভ্য? খণ্ড খণ্ড হবে হৃৎপিণ্ড, পুড়তে থাকব অষ্টপ্রহরাদ্রোহের
উপঢোকন। বাতাস ভূমিহীন চাষির দীর্ঘশ্বাস, পায়ের তলায় হিংস্র ঘাস;
মড়াখেকোদের নাকী চিৎকারে অস্তিত্বের ভিত কাঁপে গেরস্তের। মর্চেধরা
শব্দগুলো সাফ সুফ করে ওদের জংকৃত করার প্রয়াস গুলীবিদ্ধ বেলে হাঁস, চরে
মুখ থুবড়ে পড়ে। যা বলাতেই চাই ওদের দিয়ে, সাধ্যি নেই বলার। এই সময়ের
ছটফটানি, ধুকপুকানি, তর্জন গর্জন ধরাণের শক্তি ওদের লাপাত্তা। “এই
পেয়েছি” বলে ধরতে চাই কোনও শব্দকে, কিন্তু প্রতিবার যায় পিছলে, ভেজা
সাবান। প্রাণপণ খুঁজি যোগ্য শব্দ ভাসমান ঝাঁকে। খুঁজতে খুঁজতে সব
পুঁজিপাটা খুইয়ে দেখি সারা জীবনই গোধূলি-আকাশ।

২
যাবতীয় স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে বসি নিভৃত প্রহরে, যেমন মেলায়
নিক্রেতা রকমারি খেলনা সাজিয়ে অপেক্ষমান। দাঁড়ানো সারে সারে, কখনও
ওলটপালট, সে এক যজ্ঞ। শালপাতা সামনে, বলা কওয়া নেই, অ-আ, ক-খ
বসে যায় পঙ্‌ক্তি ভোজনে। পেট পুরে খেয়ে দেয়ে প্রশ্ন করে, ‘বলো, কী বর
চাও?’ ওদের ঢেকুর, হাই, খুনসুটি আর রঙিন তামাশার ঝাঁকুনিতে আমার
চাওয়ার আইটাই। রাত নির্ঘুম? স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণের কোরিওগ্রাফ। রক্তচোষা
বাদুড় দূর থেকে লক্ষ করে আমাকে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অকস্মাৎ বাজায়
এই বিনিদ্রকে শিকার। অক্ষরমালা ওর সহযোগী, অথচ আমারও উদ্ধার। দুপুর
রাতে তরবারির ঝলসানি ওরা, চোখে চমক। অক্ষর নিমেষে জোনাকি, নেভে
আমার মুঠোয়। মুঠো খুললেই জ্বলে ওঠা পুনরায়, আলোবিন্দুসমুদয় খুব চেনা
একজন, যাকে বারবার স্পর্শ করার আকাঙ্ক্ষা ছলাৎছল নদী। তার মুখ নেমে
আসে আমার উৎসুক মুখে ঘুমের আগে, ওর প্রেমার্দ্র ঠোঁট আমার ওষ্ঠে
মেঘনিবিড় ছায়া মাখে জাগরণের মুহূর্তে। রক্তচোষা বাদুড় অপসৃত।

৩
যেখানে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো, সেখানেই দখলি। আমার কান ঘেঁষে যাওয়া
পরিযায়ী পাখি এক লহমায় ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান। চুলে নক্ষত্রের নাচ,
জ্যামিতিক গাছ ধারণ করে কোজাগরী জ্যোৎস্না, গলে গলে পড়ে সাধুর্য।
কয়েক ঘণ্টা পরে উঠবে টকটকে সূর্য, শিরায় টগবগানি। এক খণ্ড বড়সড়
পোয়াতি জমি অচিরে করবে প্রসব। ধান, পাট, গম, যব, ভুট্রা, আলু, আদা,
সর্ষে-কোনো ফসলসম্ভার নেবে সূর্যের চুম্বন, হাওয়ার আলিঙ্গন? সে জমি
আমার লক্ষ্যবস্তু বহু প্রহরের, তাকে দেখি জ্যোতির্বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে। নিয়মিত
নিড়াই, আগাছাগুলো মৃত সৈনিক। পানি গড়ায়, স্ফীতি-মৃত্তিকা-যোনি; হঠাৎ
জমির ওপর ধর্ষিতা নারীর ছিন্নদেহ, উনিশ শ’ একাত্তরটি সূঁচ-বসানো স্তন,
বৃদ্ধের বুলেটে ঝাঁঝরা বুক, বন্দুকের বাঁটে শিশুর থ্যাঁতলানো মুখ, গেরিলার
উত্তোলিত বাহু আর ফাঁকে ফাঁকে শৌর্যের সূর্যমুখী।

৪
ওর টিমটিমে জীবনে চন্দ্রোদয় সেই তন্বী। লাগাতার খরার পর জলাধারের
পাড়-ভাঙা উচ্ছ্বাস, অজস্র ফুলের রঙবেরঙের চাউনি। সারাক্ষণ মুখিয়ে থাকা
লোকজনের হট্ররোলে দু’জনের একান্ত ছাউনি, দোয়েল শ্যামার সুরে ঘেরা,
তারার ঝিলিকে ভরপুর। কখনও হৃদয় উপচেপড়া আনন্দ জোয়ার, কখনও
সত্তা-খাককরা যন্ত্রণার দাউ দাহ। সব ছেড়েছুড়ে ওরা এখন ভবিতব্যের
সাম্পানে সওয়ার। তরুণী ওকে হৃদয়ের রক্তোৎপল উপহার দিয়ে বলে, ‘এ
আমার বহু যুগের উত্তরাধিকার, গ্রহণ করো। তুমি কি জানো কেন তোমাকে
ভালোবাসি?’ লোকটার কথা, ‘কী করে জানবো? আগাগোড়া ব্যাপারটাই
রহস্যে-পোরা এক উদ্ভিন্ন তোড়া। ‘ঠিক তা’ নয়, তুমি স্বদেশের মাটিতে
ছড়িয়ে দিতে পারো তোমার সবগুলো হাড়, এ জন্যেই আমার এই
ভালোবাসা। তখন দিগন্ত ছোঁয়া খোলা পথে ঘরহারা, ছন্নছাড়া বাউলের গলা
থেকে ঝরতে থাকে উদাস দেহতত্ত্বের শিশির ফোঁটা।

৫
জীবনের গাঁটছড়া বাঁধা ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে। তপ্ত, শীতল, শুষ্ক, দ্রবীভূত।
কখনও আকাশ-ফাড়ানো তোলপাড়, কখনও বা দুধের শরবত স্তব্ধতা। মাঝে
মাঝে আলোর ঝকমকানি আর সাবেকি অন্ধকার পাশাপাশি। রাতবিরেতে
সাপের ফোঁসফোঁসানি, ডাকসাইটে মস্তানের অশ্লীল চিৎকার, ছোরা বসানো,
হাঁকডাক আর সাহিত্যিক পিম্পের নষ্টামির ভেতর দিয়ে আমার হাঁটা।
সদ্যোজাত আতঙ্কের কানাগলিতে আমি একা, হকচকানো; মেরুদণ্ডে
আলাস্কার ঈষৎ গলিত বরফ জলের চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া। বিশ্রাম আমাকে শাদা
অ্যাপ্রন পরা সেবিকার যত্নে শুইয়ে দেয় শয্যায়, অথচ অন্তর্গত গোঙানি ক্ষয়ে
যাওয়া রেকর্ডের একই রেখায় ঘূর্ণমান। বিছানায় বিষ পিঁপড়ে, কাঁকড়া বিছে,
শুঁড় দোলানো আরশোলা আর টিকটিকির ভিড়। চোখের পলকে খাট ছোঁয়
কড়িকাঠ, পলেস্তারা চেপে ধরে আমাকে, গনগনে আংটায় আটকানো গলা,
কণ্ঠস্বরে কখনো গ্যালাক্সির নিস্তব্ধতা কখনো আদিম মানবের বিনিদ্র গোঙানি।
ঘর আমাকে গিলতে আসে ডানাসরের আক্রোশে। কালো পাখি ঠোকর মারে
বারবার, দু’হাতে মুখ ঢাকি। কী করে এ ঘরে এতকাল আমার বসবাস?
আকাশ মুঠো মুঠো ঘাস, ঘাসে লেপ্টে থাকা নীরবতা। সহজিয়া শ্রমে ঘস্‌ ঘস্‌
কাটছে ঘাস বিদ্যুৎ রঙের কৃষক।

৬
‘কবিতা শুনব’, একটি ফুটফুটে শিশুর ঝলমলে আব্দার বিস্ময়ের
ঢেউগড়ায় সত্তায় ওর মন ভোলানোর আশায় হাতে তুলে দিলাম লাল বল,
চিত্তহারী বল দ্রুত সোফার তলায়। পথ চলতি বানরঅলার সাত তালিমারা
ঝোলা আর ডুগডুগির প্রতি ওকে মনোযোগ করার চেষ্টাতেও নাকাল। ভাবি,

আমি কি নক্ষত্রের ঝাড়, জ্যোৎস্নার ঝালর আর মেঘের মেদুরতা দিয়ে মেটাবো
শিশুর দাবি? নাছোড় সে, কবিতা শোনায় ইচ্ছা বুলবুলির অবিরাম শিস।
আখেরে আমার অসমাপ্ত কবিতা আড়ালে রেখে শিশুটিকে খুব কাছে ডেকে ওর
চাঞ্চল্যের রঙিন পথে একটা শাদা কাগজ দোলনার মতো দোলাতে থাকি।

৭
হাওয়ায় আমার আজন্ম অধিকার, কিন্তু ফুসফুস টেনে নিতে ব্যর্থ
প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। ধাত্রীর হাতে নাড়ি কাটার দিন থেকেই এই খুঁত। শ্বাস
হারানোর শঙ্কায় সকাল-সন্ধ্যা ছটফটে মুহূর্তগুলো কোনওমতে জড়ো করে
বাঁচা। কলকব্জায় রঙচটা খাঁচা, লোহা-লক্কড়, বসন্তকে নীরব করে দেয়া
কীটনাশক, লজ্‌ঝড় বাস-ট্রাকের পোড়া ডিজেলের অবিরত বমি; ব্যাপক
দূষণে প্রকৃতি সূতিকাগ্রস্ত, শোচনীয় নারী। ঘোর অমাবস্যায় মোগল বেগম
সাহেবাদের হাম্মামে ভীষণ হানিকর, উৎকট, পূতিগন্ধময় চটচটে নর্দমার
পানি, দ্রাবিড় যুগ থেকে ছুটে আসা। অগুনতি মুমূর্ষু মাছ আর পাখির ঝাঁক
স্তূপীকৃত। আমার আক্রান্ত ফুসফুস হাওয়া টানতে গিয়ে অপদস্থ, ফুলে ফুলে
ওঠে, জীর্ণ হাঁপর। কাপড় চোপড় ঠিকঠাক, মানানসই, অথচ অস্তিত্বের
কাকতাড়ুয়ার রং ঢং। অতিকায় মাকড়সার জালে আমি চিৎপটাং।
সাহসিকতার কোনও ভড়ং ছিল না, অথচ কতিপয় চামচিকা চক্কর কাটে
চতুর্দিকে, আঁটে লাথি মারার ফন্দি। এই বন্দিত্ব থেকে পরিত্রাণ পাব কবে?
স্বর্গীয় এক পাখি কানে কানে বলে, ‘ঝট্‌কা মেরে জাল ছিঁড়ে উঠে দাঁড়াও
সটান; এক্ষুণি তোমার অভিষেক। ফাঁকা পথে, সাক্ষী অন্তর্যামী, আমাকে
মৃদঙ্গের সুরে ক্রমাগত ডেকেই চলেছে আগামী। দোমড়ানো, মোচড়ানো
ফুসফুস এগোতে দিলেই হয়। যতদিন না কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস জরুরি, ততদিন
আমার ছুটে যাওয়া ম্যারাথন দৌড়বাজের ধরনে। বহুদূরে বিরাট দ্বীপাধার
প্রজ্বলনের আকাঙ্ক্ষায় আমার অপেক্ষায়। মশাল নিতে পারব কি ততদূর?

৮
হাতকড়া একজোড়া হাতকড়া ঝন্‌ঝনিয়ে বেজে ওঠে, পক্ষীর ক্রেঙ্কার।
নাছোড় হাতকড়া ঝোলে, দোলে সারাক্ষণ, স্বপ্নের ভেতরেও। প্রতিবেশীরা
সবাই কম বেশি দ্যাখে এই দৃশ্য-আমার চক্ষুদ্বয় অপ্রকৃতিস্থ দ্যুতি নিয়ে নিবদ্ধ
সম্মুখে, নড়বে না এক চুলও, আর দু’টি অদৃশ্য বেখাপ্পা আলঙ্কার। আমার
হাতের কবজি প্রসারিত স্বেচ্ছাসেবকের ভঙ্গিতে যেন হাতকড়ায় স্থাপিত
সেবাশ্রম। হাতকড়া অতিকায় করোটির ফাঁকা অক্ষি কোটরের মতো নেচে
বেড়ায় এখানে সেখানে। আমি, অচিকিৎস্য স্বপ্নচর, ধ্বংস আর সৃজনের মধ্য
দিয়ে হেঁটে যাই ষড়ঋতুতে। সঙ্গে সঙ্গে যায় এক জোড়া হাতকড়া।

৯
রাজকীয় বেলেল্লাপনা, হট্রগোল, সংশয়ের ফণা, বিশ্বাসের অট্রালিকায়
ভয়ঙ্কর সব ফাটল, যে-কোনও মুহূর্তে ধস কিংবা সংহারী ঢল নামতে পারে,
নেমেই গ্যাছে, শহরবাহারী পশুদের উল্লাস। নিজেরাও যাবে তলিয়ে, জানে
না। প্রাক্তন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরি যখন তখন, যদিও এই প্রায় প্রলয়তুল্য
ভাঙচুরের মত্ততায় নিঃশ্বাস নেয়া অসাধ্য। যত তাণ্ডবই চলুক, তেড়ে আসুক
পিশাচের দল, এখুনি ভদ্রাসন ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। দুর্বহ
নিঃসঙ্গতা একশ’ আট ডিগ্রি রৌদ্রে পড়ে থাকা শবের ফাটা ত্বকের মতো
চড়চড় করছে। নিজের সঙ্গেই কথা বলা জোরে জোরে, মাথা ঘোরে, মগজের
ভেতরে হঠাৎ হঠাৎ করে অমানিশা। বেদিশা ঘুরি আলোছুট ঘরে; বাঁচার কী
সার্থকতা? আমি কি লাগছি কারও কোনও কাজে? কলিংবেল বাজে দরজা খুলে
দেখি, শূন্যতার ছায়া। স্যুইচ জমাট, স্পর্শহীন। অদূরে এক চিলতে জনশূন্য,
প্যাচপেচে মাঠ। গেটে ড্রাইভারহীন বেবি ট্যাক্সি ধুঁকছে, কোথাও যাবার কেউ
নেই। ম্যাক্সিপরা কে একজন ছায়ায় বিলীন, এই দিন মেফিস্টোফিলিসের মতো
মুখোশধারী, আত্মাচোর। ইশ্‌ ব্যাটাচ্ছেলে মরেও না, শক্রদের আক্ষেপ
দিনভর, রাতভর। লেপ মুড়ি দিয়ে শোয়া, বেসিনে হাতমুখ ধোয়া, পাতাল
থেকে অবিশ্বাস্য কবিতার পঙ্‌ক্তি ছেঁকে তোলা, পরবাস্তবতার ভাষ্য রচনা,
মাঝে-মধ্যে উপহাস্য হওয়া, রাত্রির পর রাত্রি জাগা, দূরের যাত্রী হওয়া
কখনও, এই বেঁচে থাকা কী জন্যে? কার জন্যে? আবছা স্মৃতিকে অনুসরণ করে
দিন যায়।

Page 12 of 15
Prev1...111213...15Next
Previous Post

মানব হৃদয়ে নৈবদ্য সাজাই – শামসুর রাহমান

Next Post

যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে – শামসুর রাহমান

Next Post

যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে - শামসুর রাহমান

রূপের প্রবালে দগ্ধ সন্ধ্যা রাতে - শামসুর রাহমান

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In