সেই কখন থেকে খুঁজছি
সেই কখন থেকে খুঁজছি নিজের বাড়ি, দুপুর গড়িয়ে
বিকেল হল, গোধূলি ছুঁল সন্ধ্যাকে, তবু
খুঁজে পাচ্ছি না আপনকার বাড়ি। পাড়ায় পাড়ায়
প্রতিটি বাড়ির কলিংবেল টিপে, অথবা
দরজার কড়া নেড়ে ব্যাকুল জিগ্যেশ করি, বলতে পারেন
এই বাড়িটি কার? অমুক আমি, এটা কি আমার নিবাস?
বাড়ির মালিক অথবা ভাড়াটে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দিকে চকিতে
দরজা বন্ধ করে দেয় মুখের উপর। নিরাশ
আমি এই পথ থেকে সেই পথে, এক গলি ছেড়ে আরেক
গলিতে রাম, রহিম, বড়ুয়া ডেভিডের
ঠিকানায় পৌঁছে নিজের বাড়ির হদিশ খুঁজি।
ঘুরতে ঘুরতে, এ বাড়ি সে বাড়ি করতে করতে বড়ই
ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমার এই বেলা অবেলার অন্বেষণের জন্য
ঘুটঘুটে রাত্তিরে, এই ক্লান্তির জন্য ক্ষমা চাইব কার কাছে? হায়, অভাগা
আমার এমন কেউ কি আছেন
যার করুণাধারায় মুছে যাবে অবসাদ, সকল গ্লানি?
অভিভাবকহীন, অসহায় আমি ডুবে আছি অরণ্যরোদনে।
গোধূলিবেলায় পুরনো একটি বাড়ির দরজা থেকে
ব্যর্থতার মুঠো মুঠো অন্ধকার নিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ
অমলকান্তি এক বালক এসে দাঁড়ায় সামনে এবং
কিছু না ব’লেই আমাকে পরিচালিত করে কোলাহল থেকে
দূরে আশ্চর্য নির্জনতায়, ঠেলে দেয় ঊর্ধ্বলোকে মেঘের
মহল্লায়, ডানাহীন আমি উড়তে থাকি নক্ষত্রের জলসায়।
০৯-০৪-২০০২
স্বপ্নে আমার মনে হলো
রাগী মোষপালের মতো ধেয়ে আসছে
আকাশজোড়া মেঘদল আর সেই কবে থেকে
আমি হেঁটে চলেছি কাঁটাভরা পথে, চলেছি
অভীষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। অবিরত
রক্ত ঝরছে অতিশয় ক্লান্ত দুটো পা থেকে। বেয়াড়া
ক্লান্তি আর অমাবস্যা-হতাশার
চোখ রাঙানিতে জব্দ হয়ে ত্বরিত
এই গাছতলায় লুটিয়ে পড়লে বেঁচে যাই।
অথচ একরোখা জেদ আমাকে ঠেলে দেয়
সামনের দিকে ঘুটঘুটি অন্ধকার, মেঘের
বাজখাঁই ধমক এক লহমায় অগ্রাহ্য ক’রে
এগোতে থাকি। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎপ্রবাহ আমাকে
পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। বিদ্যুল্লতাকে
ধন্যবাদ জানাতে থাকি প্রতিটি পদক্ষেপে।
অকস্মাৎ আমার ব্যাকুল দৃষ্টিতে উদ্ভাসিত
অনন্য প্রকৃতি-শোভিত তপোবন। আমার
দু’চোখ সঙ্গীতধারায় রূপান্তরিত অপরূপ
নক্ষত্রে যেন, কী এক আমন্ত্রণ আমাকে
পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় তপোবনের ভেতর। অভিভূত
দেখি একজন অনিন্দ্যসুন্দর তাপস
উপবিষ্ট উঁচু, দ্যুতি-ছড়ানো আসনে এবং
অদূরে তাঁর মুখোমুখি বেশ নিচু আসনে
বসে আছেন ক’জন তাপস। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি
তাকিয়ে থাকি সেই স্বর্গীয় দৃশ্যের দিকে।
কারা যেন আমাকে সরিয়ে দিতে চাইলো
সেখান থেকে। উচ্চাসনে উপবিষ্ট তাপস
অঙ্গুলি নির্দেশে আমাকে এগিয়ে আসার সঙ্কেত জানিয়ে
দূরের একটি আসন দেখিয়ে দিলন। তাঁর ঔদার্যে
হতবাক আমি উজ্জ্বল সাহসে বললাম, ‘এই অধমকে আপনি
আপনার পদতলে ঠাঁই দিন গুরুদেব হে বিশ্বকবি।‘ অন্যান্য
আসনে উপবিষ্ট স্তম্ভিত কবিবৃন্দ চেয়ে থাকেন আমার দিকে,
চকিতে মুছে যায় দৃশ্য। আমি স্বপ্নহারা মেঘে ভাসতে থাকি!
০২-০৮-২০০২
হায়, এ কেমন জায়গায়
হায়, এ কেমন জায়গায় ডেরা আমার, যেখানে
গাছগাছালির চিহ্ন নেই, সবুজের জন্যে চোখ
পিপাসার্ত সারাক্ষণ। পিপাসা মেটে না
কিছুতেই; নীলিমায় চোখ দুটো রেখে কিছুক্ষণ
স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের ছোঁয়া পাব, তারও পথ বন্ধ। আসমান, সে-ও
বড় সঙ্কুচিত বহুতল কিছু বাড়ির সন্ত্রাসে
কোনও দিকে স্বস্তি নেই, শান্তি নেই। বহুকাল যাবত প্রত্যহ
কানে খুব জোরে ধাক্কা দেয়্য স্কুটার, মোটরকার,
বাস আর দ্রুতগামী ট্রাকের ধমক। ভাবি, সারাক্ষণ কানে
তুলো গুঁজে রাখি কিংবা বিধি বাম হয়ে
আমাকে বধির করে দিলে রক্ষা পাই। কালেভদ্রে কান পেতে
রাখি, যদি কোনও যাদুবলে কোকিল অথবা
অন্য কোনও গায়ক পাখির অকৃপণ
সুরের স্বর্গীয় সুরসুধা, পদাবলী-সঞ্চারিত
মাধুর্যের প্রত্যাশা নির্বোধ স্বপ্ন ছায়া বৈ তো নয়!
২৩-০৮-২০০২