ঝুঁটি দোলানো নাচ
আমার মুঠোয় তোমার স্তন বেহেশতের দ্যুতিময় বিষিদ্ধ ফল
আমার ওষ্ঠঁ তোমার ঠোঁট থেকে
শুষে নেয় আবেহায়াত
আদ্যোপান্ত পাঠ করি তোমাকে জ্ঞানার্থীর নিষ্ঠায়
তোমার চোখের পাখির পাখা আলতো গোটানো
বুকে ঝড়ের আগে মেঘনা নদীর তোলপাড়
দ্রুত সরিয়ে নাও নিজেকে
হয়তো শুনতে পেলে পদশব্দ কাপড়ের খসখসানি
আমার হৃদয় পূর্ণিমা হতে হতে অমাবস্যা
অদৃশ্য ফেরেশতা ঝুঁকে চুমু খেলেন তোমার মাথায়
কালো চুলে নক্ষত্রের মতো দোয়ার ঝলসানি
সম্বিৎ এবং স্থৈর্যের প্রতিমা তুমি
কী করে পারো এভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারো
নিজের শরীর এক ঝটকায়
কী ভাবে করেছো রপ্ত এমন প্রশান্তির মুদ্রা
কুকুরের কানের মতো ঝুলতে থাকে আমার অবসন্ন আবেগ
তোমার আঙুলে প্রজাপতির পাখনার কম্পন
মনে হয় বসে আছো পরীস্তানে আলসেমির গালিচায়
সোফার হাতলে তোমার হাত গুণীর সোনালি বাদ্য
উঠে দাঁড়াও শাড়ির আঁচল সামলে সুমলে
উৎসবরাতে রঙিন বাতিখচিত গাছের যৌবনের উত্থান
তাকাও আমার দিকে জ্যোৎস্নাঝলসিত
নহরের মতো গভীর দৃষ্টিতে
যেন ভালোবাসা এই প্রথম চোখ মেললো
যদি তুমি মুখের উপর দড়াম বন্ধ করে দাও দরজা
কখনো শঙ্খিনী আক্রোশে
আমার হৃদয় গুঁড়িয়ে যাবে পথে ছড়ানো
দুর্ঘটনাকবলিত মোটর কারের কাচের মতো
সেদিন আফ্রিকার অরণ্যে আমার পথ হারানো
রাসায়নিক বৃষ্টিতে ঝলসে-যাওয়া
আমার মুঠোয় আবার তোমার গরবিনী স্তন
পুনরায় ক্ষণকালীন চুম্বন প্রায় বিটিভির
বিদেশী ছবির চুম্বন-দৃশ্যের ধরনে
বিচ্ছেদের সুরমা রঙের ছায়া অস্তিত্বে
দখলীস্বত্ব লিখে দেয়া যন্ত্রণার অনাড়ম্বর হরফে
প্রেতের পদহীন পদশব্দে অন্ধকার-খরগশ উৎকর্ণ
অজ্ঞাত ভয় দেয় না ঘুমোতে
গৃহকোণের টেবিলে বইয়ের স্তূপ কখনো বৌদ্ধবিহার
কখনো রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীপতি ক্রেজি হর্সের তেজী মাথা
অপ্রেমের শয্যায় শুয়ে থাকি কাঁটাবন্দী
আগামীকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক
ভালোবাসার ঝুঁটি-দোলানো নাচ
২৬।৪।৯০
ডালকুত্তা
ডাকাবুকো লোকগুলো কেবল নিজেরাই
তেড়ে আসছে তা’ নয়
আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে ডালকুত্তাদেরও
কী হিংস্র আষ্ফালন
শিকারী কুকুরগুলোকে রোখার মতো
মন্ত্রপূত মাংসখন্ড আমার হাতে নেই
নক্ষত্রের নীড়ে লতাগুল্মের দূর্ভেদ্য নিবাসে
মাছের রূপালি ডেরায় ঠাঁই পাবো কী ক’রে
ট্রাফিকচর্চিত রাস্তায় জমে-থাকা পানি হুক্কাহুয়া
ফুটপাত প্রগলভ মাইফ্রোফোন হুক্কাহুয়া হুক্কাহুয়া
রেডিও টেলিভিশন সংবাদপত্র হুক্কাহুয়া
উঙ্কি-আঁকা সন্ধেবেলায় রেস্তোরাঁ হুক্কাহুয়া হুক্কাহুয়া
ডালকুত্তাদের তপ্ত নিঃশ্বাস
আমার গ্রীবার পড়শী সারাক্ষণ
স্বপ্নের ভেতরও
ওদের ক্ষমাহীন কর্কশ আঁচড় আমার আত্মায়
পিপাসায় বুক খরার জমির মতো চৌচির
তবু ছুটছি
কাঁটায় কাঁকরে পা দুটো ক্ষতবিক্ষত
তবু ছুটছি
ওরা কারা আসছে উল্টো দিক থেকে
কণ্ঠে বরাভয়ের গান
প্রায় বেরিয়ে-পড়া আমার চোখ
এখন জ্বলজ্বলে বাঁচার তীব্রতায়
আমার চোখে নিসর্গের চুল ওষ্ঠ স্তন নাভিমূল
আর নিতম্ব বেহেশতের বিকল্প
২২।৪।৯০
তবু তাকেই
কে আমাকে দিন দুপুরে রাত দুপুরে
কাপড় কাচার মতো ক’রে নিঃড়ে নিচ্ছে?
আমার মেদ আমার মজ্জা শুষে নিচ্ছে?
কে আমাকে এভাবে রোজ কষ্ট দিচ্ছে?
কে আমাকে পাগল-করা নিঝুম সুরে
ঘর ছড়িয়ে পথের ধারে দিচ্ছে ঠেলে?
মাথার ভেতর পিঁপড়ে শত দিচ্ছে পুরে?
হাত-পা বেঁধে যখন তখন শাস্তি দিচ্ছে?
যখন কিছু লিখতে বসি, মত্ত পাখি
ডাকাডাকি করতে থাকে শিরায় শিরায়,
কলম ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ি, মাথা টলে।
কে রোজানা সকল কিছু ভেস্তে দিচ্ছে?
চায় না সেতো রাত্রিবেলা ঘুমিয়ে থাকি,
আমার দিকে হাজার বাদুড় দিচ্ছে ছুঁড়ে,
আমাকে সে নিজের কবর খুঁড়তে বলে;
কে আমাকে এভাবে রোজ দন্ড দিচ্ছে?
কে আমাকে ব্যস্ত রাখি অস্থিরতায়?
হাতে গুঁজে দিচ্ছে দীর্ঘ ফাসির দড়ি,
কখনো বা রেললাইনে বলছে শুতে,
আজকে আমি ফাঁদে-পড়া জখমি জন্তু।
কে আমাকে সব প্রহরে কেবল ভোগায়,
মুঠোয় পুরে দিচ্ছে অঢেল ঘুমের বড়ি?
প্রতি পদেই খাচ্ছি হোঁচট, মুষড়ে পড়ি;
তবু তাকেই চাই যে কাছে অধিকন্তু।
৪।২।৯০
তোমার নির্মিত নক্ষত্রেরা
তোমার নির্মিত নক্ষত্রেরা তোমাকে ভেংচি কাটে
চিরম্ভনতার প্রসঙ্গ টেনে
রাতদুপুরে
ওদের নিরস্ত করার কারিকুরি
আজ অব্দি রপ্ত করোনি
ওরা হয়ে ওঠে নাছোড় বিরক্তিকর বিদুষক
লতাপাতাঢাকা কোঠ বাড়ি প্যাঁচানো ধোঁয়া
বমি করে কী সব আবছা শব্দ প্রায়শ
চুপিসাড়ে হেঁটে আসে কাজ সারে ডোবার ধারে
সেখানে যারা থাকে
তাদের নামগোত্র কেউ জানে না
উপস্থিত থেকেও অনুপস্থিত
গুজব আকাশের কাছ থেকে
তারার কাছ থেকে
গাছগাছালি পাখপাখালির কাছ থেকে চুপি চুপি
অনেক কথা এনে ওরা
উনুনে চাপায় খুব গনগনে হ’লে
ছড়িয়ে দেয় এখানে সেখানে
সবসময় ওরা আত্মবিলোপী ক’জন পরস্পরের দিকে
তাকিয়ে থাকে
গুজব ভীষণ বিপজ্জনক ওরা শিশুদের
ভাজে কড়াইতে নরনারীর গায়ের চামড়া
তুলে ডুগডুগি বানায়
উপড়ে নেয় বৃদ্ধ বৃদ্ধার চোখ
আতঙ্কবাদীদের ডেরা একদিন
ঘেরাও করে সেপাই সান্ত্রীরা হাত উপরে তুলে
সুবোধ ভঙ্গিতে বেরিয়ে আসার হুকুম
লাউডস্পীকারে ধ্বনিত ঘন ঘন
কোঠাবাড়ি থেকে একটি পিপঁড়েও নড়ে না
ওরা নিজেরাই উড়িয়ে দেয় ডেরা
এই সঙ্গে তোমার নির্মিত নক্ষত্রেরা পাঁচিল ঘেরা
বাড়িটাও মাটিতে
মুথ থুবড়ে পড়ে
উর্ধ্বগামী বারুদগন্ধী ব্যাঙের ছাতা
১৯।৪।৯০