বাতাসে ভাসবে ঠিক
আমাকে যেতেই হবে দূরে, বহু দূরে।
যদি পা আমার
এখন প্রবল হয়ে যায়, তা হ’লে নিশ্চিত আমার এই
সংসারে বেকার হয়ে থাকব এক কোণে
থাকব সবার কণ্ঠলগ্নপাত্র হয়ে, যা আমার
কস্মিনকালেও নয় বিন্দুমাত্র কাঙ্ঘনীয়,
তখন কি বলতেই হবে আমরাই সব
স্বেচ্ছায় নিয়েছি গ’ড়ে আমাদের বাসনার প্রবল ইচ্ছায়।
বলতে কি হবে কোনও-একটি ঘটনা আমাদের
প্রবল ইচ্ছায় ঘ’টে গেলে
আমাদের প্রতিটি ইচ্ছাই
ঘ’টে যায় সুষ্ঠুভাবে। এমনও তো হয়
পরপর কতিপয় অতিশয় জরুরি কাজের
ছেঁড়াখোঁড়া অবসান ঘটে।
কে তুমি ডাকছ এই ঘোর অন্ধকারে
কামেলা নামের এক রমণীকে? কে সে?
কোথায় নিবাস তার? কী সম্পর্ক সেই
রমণীর সঙ্গে যার নাম ধরে এই অন্ধকারে
বারবার ডাকছ ব্যাকুল সুরে? তাকে
দেখতে না পেলে, বলি আমিও ব্যাকুল হব খুব।
এসো ভাই আমরা দু’জন কণ্ঠ মিলিয়ে ডাকি
পরস্পর, আমরা বাংলার আসমান,
বাতাস ভাসিয়ে দিই। আমাদের দেখা
হোক না-ই হোক, দু’জনের কণ্ঠস্বর বাতাসে ভাসব ঠিক।
১২.১২.২০০৫
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই
এই যে আপনি আমার বাসার জানালার ভেতর দিয়ে
দৃষ্টি ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কে আপনি? আপনার এই কাজটি কি
তেমন ভালো হচ্ছে? আমার গলার আওয়াজ জানালা থেকে
স’রে গেল। জানালাটি বন্ধ করার সঙ্গেই
একটি বিটকেল আওয়াজ দৌড়ে এসে কোথায়
যেন মিলিয়ে গেল। বাইরের অচেনা ব্যক্তি-
কেউ কি তাকে স’রে যেতে হুকুম দিলেন? কে বলবে?
খানিক পরে কে যেন আমাকে মাথা বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বেজায় কেমন যেন
বেখাপ্পা মনে হল আর আমার পাশেই
একজন তরুণীকে দেখতে পেয়ে ভড়কে গেলাম। তরুণী
মৃদু হেসে আমাকে মধুর সম্বোধন জানালেন। মুহূর্তে
ঘরের পরিবেশ গেল বদলে। তরুণী
উধাও, পাশের শয্যায় একজন বিকট পাণ্ডা দাঁত কেলিয়ে
হাসছে আর ওর মুখ থেকে ঝুলছে কাঁচা মাংস। তার হাসির
তাড়নায় সারা ঘর গমগম করছে, বেজায় কাঁপছে।
খানিক পরে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ ট্রে-হাতে
ঘরে ঢুকলেন। তিনি এমন সালাম জানালেন যে, আমার
হাত সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আদাব জানাল। তাঁর ট্রেটিও
ছিল বেশ জমকালো। ট্রের খাবারগুলোও জমকালো। এবং
-খানিক পরেই বেজে উঠল রবীন্দ্রসংগীত। এবং
বেশকিছু পরে হাল আমলের কবির কবিতাও বেজে উঠল
রেকর্ডে। হয়তো সন্ধ্যারাতে কিংবা ভোরবেলা গায়ক
গায়িকা হাজির হবেন এই এলাকার সংগীতপ্রেমীর তৃষ্ণা মেটাতে।
মধ্যরাতে করুণ সুর
আমার চৌদিকে এই সন্ধেবেলা দুরন্ত আগুন
হঠাৎ উঠল জ্ব’লে। কী করে জ্বলল?
কারাই-বা, বলা-কওয়া নেই, সর্বনাশা
ওই খেলা জুড়ল আমার সঙ্গে! ওরা কারা?
আমার তো জানা নেই। যতদুর জানি
কার বাড়া ভাতে ছাই ঢালিনি কখনও।
চারপাশে চোখে পড়ে নানা লোক দ্রুত
নানা ছলে নিজেদের ভাগ্য জ্বলজ্বলে
ক’রে তোলে। অপারগ যারা
সাদাসিধে তারা ড্যাবডেবে চোখে শুধু
চেয়ে থাকে কিংবা বড়জোর ঠোকে
নিজের কপাল। কেঁপে ওঠে হঠাৎ প্যাঁচার ডাকে!
কে তুমি চলেছ একা অন্ধকার-ঘেরা
পথে অতি দ্রুত, যেন তোমার অনুপস্থিতি সেই
স্থানে অনেকের ঢের ক্ষত, কারও কারও
সর্বনাশ হয়ে যাবে। বুঝি তাই সবাই রয়েছে প্রতীক্ষায়।
হয়তো তোমার পদযুগ ভীষণ নিশ্চল হয়ে এল,
সম্ভবত পৌঁছুনোর আগেই মূর্ছিত হবে তুমি!
এই তো অদূরে অপরূপ আলিশান দালানের
ছায়া যেন যাচ্ছে দেখা বেশ কিছু সবুজ গাছের
অন্তরালে। কারা সেই দালানে করেন বাস সুখে?
সত্যি সুখে? নাকি দুঃখ সুন্দর সুখের
ভাঁজে ব’সে পড়ে দালানের গালিচায়।
ঘন-ঘন মধ্যরাতে করুণ ধ্বনিত হয় সুর!
১৫.১০.২০০৫
মানব-মানবী
যদি কেউ পথে যেতে-যেতে জোরে ঢোল
বাজাতে বাজাতে বলে, ‘শোনো ভাইবোন,
হও সাবধান, আমাদের এ শহরে
নানা স্থানে, এমনকি অলিতে-গলিতে রক্তলোভী
হায়েনারা হঠাৎ পড়েছে ঢুকে,-ভয়
না পেয়ে দাঁড়াও রুখে সামান্য যে-কোনও
অস্ত্র থাকলেও হাতে। যতদূর জানি,
আমাদের দেশবাসীদের অনেকেই দেশপ্রিয়, স্বার্থত্যাগী।
কে না জানে এই দেশের বাশিন্দারা স্বদেশের মান
রক্ষার কারণে হাসিমুখে দিতে পারেন জীবন।
তা হ’লে কী করে শক্র পারবে ছিনিয়ে নিতে প্রিয়
স্বাধীনতা, তাদের কখনও?
এখন হায়েনাদের ঘোরাঘুরি, লাফালাফি বড়
বেশি চোখে পড়ে,
তা হ’লে একদা যারা স্বাধীনতা এনেছিল
ঝরিয়ে নিজের রক্ত তারা আকাশের
দিকে চেয়ে হাসবে কি কাঁদবে ভেবেই
পাচ্ছে না কিছুতে। রাত এলে হাসে চাঁদ বাঁকা হাসি।
যে যতই হাসাহাসি করুক-না কেন যতকাল
এদেশে থাকবে প্রগতির বুনিয়াদ,
অগ্রসর মানবের জয়গান, ততদিন এখানে বইবে
কল্যাণের স্রোত, গাওয়া হবে স্নিগ্ধ গীত,
ততদিন মানুষের কল্যাণ, প্রণয় থাকবেই।
হয়তো তখন আরও অগ্রসর মানব-মানবী জন্ম নেবে।
২৭.১০.২০০৫
মুছে যায় অপরূপ মেলা
আচানক মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হ’ল,-
কিছু পদধ্বনি যে প্রবেশ করছে
খুব কাছে। চেয়ে দেখি চারটি রুপালি
কঠোর, নিষ্ঠুর পদযুগ। সেগুলোর অধিকারী
রয়েছে তাকিয়ে এই ভ্যাবাচ্যাকা-খাওয়া লোকটির
দিকে, যেন ওরা তাকে এক্ষুনি চিবোবে!
বেশ কিছুক্ষণ ওরা ঘরের ভেতরে দাঁড়ানোর পর এই
সন্ত্রস্ত আমাকে বন্দি ক’রে
নিয়ে চলে ঘরের বাইরে বহুদূরে। হঠাৎ বিকট সেই
চারজন তাদের বন্দিকে গাছে বেঁধে মিশে গেল ধোঁয়াশায়।
আকাশে চাঁদের হাসি জেগে উঠতেই খ’সে যায়
বন্দিদশা আর নানা দিকে ফোটে পুষ্পরাজি।
অকস্মাৎ চোখে পড়ে কতিপয় বিদঘুটে জীব
ভয়নক নখ দিয়ে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছে সকল ফুল আর
বমন ছড়িয়ে দিচ্ছে এদিকে-সেদিকে। কী করে যে
আমার ভেতর এক দূরন্ত বিদ্রোহ জেগে ওঠে
বিদঘুটে জীবদের তাড়াবার- নিজেই বুঝিনি।
চতুর্দিকে অপূর্ব পুষ্পিত ঘ্রাণ আর শোভা জন্ম নেয়।
যাব আর কত দূর, কে আমাকে বলে দেবে
এই কণ্ঠকিত পথে? কোথায় পথের হবে শেষ?
এ-পথের শেষ নেই; যতদিন বেঁচে আছি, পথ
ডেকে যাবে আজ একদিকে, কাল অন্য দিকে আর
নিষ্ঠুর নানা দিক থেকে রংবেরঙের খেলা
দেখিয়ে চকিতে কেড়ে নেয় অপরূপ এক মেলা।
৩০.০৭.২০০৫