এতকাল বৈঠা বেয়ে
এই আমি এতকাল বৈঠা বেয়ে প্রায়
তীরে এসে ডিঙি, হায় ডুবে
যেতে দেব? হ্যাঁ, আমি স্বীকার করি-মাথা-
ভর্তি শাদা চুল ওড়ে দূরন্ত বাতাসে।
পাড়ার অনেকে আজও আমার তেজের
তারিফে প্রায়শ মেতে ওঠে, গুণ গায়।
কখনও শ্রমের পরে ক্লান্ত আমি ছেঁড়া বিছানায়
গা ঢেলে দিলেই ঘুম এসে চুমো খায় আর
কিছুক্ষণ কিংবা বেশ কিছুক্ষণ কেটে
গেলে হুর-পরী ডানা মেলে এই
গরিবের হৃদয়কে নাচের মাধ্যমে
বেহেশতের অপরূপ হুরিময় নর্তকীর নাচে
চঞ্চলিত হয় চতুর্দিক, হয়ে ওঠে তারাময়!
বৈঠাবায়ী মাঝি হয়ে ওঠে বেহেশতের অধিবাসী!
অকস্মাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে মায়াবী স্বপ্নের
অপরূপ স্পর্শের গৌরব ভুলতে না পেরে ভাবি,-
শুধু ভাবি নর্তকীর অঙ্গভঙ্গি, হাসির ফোয়ারা,
ওদের নাচের ভঙ্গি। শরীরের ঘ্রাণ
তাদের মাতাল করে, যেন এখনও জীবন্ত।
এই আমি বৈঠা বেয়ে বারবার সেই স্বপ্ন দেখি।
জেনে গেছি যে-পথে হাঁটতে হবে, সেই পথ
বড় বেশি কণ্টকিত, তদুপরি নানা দিকে খুব
ভয়ঙ্কর রক্তলোভী পশুর নিয়ত
বিচরণ পড়ে চোখে। অথচ সে-পথ
এড়িয়ে উদ্দিষ্ট সীমানায় পৌঁছুতেই হবে ঠিক।
ভয়াবহ সেই পথে মনুষ্য-হাড়ের স্তূপ কঙ্কালের!
কখনও কখনও মানুষেরই হাত
কে তুমি আমাকে দূর অজানায় নিয়ে
যাওয়ার উদ্দেশ্যে মন্ত্র পড়ছ এমন
অপূর্ব মধুর সুরে? তুমি কি প্রচ্ছন্ন জাদুকর?
তোমার জাদুর ধোঁয়া আমার চৈতন্যে
ছাড়তে কোরো না চৈষ্টা, ব্যর্থতায় সকল প্রহরে
খাবি খেয়ে পরিণামে হারাবে চেতনা।
জানি তুমি আমার কথায় এতটুকু করছ না
কর্ণপাত; আমাকে নির্বোধ
ঠাউরে অন্তরে হেসে আমাকে জাদুর ধূম্রজালে
বন্দি করে রেখে দেবে চিরতরে অশুভের গোলাম বানিয়ে।
না, আমি তোমার কোনও তেলেসমাতির
ধোঁয়ায় হারাব জ্ঞান-এই আশা ঝবরে কালিতে।
আমার জীবন শুধু রাশি অপরূপ ফুল
নিয়ে গুণগ্রাহীদের আসরে কাটিয়ে
পুরস্কার লাভের স্বপ্নের ঝলমলে পথে ঘুরে
বেড়ানোর নকল সুখের খেলা নয় বলে জানি।
এই তো দেখছি আমি পাহাড়ি পাথর থেকে দ্রুত
গড়িয়ে পড়ছি আর শরীরের নানা অংশ ছিঁড়ছে ভীষণ।
তা হ’লে কি এভাবেই পঙ্গুর ধরনে সারা জীবন আমাকে
নিজের ব্যর্থতা বয়ে কাটাতেই হবে? পথে হেঁটে
গেলে অন্য পথিকেরা আমার পঙ্গুত্ব দেখে মনে-মনে কেউ-
কেউ কষ্ট অনুভব করে। দিন যায়, দিন আসে।
দেখছি মানুষ কী সহজে মানুষের রক্ত ঝরায় এবং
কখনও কখনও মানুষেরই হাত বহু মানুষকে রক্ষা করে।
০৪.১০.২০০৫
কখনও-সখনও
কখনও-সখনও পারবে না যেতে একা
যদি বলি, প্রকৃত বন্ধুর কথা অত্যন্ত বিরল
এমন সুন্দর এই গলিতে আমাকে হেঁটে যেতে
দ্যাখে প্রায়শই তারা কিংবা
তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা প্রায়শ দেখতে
পেয়ে কেউ-কেউ হেসে সালাম করেন। কেউ ঠোঁটে
খেলিয়ে মুচকি হাসি দ্রুত চলে যান
যে যার গন্তব্যে আর আমি কিছু মনে
না করেই হেঁটে যেতে থাকি কোনও বন্ধুর বাসায়।
যদি বলি আমিও ভণ্ডামি ক’রে বসি
কখনও-সখনও কোনও মজলিশে, তা হ’লে হবে না
ভুল; তাই নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়।
তখন স্মৃতির জাল ফুঁড়ে
বেরিয়ে আসেন মরহুমা মা আমার, তখন দু’চোখ
দিয়ে তাঁর ঝরছে আগুন আর পরমুহূর্তেই
করুণ দু’চোখ দিয়ে আমাকে দেখেন ভালোবেসে,-
যেন আমি ছোট খোকা-পারব না যেতে একা!
মধ্যরাতে ছিলাম নিজের ঘরে শুয়ে বড় একা,-
আচানক মনে হ’ল, যেন কার নরম হাতের
মৃদু স্পর্শ ছুঁয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত আর
তাঁর কণ্ঠস্বর বেদনার্ত লোকটির জননীর বটে।
খানিক পরেই কোখায় যে মিলায়, যায় না বোঝা
কিছুই তো। বারবার শুধু বড় করুণ গানের সুর শোনো
চলন্ত পথিক আর অতিশয় দিশেহারা চাকরির সন্ধানে
কখনও-সখনও দূর থেকে ভেসে-আসা মৃদু সুর শোনা যায়।
২৮.১০.২০০৫
কদাকার মূর্তির ভিতর থেকে
যেয়ো না, দাঁড়াও ভাই। খানিক দাঁড়ালে,
আশা করি, বড় বেশি ক্ষতি
হবে না তোমার। দেখছ তো এই আমি
একলা পথের ধারে পড়ে আছি বড় অসহায়
কখনও ইঙ্গিতে, কখনও-বা উঁচিয়ে গলার স্বর
পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে লুব্ধ হয়ে পড়ি
বারবার জ্ঞাতসারে, কখনও আজান্তে। অকস্মাৎ
পায়ের পুরনো ক্ষত বেদনা-কাতর হয়ে ওঠে।
হঠাৎ পায়ের ক্ষত আমার দৃষ্টিতে কেন যেন
স্বর্গের পুষ্পের মতো ফুটে ওঠে। তা হ’লে কি
আমি উন্মাদের অবিকল ছায়ারূপে প্রতিভাত
বর্তমানে? বেলা শেষ হলে ফের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাব গর্তে!
গর্তে ঢুকে যাব-যাব করতেই আকাশে চাঁদের
মায়াময় মুখ দেখে আমি নিজের ভিতর
পরিবর্তনের ছোঁয়া অনুভব করি। যেন আমি
কদাকর মূর্তির ভিতর থেকে সুন্দরের প্রিয় আবির্ভাব!
২০.০৯.২০০৫
কদাকার মূর্তির ভিতর থেকে
যেয়ো না, দাঁড়াও ভাই। খানিক দাঁড়ালে,
আশা করি, বড় বেশি ক্ষতি
হবে না তোমার। দেখছ তো এই আমি
একলা পথের প’ড়ে আছে বড় অসহায়।
কখনও ইঙ্গিতে, কখনও-বা উঁচিয়ে গলার স্বর
পথচাদের দৃষ্টি-আকর্ষণে লুব্ধ হয়ে পড়ি
বারবার জ্ঞাতসারে, কখনও অজান্তে। অকস্মাৎ
পায়ের পুরনো ক্ষত বেদনা-কাতর হয়ে ওঠে।
হঠাৎ পায়ের ক্ষত আমার দৃষ্টিতে কেন যেন
স্বর্গের পুষ্পের মতো ফুটে ওঠে। তা হ’লে কি
আমি উন্মাদের অবিকল ছায়ারূপে প্রতিভাত
বর্তমানে? বেলা শেষ হলে ফের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাব গর্তে!
গর্তে ঢুকে যাব-যাব করতেই আকাশে চাঁদের
মায়াময় মুখ দেখে আমি নিজের ভিতর
পরিবর্তনের ছোঁয়া অনুভব করি। যেন আমি
কদাকার মূর্তির ভিতর থেকে সুন্দরের প্রিয় আবির্ভাব!