সন্দেহের কারণ
কত বড়ো আমি, কহে নকল হীরাটি।—
তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি।
সমালোচক
কানা-কড়ি পিঠ তুলি কহে টাকাটিকে,
তুমি ষোলো আনা মাত্র, নহ পাঁচ সিকে।
টাকা কয়, আমি তাই, মূল্য মোর যথা,
তোমার যা মূল্য তার ঢের বেশি কথা।
সাম্যনীতি
কহিল ভিক্ষার ঝুলি, হে টাকার তোড়া,
তোমাতে আমাতে, ভাই, ভেদ অতি থোড়া—
আদান-প্রদান হোক। তোড়া কহে রাগে,
সে থোড়া প্রভেদটুকু ঘুচে যাক আগে।
সুখদুঃখ
শ্রাবণের মোটা ফোঁটা বাজিল যূথীরে—
কহিল, মরিনু হায় কার মৃত্যুতীরে!
বৃষ্টি কহে, শুভ আমি নামি মর্তমাঝে,
কারে সুখরূপে লাগে কারে দুঃখ বাজে।
সুসময়
শোকের বরষা দিন এসেছে আঁধারি—
ও ভাই গৃহস্থ চাষি, ছেড়ে আয় বাড়ি।
ভিজিয়া নরম হল শুষ্ক মরু মন,
এই বেলা শস্য তোর করে নে বপন।
সৌন্দর্যের সংযম
নর কহে, বীর মোরা যাহা ইচ্ছা করি।
নারী কহে জিহ্বা কাটি, শুনে লাজে মরি!
পদে পদে বাধা তব, কহে তারে নর।
কবি কহে, তাই নারী হয়েছে সুন্দর।
স্তুতি নিন্দা
স্তুতি নিন্দা বলে আসি, গুণ মহাশয়,
আমরা কে মিত্র তব? গুণ শুনি কয়,
দুজনেই মিত্র তোরা শত্রু দুজনেই—
তাই ভাবি শত্রু মিত্র কারে কাজ নেই।
স্পর্ধা
হাউই কহিল, মোর কী সাহস, ভাই,
তারকার মুখে আমি দিয়ে আসি ছাই!
কবি কহে, তার গায়ে লাগে নাকো কিছু,
সে ছাই ফিরিয়া আসে তোরি পিছু পিছু।
স্পষ্ট সত্য
সংসার কহিল, মোর নাহি কপটতা,
জন্মমৃত্যু, সুখদুঃখ, সবই স্পষ্ট কথা।
আমি নিত্য কহিতেছি যথাসত্য বাণী,
তুমি নিত্য লইতেছ মিথ্যা অর্থখানি।
স্পষ্টভাষী
বসন্ত এসেছে বনে, ফুল ওঠে ফুটি,
দিনরাত্রি গাহে পিক, নাহি তার ছুটি।
কাক বলে, অন্য কাজ নাহি পেলে খুঁজি,
বসন্তের চাটুগান শুরু হল বুঝি!
গান বন্ধ করি পিক উঁকি মারি কয়,
তুমি কোথা হতে এলে কে গো মহাশয়?
আমি কাক স্পষ্টভাষী, কাক ডাকি বলে।
পিক কয়, তুমি ধন্য, নমি পদতলে;
স্পষ্টভাষা তব কণ্ঠে থাক বারো মাস,
মোর থাক্ মিষ্টভাষা আর সত্যভাষ।
স্বদেশদ্বেষী
কেঁচো কয়, নীচ মাটি, কালো তার রূপ।
কবি তারে রাগ ক’রে বলে, চুপ চুপ!
তুমি যে মাটির কীট, খাও তারি রস,
মাটির নিন্দায় বাড়ে তোমারি কি যশ!
স্বাধীনতা
শর ভাবে, ছুটে চলি, আমি তো স্বাধীন,
ধনুকটা একঠাঁই বদ্ধ চিরদিন।
ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা—
আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা।
হাতে-কলমে
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরই তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
হার-জিত
ভিমরুলে মৌমাছিতে হল রেষারেষি,
দুজনায় মহাতর্ক শক্তি কার বেশি।
ভিমরুল কহে, আছে সহস্র প্রমাণ
তোমার দংশন নহে আমার সমান।
মধুকর নিরুত্তর ছলছল-আঁখি—
বনদেবী কহে তারে কানে কানে ডাকি,
কেন বাছা, নতশির! এ কথা নিশ্চিত
বিষে তুমি হার মানো, মধুতে যে জিত।