ভূদৃশ্যের বর্ণনা
ভূদৃশ্য এমন হয় চতুর্দিকে অদম্য পাহাড়, বাবলার ঝোপ
পাশে মানুষের খেয়ালি বসতি, কাদামাটি ধুলোর বিস্তার
কেউ করে গান, কেউ অশ্রু ফেলে, নিমজ্জিত ঘর আর বাড়ি,
ভূদৃশ্য এমন হয় মাঝে নদী মাথায় আকাশ, উঁকি দেয়
ছেঁড়া চাঁদ, গাঢ় পাতা, হাস্যহীন কলরোলহীন তবু পাড়া-
মানুষ ফেলেছে তাঁবু বহুদূর বনের পশ্চাতে কিন্তু চিতাবাঘ
আর প্রফুল্ল হরিণ জল খায় ঘোরে ফেরে বাৎসল্যে দ্বিধায়
হঠাৎ আক্রান্ত কেউ মৃত্যু এসে নিয়ে যায় তাকে, এই খেলাধুলা
ভূদৃশ্য এমন হয় চারদিকে উড়ন্ত পাহাড় পাশে সামাজিক নদী
মানুষের ব্যবহার মেঘ ধরে মেঘ বন্দী করে তার ক্ষেতে ও টিলায়!
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস
কেউ জানে না একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষণ্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস যেন একখানি
অন্তহীন প্রগাঢ় এপিক!
পাতায় পাতায় চোখের জল সেখানে লিপিবদ্ধ
আর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্রাজিক মলাট;
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস, এতো দীর্ঘশ্বাস, কে জানতো!
দীর্ঘশ্বাসভরা এই বুকের চেয়ে শীতপ্রধান বিপন্ন অঞ্চল
আর কোথাও নেই,
এমন হলুদ, ধূসর ও তুষারাবৃত!
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
বেড়ায়, কেউ জানে না
হঠাৎ একসঙ্গে অসংখ্য দুঃখ যদি কখনো কেঁদে ওঠে
কিংবা যদি
প্রাচীন শিলালিপি থেকে সব শোকের গান সশব্দে বেজে যায়,
তাহলে যেমন মধ্যাহ্নের আকাশ সহসা দুঃখে ম্লান হয়ে যাবে
গোলাপ হবে কৃষ্ণবর্ণ, তার চেয়েও বিষণ্নতা নেমে আসবে
মানুষের বুক থেকে এই দীর্ঘশ্বাস যদি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে।
তেমন সম্ভাবনা আছে বলেই মানুষ বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস
চেপে রাখে
তার চোখে নিয়তই জল ঝরে তবু দেখা যায় না;
মানুষের বুকের ভেতর কতো যে দীর্ঘশ্বাস, জমাট বেঁধে আছে
কতো যে ক্রন্দন, পাতা ঝরার শব্দ, মৃত্যুসংবাদ
মানুষের বুকের মধ্যে ব্যথিত ব্যাকুল ইতিহাস
আর আহত সভ্যতা
মেঘের মতো ঘনীভূত হতে হতে একেকটি মর্মানি-ক
দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে
মানুস তাকে বয়ে বয়ে দগ্ধ বেঁচে থাকে;
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে
বেড়ায়, কেউ জানে না
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে
বেড়ায়, কেউ জানে না
একেকটি মানুষ নিজের মধ্যে কীভাবে নিজেই মরে যায়,
হায়, কেউ জানে না!
সব তো আমারই স্বপ্ন
সব তো আমারই স্বপ্ন মাথার উপরে এই যে কখনো
উঠে আসে মরমী আকাশ কিংবা স্মৃতি ভারাতুর চাঁদ
মেলে ধরে রূপকাহিনীর গাঢ় পাতা। কোনো এক
কিশোর রাখাল কী করে একদা দেখা পেয়ে গেলো
সেই রাজকুমারীর আর পরস্পর ভাসালো গন্ডোলা।
সেও তো আমারই স্বপ্ন রূপময় এই যে ভেনিস
কী যে সিক্ত বাষ্পাকুল ছিলো একদিন রঙিন বর্ষণে
শিল্পের গৌরবে তার মুখচ্ছবি উদ্ভাসিত আর তেকে থেকে
জ্যোৎ্লাখচিত সারা দেহে খেলে যেতো চিত্রের মহিমা!
এসব তো আমার স্বপ্নের মৃত শিশু এই যে কখনো
দেখি শৈশবের মতো এক স্মৃতির সূর্যাস্ত, অনুভূতিশীল মেঘ
যেন রাত্রি নামে নক্ষত্রের নিবিড় কার্পেটে
বুঝি যামিনী রায়ের কোনো সাতিশয় লোকজ মডেল।
সব তো আমারই স্বপ্ন তবে, মাঝে মাঝে উদ্যান, এভন্যু,
লোকালয় মনে হয় অভ্রভেদী অব্যক্ত ব্যাকুল
এই গাছগুলি কেমন মিষ্টিক আর প্রকৃতি পরেছে
সেই বাউল বর্ণের উত্তরীয়! এও তো আমারই স্বপ্ন
আঙিনায় একঝাঁক মনোহর মেঘ
আর উন্মুক্ত কার্নিশে দোলে নীলিমা, নীলিমা! কিংবা
টবে যে ব্যাপক চারাগুলি তাতে ফুটে ওঠে মানবিকতার
রাঙা ফুল; এখনো যে কোনো কোনো অনুতপ্ত খুনী
রক্তাক্ত নিজের হাত দেখে ভীষণ শিউরে ওঠে ভয়ে
আর প্রবল ঘৃণায় নিজেই নিজের হাত ছিঁড়ে ফেলে
সেখানে লাগাতে চায় স্নিগ্ধ গোলাপের ডালপালা।
সেও তো আমারই স্বপ্ন এই যে চিঠিতে দেখি
ভালোবাসারই তো মাত্র স্বচ্ছ অনুবাদ কিংবা
একটি কিশোরী এখনো যে বকুলতলায় তার
জমা রাখে মৃদু অভিমান; এখনো যে তার গণ্ডদেশ
পেকে ওঠে পুঞ্জীভূত মাংসের আপেল। এসব তো
আমার স্বপ্নের মৃত শিশু, বিকলাঙ্গ, মর্মে মর্মে
খঞ্জ একেবারে! যেন আমি বহুকাল-পোষা
একটি পাখির মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে আঝি।
আমি জানি সবই তো আমার স্বপ্ন নীলিমায়
তারার বাসর আর এভেন্যুতে গূঢ় উদ্দপিনা-
এইগুলি সব তো আমারই স্বপ্ন, সব তো আমারই স্বপ্ন।