কোনো তরুণ প্রেমিকের প্রতি
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালূ প্রেম
একদিন ছিলো আমারই আকাশে উদাসীন মেঘ, মাতাল নৌকা-
সারারাত বেয়ে জ্যোৎস্নার খেয়া ভোরবেলা হাতে ব্যর্থ কুয়াশা
তুমি তো জানো না এসব কাহিনী ঝরে গেছে কতো যামিনীর চাঁদ,
তবু যে প্রেমিক আজো খুঁজে পাও কোথাও স্বপ্ন, কোথাও গন্ধ
কোথাও স্মৃতির স্নিগ্ধ বকুল কুড়াও এখনো তেমনি বিভোর
তুমি তো জানো না তুমি তো জানো না বকুলগুলি যে কার ব্যর্থতা!
তরুণ প্রেমিক আমি ঠিকই জানি তুমি তাকালেই খুলবে পাপড়ি
মেঘ জমা হবে আবেগে তোমার; কিংবা নদীর দূর মোহনায়
ভাসবে আবার তোমাদেরই নামে অনাদি কলস!
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথারূ প্রেম
একদিন ছিলো আমার এ-বুকে বিয়াত্রিচের ব্যথিত তৃষ্ণা তাই ঘুরে মরি
অন্ধ নরকে ভীষণ একাকী আহত দান্তে তুমি তো জানো না
তুমি তো জানো না অর্ফিয়ুসের কর্তিত মাথা তবু করি এই পুরাতন গান
যে-গান এখনো তোমার শোণিতে লেখে চিরায়ত করুণ কাব্র
তোমার মতোই তরুণ প্রেমিক আমি কি ধরিনি বেদনার হাত
ছুঁইনি কি তার অধীর ওষ্ঠ তোমার মতোই আমি একদিন?
সুন্দর বলে ভুল করে আমি সেই বেদনাকে নিয়েছি বক্ষে
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমাদের আগে এখানে ঝরেছি!
তরুন প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমারই চোখের অতৃপ্ত নেশা, চিরজাগরণ
তোমার মতোই মেঘে মেঘে আমি খুঁজেছি হরিণ, অশোকগুচ্ছ
কিংবা খুঁজেছি দূর নভে কোনো গাঢ় ম্যানসন পাইনি তবুও
বাড়িয়েছি হাত তোমার মতোই কেবল শূন্যে
ভেবেছি হয়তো সেখানেই আছে হাড়ের গায়ে কোমল ঝর্ণা
কুলুকুলূ নদী আর তার পাশে ফুটে আছে বুঝি আমার কাম্য
তোমার মতোই তরুন প্রেমিক আমিও একদা খুঁজেছি অলীক!
তরুণ প্রেমিক তুমি যে ভাসাও স্বপ্ন বোঝাই এই সাম্পান
তুমি তো জানো না ভিড়বে কিনা সে তোমার সবুজ নির্জন দ্বীপে
তবু যে প্রেমিক আজো করো তুমি আকাশকুসুম তেমনি চয়ন
তেমনি আজো যে নগ্ন দুহাতে তুলে নাও তুমি রঙিন গোধূলি
তোমার মতোই আমিও একদা রাতের শিশিরে ভরেছি পকেট!
তরুন প্রেমকি তুমি তো জানো না তোপমার উতল আলুথালূ প্রেম
আমার বুকের কোথায় লালিত, কতোদিন তাকে দিয়েছি আহার
তরুণ প্রেমিক তোমাদের হাসি, তোমার কুজন
তুমি তো জানো না আমারই বুকের ঝরাপাতাদের গান!
চৈত্রের চিঠি
চৈত্রের এই শেষ রজনীতে
তোমাকে পাঠাই বিব্রত খাম,
লিখেছি কি তাতে ঠিক মনে নেই
তবু এই চিঠি, এই উপহার!
তোমার খামে কি আদৌ লিখেছি
স্বপ্নের মতো স্মরণীয় নাম?
তাও মনে নেই; আমি শুধু জানি
তবু এই চিঠি তোমারই জন্যে।
যদি কোনোদিনও মলিন চিঠিটি
পৌছবে না গিয়ে সেই ঠিকানায়
বছর এমনি আসবে ও যাবে,
ভাসবে না তবু যুগল কলস!
আমি বসে আছি, তুমিও কি পারে
তাহলেই থামে কালের যাত্রা
এই চিঠিখানি অনন্তকাল
তাহলেই পারে সাহসে উড়তে।
তাহলেই শুধু ক্ষীণ ভরসায়
সময়কে বলি, একটু দাঁড়াও!
জুঁইফুলের চেয়ে শাদা ভাতই অধিক সুন্দর
যে-কোনো বিষয় নিয়েই হয়তো এই কবিতাটি লেখা যেতো
পিকনিক, মর্নিং স্কুলের মিসট্রেস
কিংবা স্বর্নচাঁপার কাহিনী; হয়তো পাখির প্রসঙ্গ
গত কয়েকদিন ধরে টেলিফোনে তোমার কথা না শুনতে
পেয়ে জমে থাকা মেঘ,
মন ভালো নেই তাই নিয়েও ভরে উঠতে পারতো এই
পঙ্ক্তিগুলো
অর্কিড কিংবা উইপিঙ উইলোও হয়ে উঠতে পারতো
স্বচ্ছন্দে এই কবিতাটির বিষয়;
কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রমত দেশের একজন কবির
মনু মিয়ার হাঁড়ির খবর ভুললে চলে না,
আমি তাই চোয়াল ভাঙা হারু শেখের দিকে তাকিয়ে
আন্তর্জাতিক শোষণের কথাই ভাবি,
পেটে খিদে এখন বুঝি কবিতার জন্য কি অপরিহার্য
জুঁইফুলের চেয়ে কবিতার বিষয় হেশেবে আমার কাছে
তাই
শাদা ভাতই অধিক জীবন্ত- আর এই ধুলোমাটির মানুষ;
এই কবিতাটি তাই হেঁটে যায় অন্ধ গলির নোংরা বস্তিতে
হোটেলের নাচঘরের দিকে তার কোনো আকর্ষণ নেই,
তাকে দেখি ভূমিহীন কৃষকের কুঁড়েঘরে বসে আছে
একটি নগ্ন শিশুর ধুলোমাখা গালে অনবরত চুমো খাচ্ছে
আমার কবিতা,
এই কবিতাটি কখনো একা-একাই চলে যায় অনাহারী
কৃষকের সঙ্গে
জরুরী আলাপ করার জন্য,
তার সঙ্গে কী তার এমন কথা হয় জানি না
পর মুহূর্তেই দেখি সেই ক্ষধার্ত কৃষক
শোষকের শস্যের গোলা লুট করতে জোট বেঁধে দাঁড়িয়েছে;
এই কবিতাটির যদি কোনো সাফল্য থাকে তা এখানেই।
তাই এই কবিতার অক্ষরগুলো লাল, সঙ্গত কারণেই লাল
আর কোনো রঙ তার হতেই পারে না-
অন্য কোনো বিষয়ও নয়
তাই আর কতোবার বলবো জুঁইফুলের চেয়ে শাদা ভাতই
অধিক সুন্দর।
তোমার দূরত্ব
তোমার ভালোবাসার দূরত্বের চেয়ে এমন আর কি
দূরত্ব আছে আমার, এমন আর কি
মাইল মাইল দূরত্ব সে তো একখানি মাত্র টিকিটের ব্যবধান
তারপরই উষ্ণ অভর্থ্যনা, তোমার আঁচলে ঘাম মুছে ফেলা।
সে-কথা জানি বলেই তো তোমার ভালোবাসার দূরত্বকেই
কেবল বলি বিচ্ছেদ।
না হলে যতো দূরেই বলো যেতে পারি মাইল মাইল নীলিমা,
মাইল মাইল সমুদ্র-
তার আগে শুধু সঙ্গে নিতে চাই তোমার ভালোবাসা;
এই মূলধনটুকু পেলে আমিও বাণিজ্যে যেতে পারি
বলো তো দেশভ্রমণে বের হয়ে যেতে পারি এইমাত্র
কিন্তু তার আগে আমার ছাড়পত্রে তোমার ভালোবাসার
স্বচ্ছ সীলমোহর আঁকা থাকা চাই-
বিদেশ মানেই তো আর দূরত্ নয়, দূরত্ব তোমার ভালোবাসার
কয়েক হাত ব্যবধান,
তোমার ভালোবাসা থেকে দুই পা সরে দাঁড়ানো
তার চেয়ে কোনো দূরত্ব আমার জানা নেই,
আমার জানা নেই।
আমি যাকে দূরত্ব বলি তা একই কার্নিশের নিচে দাঁড়ানো
বিচ্ছেদ
কিংবা একই কার্পেটের উপর দাঁড়ানো তীব্র শীত
আমাদের মাঝে প্রবাহিত এই হিমবাহকেই আমি বলি
বিদেশ, আমি বলি দূরত্ব।
না হলে সব দূরত্বই তো তোমার চোখের পলকমাত্র
তুমি ফিরে তাকাতেই আমি দেখতে পাবো ঢাকা এয়ারপোর্টে
চক্কর দিচ্ছে আমার বিমান
হ্যালো বাংলাদেশ! আমার চিরসবুজ বাংলাদেশ!