আমি এখন আমার ভেতর অন্য মানুষ গঠন করে সংগঠিত,
বীর্যবান এক ভিন্ন গোলাপ এখন কসম খুব প্রয়োজন।
দুঃখের আরেক নাম
আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।
অলৌকিক কিছু নয়,
নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি
তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।
আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,
পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।
নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর মতন,
মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি
নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি।
তুমুল ফাল্গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে,
আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ
পৃথিবীকে উপহাস করে।
একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা
আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে
পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে।
এখন তুমিই বলো নারী
তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো।
আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়,
ব্যাকুল শুশ্রুষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো
নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ,
এতোদিন নারী ও রমনীহীন ছিলাম বলেই ছিলো
দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।
দুঃসময়ে আমার যৌবন
মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে
এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,
উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো
আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ
শুধু যদি নারীকে সাজাই।
নাম ভূমিকায়
তাকানোর মতো করে তাকালেই চিনবে আমাকে।
আমি মানুষের ব্যকরণ
জীবনের পুষ্পিত বিজ্ঞান
আমি সভ্যতার শুভ্রতার মৌল উপাদান,
আমাকে চিনতেই হবে
তাকালেই চিনবে আমাকে।
আমাকে না চেনা মানে
মাটি আর মানুষের প্রেমের উপমা সেই
অনুপম যুদ্ধকে না চেনা।
আমাকে না চেনা মানে
সকালের শিশির না চেনা,
ঘাসফুল, রাজহাঁস, উদ্ভিত না চেনা।
গাভিন ক্ষেতের ঘ্রাণ, জলের কসম, কাক
পলিমাটি চেনা মানে আমাকেই চেনা।
আমাকে চেনো না?
আমি তোমাদের ডাক নাম, উজাড় যমুনা।
নিখুঁত স্ট্র্যাটেজী
পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো বলে
মনে পড়ে একদিন জীবনের সবুজ সকালে
নদীর উলটো জলে সাঁতার দিয়েছিলাম।
পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো বলে
একদিন যৌবনের শৈশবেই
যৌবনকে বাজি ধরে
জীবনের অসাধারণ স্কেচ এঁকেছিলাম।
শরীরের শিরা ও ধমনী থেকে লোহিত কণিকা দিয়ে আঁকা
মারাত্মক উজ্জ্বল রঙের সেই স্কেচে
এখনো আমার দেখো কী নিখুঁত নিটোল স্ট্র্যাটেজী।
অথচ পালটে গেলো কতো কিছু,–রাজনীতি,
সিংহাসন, সড়কের নাম, কবিতার কারুকাজ,
কিশোরী হেলেন।
কেবল মানুষ কিছু এখনো মিছিলে, যেন পথে-পায়ে
নিবিড় বন্ধনে তারা ফুরাবে জীবন।
তবে কি মানুষ আজ আমার মতন
নদীর উলটো জলে দিয়েছে সাঁতার,
তবে কি তাদের সব লোহিত কণিকা
এঁকেছে আমার মতো স্কেচ,
তবে কি মানুষ চোখে মেখেছে স্বপন
পতন দিয়েই আজ ফেরাবে পতন।
নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল
নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল তুমি নির্দ্বিধায়
অলংকার করে নাও, এ আঙুল ছলনা জানে না।
একবার তোমার নোলক, দুল, হাতে চুড়ি
কটিদেশে বিছা করে অলংকৃত হতে দিলে
বুঝবে হেলেন, এ আঙুল সহজে বাজে না।
একদিন একটি বেহালা নিজেকে বাজাবে বলে
আমার আঙুলে এসে দেখেছিলো
তার বিষাদের চেয়ে বিশাল বিস্তৃতি,
আমি তাকে চলে যেতে বলিনি তবুও
ফিরে গিয়েছিলো সেই বেহালা সলাজে।
অসহায় একটি অঙ্গুরী
কনিষ্ঠা আঙুলে এসেই বলেছিলো ঘর,
অবশেষে সেও গেছে সভয়ে সলাজে।
ওরা যাক, ওরা তো যাবেই
ওদের আর দুঃখ কতোটুকু? ওরা কি মানুষ?
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
নেত্রকোনা
কতো দিন তোমাকে দেখি না
তুমি ভালো আছো? সুখে আছো? বোন নেত্রকোনা।
আমাকে কি চিনতে পেরেছো? আমি
ছিলাম তোমার এক আদরের নাগরিক নিকট-আত্মীয়
আমাদের বড়ো বেশি মাখামাখি ছিলো,
তারপর কী থেকে কী হলো
আভাইগা কপাল শুধু বিচ্ছেদের বিষে নীল হলো।
দোহাই লক্ষ্মী মেয়ে কোন দিন জিজ্ঞেস করো না
আমি কেন এমন হলাম জানতে চেয়ো না
কী এমন অভিমানে আমাদের এতো ব্যবধান,
কতোটা বিশৃংখলা নিয়ে আমি ছিমছাম সন্নাসী হলাম।
কিছু কথা অকথিত থেকে যায়
বেদনার সব কথা মানুষ বলে না, রমনী-কাতর
সবিতা সেনের সূতী শাড়িও জানে না
সোনালী অনল আর কতো জল দিদির ভেতর।
কেউ কি তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক দাঁড়িয়ে প্রাঙ্গণে?
কারো কি তোলপাড় ওঠে ট্রেনের হুইসেল শুনে মনে?
তোমার মাটির রসে পরিপুষ্ট বৃক্ষ ফুল।
মগড়ার ক্ষীণ কলরোল
অমল কোমল এক মানুষের প্রতীক্ষায় থাক বা না থাক,
তুমি আছো আমার মজ্জায় আর মগজের কোষে অনুক্ষণ,
যে রকম ক্যামোফ্লাজ করে খুব ওতোপ্রোতভাবে থাকে
জীবনের পাশাপাশি অদ্ভুত মরণ।
পরানের পাখি
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
আমার সূর্যের কথা, কাঙ্খিত দিনের কথা,
সুশোভন স্বপ্নের কথাটা বলো,–শুনুক মানুষ।