মন কার কথা ভেবে এমন উদাস করে
ভৈরবী – কারফা
মন কার কথা ভেবে এমন উদাস করে।
দেখেছি ভোরবেলাতে স্বপ্নে কারে
জেগে তায় মনে নাহি পড়ে।
কবে সে ভোরবেলাতে
গেছিলাম ফুল কুড়াতে,
পথে কার নয়ন-ফণী দংশিল বুকের পরে!
আজি কি সেই চাহনির বিষের জ্বালা
উঠিল ব্যাথায় ভরে॥
মনে করিতে তারে শিহরি উঠি ভয়ে,
ভুলিতে গেলে আরও ব্যথা বাজে হৃদয়,
এমনই করে কি গো বন-মৃগ
মরুতে ছুটে মরে॥
মা ষষ্ঠী গো তোর গুষ্টির পায়ে পড়ি
বাউল – কারফা
মা ষষ্ঠী গো, তোর গুষ্টির পায়ে পড়ি।
আর অস্থির করিসনে মা আমায় দয়া করি॥
ষষ্ঠী মা, তোর কৃপার চেয়ে যষ্টি-প্রহার ভালো,
কৃপা যদি করলি মা গো, মেয়েগুলোই কালো!
শিলাবৃষ্টির মতো যে তোর কৃপা পড়ে ঝরি॥
ছাদে বারান্দায় উঠানে ধরে না লেপ কাঁথা,
খোরাসানি গন্ধে মা গো নাড়ি করে ব্যথা,
রাত্রিবেলায় গুনতে–মাথায় খুন যায় যে চড়ি॥
পূর্বজন্মে ছিলেন গিন্নি সগর রাজার রানি,
যত বলি আন্নাকালি ততই কি আমদানি!
মা গো কাঁঠাল গাছকে হার মানাল আমার প্রাণেশ্বরী॥
কসুর করেছিলাম মা গো শ্বশুরকন্যে এনে,
আর ঘোড়া ছুটাবি কত, ধর এবার রাশ টেনে,
মানুষ না রেলগাড়ি আমি তাই ভেবে মা মরি॥
ধনে পুত্রে লক্ষ্মীলাভের প্রথমটি বাদ দিয়ে
দিলি সবই, এবার ফিরে যা মা বেড়াল নিয়ে।
কালো মেয়ের পারের মাশুল দে মা সাদা কড়ি॥
মানবতাহীন ভারত শ্মশানে দাও মানবতা
ইমন মিশ্র – একতালা
মানবতাহীন ভারত শ্মশানে
দাও মানবতা, হে পরমেশ!
কী হবে লইয়া মানবতাহীন
ত্রিশ কোটি এই মানুষ-মেষ॥
কলের পুতুল এরা প্রাণহীন
পাষাণ আত্মবিশ্বাসহীন
নিজেরে ইহারা চিনে না, কেমনে
চিনিবে ইহারা নিজের দেশ॥
ফিরিছে শ্মশানে যেন প্রেত-পাল
নর নাই, শুধু নর-কঙ্কাল,
এই চির-অভিশপ্তের মাঝে
জাগাও হে প্রভু প্রাণের রেশ॥
ভায়ে ভায়ে হেথা নাহি প্রেম-বোধ
কেবলই কলহ কেবলই বিরোধ,
দেয়ালের পরে তুলিয়া দেয়াল
নিজেরে নিজেরা করিছে শেষ।
হে দেশ-বিধাতা, দূর করো এই
লজ্জা ও গ্লানি, এ দীন বেশ॥
মোর হৃদি-ব্যথার কেউ সাথি নাহি
পাহাড়ি – দাদরা
মোর হৃদি-ব্যথার কেউ সাথি নাহি।
লয়ে আহত প্রাণ একা গান গাহি।
দিবস বরষ মাস
বুকে চাপি হা-হুতাশ
চলি মরুপথে মেঘ-ছায়া চাহি॥
কানন রচি বৃথা, কুসুম নাহি ফোটে,
বাসি হয় গাঁথা মালা পথের ধুলায় লোটে,
কবে বহিবে নিঝর-ধারা পাষাণ বাহি॥
মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান
ভৈরবী – একতালা
মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।
মুসলিম তার নয়ণ-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ॥
এক সে আকাশ মায়ের কোলে
যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান॥
এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,
এক সে মায়ের বক্ষে ফলে একই ফুল ও ফল।
এক সে দেশের মাটিতে পাই
কেউ গোরে কেউ শ্মশানে ঠাঁই,
মোরা এক ভাষাতে মাকে ডাকি, এক সুরে গাই গান॥
চিনতে নেরে আঁধার রাতে করি মোরা হানাহানি,
সকাল হলে হবে রে ভাই ভায়ে ভায়ে জানাজানি।
কাঁদব তখন গলা ধরে,
চাইব ক্ষমা পরস্পরে,
হাসবে সেদিন গরব ভরে এই হিন্দুস্থান॥
যে ব্যথায় এ অন্তর-তল নিশিদিন
সিন্ধু মিশ্র – কাহারবা
যে ব্যথায় এ অন্তর-তল নিশিদিন
উঠিছে দুলে।
তারই ঢেউ এ সংগীতে মোর মুরছায়
সুরের কূলে॥
ভালোবাস তোমরা যারে
দুদিনে ভোলো গো তারে,
শরতের সজল কালো মেঘ
কেঁদে-যাও নিমেষে ভুলে॥
কঠিন পুরুষের মন
গলিয়া বহে গো যখন,
বহে সে নদীর মতন
চিরদিন পাষাণ-মূলে॥
আলোর লাগি জাগে ফুল,
নদী ধায় সাগরে যেমন,
চকোর চায় চাঁদ, চাতক মেঘ,
যারে চায় তারেই চায় এ মন।
নিয়ে যায় সুদূর অমরায়
পূজে তায় বাণী-দেউলে॥
যে ব্যথায় এ অন্তর-তল হে প্রিয়
ভীমপলশ্রী – কাওয়ালি
যে ব্যথায় এ অন্তর-তল হে প্রিয়
উঠিছে দুলে,
তারই ঢেউ এ সংগীতে মোর মুরছায়
সুরের কূলে॥
ভালোবাস তোমরা যারে
দুদিনে ভোলো গো তারে,
শরতের সজল কালো মেঘ কেঁদে যাও
নিমেষে ভুলে॥
আমার হৃদি যারে চায়
নিয়ে যায় তারে অমরায়,
পূজি তায় হে সুন্দর মোর, নিশিদিন
বাণী দেউলে॥
কঠিন পুরুষের মন
গলিয়া বহে গো যখন
বহে সে নদীর মতন চিরদিন,
রহে না ভুলে॥
রাম-ছাগী গায় চতুরঙ্গ বেড়ার ধারে
চতুরঙ্গ
রাম-ছাগী গায় চতুরঙ্গ বেড়ার ধারে।
গাইয়ে ষাঁড়-সাথে বাছুর হাম্বা রবে
ভীষণ নাদ ছাড়ে,
ফেটে বুঝি গেল কান, প্রাণে মারে!
শুনিয়া হাই তোলে ভেউ ভেউ রোলে–
ভুলোটা পগার-পারে॥
তেলেনা –
ডিম নে রে, তা দেরে, আমি না রে,
তুই দে রে; নে রে ডিম, দে রে তা,
তা দে না,
ওদের না না, তাদের না না, তুই
দে রে ডিম!
ওদের নাড়ি তাদের নারী দেদার নারী,
দে রে নারী, যা ধেত, টানাটানি!
সরগম –
ধা পা র ধা রে গা, গা রে গা ধা,
গা রে গা ধা, নি ধা মা মা
পা রে নি, মা রে গা, সা রা শা মা।
তবলার বোল –
ভেগে যা, মেগে খা, মেরেকেটে খা,
মেরে কেটে খা, তেড়ে ধরে কাট দুম,
মেরে কেটে খা, তেড়ে ধরে কাট দুম,
নাক ধরে টান, কান দুটি যাক,
শুধু কাটা থাক দুম॥
লক্ষ্মী মা তুই আয় গো উঠে সাগর-জলে সিনান করি
মাঢ় – কারফা
লক্ষ্মী মা তুই আয় গো উঠে সাগর-জলে সিনান করি।
হাতে লয়ে সোনার ঝাঁপি, সুধার পাত্রে সুধা ভরি॥
আন মা আবার আঁচলে তোর নবীন ধানের মঞ্জরি সে,
টুনটুনিতে ধান খেয়েছে, খাজনা মাগো দিব কীসে,
ডুবে গেছে সপ্ত ডিঙা, রত্ন-বোঝাই সোনার তরি॥
ক্ষীরোদ-সাগর-কন্যা যে তুই, খেতে দে ক্ষীর সর মা আবার,
পান্তা লবণ পায় না ছেলে, রাজরানি মা-র এ কোন বিচার,
কার কাছে মা নালিশ করি, অনন্ত শয়নে হরি॥
তোরেও কী মা ধরল ঘুমে নারায়ণের ছোঁয়াচ লেগে,
বর্গি এল দেশে মা গো, খোকারা তোর কাঁদে জেগে,
তুই এসে তায় ঘুম পাড়া মা হাতে দিয়ে ঝিনুক কড়ি॥
কোন দুখে তুই রইলি ভুলে বাপের বাড়ি অতল-তলে,
ব্যথার সিন্ধু মন্থন শেষ, ভরল যে দেশ হলাহলে,
অমৃত এনে সন্তানে বাঁচা, মা তোর পায়ে ধরি॥