প্রিয়া গেছে কবে পরদেশ
পাহাড়ি মিশ্র – কারফা
প্রিয়া গেছে কবে পরদেশ
পিউ কাহাঁ ডাকে পাপিয়া।
দোয়েল শ্যামার শিসে তারই
হুতাশ উঠিছে ছাপিয়া॥
পাতার আড়ালে মুখ ঢাকি
মুহুমুহু কুহু ওঠে ডাকি,
বাজে ধ্বনি তারই উহু উহু
বিরহী পরান ব্যাপিয়া॥
‘বউ কথা কও’পাখি ডাকে,
কেন মনে পড়ে যায় তাকে,
কথা কও বউ ডাকিত সে
নিশীথ উঠিত কাঁপিয়া॥
প্রিয়ার চেয়ে শালি ভালো, বাবার চেয়ে মামা
মিশ্র খাম্বাজ – কারফা
প্রিয়ার চেয়ে শালি ভালো,
বাবার চেয়ে মামা।
ডাইনের চেয়ে ডুগি ভালো
অর্থাৎ কিনা বামা॥
একশালা-সে দোশালা আচ্ছা,
চণ্ডুর চেয়ে গাঁজা,
‘তেনার’চেয়ে ভালো ‘তেনার’
হাত দিয়ে পান সাজা,
ধাক্কার চেয়ে গুঁতো ভালো
উকোর চেয়ে ঝামা।
টিকির চেয়ে বেণি ভালো,
ধুতির চেয়ে শাড়ি,
পাঁঠার চেয়ে মুরগি ভালো,
থানার চেয়ে ফাঁড়ি,
ঠুঁটোর চেয়ে নুলো ভালো,
প্যান্ট চেয়ে পায়জামা॥
পেয়াদার চেয়ে যম ভালো ভাই,
শালের চেয়ে বাঁশ,
দাড়ির চেয়ে গুম্ফ ভালো
আঁটির চেয়ে শাঁস,
ছেলের চেয়ে ছালা ভালো,
পেতের চেয়ে ধামা॥
পাকার চেয়ে কাঁচা ভালো,
কালোর চেয়ে ফরসা,
পেতনির চেয়ে ভূত ভালো ভাই
ছাড়বার থেকে ভরসা।
ঝগড়ার চেয়ে রগড়া ভালো,
কাল্লুর চেয়ে গামা॥
ফুল-ফাগুনের এল মরশুম
ভৈরবী – কারফা
ফুল-ফাগুনের এল মরশুম
বনে বনে লাগল দোল।
কুসুম-শৌখিন দখিন হাওয়ার
চিত্ত গীত-উতরোল॥
অতনুর ওই বিষ-মাখা শর
নয় ও দোয়েল শ্যামার শিস,
ফোটা ফুলে উঠল ভরে
কিশোরী বনের নিচোল॥
গুলবাহারের উত্তরি কার
জড়ালো তরু লতায়,
মুহুমুহু ডাকে কুহু
তন্দ্রা-অলস, দ্বার খোল॥
রাঙা ফুলে ফুল্ল-আনন
দোলে কানন-সুন্দরী,
বসন্ত তার এসেছে আজ
বরষ পরে পথ-বিভোল॥
বাজায়ে কাচের চুড়ি
খাম্বাজ মিশ্র – কারফা
বাজায়ে কাচের চুড়ি
পরানে দোল দিয়ে কে যায়।
কাঁকনে চুড়িতে বাজে সুর মধুর আওয়াজ,
নাচনের লাগিল ছোঁয়াচ এ তনুর কাচ-মহলায়॥
আঁচলে বাঁধা তার কোন বীণ,
রিনিঝিন বাজে চাবির রিং,
কারে রাখি কারে শুনি,
চলে যায় সে যে চপল পায়॥
চরণ-কমল ধরি নূপুর মিনতি করে,
ভ্রমর সম গুজরি চরণ ঘেরি গুঞ্জরে।
কারে দেখি কারে শুনি–
চলনের দোলন-গতি, না তাহার নূপুর-ধ্বনি,
হিয়া মোর পথে তার লুটায়
চরণ-পরশ আশায়॥
বিজলি চাহনি কাজল কালো নয়নে
কাজরি – দাদরা
বিজলি চাহনি কাজল কালো নয়নে।
রহি রহি কেন হানিছে ক্ষণে ক্ষণে॥
ভীরু প্রণয় মম
ঝড়ের পাখির সম
শিরণ মাগে তোমার মনো-বনে॥
আমার প্রণয় প্রদীপ-শিখা তোমার শ্বাসে থেকে থেকে
কেঁপে মরে, ওগো প্রিয়, বাঁচাও তারে আঁচল ঢেকে।
ধ্যান যাহার ওই রাঙা চরণ, বেঁধো না তায় বেণির ফাঁদে;
কী হবে পিঞ্জরে রাখি বেঁধেছ যায় বাহুর বাঁধে ;
কেন হান আঘাত যে হেরে আছে রণে॥
বিদায়-সন্ধ্যা আসিল ওই
ভীমপলশ্রী – একতালা
বিদায়-সন্ধ্যা আসিল ওই
ঘনায় নয়নে অন্ধকার।
হে প্রিয়, আমার যাত্রা-পথ
অশ্রু-পিছল কোরো না আর॥
এসেছিনু ভেসে স্রোতের ফুল
তুমি কেন প্রিয় করিলে ভুল
তুলিয়া খোঁপায় পরিয়া তায়
ফেলে দিলে হায় স্রোতে আবার॥
ধরণির প্রেম কুসুম-প্রায়
ফুটিয়া নিমেষে শুকায়ে যায়,
সে ফুলে যে মালা গাঁথিতে চায়
তার চোখে চির-অশ্রু-ধার॥
হেথা কেহ কারও বোঝে না মন,
যারে চাই হেলা হানে সে জন,
যারে পাই সে না হয় আপন
হেথা নাই হৃদি ভালোবাসার॥
তুমি বুঝিবে না কী অভিমান
মিলনের মালা করিল ম্লান,
উড়ে যাই মোর দূর বিমান
সেথা গাব গান আশে তোমার॥
বিরহের গুলবাগে মোর ভুল করে আজ
পাহাড়ি মিশ্র – রূপক
বিরহের গুলবাগে মোর ভুল করে আজ
ফুটল কি বকুল।
অবেলায় কুঞ্জবীথি মুঞ্জরিতে
এলে কি বুলবুল॥
এলে কি পথ ভুলে মোর আঁধার রাতে
ঘুম-ভাঙানো চাঁদ,
অপরাধ ভুলেছ কি, ভেঙেছ কি
অভিমানের বাঁধ।
প্রদীপ নিভে আসে ইহারাই ক্ষীণ আলোকে,
দেখে নিই শেষ দেখা যত সাধ আছে চোখে,
মরণ আজ মধুর হল পেয়ে তব চরণ রাতুল॥
হে চির-সুন্দর মোর, বিদায়-সন্ধ্যা মম
রাঙালে রাঙা রঙে উদয়-উষার সম,
ঝরে পড়ুক তব পায়ে আমার এ জীবন-মুকুল॥
বিরহের নিশি কিছুতে আর
সাহানা – একতালা
বিরহের নিশি কিছুতে আর
চাহে না পোহাতে ওগো প্রিয়।
জাগরণে দেখা দিলে না নাথ
স্বপনে আসিয়া দেখা দিয়ো॥
হেরিব কবে সে মোহন রূপ,
শুকায়েছে মালা, পুড়েছে ধূপ,
নিভে যদি যায় জীবন-দীপ
তুমি এসে নাথ নিভাইয়ো॥
তব আশা-পথ চাহি বৃথায়
দিবস মাস বরষ যায়,
এ জনমে যদি ভুলিলে হায়
পরজনমে না ভুলিয়ো॥
বুকের ভিতর জ্বলছে আগুন
কাফি – ঝাঁপতালা
বুকের ভিতর জ্বলছে আগুন
দমকল ডাক ওলো সই।
শিগগির ফোন কর বঁধুরে
নইলে পুড়ে ভস্ম হই॥
অনুরাগ-দেশালাই নিয়ে
প্রেমের স্টোভ জ্বালতে গিয়ে,
আমার প্রাণের খোড়ো ঘরে
লাগল আগুন ওই লো ওই॥
প্রেমের কেরোসিন যে এত
অল্প জ্বলে, জানিনে তো!
কী দাবানল জ্বলছে বুকে
জানবে না কেউ আমি বই॥
প্রণয় প্রীতির তোষক গদি
রক্ষে করতে চায় সে যদি,
তারে আনতে বলিস মনে করে
আদর সোহাগ–বালতি মই॥
ভুলিতে পারিনে তাই আসিয়াছি পথ ভুলি
গৌড়সারং – দাদরা
ভুলিতে পারিনে তাই আসিয়াছি পথ ভুলি।
ভোলা মোর সে অপরাধ, আজ যে লগ্ন গোধূলি॥
এমনই রঙিন বেলায়
খেলেছি তোমায় আমায়
খুঁজিতে এসেছি তাই
সেই হারানো দিনগুলি॥
তুমি যে গেছ ভুলে ছিল না আমার মনে,
তাই আসিয়াছি তব বেড়া-দেওয়া ফুলবনে।
গেঁথেছি কতই মালা এই বাগানের ফুল তুলি,
আজও হেথা গাহে গান আমার পোষা বুলবুলি॥
চাহো মোর মুখে প্রিয়, এসো গো আরও কাছে,
হয়তো সেদিনের স্মৃতি তব নয়নে আছে,
হয়তো সেদিনের মতোই প্রাণ উঠিবে আকুল॥