তোমার আঁখির কসম সাকি
পিলু মিশ্র – কারফা
শেয়র :– তোমার আঁখির কসম সাকি
চাহি না মদ আঙুর পেষা।
তোমার ও-নয়নে চাহি
ধরে গো শারাবের নেশা॥
তব মদালস ওই আঁখি
সাকি দিল দোলা প্রাণে।
বাদল-হাওয়া এ গুলবাগে
বুলবুল কাঁদে গজল গানে॥
গোলাব ফুলের নেশা
ছিল মোর ফুলেল ফাগুনে,
শুকায়ে গেছে ফুলবন
নাহি গোলাব গুলিস্তানে॥
শুনি সাকি তোমার কাছে
ব্যথা ভোলার দারু আছে,
হিয়া কোন অমিয়া যাচে
জান তুমি, খোদা জানে॥
দুখের পসরা লয়ে
কী হবে কাঁদিয়া বৃথা,
নসিব গিয়াছে যখন,
যাক ইমান শারাব পানে॥
তোমায় আমায় ও প্রেয়সী
খাম্বাজ – লোফা
তোমায় আমায় ও প্রেয়সী
মিল খেয়েছে, রাজ-যোটক।
আমি যেন গোদা চরণ
তুমি তাহে বিস্ফোটক॥
আমি কুমড়ো তুমি দা
আমি কাঁচকলা তুমি আদা,
তুমি তেজি আমি ম্যাদা,
আমি সাপ, তুমি বেজি যেন, বাপ!
তুমি হস্তিনী আমি ঘোটক॥
তুমি বঁটি আমি চিচিঙ্গে,
আমি চিল, পিছে তুমি ফিঙে,
আমি টিংটিঙে তুমি ডিংডিঙে!
আমি ভেতো বাঙালিটি, তুমি যেন বর্গি ঠগ॥
আমি দড়ি তুমি ক্ষুর,
তুমি সাপ আমি ন্যাজুড়,
তুমি মাফ, আমি কসুর
আমি ভাঙা ডোঙা কলার ভেলা,
তুমি খিদিরপুরি ডক॥
তুমি বড়শি আমি মাছ,
আমি মোম তুমি আগুন-আঁচ,
তুমি হিরে আমি কাচ,
তুমি আর জন্মে স্বামী হোয়ো,
আমায় দিয়ো পাদোদক॥
তোরা যা লো সখী মথুরাতে
কীর্তন
তোরা যা লো সখী মথুরাতে
দেখে আয় কেমন আছে শ্যাম।
তোরা কুবুজা-সখার কাছে
নিস নে লো
নিস নে রাধা নাম॥
তাদের রাধার কথা
স্মরণ করায়ে দিয়ে দিস নে লাজ দিস নে ব্যথা।
বড়ো বাজবে ব্যথা,
মোর শ্যাম যদি লো পায় ব্যথা তার দ্বিগুন ব্যথা বাজবে বুকে
সে অভাগিনি রাধায় ভুলে যে দেশে হোক আছে সুখে॥
সখী গো–
দেখে তোরে বিন্দে লো, বৃন্দাবনের কথা
গোবিন্দ শুধায় সে যদি
(সখী লো),
বলিস – হে মাধব, মাধবী-কুঞ্জ তব ভেঙে গেছে
শুকায়েছে যমুনা নদী
(সখা হে)।
যমুনা শুকাইয়া শ্যাম তব শোকে হে,
লভিয়াছে আশ্রয় শ্রীরাধার চোখে হে।
ব্রজে বাজে নাকো বেণু, চরে নাকো ধেনু,
ফুল-দোল-রাস বন্ধ,
আর ময়ূর নাচে না তমাল-চূড়ায়,
কেঁদে লুটায় যশোদা-নন্দ।
বলিস– তুমি আসার সাথে শ্যাম
পুড়ে গেছে ব্রজধাম।
গেছে জ্বলিয়া পুড়িয়া
গেছে গোকুলের খেলাঘর অকূলে ভাসিয়া!
বলিস – কী হবে শুনে সে কথা
তুমি রাখাল নও তো আর,
এখন তুমি রাজাধিরাজ, এখন তুমি কুবুজার॥
ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে
মালগুঞ্জ – জলদ তেতালা
ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে।
ভুলে আছিস দেশ-জননি কেমন করে॥
ব্যথিত বুকে মা গো তোমার মন্দির গাড়ি
করি পূজা আরতি কত যুগ যুগ ধরি,
ধূপ পুড়েছে মা গো, চন্দন শুকায়ে যায়,
আয় মা আয় পুন রানির মুকুট পরে॥
দুখের পসরা মা আর যে বহিতে নারি,
কাঁদিয়া কাঁদিয়া শুকায়েছে আঁখি-বারি,
এ গ্লানি লজ্জা মা সহিতে নাহি পারি,
বিশ্ব-বন্দিতা এসো দুখ-নিশি ভোরে॥
অতীত মহিমা লয়ে এসো মহিমময়ী
হীনবল সন্তানে কর মা ভুবন-বিজয়ী,
দুখ-তপস্যা মা কবে তব হবে শেষ,
আয় মা নব-আশা রবির প্রদীপ ধরে॥
থাক সুন্দর ভুল আমার ছলনা-মধুর তব মন
ভৈরবী – কারফা
থাক সুন্দর ভুল আমার
ছলনা-মধুর তব মন।
ভুল করে তুমি ‘ভালোবাসি’বলে
দিয়ো গো ভুলের হরষন॥
মরীচিকা থাক, না থাকুক জল
ভোলাবে তৃষ্ণা সেই মায়া-ছল,
তাহারই আশায় আজও বাঁচি হায়,
মরুভুমে ধাই অনুখন॥
রাঙা রামধনু বৃষ্টির শেষে
জানি জানি প্রিয়, সত্য নহে সে,
নিমেষে উঠিয়া সে মেশে
তবু রেঙে ওঠে এ গগন॥
প্রভাত ভাবিয়া কাক-জ্যোৎস্নায়
জাগিয়া যেমন পাখি গান গায়
তেমনই পরান গেয়ে যাক গান
হোক সে অকাল জাগরণ॥
দিল দোলা দিল দোলা
জংলা – কারফা
দিল দোলা দিল দোলা
কোন দখিন হাওয়া গজল-গাওয়া
কুসুম-ছাওয়া বনে।
ওঠে চমকি চমকি পরান ক্ষণে ক্ষণে॥
ফুল-বধূদের মধু যেচে
বেড়ায় হিয়া নেচে নেচে,
দেখেছিলাম স্বপনে যায়
পেয়েছি তায় আজকে জাগরণে॥
কূল ছাপিয়া মন-তটিনী নটিনীর বেশে
দুলে দুলে যায় ভেসে।
দুলে দুলে যায় ভেসে।
বসন ভূষণ আজি শাসন নাহি মানে
খুশির তুফানে
আপনাকে কার পায়ে
দিতে চাহি বিলায়ে,
চাই কুঞ্জপথে ঝরে যেতে
ঝরা ফুলের সনে॥
দুঃখ-সাগর মন্থন শেষ
গৌড়সারং – একতালা
দুঃখ-সাগর মন্থন শেষ
ভারত-লক্ষ্মী আয় মা আয়।
কবে সে ডুবিলি অতল পাথারে
উঠিলি না আর হায় মা হায়॥
মন্থনে শুধু উঠে হলাহল,
শিব নাই, পান করে কে গরল,
অমৃত-ভাণ্ড লয়ে আয় মা গো
জ্বলিয়া মরি বিষের জ্বালায়॥
হরিত-ক্ষেত্রে সোনার শস্যে
দুলে নাকো আর তোর আঁচল,
শুকায়েছে মা গো মায়ের স্তন্য
গাভির দুগ্ধ নদীর জল॥
চাহি না মোক্ষ, চাই মা বাঁচিতে
অক্ষয় আয়ু লয়ে ধরণিতে,
চাই প্রাণ, চাই ক্ষুধায় অন্ন
মুক্ত আলোকে মুক্ত বায়॥
নদী এই মিনতি তোমার কাছে
ভাটিয়ালি – কারফা
নদী এই মিনতি তোমার কাছে।
ভাসিয়া নিয়ে যাও আমারে যে দেশে মোর বন্ধু আছে॥
নদী তোমার জলের পথ ধরে সে চলে গেল একা,
আমি সেই হতে তার পথ চেয়ে রই, পেলাম না আর দেখা,
ধুলার এ পথ নয় যে বন্ধু থাকবে চরণ-রেখা।
আমি মীন হয়ে রহিব জলে, ছুটব ঢেউ-এর পাছে।
আমি ডুবে যদি মরি, তোমার নয় সে অপরাধ,
কূলে থেকে পাইনে খুঁজে, তাই জেগেছে সাধ
আমি দেখব ডুবে তোমার জলে আছে কি মোর চাঁদ,
বড়ো জ্বালা বুকে রে নদী টেনে লহো কাছে।
নদী, অভাগা এই যাচে॥