গোলাব ফুলের কাঁটা আছে সে গোলাব শাখায়
পিলু মিশ্র – কারফা
শেয়র :- গোলাব ফুলের কাঁটা আছে সে গোলাব শাখায়
এনেছি তুলে রাঙা গুল পরাতে তোমার খোঁপায়।
কী হবে শুনে সে খবর গোলাব কাঁদিল কি না;
হৃদয় ছিঁড়েছি যাহার, বুঝিবে না গো সে বিনা।
ভুল ভাঙায়ো না আর সাকি, ঢালো শারাব-পিয়ালা।
মতলব কহিব পিছে, নেশা ধরুক চোখে বালা॥
জানি আমি জানে বুলবুল
কেন দলিয়া চলি ফুল,
ভালোবাসি আমি যারে, তারে ততই হানি জ্বালা॥
হাসির যে ফুর্তি ওড়ায় তার চোখের জলের দেনা
হিসাব করিয়া কে দেখে, হায় তুমি বুঝিবে না।
বুকের ক্ষত তাই লুকাই পরি রাঙা ফুলের মালা॥
তিক্ত নহে এ শারাব বিফল মোর জীবনের চেয়ে,
শোনায়ো না নীতি-কথা, শোনাও খুশির গজল গেয়ে,
প্রভাতে টুটিবে নেশা, আসে বিদায়ের পালা॥
চাঁদিনি রাতে কানন-সভাতে
সিন্ধু-ভৈরবী – কারফা
চাঁদিনি রাতে কানন-সভাতে
আপন হাতে গাঁথিলে মালা।
সয়েছি বুকে নিবিড় সুখে
তোমার হাতের সূচির জ্বালা॥
আজিও জাগে লোহিত রাগে
রঙন গোলাবে তাহারই ব্যথা,
তব ও-গলে,দুলিব বলে
দিয়াছি কুলে কলঙ্ক কালা॥
যদি ও-গলে নেবে না তুলে
কেন বধিলে ফুলের পরান,
অভিমানে হায় মালা যে শুকায়
ঝরে ঝরে যায় লাজে নিরালা॥
চাঁপা রঙের শাড়ি আমার
সারঙ-মিশ্র – কারফা
চাঁপা রঙের শাড়ি আমার
যমুনা-নীর ভরণে গেল ভিজে।
ভয়ে মরি আমি, ঘরে ননদি,
কহিব শুধাইলে কী যে॥
ছি ছি হরি একী খেল লুকোচুরি,
একলা পথে পেয়ে কর খুনসুড়ি,
রোধিতে তব কর ভাঙিল চুড়ি,
ছলকি গেল কলসি যে॥
ডাঁশা কদম্ব দিবে বলি হরি,
ডাকিল তরু-তলে কেন ছল করি,
কাঁচা বয়সি পাইয়া কিশোরী
মজাইলে, মজিলে নিজে॥
ছলছল নয়নে মোর পানে চেয়ো না
বাগেশ্রী মিশ্র – কারফা
ছলছল নয়নে মোর পানে চেয়ো না।
যাবে যাও, নয়নে জল নিয়ে যেয়ো না॥
থাকে ব্যথা থাক বুকে,
যাও তুমি হাসি মুখে,
আমার চাঁদিনি রাতি ঘন মেঘে ছেয়ো না॥
রঙিন পিয়ালাতে মম লোনা অশ্রু-জল ঢালি
পানসে কোরো না নেশা, জীবন-ভরা ব্যথা খালি।
ভুলিতে চাহি যে ব্যথা
মনে এনো না সে কথা,
করুণ সুরে আর বিদায়-গীতি গেয়ো না॥
ছিটাইয়া ঝাল নুন এল ফাল্গুন মাস
সোহিনী বসন্ত – কারফা
ছিটাইয়া ঝাল নুন এল ফাল্গুন মাস।
কাঁচা বুকে ধরে ঘুণ, শ্বাস ওঠে ফোঁস ফাঁস॥
শিমুল ফলের মতো ফটাফট ফাটে হিয়া,
প্রেম-তুলো বের হয়ে পড়ে গো ছড়াইয়া,
সবে বালিশ ধরিয়া করে ছটপট হাঁসফাঁস॥
চিবুতে সজনে খাড়া সজনিরা ভুলে যায়,
আনাগোনা করে প্রেম পরানের দরজায়,
হৃদয়ের ইঞ্জিনে গ্যাস ওঠে ভোঁস ভাঁস॥
কচি আম-ঝোল-টক খাইয়া গিন্নি মায়
বউঝির সাথে করে টক্ষাই টক্ষাই!
আইবুড়ো আইবুড়ি জল গেলে ছ-গেলাস॥
বিরহিণীদের আঁখি-কলসি হয়েছে ফুটো,
গাধাও আজ গাহে গান ফেলিয়া ঘাসের মুঠো,
নোনা-পাকা মন বলে, কবে আসে তালশাঁস॥
জাগো শ্যামা জাগো শ্যামা
সিন্ধু কাফি – যৎ
জাগো শ্যামা জাগো শ্যামা
আবার রণ-চণ্ডী সাজে
তুই যদি না জাগিস মা গো
ছেলেরা তোর জাগবে না যে॥
অন্নদা তোর ছেলে মেয়ে
অন্নহারা ফেরে ধেয়ে,
বাঁচার অধিক আছি মরে, দেখে কি প্রাণে না বাজে॥
শ্মশান ভালোবাসিস যে তুই,
ভূ-ভারত আজ হল শ্মশান,
এই শ্মশানে আয় মা নেচে,
কঙ্কালে তুই জাগা মা প্রাণ।
চাই মা আলো মুক্ত বায়ু
প্রাণ চাই, চাই পরমায়ু,
মোহ-নিদ্রা ত্যাগ কর মা
শিব জাগা তুই শবের মাঝে॥
ডেকে ডেকে কেন সখী ভাঙালি ঘুমের ঘোর
ভৈরবী – কারফা
ডেকে ডেকে কেন সখী ভাঙালি ঘুমের ঘোর।
স্বপনে মোর এসেছিল স্বপন-কুমার মনোচোর॥
সে যেন লো পাশে বসে কহিল হেসে হেসে
যাব না আর পরদেশে মোছো মোছো আঁখি-লোর॥
দেখাল তার হৃদয় খুলি, কহিল, হেরো প্রিয়ে
তোমার অধিক ব্যথা হেথায় তোমারে ব্যথা দিয়ে।
হেরিনু – মোর হিয়ার চেয়ে অধিক ক্ষত তার হৃদয়,
সে হৃদয়ে আমার ছবি, সকল হিয়া আমি-ময়।
তাহার জীবন-মালার মাঝে আমি যেন সোনার ডোর॥
কহিনু – বুঝেছি সখা তোমার দুখ দেওয়ার ছল,
ভালোবাসার ফুল না শুকায়, তাই চাহ মোর চোখের জল।
কাছে পেয়ে ভুলি যদি, করি যদি অনাদর,
তাই গেছিলে পরবাসে, চির-আপন হয় কি পর ।
জেগে দেখি কেঁদে কেঁদে ভিজেছে বুকের আঁচোর॥
ঢলঢল তব নয়ন-কমল
মাঢ় – কারফা
ঢলঢল তব নয়ন-কমল
কাজল তোমারেই সাজে।
শোভে তোমারেই চাঁদের হাসি
হিঙুল অধর-মাঝে॥
ফিরোজা-রং শাড়ি চাঁপা রঙে তব
সেজেছে প্রিয়া কী অভিনব,
সুনীল গগনে গোধূলি রং যেন
মিশেছে আসিয়া উষা ও সাঁঝে॥
কোমলে কড়িতে বাজে কাঁকন চুড়ি,
শিথিল আঁচল লয়ে খেলে হাওয়া লুকোচুরি,
উষ্ণ কপোল ছুঁয়ে থল-কমলি
আঁউরে গেল যে লাজে॥
ঢের কেঁদেছি ঢের সেধেছি
আশা – কারফা
ঢের কেঁদেছি ঢের সেধেছি,
আর পারিনে, যেতে দে তায়।
গলল না যে চোখের জলে
গলবে কি সে মুখের কথায়॥
যে চলে যায় হৃদয় দলে
নাই কিছু তার হৃদয় বলে,
তারে মিছে অভিমানের ছলে
ডাকতে আরও বাজে ব্যথায়॥
বঁধুর চলে যাওয়ার পরে
কাঁদব লো তার পথে পড়ে,
তার চরণ-রেখা বুকে ধরে
শেষ করিব জীবন সেথায়॥
তুমি কোন পথে এলে হে মায়াবী কবি
কীর্তন
তুমি কোন পথে এলে হে মায়াবী কবি
বাজায়ে বাঁশের বাঁশরি
এল রাজ-সভা ছাড়ি ছুটি গুণিজন
তোমার সে সুরে পাশরি॥
তোমার চলার শ্যাম বনপথ
কদম-কেশর-কীর্ণ,
তুমি কেয়ার বনের খেয়া-ঘাটে হলে
গোপনে কি অবতীর্ণ?
তুমি অপরাজিতার সুনীল মাধুরী
দুচোখে আনিলে করিয়া কি চুরি?
তোমায় নাগ-কেশরের ফণী-ঘেরা মউ
পান করাল কে কিশোরী?
জনপুরী যবে খল-কোলাহলে
মগ্নোৎসব রাজসভাতলে,
তুমি একাকী বসিয়া দূর নদী-তটে
ছায়া-বটে বাঁশি বাজালে,
তুমি বসি নিরজনে ভাঁট ফুল দিয়া
বালিকা বাণীরে সাজালে॥
যবে রুদ্র আসিল ডম্বরু-করে
ত্রিশূল বিঁধিয়া নীল অম্বরে
তুমি ফেলিয়া বাঁশরি আপনা পাশরি
এলে সে প্রলয়-নাটে গো,
তুমি প্রাণের রক্তে রাঙালে তোমার
জীবন-গোধূলি পাটে গো॥
হে চির-কিশোর, হে চির-তরুণ,
চির-শিশু চির-কোমল করুণ!
দাও অমিয়া আরও অমিয়া,
দাও উদয়-উষারে লজ্জা গো তুমি
গোধূলির রঙে রঙিয়া!
প্রখর রবি-প্রদীপ্ত গগনে
তুমি রাঙা মেঘ খেল আনমনে,
উৎসব-শেষে দেউলাঙ্গনে
নিরালা বাজাও বাঁশরি,
আমি স্বপন-জড়িত ঘুমে সেই সুর
শুনিব সকল পাশরি॥