উদার ভারত সকল মানবে দিয়াছ তোমার কোলে স্থান
কানাড়া মিশ্র – একতালা
উদার ভারত! সকল মানবে
দিয়াছ তোমার কোলে স্থান।
পারসি জৈন বৌদ্ধ হিন্দু
খ্রিস্টান শিখ মুসলমান॥
তুমি পারাবার, তোমাতে আসিয়া
মিলেছে সকল ধর্ম জাতি,
আপনি সহিয়া ত্যাগের বেদনা
সকল দেশেরে করেছ জ্ঞাতি;
নিজেরে নিঃস্ব করিয়া, হয়েছ
বিশ্ব-মানব-পীঠস্থান॥
নিজ সন্তানে রাখি নিরন্ন
অন্য সবারে অন্ন দাও,
তোমার স্বর্ণ রৌপ্য মানিকে
বিশ্বের ভাণ্ডার ভরাও;
আপনি মগ্ন ঘন তমসায়
ভুবনে করিয়া আলোক দান॥
বক্ষে ধরিয়া কত সে যুগের
কত বিজেতার গ্লানির স্মৃতি,
প্রভাত আশায় সর্বসহা মা
যাপিছ দুখের কৃষ্ণা তিথি,
এমনই নিশীথে এসেছিলে বুকে
আসিবে আবার সে ভগবান॥
এ কী সুরে তুমি গান শুনালে ভিনদেশি পাখি
ভৈরবী – কারফা
এ কী সুরে তুমি গান শুনালে ভিনদেশি পাখি।
এ যে সুর নহে, মদির সুরা, রে সুরের সাকি॥
বসি মোর জানালা পাশে
কেন বুক-ভাঙা নিরাশে,
যাও ঘুম ভাঙায়ে নিতি সকরুণ সুরে ডাকি।
তোর ও সুরে কাঁদছে উষা অস্ত চাঁদের গলা ধরে,
ভোর-গগনের কপোল বেয়ে শিশির-অশ্রু গড়িয়ে পড়ে॥
আমি রইতে নারি ঘরে,
আমার প্রাণ কেমন করে,
আমার মন লাগে না কাজে, জলে ভরে আঁখি॥
এ জনমে মোদের মিলন হবে না আর, জানি জানি
পিলু-মিশ্র – কারফা
এ জনমে মোদের মিলন
হবে না আর, জানি জানি।
মাঝে সাগর, এপার ওপার
করি মোরা কানাকানি॥
দুজনে দুকূলে থাকি
কাঁদি মোরা চখাচখি,
বিরহের রাত পোহায় না আর
বুকে শুকায় বুকের বাণী॥
মোদের পূজা আরতি হায়
চোখের জলে, গহন ব্যথায়,
মোদের বুকে বীণা বাজায়
বেদনারই বীণাপাণি॥
হেথায় মিলন-রাতের মালা ম্লান হয়ে যায় প্রভাত বেলা,
সকালে যার তরে কাঁদি, বিকালে তায় হেলাফেলা।
মোদের এ প্রেম-ফুল না শুকায়
নিঠুর হাতের কঠোর ছোঁয়ায়,
ব্যথার মাঝে চির-অমর মোদের মিলন-কুসুমদানি॥
একী হাড়-ভাঙা শীত এল মামা
পিলু – কারফা
একী হাড়-ভাঙা শীত এল মামা।
যেন সারা গায়ে ঘষে দিচ্ছে ঝামা॥
হইয়া হাড়-গোড় ভাঙা দ
ক্যাঙারুর বাচ্চা যেন গো,
সেঁদিয়ে লেপের পেটে
কাঁপিয়া মরি, ভয়ে থ!
গিন্নি ছুটে এসে চাপা দেয় যে ধামা॥
বাঘা শীত,কাঁপি থরথর,
যেন গো মালোয়ারির জ্বর,
বেড়ালে আঁচড়ায় যেন
শাণিয়ে দন্ত নখর,
মা গো দাঁড়াতে নারি, চলি দিয়ে হামা॥
হাঁড়িতে চড়িয়ে আমায়
উনুনে রাখো গো ত্বরায়,
পেটে মোর ভরিয়া তুলো
বালাপোষ করো গো আমায়!
হল শরীর আমার ফেটে মহিষ-চামা।
ওরে হরে! নিয়ে আয় মোজা পায়জামা॥
একেলা গোরী জলকে চলে গঙ্গাতীর
জৌনপুরি – দাদরা
একেলা গোরী জলকে চলে গঙ্গাতীর।
অঙ্কে ঢুলিয়া পড়ে লালসে অলস সমীর॥
কাঁকনে কলসে বাজে
কত কথা পথ মাঝে,
আঁচল চুমিছে শিশির॥
তটিনীতে চলে কি গো
সোনার বরন মায়া-মৃগ,
নয়নে আবেশ মদির।
রাঙা উষার রাঙা সতিন,
পথ-ভোলা ছন্দ কবির॥
এল ফুলের মরশুম শারাব ঢালো সাকি
পাহাড়ি – দাদরা
এল ফুলের মরশুম
শারাব ঢালো সাকি।
বকুল-শাখে কোকিল ওঠে ডাকি॥
গেয়ে ওঠে বুলবুল আঙ্গুর-বাগে,
নীল আঁখি লাল হল রাঙা অনুরাগে,
আজি ফুল-বাসরে শিরাজির জলসা
বরবাদ হবে না কি॥
চাঁপার গেলাস ভরি ভোমরা মধু পিয়ে,
মহুয়া ফুলের বাসে আঁখি আসে ঝিমিয়ে।
পাপিয়া পিয়া পিয়া ডাকে বন-মাঝে,
গোলাপ-কপোল রাঙে গোলাপি লাজে,
হৃদয়-ব্যথার দারু আছে তব কাছে–
রেখো না তাহা ঢাকি॥
এসো মা ভারত-জননি আবার
জৌনপুরি মিশ্র – দাদরা
এসো মা ভারত-জননি আবার
জগৎ-তারিণী সাজে।
রাজরানি মা-র ভিখারিনি বেশ
দেখে প্রাণে বড়ো বাজে॥
শিশু-জগতেরে মায়ের মতন
তুমি মা প্রথম করিলে পালন,
আজ মা তোরই সন্তানগণ
কাঁদিছে দৈন্য লাজে॥
আঁধার বিশ্বে তুমি কল্যাণী
জ্বালিলে প্রথম জ্ঞান-দীপ আনি,
হইলে বিশ্ব-নন্দিতা রানি
নিখিল নর-সমাজে॥
দেখা মা সে অতীত মহিমা,
মুছে দে ভীরুতা গ্লানির কালিমা,
রাঙায়ে আবার দশদিক-সীমা
দাঁড়া মা বিশ্ব-মাঝে॥
ও কূল-ভাঙা নদী রে
ভাটিয়ালি–কারফা
ও কূল-ভাঙা নদী রে
আমার চোখের জল এনেছি মিশাতে তোর নীরে॥
যে লোনাজলের সিন্ধুতে নদী নিতি তব আনাগোনা,
মোর চোখের জল লাগবে না ভাই তার চেয়ে বেশি লোনা,
আমায় কাঁদতে দেখে আসবিনে তুই উজান বেয়ে ফিরে॥
আমার মন বোঝে না নদী,
তাই বারেবারে আসি ফিরে তোর কাছে নিরবধি।
তোর অতল তলে ডুবিতে চাই, তুই ঠেলে দিস তীরে॥
তোর জোয়ারে সাগরে ঠেলে ফেলে দেয়, তবু ভাটির স্রোতে
তুই ফিরে ফিরে যাস রে নদী সেই সাগরের পথে,
নদী তেমনি অবুঝ আমারও মন তোরই পিছে ফিরে॥
ওই ঘর-ভুলানো সুরে
পিলু-ভৈরবী–কারফা
ওই ঘর-ভুলানো সুরে
কে গান গেয়ে যায় দূরে।
তার সুরের সাথে সাথে
মোর মন যেতে চায় উড়ে॥
তার সহজ গলার তানে
সে ফুল ফুটাতে জানে,
তার সুরে ভাটির টানে
নব জোয়ার আসে ঘুরে॥
তার সুরের অনুরাগে
বুকে প্রণয়-বেদন জাগে,
বনে ফুলের আগুন লাগে,
ফুল সুধায় ওঠে পুরে॥
বুঝি সুর-সোহাগে ওরই
পায় যৌবন কিশোরী
হিয়া বুঁদ হয়ে গো নেশায়
তার পায়ে পায়ে ঘুরে॥
কত আর এ মন্দিরে-দ্বার হে প্রিয় রাখিব খুলি
ভীমপলশ্রী – কাওয়ালি
কত আর এ মন্দিরে-দ্বার,
হে প্রিয় রাখিব খুলি।
বয়ে যায় যে লগ্নের ক্ষণ
জীবনে ঘনায় গোধূলি॥
নিয়ে যাও বিদায়-আরতি,
হল ম্লান আঁখির জ্যোতি,
ঝরে যায় যে শুষ্ক স্মৃতির
মালিকার কুসুমগুলি॥
কত চন্দন ক্ষয় হল হায়
কত ধূপ পুড়িল বৃথায়,
নিরাশায় সে পুষ্প কত
ও পায়ে হইল ধূলি॥
ও বেদির তলে কত প্রাণ
হে পাষাণ, নিলে বলিদান!
তবু হায় দিলে না দেখা,
দেবতা, রহিলে ভুলি॥