হারানো হিয়ায় নিকুঞ্জপথে
বাগেশ্রী – লাউনী
হারানো হিয়ায় নিকুঞ্জপথে
কুড়াই ঝরা ফুল একেলা আমি।
তুমি কেন হায় আসিলে হেথায়
সুখের স্বরগ হইতে নামি॥
চারিপাশে মোর উড়িছে কেবল
শুকানো পাতা মলিন ফুলদল,
বৃথায় সেথা হায় তব আঁখি-জল
ছিটাও অবিরল দিবস যামী॥
এলে অবেলায় পথিক বেভুল
বিঁধিছে কাঁটা নাহি যবে ফুল,
কী দিয়া বরণ করি ও-চরণ
নিভিছে জীবন, জীবন-স্বামী॥
হায় স্মরণে আসে গো অতীতকথা
মাঢ় – পাঞ্জাবি ঠেকা
হায় স্মরণে আসে গো অতীতকথা।
নয়নে জল ভরে তাই হৃদয় করে ব্যথা।
মুখ তার রহি রহি পড়ে মোর মনে॥
তার স্মৃতি ভুলিতে চাহি যতই
সখী মনে পড়ে তারে ততই,
সে কাঁদায় সখি মোরে ঘুমে জাগরণে॥
তার সাথে গেছে প্রাণ, দেহ আছে পড়ে,
বাঁচার অধিক আমি সখী গো আছি মরে॥
নাহি ফুল, আছে কাঁটার স্মৃতি,
নাহি আর সে চাঁদিনি তিথি,
নাহি আর সুখ শান্তি সখী এ জীবনে॥
হিন্দু-মুসলমান দুই ভাই ভারতের দুই আঁখি-তারা
ছায়ানট – দাদরা
হিন্দু-মুসলমান দুই ভাই
ভারতের দুই আঁখি-তারা
এক বাগানের দুটি তরু দেবদারু আর কদম-চারা॥
যেন গঙ্গা সিন্ধু নদী
যায় গো বয়ে নিরবধি,
এক হিমালয় হতে আসে, এক সাগরে হয় গো হারা॥
বুলবুল আর কোকিল পাখি
এক কাননে যায় গো ডাকি,
ভাগীরথী যমুনা বয় মায়ের চোখের যুগল ধারা।
ঝগড়া করে ভায়ে ভায়ে
এক জননির কোল লয়ে
মধুর যে এ কলহ ভাই পিঠোপিঠি ভায়ের পারা॥
পেটে-ধরা ছেলের চেয়ে চোখে ধরার মায়া বেশি,
অতিথি ছিল অতীতে, আজ সে সখা প্রতিবেশী।
ফুল পাতিয়ে গোলাপ বেলি
একই মায়ের বুকে খেলি,
পাগলা তারা, আল্লা ভগবানে ভাবে ভিন্ন যারা॥
হৃদয় কেন চাহে হৃদয়
পিলু-খাম্বাজ – কারফা
হৃদয় কেন চাহে হৃদয়
আমি জানি মন জানে।
জানে নদী কেন যে সে
ছুটে যায় সাগর পানে॥
কেন মেঘ বারি চাহে
জানে চাতক জানে মেঘ,
জানে চকোর দূর গগনের
চাঁদ কেন তারে টানে॥
কুসুম কেন শিশির
জানে শিশির জানে ফুল,
জানে বুলবুল আছে কাঁটা
তবু যায় গুল-বাগানে॥
নয়ন চাহে নয়ন-বারি
মন চাহে মনোব্যথা,
প্রাণ আছে যার সেই জানে
কেন চায় প্রাণে প্রাণে॥
হেনে গেল তির তিরছ তার চাহনি
পিলু মিশ্র – দাদরা
হেনে গেল তির তিরছ তার চাহনি।
বিঁধিল মরম-মূলে চাহিল যেমনই॥
হৃদয়-বনের নিষাদ নিঠুর,
তনু তার ফুলবন, আঁখি তাহে ফণী॥
শেয়র :- এল যবে স্বপন-পরি উড়ায়ে আঁচল সোনালি,
ধেয়ান-লোক হতে গো যেন রূপ ধরে এল রূপওয়ালি।
দেহে তার চাঁদিনি-চন্দন মাখা, হায় চাহিল সে যেই
তার চোখের চোখা তির খেয়ে গেয়ে উঠিল হৃদি এই–
হেনে গেল তির হেনে গেল তির,
তিরছ তার চাহনি॥