শা আর শুঁড়ি মিলে শাশুড়ি কি হয় গো
পিলু খাম্বাজ – কারফা
শা আর শুঁড়ি মিলে
শাশুড়ি কি হয় গো।
শ্যাম-প্রেমে বাধা দেয়
স্বামী তারে কয় গো॥
নয় নদী মিলে হয় ননদি সে দজ্জাল,
জুতো জামা-ই সার যার – জামাই সে মহাকাল,
যার কসুর হয় না সে শ্বশুর মহাশয় গো॥
সে ভাদ্দর-বউ, যার ভাদ্দর মাসে বিয়ে,
দেবর সে জন, দেয় বর যে দাদারে দিয়ে।
ভাসুর সে, অসুরের মতো যারে ভয় গো॥
বেহায়া চশম-খোর, তাই কি বেহাই কই,
পিষিয়া মারেন বলে নাম কি পিসিমা ওই,
সবিরই সে ভাগ নেয় ভাগনেরই জয় গো॥
শূন্য আজি গুল-বাগিচা
কাফি মিশ্র – কারফা
শূন্য আজি, গুল-বাগিচা
যায় কেঁদে দখিন হাওয়া।
রাঙা গুলের বাজার আজি
স্মৃতির কাঁটায় ছাওয়া॥
ধূলি-ঢালা ফুল-সমাধি
আজি সে গুলিস্তানে
ছিল যথায় জলসা খুশির
বুলবুলির গজল গাওয়া॥
শুকনো পাতায় ছেয়েছে আজ
সাকির চরণ-রেখা,
নাহি সেথায় বঁধুর লাগি
বধূর আসা যাওয়া॥
নাহি মিঠা পানির নহর
পড়ে আছে বালুচর,
এ যেন গো হৃদয়ের
ভরা-ডুবির পথ বাওয়া॥
শ্যামের সাথে চল সখী খেলি সবে হোরী
পিলু – হোরি
শ্যামের সাথে
চল সখী খেলি সবে হোরী।
রং নে রং দে মদির আনন্দে
আয় লো বৃন্দাবনি গোরী।
আয় চপল যৌবন-মদে মাতি
অল্প-বয়সি কিশোরী॥
রঙ্গিলা গালে তাম্বুল-রাঙা ঠোঁটে
হিঙ্গুল রং লহো ভরি;
ভুরু-ভঙ্গিমা সাথে রঙ্গিম হাসি
পড়ুক মুহুমুহু ঝরি॥
সই ভালো করে বিনোদ বেণি বাঁধিয়া দে
সিন্ধু – কারফা
সই ভালো করে বিনোদ বেণি বাঁধিয়া দে।
মোর বঁধু যেন বাঁধা থাকে বিনুনি-ফাঁদে॥
সই চপল পুরুষ সে, তাই কুরুশ-কাঁটায়
রাখিব খোঁপার সাথে বিঁধিয়া লো তায়,
তাহে রেশমি জাল বিছায়ে দে ধরিতে চাঁদে॥
বাঁধিতে সে বাঁধন-হারা বনের হরিণ,
জড়ায়ে দে জরিন ফিতা মোহন ছাঁদে॥
প্রথম প্রণয়-রাগের মতো আলতা রঙে
রাঙায়ে দে চরণ মোর এমনই ঢঙে,
পায়ে ধরে বঁধু যেন আমারে সাধে॥
সখী ওই শোনো বাঁশি বাজে
আশাবরি – আদ্ধা কাওয়ালি
সখী ওই শোনো বাঁশি বাজে।
মন লাগে না গৃহ-কাজে॥
কত সুরে কত ছলে
বাঁশিতে সে কথা বলে,
মোর মন প্রাণ ছুটে চলে
যথা বাঁশি বাজে বন-মাঝে॥
এপারে ঘরে ননদি,
ওপারে যমুনা নদী,
কেঁদে মরি নিরবধি
যাইতে পারি না লাজে॥
সখী কেন সে বাঁশিতে সাধে
নিশিদিন রাধে রাধে,
প্রাণ গুমরি গুমরি কাঁদে
হৃদে এনে দে রাখাল-রাজে॥
সখী লো তায় আন ডেকে
মাঢ় – রূপক
সখী লো তায় আন ডেকে
যে গান গেয়ে যায় পথ দিয়ে।
সই দিব তারে কণ্ঠহার তার কণ্ঠেরই ওই সুর নিয়ে॥
কারুর পানে নাহি চায়
সে আপন মনে গেয়ে যায়,
হিয়া কাঁপে সুরের নেশায়,
নয়ন আসে মোর ঝিমিয়ে॥
সখি লো শুধিয়ে আয়
সে শিখিল এ গান কোথায়,
এত মধু তার গলায়
কাহার অধর-সুধা পিয়ে॥
যার গানে এত প্রাণ মাতায়
না জানি কি হয় দেখলে তায়,
তার সুর শুনে কেউ প্রাণ পায়
কেউ ফেলে লো প্রাণ হারিয়ে॥
সাগর হতে চুরি ডাগর তব আঁখি
সিন্ধু মিশ্র – দাদরা
সাগর হতে চুরি ডাগর তব আঁখি
গভীর চাহনিতে করুণা মাখামাখি॥
শফরী সম তাহে ভাসিছে আঁখি-তারা,
তাহারই লোভে যেন উড়িছে ভুরু-পাখি॥
দুলে তরঙ্গ তাহে কভু ঘোর কভু ধীরে
আঁখির লীলা হেরি আঁখিতে আঁখি রাখি॥
ভীরু হরিণ চোখে অশনি হানো কেন,
শারাব-পিয়ালাতে জহর কেন সাকি ॥
আঁখির ঝিনুকে কবে ফিলবে প্রেম-মোতি,
ডুবিবে আঁখি-নীরে সেদিনের নাহি বাকি॥
সাত ভাই চম্পা জাগো রে
ভাটিয়ালি – কারফা
সাত ভাই চম্পা জাগো রে, ওই পারুল তোদের ডাকে।
ভাই আর কত ঘুমাবি সবুজ পাতা-ঘেরা শাখে॥
কী জাদু করিল তোদের বিদেশি সৎ-মায়ে,
রাজার দুলাল ঘুমিয়ে আছিস আঁধার কানন-ছায়ে,
নিজেরা না জাগলে কবে মুক্ত করবি মাকে॥
তোদের বোন এনেছে জিয়ন-কাঠি প্রাণের পরশ-মণি,
মায়া-নিদ্রা ভোলাতে ওই গায় সে জাগরণী।
গুবরে পোকায় মউ খেয়ে যায় তোদের ওই মৌচাকে॥
তোদের চাঁপা রঙে চাপা আছে অরুন-কিরণ-রেখা,
তোরা জাগবি রে যেই, অমনি পাবি দিনমণির দেখা;
বোনের সাথে ভাই জাগিলে ভয় করি আর কাকে॥
সামলে চলো পিছল পথ গোরী
খাম্বাজ – দাদরা
সামলে চলো পিছল পথ গোরী।
ভরা যৌবন তায় ভরা গাগরি॥
নীর ভরণে এসে সখী নদী-তীর,
তির খেয়ো না হৃদয়ে ডাগর আঁখির,
জলে ভাসিবে নয়ন কিশোরী॥
হৃদি নিঙাড়ি এ পথে প্রেমিক কত
সখী করেছে রুধির-পিছল এ পথ,
কেহ উঠিল না এ পথে পড়ি॥
তব ঘটের সলিল চাহিয়া সই
কত তৃষ্ণা-আতুর পথিক দাঁড়ায়ে ওই,
মরু-ভূমে তুমি মেঘ-পরি॥
সুরের ধারার পাগল-ঝোরা
মান্দ মিশ্র – কারফা
সুরের ধারার পাগল-ঝোরা
নামিল সখী মোর পরানে।
যেন কাহারবায় গজল কে গায়
সাকির সাথে গুল-বাগানে॥
ভরি মোর নিশীথ নিঝুম
বাজে নূপুর কার রুমুঝুম
মোর চোখে নাহি ঘুম,
পাষাণ টুটে লো যায় ছুটে
মন-তটিনী মোর সাগর পানে॥
পানসে চাঁদের জোছনাতে ওই বেলের কুঁড়ি মুঞ্জরে,
মোর মন যেতে চায় ফুল-বিছানো বকুল-বীথির পথ ধরে।
আজ চাইবে যে, দিব তাকে
সই ফুল ছুঁয়ে এই আপনাকে,
বাহির আমায় ডাক দিয়েছে আর কি ঘরে মন থাকে।
অরুণ রাগে হৃদয় জাগে,
ভাসিয়া যাব নৃত্যে গানে॥
সে চলে গেছে বলে কি গো
পাহাড়ি-মাঢ় – কারফা
সে চলে গেছে বলে কি গো
স্মৃতিও তার যায় ভোলা। (হায়)
মনে হলে তার কথা
আজও মর্মে যে মোর দেয় দোলা॥
ওই প্রতিটি ধুলিকণায়
আছে তার ছোঁয়া লেগে হেথায়,
আজও তাহারই আসার আশায়
রাখি মোর ঘরের সব দ্বার খোলা॥
হেথা সে এসেছিল যবে
ঘর ভরেছিল ফুল-উৎসবে,
মোর কাজ ছিল শুধু ভবে
তার হার গাঁথা আর ফুল তোলা॥
সে নাই বলে বেশি করে
শুধু তার কথাই মনে পড়ে,
হেরি তার ছবিই ভুবন ভরে
তারে ভুলিতে মিছে বলা॥