বনে বনে জাগে কী আকুল হরষন
ভৈরবী – সেতারখানি
বনে বনে জাগে কী আকুল হরষন।
ফুল-দেবতা এল দিতে ফুল-পরশন॥
হরিততর আজি পল্লব বনবাস,
মুকুল-জাগানিয়া সমীরণ ফেলে শ্বাস,
বেপথু লতা যাচে মধুপের দরশন॥
কিশোর-হিয়া-মাঝে যৌবন-দেবতা
গোপনে আনে নব জাগরণ-বারতা,
বধূর সাথে খোঁজে বঁধু বন নিরজন॥
বন্দির মন্দিরে জাগো দেবতা
হাম্বীর – কাওয়ালি
বন্দির মন্দিরে জাগো দেবতা!
আনো অভয়ংকর শুভ বারতা।
জাগো দেবতা, জাগো দেবতা॥
শৃঙ্খলে বাজে তব সম্বোধনী,
কারায় কারায় জাগে তব শরণি,
বিশ্ব মূক ভীত, কহো গো কথা!
জাগো দেবতা, জাগো দেবতা॥
নিশিদিন শোন নিপীড়িতা ধরণি
অশ্রুতে অ-শ্রুত শঙ্খধ্বনি!
পঙ্গু রুগ্ণ নর অত্যাচারে,
ধর্ষিতা নারী কাঁদে দৈত্যাগারে,
জাগো পাষাণ, ভাঙো নীরবতা।
জাগো দেবতা, জাগো দেবতা॥
মৃদুল মন্দে মঞ্জুল ছন্দে
পিলু খাম্বাজ– ঠুংরি
মৃদুল মন্দে মঞ্জুল ছন্দে
মরাল মদালস নাচে আনন্দে॥
তরঙ্গ-হিল্লোলে শতদল দোলে,
শিশু অরুণে জাগায় অমা-যামিনীর কোলে,
শুষ্ক কানন ভরে বকুল-গন্ধে॥
নন্দন-উপহার ধরণির করে,
শুভ্র পাখায় শুভ আশিস ঝরে।
মিলন-বসন্তের দূত আগমনি,
কণ্ঠে সুমঙ্গল শঙ্খের ধ্বনি,
কুহু-কেকা গাহে মধুর দ্বন্দ্বে॥
যদি শালের বন হত শালার বোন
যদি
কীর্তন
যদি শালের বন হত শালার বোন
আর কনে বউ হত ওই গৃহেরই কোণ।
ছেড়ে যেতাম না গো,
আমি থাকিতাম পড়ে শুধু, খেতাম না গো!
যদি শালের বন হত শালার বোন –
আমি ওই বনে যে হারিয়ে যেতাম!
ওই বৃন্দাবনে চারিয়ে যেতাম!
ওই মাকুন্দ হত যদি কুন্দ-বালা
হত দাড়িম্ব-সুন্দরী দাড়িওয়ালা!
আমি ঝুলে যে পড়িতাম
তার দাড়ি ধরে –
ওগো দুর্গা বলে –
আমি ঝুলে যে পাড়িতাম!
হত চিমটি শালির যদি বাবলা কাঁটা,
আর শর-বন হত তার খ্যাংরা ঝাঁটা!
দোয়ার্কি :
বিষ ঝেড়ে যে দিত তোর খ্যাংরা মেরে
বিষ ঝেড়ে যে দিত তোর!
যদি একই শালি
দিলে গো মা কালী,
সে যে শালি নয় বিশালী (মা গো)
মাগো বিশাল বপু তার
বিশালী সে – শালি নয়, শালি নয়!
রাউন্ড-টেবিল-কনফারেন্স
রাউন্ড-টেবিল-কনফারেন্স
কোরাস : দড়াদড়ির লাগবে গিঁঠ
গোল-টেবিলের বৈঠকে!
ঠোকর মারে লোহায় ইঁট
এ ঠকে কী ওই ঠকে॥
ব্যান্ড বাজে, ইং-ল্যান্ডে ওই
চলল লিডার্স এ্যান্ড কোং,
শকুন মাতুল কালনেমি, –
কণ্ঠে লাউড-স্পিকার চোং!
তাদের ছাড়া কুম্ভীরে
মাছের দুঃখ কইত কে॥
চলছে নরম গরম চাঁই
হোমরা চোমরা ওমরা যায়,
ধুনতে তুলো ধপড় ধাঁই
ডোমিনিয়ন-ডোমরা যায়।
বলছে ডেকে, ‘দেখ রে দেখ
প্রতাপ চলে চৈতকে॥’
ডিম-গোলাকার গোল-টেবিল
করবে সার্ভ অশ্ব-ডিম,
তা দিবে তায় ধাড়ির দল,
তা নয় দিলে ততঃ কিম?
আনবে স্বরাজ ব্রিটিশ-বর্ন,
অস্ট্রেলিয়ার ভাইপোকে॥
স্বর্গ ভেবে ধাপার মাঠ
ধাপা-মেলের ময়লা যায়,
কুটুম ভেবে কেষ্টরে
বৈকুন্ঠে গয়লা যায়
স্বরাজ-মাখম উঠবে যে–
নইলে এ ঘোল মইত কে॥
বেছে বেছে পিঁজরাপোল
নড়বড় বড়োর দল
আনল বুড়ো হাবড়াদের,
যাত্রা-কমিক দেখবি চল!
ঘাঁটা-পড়া ঘাড় ওদের,
নয় এ বোঝা বইত কে॥
বাঘ নেবে পাঠ বেদান্তের,
বি-দন্ত সব পুরুত যায়,
করবে শান্তি মন্ত্রপাঠ
ব্যাঘ্র! ব্যগ্র বক্ষে আয়!
শিখাবে অদ্বৈতবাদ
দ্বিধা-ভক্ত দ্বৈতকে॥
বাধাস নে আর লটঘটি
দোহাই বাবা চ্যাংড়া থাম!
এমন ফলার কাঁচকলার,
তোরাও পাবি ল্যাংড়া আম!
সাগর মথি আনবে সব
হয় সুধা নয় দই টকে॥
লিগ-অব-নেশন
লিগ-অব-নেশন
[সিংহ-ইংরাজ॥ হস্তী-ভারতবর্ষ॥ বাঘ-ফ্রান্স॥ ভল্লুক-রুশিয়া॥
হাঙর-ইটালি॥ নেকড়ে-অস্ট্রিয়া॥ শিব-গ্রিস॥
হায়েনা-আমেরিকা॥ ঈগল-জার্মানি॥]
কোরাস :
বসেছে শান্তি-বৈঠকে বাঘ,
সিংহ, হাঙর, নেকড়ে!
বৈষ্ণব গোরু, ছাগ, মেষ এসে
হরিবোল বলে দেখ রে॥
শিবা, সারমেয়, খটাস, শকুনি–
দু-নয়ন লবণাক্ত
কেঁদে কয়, ‘দাদা, নামাবলি নেব
আর রব নাকো শাক্ত!
কেন রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষি বৃথা,
দিব ফেলে নখ দন্ত,
তপস্বী হয়ে বনে যাব সবে,
পশুর হউক অন্ত।
ছাগ মেষ সব কে কোথা আছিস,
নিয়ে আয় সব ঢাক-ঢোল,
এসেছেন গোরা প্রেম-আনন্দে
ন্যাজ তুলে সবে হরিবোল!
শিশু-হাসি হেসে নব জিশু-বেশে
এসেছেন আহা বনমাঝ,
অজিন-আসন এনে দে হরিণ,
বসিবেন গোরা, পশুরাজ॥’”
পশুরাজ কন, ‘পশুদল, শোনো,
শোনো মোর বাণী স্বস্তির।’
বাঘা কয়, ‘প্রভু! দন্ত বেজায়
বাড়িয়া উঠিছে হস্তীর।’
প্রভু কন, ‘বাবা শান্তির এই
বৈঠক তারই জন্যে!’
নেকড়ে অমনি কহে, ‘চুপ! চুপ!
শুনিয়া ফেলিবে অন্যে!’
হাবাতে হাঙর খেজুর-গুঁড়ির
লেজুর করিয়া উচ্চ,
বলে, ‘প্রভু তুমি ধূমকেতু-তারা,
এ ভক্ত তার পুচ্ছ!’
প্রভু কন, ‘আহা, এতদিন পরে
মিলিল ভক্ত হনুমান!’
হাঙরের চোখে সাঁতার-সলিল,
বলে, ‘প্রভুর কী অনুমান!’
খেঁকড়ে-কণ্ঠ নেকড়ে কহিল,
‘হায়েনা তো প্রভু আয়েনা!
আমরা করিব হরিনাম, আর
সে নেবে আফ্রিকা চায়েনা!’
ব্যাঘ্র কহিল, ‘সে স্যাঙাত যে রে
আছে রগ ঘেঁসে আমারই!’
প্রভু কন, ‘ওই নোড়া দিয়ে দাঁত
ভাঙিব ভালুক মামারই॥’
হাঙর কহিল, ‘ভালুক মামা যে
ক্রমেই আসিছে রুষিয়া!’
প্রভু কন, ‘আর কটা দিন ব্যাটা
বাঁচিবে আমড়া চুষিয়া?’
লড়ালড়ি করে হায়েনা ভালুক
দুটোরই ধরিবে হাঁপানি,
ছিনেজোঁক রবে লাগিয়া পিছনে,
পাশে চিতে বাঘ জাপানি!
হাড়গোড়-ভাঙা ঈগল পক্ষী
কহিল পক্ষ ঝাপটি,
‘প্রভু তব পিছে চাপকান-ঢাকা
আফগান মারে ঘাপটি!’
প্রভু কন, ‘ওরই ভাবনায় বাবা
ধরেছে রক্ত-আমেশা!
গোস্ত খাওয়ায়ে দোস্ত করিতে
তাই তো চেষ্টা হামেশা!’
শিবা কয়, ‘প্রভু, সুরকি-রাঙানো
টুপি ছাড়িয়াছে তুর্কি!’
প্রভু কন, ‘মজি সংসার-মোহে
ছাড়িল খোদার নূর কি?
কপাল মন্দ! কী করিবে বলো!
অদৃষ্টে নাই ভেস্ত!’
শিবা কয়, ‘যাব আমিই ভেস্তে
তাহলে, বিচার বেশ তো!’
সাত হাত দাঁত বের করে এল
এমন সময় হস্তী,
শুণ্ড বুলায়ে মুণ্ডে কহিল,
‘করো মোরও সাথে দোস্তি!’
‘রে গজমূর্খ!’বলি প্রভুপাদ
পশুরাজ ওঠে গর্জি –
‘কার মর্জিতে তুই এলি হেথা
চিড়িয়াখানারে বর্জি!’
‘গজরাজ আমি, অজ নই’কহে,
অঙ্গ দুলায়ে হস্তী,
‘চিড়িয়াখানার পিঞ্জর ভেঙে
এসেছি বনের বস্তি!’
শকুনি, খটাস, শিবা, সারমেয়
তুলিল ভীষণ কলরোল;
তক্ত প্রভুর তুলি পশুদল
বল ‘বলো হরি হরিবোল!’