প্রাথমিক শিক্ষা বিল
প্রাথমিক শিক্ষা বিল
(নেপথ্যে কোরাস) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
এই দেশটা ভীষণ মূর্খ,
এবার ঘুচাব দেশের দুঃখ।
হবে চাষারা উচ্চ-প্রাইমার,
ওরে আর এদেশের নাই মার!
ছুটে আয় আয় সব ছেলেমেয়ে!
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
বহু দিন ধরি করি আঁক-পাঁক
এবে মিলিয়াছে মনোমতো ফাঁক।
তোরা
মাথা পিছু সব টাকা গোন
দিব
পণ্ডিত করে বাছাধন!
হবি বাবু সার রে অলপ্পেয়ে !
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
তোরা পাসনে কো খেতে মাড় ভাত,
নাই পরনে বসন আধ-হাত।
পাবি অন্ন-বস্ত্র এইবার
এই আইন হইবে যেই বার!
টাকা তোল তোরা আদা-জল খেয়ে।
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
তোরা করছিস কি অবিশ্বাস?
কেন ছাড়িস দীর্ঘ নিশ্বাস?
মোর টাকার কি আর ভাবনা,
ওই টাকা বিনে খেতে পাব না?
চলে রাজ্য কি তোর মুখ চেয়ে?
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
এই শিক্ষার লাগি হরদম
বলি খরচটা কিছু করি কম?
আজও গ্রাম-পিছু প্রতি বৎসর
আট আনা করে দিই, মনে কর!
তবু আছে অজ্ঞান-ভূতে পেয়ে।
(কোরাস) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
দিয়ে তোদেরই শিল ও নোড়া রে
ভাঙিব তোদেরই দাঁতের গোড়া রে!
‘বাই জোভ!’আরে ছি, ছি, তা নয়,
তোরা ভাবিস তাহাই যা নয়!
ধিনি কেষ্ট রে, নেচে আয় ধেয়ে।
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
বলি, চারটে করো তো পয়সা,
তাতেই চেঁচিয়ে ধরালি বয়সা!
তাও পাঁচটা কোটি তো লোক ছাই,
হয় ক-টাকা সে – তুই বল ভাই!
তবু ফ্যালফ্যাল করে রস চেয়ে?
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
তোরা কতই রকম দিস ‘সেস’
হলি ‘সে’স’দিয়ে দিয়ে নিঃশেষ,
ওরে জ্ঞান-এরণ্ডের এ যে ফল!
এ-ও না খেলে আর কী খাবি বল!
জ্ঞান- কান্ডারি এল তরি বেয়ে!
(নেপথ্যে) এই বেলা নে ঘর ছেয়ে॥
হবি এবার বিদ্যে-দিগ্গজ,
পোকা করিবে মগজে বজবজ!
ফুলে ফুলে বন ফুলেলা
কামোদ – একতালা
ফুলে ফুলে বন ফুলেলা।
ফুলের দোলা, ফুলের মেলা,
ফুল-তরঙ্গে ফুলের ভেলা॥
ফুলের ভাষা ভ্রমর গুঞ্জে
দোলনচাঁপার ঝুলনকুঞ্জে,
মুহু মুহু কুহরে কুহু
সহিতে না পারি ফুল-ঝামেলা॥
বক্ষে আমার কাবার ছবি
বাগেশ্রী-সিন্ধু – কাহারবা
বক্ষে আমার কাবার ছবি,
চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
শিরোপরি মোর খোদার আরশ্,
গাই তারই গান পথ-বেভুল॥
লায়লির প্রেমে মজনুঁ পাগল,
আমি পাগল ‘লা-ইলা’র,
বোঝে আমায় প্রেমিক দরবেশ,
অ-রসিকে কয় বাতুল॥
হৃদয়ে মোর খুশির বাগান,
বুলবুলি তায় গায় সদাই –
ওরা খোদার দয়া যাচে,
আমি খোদার ইশ্ক চাই॥
আমার মনের মসজিদে দেয়
আজান প্রেমের ‘মুয়াজ্জিন’,
প্রাণের পরে কোরান লেখা
‘রুহ’ পড়ে তা রাত্রিদিন।
খাতুনে-জিন্নাত আমার মা,
হাসান হোসেন চোখের জল,
ভয় করি না ‘রোজ-কিয়ামত’
পুলসিরাতের কঠিন পুল॥
বগল বাজা দুলিয়ে মাজা (ডোমিনিয়ন স্টেটাস)
ডোমিনিয়ন স্টেটাস
কোরাস : বগল বাজা দুলিয়ে মাজা,
বসে কেন অমনি রে!
ছেঁড়ে ঢোলে লাগাও চাঁটি,
মা হবেন আজ ডোমনি রে॥
রাজা শুধু রাজাই রবেন
পগার-পারে নির্বাসন,
রাজ্য নেব দু ভাই মিলে
দুর্যোধন আর দুঃশাসন!
অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র রবে
সিংহাসনে মাত্র নাম!
কোঁতকা যাবে, রইবে শুধু
বোঁটকা খানিক গাত্রঘাম॥
অনেক-কিছু সয়ে গেছে,
গন্ধটা আর সইবে না?
কী কস? গলা-বন্ধটা? এও
দুদিন বাদে রইবে না!
কলসি-কানার প্রহার খেয়েও
প্রভু কেয়সা প্রেম বিলায়।
গউর বলে, ‘প্রেমসে’নাচে
জগাই মাধাই – দেখবি আয়॥
রইত তো কেউ রাজা হেথাও,
না হয় সেথাই রইল কেউ।
আচ্ছা ফ্যাসাদ যা হোক! তবু
বাঘের পিছে লাগবি ফেউ?
ঠুঁটো হলেও হাত পেলি তো!
ছিলি যে একদম বে-হাত!
একেবারেই ঠ্যাং ছিল না,
পেলি তো এক ঠ্যাং নেহাত!
ভিক্ষের চাল কাঁড়াই হোক–আর
আকাঁড়া – তাই ঝোলায় ভর।
ওই চিবিয়ে জল খেয়ে থাক!
ফেনও পাবি অতঃপর॥
ধৈর্য ধরে থাকে বেড়াল
তাই তো শেষে পায় কাঁটা,
পাত হতে সে মাছ তুলে নেয়?
তেমনি সে যে খায় ঝাঁটা॥
ভারত একার নয় তো কারুর –
বিশ্ব-আড়ত, পীঠস্থান!
পারত-পক্ষে মারতে কসুর
করেনি কেউ হুন পাঠান!
চিরটা কাল বনের মোরা
লোমশ-মুনিই ছিলুম দেখ!
আহার ছিল শাক পাতা আর
ভাবের গাঁজা ছিলিম টেক!!
আজ তবু কেক বিস্কুট খাস,
হয়েও গেলি প্রায় রাজাই!
গাল বাজাই আয় কানাডা আর
অস্ট্রেলিয়ার ভায়রা-ভাই!
ধুচনি মাথায় হাতে ধামা
দেখে মোদের রসিক-রাজ –
ডোমের জাতি ভেবে–দিলেন
ডোমনি করে মাতায় আজ॥
বন্দিনি মা ছিলেন আহা,
আজ দিয়েছে মুক্তি রে!
বাজাও ধামা মামার নামে,
রক্ত ঢালো বুক চিরে!
এবার থেকে ধামাধারী
বলদ-দল, ভাবনা কি?
দিব্যি খাবে ডুবিয়ে নুলো
পাতনা নাদায় জাব মাখি॥
হাতির পিছে নেংচে চলে
ব্যাংছা এবং খলসে রে!
দোহাই দাদা, চলিসনে আর,
চোখ যে গেল ঝলসে রে!
‘মাভৈঃ! এবার স্বাধীন হনু!’
যাই বলেছি, পৃষ্ঠে ঠাস!
পড়ল মনে, পীঠস্থান এ,
ডোমিনিয়ন স্টেটাস!
বন-বিহারিণী চপল হরিণী
সিন্ধু – কাওয়ালি
বন-বিহারিণী চপল হরিণী
চিনি আঁখিতে চিনি কানন-নটিনীরে।
ছুটে চলে যেন বাঁধভাঙা তটিনী রে॥
নেচে নেচে চলে ঝরনার তীরে তীরে।
ছায়াবীথিতলে কভু ধীরে চলে,
চকিতে পলায় নিজ ছায়া হেরি
গিরি শিরে॥