তুমি দুখের বেশে এলে বলে ভয় করি কি, হরি
বাউল
তুমি দুখের বেশে এলে বলে ভয় করি কি, হরি!
দাও ব্যথা যতই তোমায় ততই নিবিড় করে ধরি।
আমি ভয় করি কি হরি॥
আমি শূন্য করে তোমার ঝুলি
দুঃখ নেব বক্ষে তুলি,
আমার ব্যথা শোকের শতদলে তোমায় নেব বরি।
আমি ভয় করি কি হরি॥
তুমি আড়াল ভেঙে দাঁড়ালে মোর সকল শূন্য ভরি।
আমি ভয় করি কি হরি॥
তুষার-মৌলি জাগো জাগো গিরি-রাজ
সাজগিরি – ত্রিতালি
তুষার-মৌলি জাগো জাগো গিরি-রাজ!
পঙ্গু তোমারে আজি হানিতেছে লাজ॥
রুদ্র ও রুদ্রাণী অঙ্কে যাহার,
দৈত্য হরিছে আজ সম্মান তার।
হে মহা-মৌনী জাগো, পরো নব সাজ॥
স্বর্গ তোমার শিরে, পদতলে হায়,
আর্যাবর্ত কাঁদে চির-অসহায়!
মেঘ-লোক হতে হনো দৈত্যারি বাজ॥
তোর বিদায়-বেলার বন্ধুরে
জয়জয়ন্তী – একতালা
তোর বিদায়-বেলার বন্ধুরে
দেখে নে নয়ন পুরে।
সে যায় মিশে ওই কোন দূরে
বেলাশেষের শেষ সুরে॥
ঘুমের মাঝে বন্ধু তোর,
ছিঁড়বে বাহুর বাঁধন-ডোর!
যাবে নয়ন, রবে নয়ন-লোর,
যায় রে বিহগ যায় উড়ে॥
তুই বহাবি নদী কেঁদে, –
পাষাণে হৃদয় বেঁধে
তবু যেতে হবে তায়
অসহায় – অচিন পুরে॥
থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়
কমিক গান
শ্রীচরণ ভরসা
সোহিনী – একতালা
কোরাস :
থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়,
নিমেষে যোজন ফরসা।
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ
জয় শ্রীচরণ ভরসা॥
গর্বের শির খর্ব মোদের?
চরণ তেমনই লম্বা!
শৈশব হতে আ-মরণ চলি
সবারে দেখায়ে রম্ভা।
সার্জেন্ট যবে আর্জেন্ট-মার
হাতে করে আসে তাড়ায়ে,
না হয়ে ক্রুব্ধ পদ প্রবুদ্ধ
সম্মুখে দিই বাড়ায়ে॥
কোরাস :
থাকিতে চরণ মরণ কী ভয়,
নিমেষে যোজন ফরসা।
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ
জয় শ্রীচরণ ভরসা॥
বপু কোলা ব্যাং, রবারের ঠ্যাং,
প্রয়োজন মতো বাড়ে গো,
সমানে আঁদাড়ে বনে ও বাদাড়ে
পগারে পুকুরপাড়ে গো।
লখিতে চকিতে লঙ্ঘিয়া যায়
গিরি দরি বন সিন্ধু,
এই এক পথে মিলিয়াছি মোরা,
সম মুসলিম হিন্দু॥
কোরাস :
থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়,
নিমেষে যোজন ফরসা!
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ
জয় শ্রীচরণ ভরসা॥
কহিতেছে নাকি বিশ্ব, আমরা
রণে পশ্চাতে হেঁটে যাই?
পশ্চাৎ দিয়া ছুটে কেউ? হেসে
মরিব কি দম ফেটে, ছাই!
ছুটি যবে মোরা – সুমুখেই ছুটি,
পশ্চাতে পাশে হেরি না!
সামনে ছোটারে পিছু হাঁটা বল?
রাঁচি যাও, আর দেরি না॥
কোরাস :
থাকিতে চরণ মরণে কী ভয়,
নিমেষে যোজন ফরসা।
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ
জয় শ্রীচরণ ভরসা॥
আমাদের পিছে ছুটিতে ছুটিতে
মৃত্যু পড়িবে হাঁপায়ে,
জিভ বার হয়ে পড়িবে যমের,
জীবন তখন বাঁ পায়ে!
মোরা দেব-জাতি ছিনু যে একদা,
আজ তার স্মৃতি চরণে,
ছুটি না তো, যেন উড়ে চলি নভে,
থাকে নাকো ধুতি পরনে॥
কোরাস :
থাকিতে চরণ মরণ কী ভয়,
নিমেষে যোজন ফরসা।
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ
জয় শ্রীচরণ ভরসা॥
বাপ-পিতামোর প্রদর্শিত এ
পথ মহাজন-পিষ্ট,
গোস্বামী মতে পরাহেও বাবা
এ পথে মিলিবে ইষ্ট!
মরে যদি যাও তাহলে তো তুমি
একদম গেলে মরিয়াই!
চরণের জোরে মরণ এড়াও,
বাঁচিবে চরণ ধরিয়াই॥
কোরাস :
থাকিতে চরণ মরণ কী ভয়,
নিমেষে যোজন ফরসা।
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ
জয় শ্রীচরণ ভরসা॥
দে গোরুর গা ধুইয়ে
দে গোরুর গা ধুইয়ে’
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে॥
উলটে গেল বিধির বিধি
আচার বিচার ধর্ম জাতি,
মেয়েরা সব লড়ুই করে,
মদ্দ করেন চড়ুই-ভাতি!
পলান পিতা টিকেট করে–
খুকি তাঁহার পিকেট করে!
গিন্নি কাটেন চরকা, –কাটান
কর্তা সময় গাই দুইয়ে!
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥
চর্মকার আর মেথর চাঁড়াল
ধর্মঘটের কর্মগুরু!
পুলিশ শুধু করছে পরখ
কার কতটা চর্ম পুরু!
চাটুজ্যেরা রাখছে দাড়ি,
মিয়াঁরা যান নাপিত-বাড়ি!
বোঁটকা-গন্ধী ভোজপুরি কয়
বাঙালিকে –‘মৎ ছুঁইয়ে!’
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥
মাজায় বেঁধে পইতে বামুন
রান্না করে কার না বাড়ি,
গা ছুঁলে তার লোম ফেলে না,
ঘর ছুঁলে তার ফেলে হাঁড়ি!
মেয়েরা যান মিটিং হেদোর,
পুরুষ বলে, ‘বাপরে দে দোর!’
ছেলেরা খায় লাপসি হুড়ো,
বুড়োর পড়ে ঘাম চুঁইয়ে!
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥
ভয়ে মিয়াঁ ছাড়ল টুপি,
আঁটল কষে গোপাল-কাছা,
হিন্দু সাজে গান্ধি-ক্যাপে,
লুঙ্গি পরে ফুঙ্গি চাচা!
দেখলে পুলিশ গুঁতোয় ষাঁড়ে,
পুরুষ লুকায় বাঁশের ঝাড়ে!
খ্যাঁদা বাদুড় রায়-বাহাদুর,
খান-বাহাদুর কান খুইয়ে॥
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥
খঞ্জ নেতা গঞ্জনা দেয়,
চলতে নারে দেশ যে সাথে!
টেকো বলে, ‘টাক ভালো হয়
আমার তেলে, লাগাও মাথে!’
‘কী গানই গায়’– বলছে কালা;
কানা কয়, কী নাচছে বালা!’
কুঁজো বলে, ‘সোজা হয়ে
শুতে যে সাধ, দে শুইয়ে!’
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥
সস্তা দরে দস্তা-মোড়া
আসছে স্বরাজ বস্তা-পচা,
কেউ বলে না, ‘এই যে লেহি’
আসলে ‘যুদ্ধ দেহি’র খোঁচা।
গুণীরা খায় বেগুন-পোড়া,
বেগুন চড়ে গাড়ি-ঘোড়া!
ল্যাংড়া হাসে ভেংড়ো দেখে
ব্যাঙের পিঠে ঠ্যাং থুইয়ে!
কোরাস : দে গোরুর গা ধুইয়ে ॥
দ্যাখো হিন্দুস্থান সায়েব মেমের
কমিক গান
তৌবা
বেহাগ-খাম্বাজ – দাদরা
দ্যাখো হিন্দুস্থান সায়েব মেমের,
রাজা আংরেজ হারাম-খোর।
ওদের পোশাকের চেয়ে অঙ্গই বেশি,
হাঁটু দেখা যায় হাঁটিলে জোর!
আর মেয়েরা ওদের মদ্দের সাধে
রাজপথে করে গলাগলি,
আরে শুধু তাই নয়, নাচে গলা ধরে
ব্যান্ড বাজায়ে ধলা-ধলি॥
কোরাস :
আরে তৌবা! আরে তৌবা!!