জবাকুসুমসঙ্কাশ ওই উদার অরুণোদয়
ভজন – একতালা
জবাকুসুমসঙ্কাশ ওই
উদার অরুণোদয় ।
অপগত তমোভয়।
জয় হে জ্যোতির্ময়॥
জননির সম স্নেহসজল
নীল গাঢ় গগনতল,
সুপেয় বারি প্রসূন-ফল
তব দান অক্ষয়।
অপহত সংশয়।
জয় হে জ্যোতির্ময়॥
জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী
বাগেশ্রী – চৌতাল
জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী!
কাঁদে ধরিত্রী নিপীড়িতা, কাঁদে ভয়ার্ত নরনারী॥
আনো আরবার ন্যায়ের দণ্ড
দৈত্য-ত্রাসন ভীম প্রচণ্ড,
অসুর-বিনাশী উদ্যত অসি, ধরো ধরো দানবারি॥
ওই বাজে তব আরতি বোধন
কোটি অসহায় কণ্ঠে রোদন!
ব্যথিত হৃদয়ে ফেলিয়া চরণ
বেদনা-বিহারী এসো নারায়ণ!
রুদ্ধ কারার অন্ধ প্রাকার-বন্ধন অপসারি॥
জাগো বধূ জাগো নব বাসরে
ভৈরবী – আদ্ধা-কাওয়ালি
জাগো –
জাগো বধূ জাগো নব বাসরে।
গৃহ-দীপ জ্বালো কল্যাণ-করে॥
ভুবনের ছিলে, এলে ভবনে,
স্বপন হতে এলে জাগরণে,
শ্রী-মতী আসিলে শ্রী-হীন ঘরে॥
স্বপন-বিহারিণী অকুণ্ঠিতা,
পরিলে গুণ্ঠন সলাজ ভীতা,
কমলা আসিলে কাঁকন পরে॥
জাগো হে রুদ্র, জাগো রুদ্রাণী
যোগিয়া -– একতালা
জাগো হে রুদ্র, জাগো রুদ্রাণী,
কাঁদে ধরা দুখ-জরজর!
জাগো গৌরী, জাগো হর॥
আজি শস্য-শ্যামা তোদের কন্যা
অন্নবস্ত্রহীনা অরণ্যা,
সপ্তসাগর-অশ্রু-বন্যা
কাঁপিছে বুকে থরথর॥
আর সহিতে পারি না অত্যাচার,
লহো এ অসহ ধরার ভার।
গ্রাসিল বিশ্ব লোভদানব,
হা হা স্বরে কাঁদিছে মানব,
জাগো ভৈরবী জাগো ভৈরব
ত্রিশূল খড়্গ ধরো ধরো॥
জয় বাণী বিদ্যাদায়িনী
খাম্বাজ – একতালা
জয় বাণী বিদ্যাদায়িনী।
জয় বিশ্বলোক-বিহারিণী॥
সৃজন-আদিম-তমো অপসারি
সহস্রদল কিরণ বিথারি
আসিলে মা তুমি গগন বিদারি
আলোক-মরাল-বাহিনী॥
ভারতে ভারতী মূক তুমি আজি,
বীণাতে উঠিছে ক্রন্দন বাজি,
ছিন্ন চরণ-শতদলরাজি
কহিছে পীড়ন-কাহিনি॥
ঊর মা আবার কমলাসীনা,
করে ধরো পুন সে রুদ্রবীণা,
নব সুর তানে বাণী পরাধীনা
জাগাও অমৃত-ভাষিণী॥
জয় মর্ত্যে অমৃতবাদিনী চির-আয়ুষ্মতী
ইমন – কাওয়ালি
জয় মর্ত্যে অমৃতবাদিনী চির-আয়ুষ্মতী
জয় নারী-রূপা দেবী পুণ্যশ্লোকা সতী॥
জয় অগ্নিহোত্রী অয়ি দীপ্তা উগ্রতপা জ্যোতির্ময়ী।
জয় সুরলোক-বাঞ্ছিতা, সতী মহিমার গীতা, মৃত্যুজয়ী।
জয় সীমন্তে নবারুণ, ধরণির অরুন্ধতী॥
চির-শুদ্ধাচারিণী চির-পবিত্রা সুমঙ্গলা!
চির-অবৈধব্য-যুতা তুমি চিরপূজ্যা মা, নহ অবলা।
মা গো যুগে যুগে চির-ভাস্বর তুমি উদীচী জ্যোতি॥
তব সীমান্ত-সিন্দূর মাগে, মা গো, বিশ্ব-বধূ;
মা গো মৃত্যুঞ্জয়ী তব তপস্যা দাও, দাও আশিস-মধু!
সব কন্যা জায়া যাচে তব বর, করে প্রণতি॥
ডুবল ফুটো ধর্ম-তরি (সর্দা-বিল)
সর্দা-বিল
ডুবল ফুটো ধর্ম-তরি
ফাটল মাইন সর্দার।
উঠল মাতম ‘সামাল সামাল
ব-মাল মেয়ে-মর্দার॥
১
এ কোন এল বালাই, এবে
পালাই বল কোন দেশ।
গাছের তলায় ঘড়েল শেয়াল,
কাকের মুখে সন্দেশ!
কন্যা-ডোবা বন্যা এল,
ডুবল বুঝি ঘর-দ্বার॥
২
আয়েশ করে বিয়ের মেয়ের
বাড়বে বয়সে চৌদ্দ,
বাপের বুকের তপ্ত খোলায়,
দিব্যি গেয়ান-বোধ তো!
হদ্দ হলেন বউদি ভেবে,
ছাড়ল নাড়ি বড়দার॥
৩
শূন্য স্বর্গ-মার্গে যেত
গৌরীদানের মারফত
যমের যমজ জামাতৃকে
লিখে দিয়ে ফারখত
নৈকষ্য কস্য এখন,
জাত গেল ‘মেল খড়দা’র॥
৪
দেব্তা বুড়ো শিব যে মাগেন
আট-বছরি নাতনি,
চতুর্দশী মুক্ত-কেশী–
কনে নয়, সে হাথনী!
পুঁটুলি নয়, এঁটুলি সে,
কিংবা পুলিশ-সর্দার॥
৫
সিংগি চড়া ধিঙ্গি মেয়ে
বউ হবে কি, বাপ রে!
প্রথম প্রণয়-সম্ভাষণেই
হয়তো দেবে থাপড়ে।
লাফ দিয়ে সে বাইরে যাবে
ঝাঁপ খুলে ওই পর্দার॥
৬
সম্বন্ধ ভুলে শেষে
যা তা বলে ডাকব?
বধূ তো নয়–যদুর পিসি!
কোথায় তারে রাখব!
ধর্মিনী নয়, জার্মানি-শেল!
গো-স্বামী! খবরদার!
৭
ঠাকুর ভাশুর মানবে নাকো,
রাখবে না মান দুর্গার
হয়তো কবে বলবে—‘পিয়ো,
ঝোল রেঁধেছি মুরগার’!
আনবে কে বাপ গুর্খা-সিপাই
দন্ত-নখর-বর্দার॥
৮
টাকাতে নয় ভাবনাতে শেষ
মাথাতে টাক পড়বে!
যোদ্ধা বামা গুটিয়ে জামা
কথায় কথায় লড়বে!
যেই পাবে না শেমিজ বডিস
কৌটো পানের জর্দার॥
৯
জাত মেরেছিস, ভেবেছিনু,
জাতিটা নয় যাক গে,
গৃহিনী-রূপ গ্রহণীরোগ
তাও ছিল শেষ ভাগ্যে!
দোক্তা ফেলে গিন্নি কাঁদেন,
কর্তা চলেন হরদ্বার॥
তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী
ভৈরবী – আদ্ধা কাওয়ালি
তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী
কৃষ্ণ মুরারি আগত ওই।
টুটিল আগল, নিখিল পাগল,
সর্বসহা আজি সর্বজয়ী॥
বহিছে উজান অশ্রুযমুনায়,
হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, আয়,
বসুধা-যশোদার স্নেহধার উথলায়,
কাল-রাখাল নাচে থই তাথই॥
বিশ্ব ভরি ওঠে স্তব নমো নমঃ,
অরির পুরী-মাঝে এল অরিন্দম!
ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরীজন,
কারার মাঝে এল বন্ধ-বিমোচন,
জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে মাভৈঃ॥
তুই লুকাবি কোথায় মা কালী
রামপ্রসাদি
তুই লুকাবি কোথায় মা কালী!
আমার বিশ্বভুবন আঁধার করে
তোর রূপে মা সব ডুবালি॥
আমার সুখের গৃহ শ্মশান করে
বেড়াস মা তায় আগুন জ্বালি,
আমার দুঃখ দেওয়ার ছলে মা তোর
ভুবন-ভরা রূপ দেখালি॥
আমি পূজা করে পাইনি তোরে
এবার চোখের জলে এলি,
আমার বুকের ব্যথার আসন পাতা
বস মা সেথা দুখ-দুলালি॥