ওহে রাখাল-রাজ
বাউল
ওহে রাখাল-রাজ!
কী সাজে সাজালে আমায় আজ।
আমার ঘরের ভূষণ কেড়ে নিয়ে
দিলে চির-পথিক সাজ॥
তোমার পায়ের নূপুর আমায় দিয়ে
ঘুরাও পথে ঘাটে নিয়ে,
বেড়াই বাউল একতারা বাজিয়ে হে,
তোমার ভুবন-নাটে নেচে বেড়াই
ভুলে শরম ভরম লাজ॥
তোমার নিত্য-খেলার নৃত্য-সাথি
আনন্দেরই গোঠে হে,
জীবন-মরণ আমার সহজ –
চরণতলে লোটে হে!
আমার হাতে দিলে সর্বনাশী
ঘর-ভুলানো তোমার বাঁশি,
কাজ ভুলাতে যখন তখন আসি হে,
আমার আপন ভবন কেড়ে – দিলে
ছেড়ে বিশ্বভুবন-মাঝ॥
কারা-পাষাণ ভেদি জাগো নারায়ণ
দরবারি কানাড়া – গীতাঙ্গী
কারা-পাষাণ ভেদি জাগো নারায়ণ।
কাঁদিছে বেদি-তলে আর্ত জনগণ,
বন্ধ-ছেদন জাগো নারায়ণ॥
হত্যা-যূপে আজি শিশুর বলিদান,
অমৃত-পুত্রেরা মৃত্যু-ম্রিয়মাণ!
শোণিত-লেখা জাগে – নাহি কি ভগবান?
মৃত্যুক্ষুধা জাগে শিয়রে লেলিহান!
শঙ্কানাশন জাগো নারায়ণ॥
কুসুম-সুকুমার শ্যামল-তনু
সিন্ধু-কাফি – কারফা
কুসুম-সুকুমার শ্যামল-তনু
হে বন-দেবতা, লহো প্রণাম।
বিটপী লতায় চিকন পাতায়
ছিটাও হাসি কিশোর শ্যাম॥
ঘনায় মায়া তোমার কায়া
কাজল-কালো ছায়া-শীতল,
পরিমল-সুরভিত কুন্তল
ময়ূর কুরঙ্গে হয়ে খেলো সঙ্গে,
চরণ-ভঙ্গে ফোটে শাখে ফুলদল।
কুহরে কোকিল পাগল গো
নয়নাভিরাম হে চির-সুন্দর,
রচিলে ধরায় অমর ধাম॥
কে যাবি পারে আয় ত্বরা করি
পিলু – কাহারবা
কে যাবি পারে আয় ত্বরা করি,
তোর খেয়া-ঘাটে এল পুণ্য-তরি॥
আবু-বকর, উমর, উসমান, আলি হাইদর,
দাঁড়ি এ সোনার তরণির, পাপী সব নাই নাই আর ডর,
এ তরির কান্ডারি আহমদ, পাকা সব মাঝি ও মাল্লা,
মাঝিদের মুখে সারিগান শোন ওই–লাশরীক্ আল্লাহ্!
মোরা নরক-আগুনে আর নাহি ডরি॥
শাফায়ত -পাল ওড়ে তরির অনুকূল হাওয়ার ভরে,
ফেরেশ্তা টানিছে তার গুন, ভিড়িবে বেহেশ্তি-চরে।
ইমানের পারানি কড়ি আছে যার আয় এ সোনার নায়,
যাবি চল পারের পথিক কলেমার জাহাজ-ঘাটায়।
ফিরদউস হতে ডাকে হুরি-পরি॥
কেঁদে যায় দখিন-হাওয়া ফিরে ফুল-বনের গলি
সিন্ধু-কাফি – ঠুংরি
কেঁদে যায় দখিন-হাওয়া ফিরে ফুল-বনের গলি,
‘ফিরে যাও চপল পথিক’, দুলে কয় কুসুম-কলি।
দুলে দুলে কয় কুসুম কলি॥
ফেলিছে সমীর দীরঘশ্বাস – আসিবে না আর এ মধুমাস,
কহে ফুল, ‘জনম জনম এমনই গিয়াছ ছলি।
জনম জনম গিয়াছ ছলি’॥
কহে বায়, ‘রজনি-ভোরে বাসি ফুল পড়িবে ঝরে’,
কহে ফুল, ‘এমনই করে আমি ফুল-চোরেরে দলি,
এমনই কুসুম-চোরেরে দলি॥’
কাঁদে বায়, ‘নিদাঘ আসে আমি যাই সুদূর বাসে’,
ফোটে ফুল হাসিয়া ভাষে, ‘প্রিয়তম, যেয়ো না চলি।
ওগো প্রিয়তম, যেয়ো না চলি’॥
কেন আসে কেন তারা চলে যায়
খাম্বাজ – মধ্যমান
কেন আসে কেন তারা চলে যায় –
ক্ষণেক তরে॥
কুসুম না ফুটিতে কেন ফুল-মালী
ছিঁড়িয়া সাজি ভরে কানন করে খালি,
কাঁটার স্মৃতি বেঁধে লতার বুকে হায়,
ব্যথা-ভরে॥
ছাড়িয়া স্নেহ-নীড় সুদূর বন-ছায়
বিহগশিশু কেন সহসা উড়ে যায়,
কাঁদে জননি তার ঝরা পালকখানি
বুকে ধরে॥
কেন করুণ সুরে হৃদয়-পুরে
দেশ-সুরাট – একতালা
কেন করুণ সুরে হৃদয়-পুরে
বাজিছে বাঁশরি।
ঘনায় গহন নীরদ সঘন
নয়ন মন ভরি॥
বিজলি চমকে পবন দমকে
পরাণ কাঁপে রে,
বুকের বঁধুরে বুকে বেঁধে ঝুরে
বিধুরা কিশোরী॥
ঘোর ঘনঘটা ছাইল গগন
কাজরি –হোরি-ঠেকা
ঘোর ঘনঘটা ছাইল গগন।
ভুবন গভীর বিষাদ-মগন॥
বারিধারে কাঁদে চারিধার আজি,
শ্বসিয়া শ্বসিয়া ঝুরিছে পবন॥
নাহি রবি-শশী নাহি গ্রহ-তারা,
নিখিল নয়নে শ্রাবণের ধারা,
বিশ্ব ডুবাল গো শোকের প্লাবন॥
চলো মন আনন্দধাম
ভৈরবী ভজন – দাদরা
চলো মন আনন্দধাম!
চলো মন আনন্দধাম রে
চলো আনন্দধাম॥
লীলাবিহার প্রেমলোক
নাই রে সেথা দুঃখ-শোক,
সেথা বিহারে চির-ব্রজবালক
বনশিওয়ালা শ্যাম রে
চলো আনন্দধাম॥
আবাঙ্মনস-গোচরম্ –
নাহি চরাচর নাহি রে ব্যোম,
লীলা-সাথি গ্রহ রবি ও সোম
সংগীত – ওম্ নাম রে
চলো আনন্দধাম॥
ছুঁচোর কীর্তন
ছুঁচোর কীর্তন
কীর্তন গায় ছুচুন্দর,
হুতুম প্যাঁচা বাজায় খোল।
ছাতার পাখি দোহার গায়
গোলেমালে হরিবোল॥
কিচির-মিচির কিচির-কিচ
ইঁদুর বাজায় মন্দিরা,
তানপুরা ওই বাজায় ব্যাং
ওস্তাদের সম্বন্ধীরা।
শালিক বায়স ভক্তদল
হরিবোলের লাগায় গোল॥
হুলো বেড়াল মিয়াঁও ম্যাঁও
করছে শুরু খেয়াল-গান,
ব্যা-এ্যা-এ্যা-এ্যা পুং অজ
মারছে জলদ হলক-তান।
রাসভ গলা ভাঙল তার
ধ্রুপদ গেয়ে খেয়ে ঘোল॥
টপ্পা-গানের ঝাড়ছে তান
চিঁহিঁহিঁচিঁহিঁহিঁ অশ্বরাজ,
ঠুংরি-গানের ঝটকা-তান
মারছে ফড়িং ঝোপের মাঝ।
খাণ্ডারবাণী ধ্রুপদ গায়
বলদ গিয়ে পিঁজরাপোল॥
লেড়ি কুকুর বাউল গায়
পুচ্ছ তুলি উচ্চ মুখ,
ভাটিয়ালি গান শেয়াল গায়
ভীষণ শীতের ভুলতে দুখ।
গাব-গুবাগুব ‘কুক’পাখি
বাজায়, ভুতুম বাজায় ঢোল॥
ধরা গলায় মহিষ গায়
যেন বুড়ো খাঁ সায়েব,
কাবলিওয়ালা বেহাগ গায়
‘মোর মগায়া’খেয়ে শেব।
ভেড়া বলে, ‘কণ্ঠ মোর
গেছে ধরে খেয়ে ওল!’
জন্তুর মাঝে ভাই উট – খিচুড়ি
খিচুড়ি জন্তু
মালবশ্রী – কাওয়ালি
জন্তুর মাঝে ভাই উট – খিচুড়ি!
মদ খেয়ে সৃজিয়াছে স্রষ্টা-শুঁড়ি॥
দো-তালার উঁচু আর তে-তালার ফাঁক –
ঢিমে তে-তলার ফাঁক,
অষ্টাবক্রীয় দশটা বাঁক,
হামা দিয়ে চলে যেন তাড়কা খুড়ি॥
জিরাফের গলা তার ঘোটকিনী মুখ,
আগাগোড়া গোঁজামিল বাঁদুরে ভালুক,
গাড়িকে এ গাড়ি বাবা জুড়িকে জুড়ি॥
লাগিয়াছে দেহে গজ-কচ্ছপ রণ,
কচ্ছপি পিঠ আর গজ-নি চরণ,
আরবের হাজি মিয়াঁ – বাপ রে থুড়ি॥