বোমার ভয়
বোমার ভয়ে বউ, মা, বোন, নেড়রি গেঁড়রি লয়ে
দিগ্বিদিকে পলায় ভীরু মানুষ মৃত্যু ভয়ে!
কোনখানে হায় পলায় মানুষ, মৃত্যু কোথায় নাই?
পলাতকের দল! বলে যাও সে-দেশ কোথায় ভাই?
মানুষ মরে একবার, সে দুবার মরে নাকো,
হায় রে মানুষ! তবু কেন মৃত্যুর ভয় রাখ।
আরেক দেশে পালিয়া তোমার মৃত্যুভয় কি যাবে?
মৃত্যু – ভ্রান্তি দিবানিশি তোমায় ভয় দেখাবে।
না মরিয়া বীরের মতো মৃত্যু আলিঙ্গিয়া,
তিলে তিলে মরে ভীরু যে যন্ত্রণা নিয়া,
সে যাতনার চেয়ে বোমার আগুন স্নিগ্ধ আরও!
মরণ আসে বন্ধু হয়ে, মরতে যদি পার
তেমন মরণ। দেখবে সেদিন সবে,
পৃথ্বী হবে নতুন আবার মৃত্যু-মহোৎসবে।
আল্লাহ্ ভগবানের আমরা যদি আশ্রয় পাই,
সেই সে পরম অভয়াশ্রমে মৃত্যুর ভয় নাই!
যেতে পার তাঁর কাছে ছুটে তুমি প্রবল তৃষ্ণা লয়ে?
তাঁহারে ছুঁইলে ছোঁবে না তোমারে কখনও মৃত্যুভয়ে!
সেখানে যাওয়ার ট্রেন কোন ইস্টিশনে সে পাওয়া যায়?
সে প্ল্যাটফর্ম দেখেছ কি কভু? দেখনিকো তুমি হায়!
যেখানেই তুমি পালাও, মৃত্যু সাথে সাথে দৌড়াবে!
জানিয়াও কেন অকারণে মৃত্যুর ভয়ে খাবি খাবে?
দেখেছি ভীষণ মানুষের স্রোত ভীষণ শাস্তি সয়ে,
চলেছে অজানা অরণ্যে যেন ভীতি-উন্মাদ হয়ে!
পুরুষের রূপে দেখাছি বউমা করে কোণ ঠাসাঠাসি,
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া বাক্স বোঁচকা পোঁটলা রাশি।
যাহারা যাইতে পারিল না, পড়ে রহিল অর্থাভাবে
সঞ্চিত নাই অর্থ, কোথায় ক্ষুধার অন্ন পাবে?
তাহাদের কথা ভাবিল না কেউ, ধরিল না কেহ হাতে,
কেহ বলিল না, ‘মরিতে হয়তো এসো মরি এক সাথে!’
কেহ বলিল না, ‘কেন পলাইব, এসো দল বেঁধে রই,
সংঘবদ্ধ হইয়া আমরা এসো সৈনিক হই।’
ক্ষুদ্র অস্ত্র লয়ে কি করিয়া যুদ্ধ করিছে চীন?
অস্ত্র ধরিতে পারে না, যাহারা অন্তরে বলহীন।
যাহারা নির্যাতিত মানবেরে রক্ষা করিতে চায়,
আকাশ হইতে নেমে আসে, হাতে অস্ত্র তারাই পায়!
বোমার ভয় এ নহে, ইহা ক্লীব ভীরুর মৃত্যুভয়,
ইহারা ধরার বোঝা হয়ে আছে, ইহারা মানুষ নয়।
যে দেশে তাদের জন্ম সে দেশ ছেড়ে এরা পরদেশে,
কেমন করিয়া খায় দায়, মুখ দেখায়, বেড়ায় হেসে?
অর্থের চাকচিক্য দেখায়, হায় রে লজ্জাহীন,
ইহাদেরই শিরে বোমা যেন পড়ে, ইহারা হোক বিলীন!
বোমা দেখেনিকো, শব্দ শোনেনি, শুধু তার নামে প্রেমে
এদের সর্ব অঙ্গ ব্যাকুল হইয়া উঠেছে ঘেমে!
জীবন আর যৌবন যার আছে, সেই সে মৃত্যুহীন,
গোরস্তানের শ্মশানের ভূত যারা ভীরু যারা দীন!
কেন বেঁচে আছে এরা পৃথিবীরে ভারাক্রান্ত করে?
ইহাদেরই শিরে পড়ে যেন যদি বোমা কোনোদিন পড়ে!
নওজোয়ানরা এসো দলে দলে বীর শহিদান সেনা;
তোমরা লভিবে অমর-মৃত্যু, কোনো দিন মরিবে না!
ইতিহাসে আর মানবস্মৃতিতে আছে তাহাদেরই নাম,
যারা সৈনিক, দৈত্যের সাথে করেছিল সংগ্রাম!
যারা ভীরু, তারা কীটের মতন কখন গিয়েছে মরে,
তাদের কি কোনো স্মৃতি আছে, কেউ তাদের কি মনে করে?
ক্ষুদ্র-আত্মা নিষ্প্রাণ এরা, ইহারা গেলেই ভালো,
ভিড় করেছিল নিরাশা-আঁধার, এবার আসিবে আলো!
দেশের জাতির সৈনিক যদি কোনো দিন জয় আনে,
এই আঁধারের জীব যদি ফিরে আসে আলোকের পানে,
ইহাদের কাঁধে লাঙল বাঁধিয়া জমি করাইয়ো চাষ,
তবে যদি হয় চেতনা এদের, হয় যদি ভয় হ্রাস!
চল্লিশ কোটি মানুষ ভারতে, এক কোটি হোক সেনা,
কোনো পরদেশি আসিবে না, কোনো বিদেশিরা রহিবে না!
বিরাট বিপুল দেশ আমাদের, কার এত সেনা আছে,
ভারত জুড়িয়া যু্দ্ধ করিবে? পরাজয় লভিয়াছে,
এই মৃত্যুর ভয় শুধু, এরা রোগে ভুগে পচে মরে,
তবু লভিবে না অমৃত ইহারা মৃত্যুর হাত ধরে!
সংঘবদ্ধ হয়ে থাকা ভাই শ্রেষ্ঠ অস্ত্র ভবে,
এই অস্ত্রেই সর্ব অসুর দানব বিনাশ হবে,
চল্লিশ কোটি মানুষ মারিতে কোথা পাবে গোলাগুলি,
সর্বভয়ের রাক্ষস পশু পালাবে লাঙ্গুল তুলি।
বোমা যদি আসে, দেখে যাব মোরা বোমা সে কেমন চিজ,
তাহারই ধ্বনিতে ধ্বংস হইবে সর্ব ক্লৈব্য-বীজ!
যাহারা জন্ম-সৈনিক, তারা ছুটে এসো দলে দলে,
শক্তি আসিবে পৃথিবী কাঁপিবে আমাদের পদতলে।
আমরা যুঝিয়া মরি যদি সব ভীরুতা হইবে লয়,
পৃথিবীতে শুধু বীর-সেনাদের জয় হোক, হোক জয়।
বড়োদিন
বড়োলোকদের ‘বড়োদিন’ গেল, আমাদের দিন ছোটো,
আমাদের রাত কাটিতে চায় না, ক্ষিদে বলে, ‘নিধে! ওঠো!’
খেটে খুটে শুতে খাটিয়া পাই না, ঘরে নাই ছেঁড়া কাঁথা,
বড়োদের ঘরে কত আসবাব, বালিশ বিছানা পাতা!
অর্ধনগ্ন-নৃত্য করিয়া বড়োদের রাত কাটে,
মোদের রক্ত খেয়ে মশা বাড়ে, গায়ে আরশুলা হাঁটে।
আঁচিলের মতো ছারপোকা লয়ে পাঁচিল ধরিয়া নাচি,
মাল খেয়ে ওরা বেসামাল হয়, মোরা কাশি আর হাঁচি!
নানারূপ খানা খেতেছে, ষণ্ড অণ্ড ভেড়ার টোস্ট,
কুলুকুলু করে আমাদের পেট, যেন ‘হনলুলু কোস্ট’।
চৌরঙ্গিতে বড়োদিন হইয়াছে কী চমৎকার,
গৌরজাতির ক্ষৌরকর্ম করেছে! অমত কার?
মদ খেয়ে বদহজম হইয়া বাঙালির মেয়ে ধরে,
শিক্ষাও পায় শিখ-বাঙালির থাপ্পড় লাথি চড়ে!
এ কি সৈনিক-ধর্ম, এরাই রক্ষী কি এদেশের?
সর্বলোকের ঘৃণ্য ইহারা, কলঙ্ক ব্রিটিশের।
যে সৈনিকের হাত চাহে অসহায় নারী পরশিতে,
চাহে নারীর ধর্ম নিতে,
বীর ব্রিটিশের কামান যে নাই সেই হাত উড়াইতে।
হায় রে বাঙালি, হায় রে বাংলা, ভাত-কাঙালের দেশ,
মারের বদলে মার দেয় নাকো, তারা বলদ ও মেষ!
মান বাঁচাইতে প্রাণ দিতে নারে, পলাইয়া যায় ঘরে,
ঊর্ধ্বের মার আগুন আসিছে সেই ভীরুদের তরে!
পলাইয়া এরা বাঁচিবে না কেউ! হাড় খাবে, মাস খাবে,
শেষে ইহাদের চামড়ায় দেখো ডুগডুগিও বাজাবে!
পথের মাতাল মাতা-ভগ্নীর সম্মান নেয় কেড়ে,
শাস্তি না দিয়ে মাতালের, এরা পলায় সে পথ ছেড়ে।
কোন ফিল্মের দর্শক ওরা, ঝোপের ইঁদুর বেজি,
ইহাদের চেয়ে ঘরের কুকুর, সেও কত বেশি তেজি!
মানবজাতির ঘৃণ্য ভীরুরা, কাঁপে মৃত্যুর ডরে,
প্রাণ লয়ে ঢুকে খোপের ভিতর, দিনে দশবার মরে!
বড়োদিন দেখে ছোটো মন হায় হতে চাহে নাকো বড়ো,
হ্যাট কোট দেখে পথ ছেড়ে দেয় ভয়ে হয়ে জড়সড়!
পচে মরে হায় মানুষ, হায় রে পঁচিশে ডিসেম্বর!
কত সম্মান দিতেছে প্রেমিক খ্রিস্টে ধরার নর!
ধরেছিলে কোলে ভীরু মানুষের প্রতীক কি মেষশিশু?
আজ মানুষের দুর্গতি দেখে কোথায় কাঁদিছ জিশু!