ভাঙার গান : কারার ঐ লৌহ-কবাট
[গান]
১
কারার ঐ লৌহ-কবাট
ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট
রক্ত-জমাট
শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ!
ধ্বংস-নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
২
গাজনের বাজনা বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা
মুক্ত-স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি
ভগবান পরবে ফাঁসি?
সর্বনাশী
শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?
৩
ওরে ও পাগলা ভোলা!
দে রে দে প্রলয়-দোলা
গারদগুলা
জোরসে ধরে হেঁচকা টানে!
মার হাঁক হায়দরি হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক
মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে!
৪
নাচে ঐ কাল-বোশেখি,
কাটবি কাল বসে কি?
দে রে দেখি
ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি!
লাথি মার, ভাঙ রে তালা!
যত সব বন্দি-শালায়—
আগুন জ্বালা,
আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি।
মিলন-গান
[গান]
ভাই হয়ে ভাই চিনবি আবার গাইব কি আর এমন গান।
(সেদিন) দুয়ার ভেঙে আসবে জোয়ার মরা গাঙে ডাকবে বান॥
(তোরা) স্বার্থ-পিশাচ যেমন কুকুর তেমনি মুগুর পাস রে মান।
(তাই) কলজে চুঁয়ে গলছে রক্ত দলছে পায়ে ডলছে কান॥
(যত) মাদি তোরা বাঁদি-বাচ্চা দাস-মহলের খাস গোলাম।
(হায়) মাকে খুঁজিস? চাকরানি সে, জেলখানাতে ভানছে ধান॥
(মা’র) বন্ধ ঘরে কেঁদে কেঁদে অন্ধ হলো দুই নয়ান।
(তোরা) শুনতে পেয়েও শুনলিনে তা মাতৃহন্তা কুসন্তান॥
(ওরে) তোরা করিস লাঠালাঠি (আর) সিন্ধু-ডাকাত লুঠছে ধান।
(তাই) গোবর-গাদা মাথায় তোদের কাঁঠাল ভেঙে খায় শেয়ান॥
(ছিলি) সিংহ ব্যাঘ্র, হিংসা-যুদ্ধে আজকে এমনি ক্ষিণ্ণপ্রাণ।
(তোদের) মুখের গ্রাস ঐ গিলছে শিয়াল তোমরা শুয়ে নিচ্ছ ঘ্রাণ॥
(তোরা) কলুর বলদ টানিস ঘানি গলদ কোথায় নাইকো জ্ঞান।
(শুধু) পড়ছ কেতাব, নিচ্ছ খেতাব, নিমক-হারাম বে-ঈমান॥
(তোরা) বাঁদর ডেকে মানলি সালিশ, ভাইকে দিতে ফাটল প্রাণ।
(এখন) সালিশ নিজেই ‘খা ডালা সব’ বোকা তোদের এই দেখান॥
(তোরা) পথের কুকুর দু’কান-কাটা-মান-অপমান নাইকো জ্ঞান।
(তাই) যে জুতোতে মারছে গুঁতো করছ তাতেই তৈল দান॥
(তোরা) নাক কেটে নিজ পথের যাত্রা ভঙ্গ করিস বুদ্ধিমান।
(তোদের) কে যে ভাল কে যে মন্দ সব শিয়ালই এক সমান॥
(শুনি) আপন ভিটেয় কুকুর রাজা, তার চেয়েও হীন তোদের প্রাণ।
(তাই) তোদের দেশ এই হিন্দুস্থানে নাই তোদেরই বিন্দু স্থান॥
(তোদের) হাড় খেয়েছে, মাস খেয়েছে, (এখন) চামড়াতে দেয় হেঁচকা টান
(আজ) বিশ্ব-ভুবন ডুকরে ওঠে দেখে তোদের অসম্মান॥
(আজ) সাধে ভারত-বিধাতা কি চোখ বেঁধে ঐ মুখ লুকান।
(তোরা) বিশ্বে যে তাঁর রাখিস নে ঠাঁই কানা গরুর ভিন্ বাথান॥
(তোরা) করলি কেবল অহরহ নীচ কলহের গরল পান।
(আজো) বুঝলি না হায় নাড়ি-ছেঁড়া মায়ের পেটের ভায়ের টান॥
(ঐ) বিশ্ব ছিঁড়ে আনতে পারি, পাই যদি ভাই তোদের প্রাণ।
(তোরা) মেঘ-বাদলের বজ্রবিষাণ (আর) ঝড়-তুফানের লাল নিশান॥
মোহান্তের মোহ-অন্তের গান
[গান]
জাগো আজ দণ্ড-হাতে চণ্ড বঙ্গবাসী।
ডুবাল পাপ-চণ্ডাল তোদের বাংলা দেশের কাশী।
জাগো বঙ্গবাসী॥
তোরা হত্যা দিতিস যাঁর থানে, আজ সেই দেবতাই কেঁদে
ওরে তোদের দ্বারেই হত্যা দিয়ে মাগেন সহায় আপনি আসি।
জাগো বঙ্গবাসী॥
মোহের যার নাইকো অন্ত
পূজারী সেই মোহান্ত,
মা-বোনে সর্বস্বান্ত করছে বেদী-মূলে।
তোদেরে পূজার প্রসাদ বলে খাওয়ায় পাপ-পুঁজ সে গুলে।
তোরা তীর্থে গিয়ে আসিস পাপ-ব্যভিচার রাশি রাশি।
জাগো বঙ্গবাসী॥
এইসব ধর্ম-ঘাগী
দেব্তায় করছে দাগী,
মুখে কয় সর্বত্যাগী ভোগ-নরকে বসে।
সে যে পাপের ঘণ্টা বাজায় পাপী দেব-দেউলে পশে।
আর ভক্ত তোরা পূজিস তারেই যোগাস খোরাক সেবা-দাসী!
জাগো বঙ্গবাসী॥
দিয়ে নিজ রক্তবিন্দু
ভরালি পাপের সিন্ধু—
ডুবলি তায় ডুবলি হিন্দু ডুবলি দেব্তারে।
দেখো ভোগের বিষ্ঠা পুড়ছে তোদের বেদীর ধূপধারে।
পূজারীর কমণ্ডলুর গঙ্গা-জলে মদের ফেনা উঠছে ভাসি।
জাগো বঙ্গবাসী॥
দিতে যায় পূজা-আরতি
সতীত্ব হারায় সতী,
পুণ্য-খাতায় ক্ষতি লেখায় ভক্তি দিয়ে,
তার ভোগ-মহলের জ্বলছে প্রদীপ তোদের পুণ্য-ঘিয়ে।
তোদের ফাঁকা ভক্তির ভণ্ডামিতে মহাদেব আজ ঘোড়ার ঘাসী।
জাগো বঙ্গবাসী॥
তোরা সব শক্তিশালী
বুকে নয়, মুখে খালি!
বেড়ালকে বাছতে দিলি মাছের কাঁটা যে রে।
তোরা পূজারীকে করিস পূজা পূজার ঠাকুর ছেড়ে।
মার অসুর শোধরা সে ভুল, আদেশ দেন মা সর্বানাসী।
‘জয় তারকেশ্বর’ বলে পরবি রে নয় গলায় ফাঁসি।
জাগো বঙ্গবাসী॥
ল্যাবেন্ডিশ বাহিনীর বিজাতীয় সঙ্গীত
ল্যাবেন্ডিশ* বাহিনীর বিজাতীয় সঙ্গীত
(*কলকাতার এক জাতীয় সিপাহী)
কোরাস্: কে বলে মোদেরে ল্যাডাগ্যাপচার? আমরা সিভিল গাড়,
অরাজক এই ভারত-মাঠে হে আমরা উদ্মো ষাঁড়॥
মোরা লাঙল জোয়াল দড়াদড়ি-ছাড়া,
বড় সুখে তাই দিই শিং-নাড়া,
অসহ-যোগীও করিবে না তাড়া রে—
ওরে ভয় নাই, ওরা বৈষ্ণব বাঘ, খাবে না মোদের হাড়!
চলো ব্যাং-বীর, বলো ঠ্যাং নেড়ে জোর, ছেডেডে ডেডেং হার্র্!
কোরাস্: কে বলে ইত্যাদি—
মোরা গলদঘর্ম যদিও গলিয়া,
বড় বেজুত করেছে লেজুড় ডলিয়া,
তবু গলদ করো না বলদ বলিয়া হে,
মোরা বড় দরকারি সরকারি গরু, তরকারি নহি তার!
তবে গতিক দেখিয়া অধিক না গিয়া সটান পগার পার!
কোরাস্: কে বলে ইত্যাদি—
আজ গোবরগণেশ গোবরমন্ত
ল্যাজে ও গোবরে খিঁচেন দন্ত,
তবু করুণার নাহিকো অন্ত হে,
যত মামাদের কড়ি ধামা-ধরে দিয়া আমাদেরি ভাঙে ঘাড়!
আর বাবাদেরে বেঁধে ঠ্যাঙাতে মোরাই কেটে দি বাঁশের ঝাড়।
কোরাস্: কে বলে ইত্যাদি—
হয়ে ইভিলের গুরু ডেভিল পশুর—
সিভিল-বাহিনী, কি এত কসুর
করেছি মাইরি? বলো তো শ্বশুর হে!
ঐ রাঙামুখে বাবা অন্ন দি তুলি নিজে খাই জোলো মাড়,
তবু সেলাম ঠুকিতে মলাম বাবা গো বক্র মাজা ও ঘাড়!
কোরাস্: কে বলে ইত্যাদি—
বহে কালাতে ধলাতে গঙ্গা-যমুনা,
আমরা তাহারি দিব্যি নমুনা,
এ-রীতি পিরীতি বুঝিবে কভু না হে,
তাই কালামুখ প্রেমে আলা করি হাঁকি— ‘তাড়্রে নেটিভ্ তাড়্’!
তবে কোপন-স্বভাব দেখিলে অমনি গোপন খাম্বা-আড়!
কোরাস্: কে বলে ইত্যাদি—
এবে কাঁপিবে মেদিনী শত উৎপাতে
চিৎপটাং সে কত ‘ফুট্পাথে’
হবে আমাদেরি ভীম কোঁৎকাতে হে!
তবে পরোয়া কি দাদা? ক্যাঁকড়ার সম নিসপিস নাড়ো দাঁড়,
যদি নিশ্চল হাতে পিস্তল কাঁপে তবু গোঁফে দাও চাড়।
কোরাস্: কে বলে ইত্যাদি—
বাবা! যদিও এ-দেহ ঝুনো ঠনঠন
তবু লোকে ভাবে ঠুঁটো পল্টন।
আরে ঘোড়া নাই? বাস্, পায়ে হন্টন হে!
বাজে করতাল—আজ হরতাল। ডাকে আত্মা যে খাঁচা ছাড়্!
ওরে ‘ওয়ান্ পেস্ স্টেপ্ ফরওয়ার্ড মার্চ, থুড়ি থুড়ি ব্যাক্ওয়ার্ড্।’