তূর্য-নিনাদ
কোরাস : (আজ) ভারত-ভাগ্য-বিধাতার বুকে গুরু-লাঞ্ছনা-পাষাণ-ভার,
আর্ত-নিনাদে হাঁকিছে নকিব, – কে করে মুশকিল আসান তার?
মন্দির আজি বন্দির ঘানি,
নির্জিত ভীত সত্য, বদ্ধ রুদ্ধ স্বাধীন আত্মার বাণী,
সন্ধি-মহলে ফন্দির ফাঁদ, গভীর আন্ধি-অন্ধকার!
হাঁকিছে নকিব – হে মহারুদ্র চূর্ণ করো এ ভণ্ডাগার॥
রক্তে-মদের বিষ পান করি
আর্ত মানব; স্রষ্টা কাতর সৃষ্টির তাঁর নির্বাণ স্মরি!
ক্রন্দন-ঘন বিশ্বে স্বনিছে প্রলয়-ঘটার হুহুংকার, –
হাঁকিছে নকিব – অভয়-দেবতা, এ মহাপাথার করহ পার॥
কোলাহল-ঘাঁটা হলাহল-রাশি
কে নীলকণ্ঠ গ্রাসিবে রে আজ দেবতার মাঝে দেবতা সে আসি?
উরিবে কখন ইন্দিরা, ক্রোড়ে শান্তির ঝারি সুধার ভাঁড়?
হাঁকিছে নকিব – আনো ব্যথা-ক্লেশ-মন্থন-ধন অমৃত-ধার॥
কণ্ঠ ক্লিষ্ট ক্রন্দন-ঘাতে,
অমৃত-অধিপ নর-নারায়ণ দারুময় ঘন মনোবেদনাতে।
দশভুজে গলে শৃঙ্খল-ভার দশপ্রহরণধারিণী মার –
হাঁকিছে নকিব – ‘আবিরাবির্ম এধি’ হে নব যুগাবতার!
মৃত্যু-আহত মৃত্যুঞ্জয়,
কে শোনাবে তাঁরে চেতন-মন্ত্র? কে গাহিবে জয় জীবনের জয়?
নয়নের নীরে কে ডুবাবে বলো বলদর্পীর অহংকার? –
হাঁকিছে নকিব – সে দিন বিশ্বে খুলিবে আরেক তোরণ-দ্বার॥
পাগল পথিক
এ কোন্ পাগল পথিক ছুটে এল বন্দিনী মা-র আঙিনায়।
ত্রিশ কোটি ভাই মরণ-হরণ গান গেয়ে তাঁর সঙ্গে যায়॥
অধীন দেশের বাঁধন-বেদন
কে এল রে করতে ছেদন?
শিকল-দেবীর বেদির বুকে মুক্তি-শঙ্খ কে বাজায়॥
মরা মায়ের লাশ কাঁধে ওই অভিমানী ভায়ে ভায়ে
বুক-ভরা আজ কাঁদন কেঁদে আনল মরণ-পারের মায়ে।
পণ করেছে এবার সবাই,
পর-দ্বারে আর যাব না ভাই!
মুক্তি সে তো নিজের প্রাণে, নাই ভিখারির প্রার্থনায়॥
শাশ্বত যে সত্য তারই ভুবন ভরে বাজল ভেরি,
অসত্য আজ নিজের বিষেই মরল ও তার নাইকো দেরি।
হিংসুকে নয়, মানুষ হয়ে
আয় রে, সময় যায় যে বয়ে!
মরার মতন মরতে, ওরে মরণভীতু! ক-জন পায়!
ইসরাফিলের শিঙা বাজে আজকে ঈশান-বিষাণ সাথে,
প্রলয়-রাগে নয় রে এবার ভৈরবীতে দেশ জাগাতে।
পথের বাধা স্নেহের মায়ায়
পায় দলে আয় পায় দলে আয়!
রোদন কীসের ? – আজ যে বোধন!
বাজিয়ে বিষাণ উড়িয়ে নিশান আয় রে আয়॥
ফাতেহা-ই-দোয়াজ্-দহম্ [আবির্ভাব]
১
নাই তা জ
তাই লা জ?
ওরে মুসলিম, খর্জুর-শিষে তোরা সাজ!
করে তসলিম হর কুর্নিশে শোর আওয়াজ
শোন কোন মুজ্দা সে উচ্চারে হেরা আজ
ধরা-মাঝ!
উরজ-য়্যামেন নজ্দ হেজাজ তাহামা ইরাক শাম
মেশের ওমান তিহারান স্মরি কাহার বিরাট নাম।
পড়ে ‘সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম।
চলে আঞ্জাম
দোলে তাঞ্জাম
খোলে হুর-পরি মরি ফিরদৌসের হাম্মাম !
টলে কাঁখের কলসে কওসর ভর , হাতে আব-জমজম জাম ।
শোন দামাম কামান তামাম সামান নির্ঘোষি কার নাম
পড়ে ‘সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লানম।’
২
মস্ তান !
ব্যস থাম্!
দেখ মশ্গুল আজি শিস্তান-বোস্তান ,
তেগ গর্দানে ধরি দারোয়ান রোস্তাম ।
বাজে কাহারবা বাজা, গুলজার গুলশানগুলশান : পুষ্প-বাটিকা।
গুলফাম !
দক্ষিণে দোলে আরবি দরিয়া খুশিতে সে বাগে-বাগ ,
পশ্চিমে নীলা‘লোহিতে’র খুন-জোশিতে রে লাগে আগ,
মরু সাহারা গোবিতে সব্জার জাগে দাগ!
নূরে কুর্শির
পুরে ‘তূর’ -শির,
দূরে ঘূর্ণির তালে সুর বুনে হুরি ফুর্তির,
ঝুরে সুর্খির ঘন লালি উষ্ণীষে ইরানিদূরানি তুর্কির!
আজ বেদুইন তার ছেড়ে দিয়ে ঘোড়া ছুড়ে ফেলে বল্লম
পড়ে ‘সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাললাম।’
৩
‘সাবে ঈন’
তাবে ঈন
হয়ে চিল্লায় জোর ‘ওই ওই নাবে দীন !
ভয়ে ভূমি চুমে ‘লাত্ মানাত’ -এর ওয়ারেশিন ।
রোয়ে ওয্যা-হোবলইবলিসখারেজিন , –
কাঁপে জীন্ !
জেদ্দার পূবে মক্কা মদিনা চৌদিকে পর্বত,
তারই মাঝে ‘কাবা’ আল্লার ঘর দুলে আজ হর ওক্ত্ ,
ঘন উথলে অদূরে ‘জম-জম’ শরবৎ!
পানি কওসর,
মণি জওহর
আনি ‘জিবরাইল’ আজ হরদম দানে গওহর ,
টানি মালিক-উল-মৌতজিঞ্জির – বাঁধে মৃত্যুর দ্বার লৌহর।
হানি বরষা সহসা ‘মিকাইল’ করে ঊষর আরবে ভিঙা ,
বাজে নব সৃষ্টির উল্লাসে ঘন ‘ইসরাফিল’ -এর শিঙা!
৪
জন্ জাল
কঙ্ কাল
ভেদি, ঘন জাল মেকি গণ্ডির পঞ্জার
ছেদি, মরুভূতে একী শক্তির সঞ্চার!
বেদি পঞ্জরে রণে সত্যের ডঙ্কার
ওংকার!
শঙ্কারে করি লঙ্কার পার কার ধনু-টংকার
হুংকারে ওরে সাচ্চা-সরোদে শাশ্বত ঝংকার?
ভূমা- নন্দে রে সব টুটেছে অহংকার!
মর- মর্মরে
নর- ধর্ম রে
বড়ো কর্মরে দিল ইমানের জোর বর্ম রে,
ভর্ দিল্ জান্ – পেয়ে শান্তি নিখিল ফিরদৌসের হর্ম্য রে!
রণে তাই তো বিশ্ব-বয়তুল্লাতে মন্ত্র ও জয়নাদ –
‘ওয়ে মার্হাবা ওয়ে মার্হাবা এয়্ সর্ওয়ারে কায়েনাত !’
৫
শর- ওয়ান
দর্- ওয়ান
আজি বান্দা যে ফেরউন শাদ্দাদ নমরুদ মারোয়ান ;
তাজি বোর্রাক্ হাঁকে আশমানে পর্ওয়ান, –
ও যে বিশ্বের চির সাচ্চারই বোর্হান –
‘কোর-আন’!
‘কোন্ জাদুমণি এলি ওরে’ – বলি রোয়ে মাতা আমিনায়
খোদার হবিবে বুকে চাপি, আহা, বেঁচে আজ স্বামী নাই!
দূরে আব্দুল্লার রুহ্ কাঁদে, “ওরে আমিনারে গমি নাই –
দেখো সতী তব কোলে কোন্ চাঁদ, সব ভর-পুর ‘কমি’ নাই।’
‘এয়্ ফর্ জন্দ’ –
হায় হর্দম্
ধায় দাদা মোত্লেব কাঁদি, – গায়ে ধুলা কর্দম!
‘ভাই। কোথা তুই?’ বলি বাচ্চারে কোলে কাঁদিছে হাম্জা দুর্দম!
ওই দিক্হারা দিক্পার হতে জোর-শোর আসে, ভাসে ‘কালাম’ –
‘এয় ‘শাম্সোজ্জোহা বদরোদ্দোজা কামারোজ্জমাঁ’ সালাম!’