ছোট্ট বোনটি লক্ষ্মী
ভো ‘জটায়ু পক্ষী’!
য়্যাব্বড়ো তিন ছত্র
পেয়েছি তোর পত্র।
দিইনি চিঠি আগে,
তাইতে কি বোন রাগে?
হচ্ছে যে তোর কষ্ট
বুঝতেছি খুব পষ্ট।
তাইতে সদ্য সদ্য
লিখতেছি এই পদ্য।
দেখলি কী তোর ভাগ্যি!
থামবে এবার রাগ কি?
এবার হতে দিব্যি
এমনি করে লিখবি!
বুঝলি কী রে দুষ্টু
কী যে হলুম তুষ্টু
পেয়ে তোর ওই পত্র –
যদিও তিন ছত্র!
যদিও তোর অক্ষর
হাত পা যেন যক্ষর,
পেটটা কারুর চিপসে,
পিঠটে কারুর ঢিপসে,
ঠ্যাংটা কারুর লম্বা,
কেউ বা দেখতে রম্ভা!
কেউ যেন ঠিক থাম্বা,
কেউ বা ডাকেন হাম্বা!
থুতনো কারুর উচ্চে,
কেউ বা ঝুলেন পুচ্ছে!
এক একটা যা বানান
হাঁ করে কী জানান!
কারুর গা ঠিক উচ্ছের,
লিখলি এমনি গুচ্ছের!
না বোন, লক্ষ্মী, বুঝছ?
করব না আর কুচ্ছো!
নইলে দিয়ে লম্ফ
আনবি ভূমিকম্প!
কে বলে যে তুচ্ছ!
ওই যে আঙুর গুচ্ছ!
শিখিয়ে দিল কোন্ ঝি
নামটি যে তোর জন্টি?
লিখবে এবার লক্ষ্মী
নাম ‘জটায়ু পক্ষী!’
শিগগির আমি যাচ্চি,
তুই বুলি আর আচ্ছি
রাখবি শিখে সব গান
নয় ঠেঙিয়ে – অজ্ঞান!
এখনও কি আচ্ছু
খাচ্ছে জ্বরে খাপচু?
ভাঙেনি বউদির ঠ্যাংটা।
রাখালু কি ন্যাংটা?
বলিস তাকে, রাখালী!
সুখে রাখুন মা কালী!
বৌদিরে কোস দোত্তি
ধরবে এবার সত্যি।
গপাস করে গিলবে
য়্যাব্বড়ো দাঁত হিলবে!
মা মাসিমায় পেন্নাম
এখান হতেই করলাম!
স্নেহাশিস এক বস্তা,
পাঠাই, তোরা লস তা!
সাঙ্গ পদ্য সবিটা?
ইতি। তোদের কবি-দা।
ঝিঙে ফুল
ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল।
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল –
ঝিঙে ফুল।
গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলো দুল –
ঝিঙে ফুল॥
পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলাশেষ
পরি জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
করে তোলো মশগুল –
ঝিঙে ফুল॥
শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে,
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুকুরে।
প্রজাপতি ডেকে যায় –
‘বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়!’
আশমানে তারা চায় –
‘চলে আয় এ অকূল!’
ঝিঙে ফুল॥
তুমি বলো – ‘আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মায়,
চাই না ও অলকায় –
ভালো এই পথ-ভুল!’
ঝিঙে ফুল॥
ঠ্যাং-ফুলি
হো-হো-হো উররো হো-হো!
হো-হো-হো উররো হো-হো
উররো হো-হো
বাস কী মজা!
কে শুয়ে চুপ সে ভুঁয়ে,
নারছে হাতে পাশ কী সোজা!
হো-বাবা! ঠ্যাং ফুলো যে!
হাসে জোর ব্যাংগুলো সে
ড্যাং তুলো তার
ঠ্যাংটি দেখে!
ন্যাং ন্যাং য়্যাগগোদা ঠ্যাং
আঁতকে ওঠায় ডানপিটেকে!
এক ঠ্যাং তালপাতা তার
যেন বাঁট হালকা ছাতার!
আর পাটা তার
ভিটরে ডাগর!
যেন বাপ! গোবদা গো-সাপ
পেট-ফুলো হুস এক অজাগর!
মোদোটার পিসশাশুড়ি
গোদ-ঠ্যাং চিপসে বুড়ি
বিশ্ব জুড়ি
খিসসা যাহার!
ঠে-ঠে ঠ্যাং নাক ডেঙা ডেং
এই মেয়ে কি শিষ্যা তাহার?
হাদে দেখ আসছে তেড়ে
গোদা-ঠ্যাং ছাঁতসে নেড়ে,
হাসছে বেড়ে
বউদি দেখে!
অ ফুলি! তুই যে শুলি
দ্যাখ না গিয়ে চৌদিকে কে!
বটু তুই জোর দে ভোঁ দৌড়,
রাখালে! ভাঙবে গোঁ তোর
নাদনা গুঁতোর
ভিটিম ভাটিম!
ধুমাধুম তাল ধুমাধুম
পৃষ্ঠে, – মাথায় চাটিম চাটিম!
‘ইতু’ মুখ ভ্যাংচে বলে –
গোদা ঠ্যাং ন্যাংচে চলে
ব্যাং ছা যেন
ইড়িং বিড়িং!
রাগে ওর ঠ্যাং নড়ে জোর
য়্যাদ্দেখেছিস – তিড়িং তিড়িং!
মলিনা! অ খুকুনি!
মা গো! কী ধুকপুকুনি
হাড়-শুগুনি
ভয়-তরাসে!
দেখে ইস ভয়েই মরিস
ন্যাংনুলোটার পাঁইতারাকে।
গোদা-ঠ্যাং পুঁচকে মেয়ে
আসে জোর উঁচকে ধেয়ে
কুঁচকে কপাল,
ইস কী রগড়!
লেলিয়ে দে ঢেলিয়ে!
ফোঁস করে ফের! বিষ কী জবর!
ইন্দু! দৌড়ে যা না!
হাসি, তুই বগ দেখা না!
দগ্ধে না!
তোল তাতিয়ে!
রেণু! বাস, রেগেই ঠ্যাঙাস,
বউদি আসুন বোলতা নিয়ে!
আর না খাপচি খেলো!
ওলো এ আচ্ছি যে লো,
নাচছি তো খুব
ঠ্যাং নিয়ে ওর!
ব্যাচারির হ্যাঁস-ফ্যাসানির
শেষ নেই, মুখ ভ্যাংচিয়ে জোর!
ধ্যাত! পা পিছলে যে সে
পড়ে তার বিষ লেগেছে
ইস! পেকেছে
বিষ-ফোঁড়া এক!
সে ব্যথায় ঠ্যাং ফুলে তাই
ঢাক হল পা-র পিঠ জোড়া দেখ!
আচ্ছু! সত্যি সে শোন
কারুর এক রত্তি সে বোন,
দোষ নেই এতে
দোষ নিয়ো না!
আগে তোর ঠ্যাং ফুলে জোর,
তারপরে না দস্যিপনা!
আয় ভাই আর না আড়ি,
ভাব কর কান্না ছাড়ি,
ঘাড় না নাড়ি,
কসনে ‘উহুঁ’!
লক্ষ্মী! ধ্যাত, শোক কী?
ছিঁচ-কাঁদুনে হসনে হুঁ হুঁ!
উষাদের ঘর যাবিনে?
লাগে তোর লজ্জা দিনে?
বজ্জাতি নে
রাখ তুলে লো!
কেন? ঠ্যাং তেড়েং বেড়েং?
হাসবে লোকে? বয়েই গেল!
দিদির বে-তে খোকা
‘সাত ভাই চম্পা জাগো’ –
পারুলদি ডাকল, না গো?
একী ভাই, কাঁদচ? – মা গো
কী যে কয় – আরে দুত্তুর!
পারায়ে সপ্ত-সাগর
এসেছে সেই চেনা-বর?
কাহিনির দেশেতে ঘর
তোর সেই রাজপুত্তুর?
মনে হয়, মণ্ডা মেঠাই
খেয়ে জোর আয়েশ মিটাই! –
ভালো ছাই লগাছে না ভাই,
যাবি তুই একেলাটি!
দিদি, তুই সেথায় গিয়ে
যদি ভাই যাস ঘুমিয়ে,
জাগাব পরশ দিয়ে
রেখে যাস সোনার কাঠি।
পিলে-পটকা
উটমুখো সে সুঁটকো হাশিম,
পেট যেন ঠিক ভুঁটকো কাছিম!
চুলগুলো সব বাবুই দড়ি –
ঘুসকো জ্বরের কাবুয় পড়ি!
তিন-কোনা ইয়া মস্ত মাথা,
ফ্যাচকা-চোখো; হস্ত? হাঁ তা
ঠিক গরিলা, লোবনে ঢ্যাঙা!
নিটপিটে ঠ্যাং সজনে ঠ্যাঙা!
গাইতি-দেঁতো, উঁচকে কপাল
আঁতকে ওঠেন পুঁচকে গোপাল!
নাক খাঁদা ঠিক চামচিকেটি!
আর হাসি? দাঁত খামচি সেটি!
পাঁচের মতন থুতনো ব্যাঁকা!
রগঢিলে, হুঁ ভূতনো ন্যাকা!
কান দুটো টান – ঠিক সে কুলো!
তোবড়ানো গাল, টিকটা ছুলো!
বগলা প্রমাণ ঘাড়টি সরু,
চেঁচান যেন ষাঁড় কী গোরু!
চলেন গিজাং উরর কোলা ব্যাং,
তালপাতা তাঁর ক্ষুর-ওলা ঠ্যাং!
বদরাগি তায় এক-খেয়ালি
বাস রে! খেঁকি খ্যাঁক-শেয়ালি!
ফ্যাঁচকা-মাতু, ছিঁচকাঁদুনে,
কয় লোকে তাই মিচকা টুনে!
জগন্নাথী ঠুঁটো নুলো,
লোম গায়ে ঠিক খুঁটোগুলো!
ল্যাবেন্ডিসি নড়বড়ে চাল,
তুবড়ি মুখে চড়বড়ে গাল!
গুজুর-ঘুণে, দেড়-পাঁজুরে,
ল্যাডাগ্যাপচার, ন্যাড়-নেজুড়ে!
বসেন সে হাড়-ভাঙা ‘দ’,
চেহারা দেখেই সব মামা ‘থ’!
গিরগিটে তার ক্যাঁকলেসে ঢং
দেখলে কবে, ‘ধেত, এ যে সং!’
খ্যাঙরা-কাটি আঙলাগুলো,
কুঁদিলে শ্রীমুখ বাংলা চুলো!
পেটফুলো ইয়া মস্ত পিলে,
দৈবাতে তায় হস্ত দিলে
জোর চটিতং, বিটকেলে চাঁই!
ইঁট খাবে নাকো সিঁটকেলে ভাই!
নাক বেয়ে তার ঝরচে সিয়ান,
ময়রা যেমন করছে ভিয়ান!
স্বপন দেখেন হালকা নিঁদে –
কুইনাইন আর কালকাসিঁদে!
বদন সদাই তোলো হাঁড়ি,
গুড়ামুড়ি খান ষোলো আড়ি!
ঠোকরে সবাই ন্যাড়া মাথায় –
শিলাবিষ্টি ছেঁড়া ছাতায়!
রাক্ষুসে ভাত গিলতে পারে
বাপ রে, বিড়াল ডিঙতে নারে!
হন না ভুলেও ঘরের বাহির,
কাঁথার ভিতর জ্বরের জাহির!
পড়বে কি আর, দূর ভূত ছাই,
ওষুধ খেতেই ফুরসত নাই!
বুঝলে? যত মোটকা মিলে
বাগাও দেখি পটকা পিলে!
বাজবে পেটে তাল ভটাভট
নাক ধিনাধিন গাল ফটাফট!
ঢাকডুবাডুব ইড়িং-বিড়িং
নাচবে ফড়িং তিড়িং তিড়িং!
চুপসো গালে গাব গুবাগুব
গুপি-যন্তর বাজবে বাঃ খুব!
দিব্যি বসে মারবে মাছি,
কাশবে এবং হাঁচবে হাঁচি!
কিলবিলিয়ে দুটো ঠ্যাং
নড়বে যেমন ঠুঁটো ব্যাং!!
প্রভাতি
ভোর হলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে
জুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোটরে!
খুকুমণি ওঠো রে!
রবি মামা
দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ওই,
দারোয়ান
গায় গান
শোন ঐ, রামা হৈ!’
ত্যাজি নীড়
করে ভিড়
ওড়ে পাখি আকাশে,
এন্তার
গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে।