বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

ছায়ানট – কাজী নজরুল ইসলাম

Chayanot by Kazi Nazrul Islam

ছলকুমারী

কত ছল করে সে বারে বারে দেখতে আসে আমায়।
কত বিনা-কাজের কাজের ছলে চরণ দুটি
আমার দোরেই থামায়।

জানলা-আড়ে চিকের পাশে
দাঁড়ায় এসে কীসের আশে,
আমায় দেখেই সলাজ ত্রাসে
অনামিকায় জড়িয়ে আঁচল গাল দুটিকে ঘামায়।

সবাই যখন ঘুমে মগন দুরুদুরু বুকে তখন
আমায় চুপে চুপে
দেখতে এসেই মল বাজিয়ে দৌড়ে পলায়,
রং খেলিয়ে চিবুক গালের কূপে!
দোর দিয়ে মোর জলকে চলে
কাঁকন হানে কলস-গলে!
অমনি চোখাচোখি হলে
চমকে ভুঁয়ে নখটি ফোটায়, চোখ দুটিকে নামায়।

সইরা হাসে দেখে তাহার দোর দিয়ে মোর
নিতুই নিতুই কাজ-অকাজে হাঁটা,
করবে কী ও? রোজ যে হারায় আমার দোরেই
শিথিল বেণির দুষ্টু মাথার কাঁটা!

একে ওকে ডাকার ভানে
আনমনা মোর মনটি টানে,
কী যে কথা সেই তা জানে
ছল-কুমারী নানান ছলে আমারে সে জানায়।

পিঠ ফিরিয়ে আমার পানে দাঁড়ায় দূরে
উদাস নয়ান যখন এলোকেশে,
জানি, তখন মনে মনে আমার কথাই ভাবতেছে সে,
মরেছে সে আমায় ভালোবেসে!

বই-হাতে সে ঘরের কোণে
জানি আমার বাঁশিই শোনে,
ডাকলে রোষে আমার পানে,
নয়না হেনেই রক্তকমল-কুঁড়ির সম চিবুকটি তার নামায়।

দহনমালা

হায় অভাগি! আমায় দেবে তোমার মোহন মালা?
বদল দিয়ে মালা, নেবে আমার দহন-জ্বালা?
কোন ঘরে আজ প্রদীপ জ্বেলে
ঘরছাড়াকে সাধতে এলে
গগনঘন শান্তি মেলে, হায়!
দু-হাত পুরে আনলে ও কি সোহাগ-ক্ষীরের থালা
আহা দুখের বরণ ডালা?
পথহারা এই লক্ষ্মীছাড়ার
পথের ব্যথা পারবে নিতে? করবে বহন, বালা?

লক্ষ্মীমণি! তোমার দিকে চাইতে আমি নারি,
দু-চোখ আমার নয়ন জলে পুরে,
বুক ফেটে যায় তবু এ-হার ছিঁড়তে নাহি পারি,
ব্যথাও দিতে নারি, – নারী! তাই যেতে চাই দূরে।

ডাকতে তোমায় প্রিয়তমা
দু-হাত জুড়ে চাইছি ক্ষমা,
চাইছি ক্ষমা চাইছি ক্ষমা গো!
নয়ন-বাঁশির চাওয়ার সুরে
বনের হরিণ বাঁধবে বৃথা লক্ষ্মী গহনবালা।
কল্যাণী! হায় কেমনে তোমায় দেব
যে-বিষ পান করেছি নীলের নয়ন-গালা।

দুপুর-অভিসার

যাস কোথা সই একলা ও তুই অলস বৈশাখে?
জল নিতে যে যাবি ওলো কলস কই কাঁখে?

সাঁঝ ভেবে তুই ভর-দুপুরেই দু-কূল নাচায়ে
পুকুরপানে ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজায়ে
যাসনে একা হাবা ছুঁড়ি,
অফুট জবা চাঁপা-কুঁড়ি তুই!
দ্যাখ্ রং দেখে তোর লাল গালে যায়
দিগ্‌বধূ ফাগ থাবা থাবা ছুঁড়ি,
পিক-বধূ সব টিটকিরি দেয় বুলবুলি চুমকুড়ি –
ওলো বউল-ব্যাকুল রসাল তরুর সরস ওই শাখে॥
দুপুর বেলায় পুকুর গিয়ে একূল ওকূল গেল দুকূল তোর,
ওই চেয়ে দ্যাখ পিয়াল-বনের দিয়াল ডিঙে এল মুকুল-চোর।
সারং রাগে বাজায় বাঁশি নাম ধরে তোর ওই,
রোদের বুকে লাগল কাঁপন সুর শুনে ওর সই।
পলাশ অশোক শিমূল-ডালে
বুলাস কি লো হিঙুল গালে তোর?
আ – আ মলো যা! তাইতে হা দ্যাখ,
শ্যাম চুমু খায় সব সে কুসুম লালে
পাগলি মেয়ে! রাগলি নাকি? ছি ছি দুপুর-কালে
বল কেমনে দিবি সরস অধর-পরশ সই তাকে?

দূরের বন্ধু

বন্ধু আমার! থেকে থেকে কোন্‌ সুদূরের বিজন পুরে
ডাক দিয়ে যাও ব্যথার সুরে?
আমার অনেক দুখের পথের বাসা বারে বারে ঝড়ে উড়ে,
ঘর-ছাড়া তাই বেড়াই ঘুরে।।
তোমার বাঁশীর উদাস কাঁদন
শিথিল করে সকল বাঁধন
কাজ হ’ল তাই পথিক সাধন,
খুঁজে ফেরা পথ-বঁধরে,
ঘুরে’ ঘুরে’ দূরে দূরে।।

হে মোর প্রিয়! তোমার বুকে একটুকুতেই হিংসা জাগে,
তাই তো পথে হয় না থামা-তোমার ব্যথা বক্ষে লাগে!

বাঁধতে বাসা পথের পাশে
তোমার চোখে কান্না আসে
উত্তরী বায় ভেজা ঘাসে
শ্বাস ওঠে আর নয়ন বুঝে,
বন্ধু, তোমার সুরে সুরে।।

নিরুদ্দেশের যাত্রী

নিরুদ্দেশের পথে যেদিন প্রথম আমার যাত্রা হল শুরু।
নিবিড় সে-কোন্ বেদনাতে ভয়-আতুর এ বুক কাঁপল দুরু-দুরু।
মিটল না ভাই চেনার দেনা, অমনি মু্হুর্মুহু
ঘরছাড়া ডাক করলে শুরু অথির বিদায়-কুহু
উহু উহু উহু!
হাতছানি দেয় রাতের শাঙন,
অমনি বাঁধে ধরল ভাঙন –
ফেলিয়ে বিয়ের হাতের কাঙন –
খুঁজে বেড়াই কোন আঙনে কাঁকন বাজে গো!
বেরিয়ে দেখি ছুটছে কেঁদে বাদলি হাওয়া হু হু!
মাথার ওপর দৌড়ে টাঙন, ঝড়ের মাতন, দেয়ার গুরু গুরু।

পথ হারিয়ে কেঁদে ফিরি, ‘আর বাঁচিনে! কোথায় প্রিয়,
কোথায় নিরুদ্দেশ?’
কেউ আসে না, মুখে শুধু ঝাপটা মারে নিশীথ-মেঘের
আকুল চাঁচর কেশ।

‘তাল-বনা’তে ঝঞ্ঝা তাথই হাততালি দেয় বজ্রে বাজে তূরী,
মেখলা ছিঁড়ি পাগলি মেয়ে বিজলি-বালা নাচায় হিরের চুড়ি
ঘুরি ঘুরি ঘুরি
ও সে সকল আকাশ জুড়ি!

থামল বাদল রাতের কাঁদা,
হাসল, আমার টুটল ধাঁধা,
হঠাৎ ও কার নূপুর শুনি গো?
থামল নূপুর, ভোরের তারা বিদায় নিল ঝুরি।
আমি এখন চলি সাঁঝের বধূ সন্ধ্যাতারার চলার পথে গো!
আজ অস্তপারের শীতের বায়ু কানের কাছে বইছে ঝুরু-ঝুরু।
কলিকাতা
চৈত্র ১৩২৭

নিশীথ-প্রীতম

হে মোর প্রিয়,
হে মোর নিশীথ-রাতের গোপন সাথি!
মোদের দুইজনারেই জনম ভরে কাঁদতে হবে গো –
শুধু এমনি করে সুদূর থেকে, একলা জেগে রাতি।
যখন ভুবন-ছাওয়া আঁচল পেতে নিশীথ যাবে ঘুম,
আকাশ বাতাস থমথমাবে সব হবে নিঝঝুম,
তখন দেব দুঁহু দোঁহার চিঠির নাম-সহিতে চুম!
আর কাঁপবে শুধু গো,
মোদের তরুণ বুকের করুণ কথা আর শিয়রে বাতি।

মোরা কে যে কত ভালোবাসি কোনোদিনই হবে না তা বলা,
কভু সাহস করে চিঠির বুকেও আঁকব না সে কথা;
শুধু কইতে-নারার প্রাণপোড়ানি রইবে দোঁহার ভরে বুকের তলা।
শুধু চোখে চোখে চেয়ে থাকার –
বুকের তলায় জড়িয়ে রাখার
ব্যাকুল কাঁপন নীরব কেঁদে কইবে কি তার ব্যথা!

কভু কী কথা সে কইতে গিয়ে হঠাৎ যাব থেমে,
অভিমানে চারটি চোখেই আসবে বাদল নেমে।
কত চুমুর তৃষায় কাঁপবে অধর, উঠবে কপোল ঘেমে।
হেথা পুরবে নাকো ভালোবাসার আশা অভাগিনি,
তাই দলবে বলে কলজেখানা রইনু পথে পাতি।
কুমিল্লা
অগ্রহায়ণ ১৩২৮

Page 3 of 8
Prev1234...8Next
Previous Post

জিঞ্জির – কাজী নজরুল ইসলাম

Next Post

চিত্তনামা – কাজী নজরুল ইসলাম

Next Post

চিত্তনামা - কাজী নজরুল ইসলাম

চক্রবাক - কাজী নজরুল ইসলাম

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In