Site icon BnBoi.Com

দাউদ হায়দারের কবিতা ও অন্যান্য

যে দেশে সবাই অন্ধ - দাউদ হায়দার

অভিধান

ঘরময় একটি পাতাবাহার।
আজ, জন্মদিন অরুণার
চোখ দুটি যামিনী রায়ের আঁকা,
মুখখানি প্রথম কদমফুল। মন্দাক্রান্ত ছন্দ-মাখা
আষাঢ়স্য প্রথম দিবস। বিরহের গান
আজ তার জন্মদিন। নদীও আবেগে ছন্দময়।
দু’কূল প্লাবিত। সূর্যাস্তেও সূর্যোদয়
তোমাকেই জানি জীবনের চলন্তিকা, অভিধান

 আত্মজীবনী : সুতানটি সমাচার – দাউদ হায়দার

দেখিয়াছ, লোকগুলি ট্রামে-বাসে কী রকম বাদুড়ের ন্যায় ঝুলিতেছে?
-হা বাবা, ইহাই কলিকাতার শহর।
খোকন ভাবিল, বড়ো আশ্চর্য জায়গায় আসিয়াছি।

দুই
পুত্র ও পিতার কথোপকথনে উপন্যাস শুরু হয় এইভাবে। কলকাতার জনারণ্যে হারিয়ে যায় খোকন। খুঁজতেও থাকে নিজেকে। সুখ-দুঃখে সঙ্গী হয় কলকাতা।
মাঝে মাঝে হঠাৎ ক্ষেপে ওঠে। ফেটে পড়ে রাগে-ক্ষোভে। মনুমেন্টের চূঁড়োয় উঠে প্রস্রাবে ভাসিয়ে দিতে চায় রাজভবন, রাইটার্স বিল্ডিং, গোটা শহর। দেখতে চায় কীভাবে কলকাতা ভেসে যায়। ভাসমানদের আশ্রয় কোথায়। ওই আশ্রয়ে কি জনমহল গড়ে ওঠে? জনমহলে কি খোকনের ঠাঁই হবে?
খোকনের কেন ইচ্ছে হয় মনুমেন্টের চূঁড়োয় উঠতে? (তখনো কলকাতায় মনুমেন্টই সবচেয়ে উঁচু।) ফেলে আসা বাংলাদেশ যদি দেখা যায়!! আবাল্য ঢাকার শহর কী করে অচেনা হয়ে যাচ্ছে। অচেনা কলকাতা কীভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে তাকে। লক্ষ্য করে, কলকাতা কাউকে কাছে টানে না। দূরেও ফেলে দেয় না। কাছে-দূরের ভিতরেই তৈরি হয়ে যায় আপন ভুবন, যে ভুবন একেবারেই নিজস্ব।

তিন
এই নিজস্বতার আদলেই দানা বাঁধবে উপন্যাস। হরেক চরিত্রের আনাগোনা। সম্মিলন। টানাপোড়েন রাজনীতি। খোকন নয়, কলকাতাই উপন্যাসের নায়ক।

চার
বছর ত্রিশ আগে, ছক কেটেছিলুম উপন্যাসের। লেখা হয়নি। চেষ্টা করেছি বার কয়েক, পৃষ্ঠা দশ-বারো লিখে ‘ধুত্তোর’ বলে ফেলে দিয়েছি। কী করে লিখতে হয় উপন্যাস, জ্ঞানগম্যি নেই আদৌ।
আমার মতো ভবঘুরে, এলোমেলো, নিশাচর, মদ্যপ উপন্যাস লিখতে পারে? বাক্য ঠিক রেখে, অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে জ্যাক কেরোয়াক কী করে ‘অন দ্য রোড’ লিখেছেন, বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতুম।
–ভাগ্যিস মারা গেছেন। বেঁচে গেছি উপন্যাস লেখার দায় থেকে।
লিখিনি বটে উপন্যাস, কিন্তু উপন্যাসের শুরুটা কেমন হবে, ছকটাই বা কী রকম, লিখেছিলুম পিকোলো (অন্তরা দেব সেন) ও অপুর (প্রতীক কাঞ্জিলাল) ‘দ্য লিটল মাগ্যাজিন’-এ। তো, কাহিনীর সারাংশ অনেকের জানা।

পাঁচ
‘তোকে দিয়ে উপন্যাস-টুপন্যাস লেখা হবে না। বরং তোর কলকাতার বিচিত্র জীবনযাত্রা নিয়ে লিখতে পারিস। কিছুই বাদ দিবি না জীবনীতে। সব- ঘটনা মিলিয়েই জীবন। বাদ দিলে জীবনও কাটছাঁট হয়ে যায়। জীবনীতে কখনো ফিলসফি, আঁতলামো ফলাবি না।’–বললেন গৌরদা।

ছয়
যশোরের লোক বলে, যশুরে টান ছাড়তে পারেননি। ‘নাতি খ্যাতি ব্যালা (বেলা) গ্যালো শুতি পারলিম না’–এই টোনে কথা বলেন না ঠিকই, কিন্তু ‘শুতি কোনো কষ্ট হচ্ছি না তো?’
–জানতে চান গৌরদা।
বয়সের বাছবিচার না করেই, দুদিন পরেই জানিয়ে দিলেন, “একটা দেশের অর্থনীতি জানতি হলি, প্রথমে কীভাবি জানবি? বাজারে যাবি। বাজারে নানা রকম মাছ। ক্রেতা কারা। কোন মাছের কত দাম। কোন দামে কারা কিনছে। শ্রেণীটা দেখবি। পুঁটির ক্রেতা কত। ইলিশ-রুই দরদাম না করে কারা কিনছে। সংখ্যা কত। হিসেবটা কষলেই পেয়ে
যাবি দেশের মানুষের আর্থিক সঙ্গতি।
বেশ্যাপাড়ায় গিয়েও দেশের অর্থনীতির হালচাল বোঝা যায়। সোনাগাছিতে নানা দরের বেশ্যা আছে। কোন দরের বেশ্যার কাছে কতজন যায়। যারা যায়, কী তাদের পোশাক। চেহারাটাও দেখবি। বাজার ও বেশ্যাপাড়া একটি দেশের অর্থনীতির আসল আয়না, বুঝলি?
–জরিপ করার নামে খবরদার ঘনঘন যাবি না। এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে একবারই যথেষ্ট। বেশি গেলে সন্দেহ আছে।”
–গৌরদার এই সাবধানবাণী নিজস্ব নয় নিশ্চয়। এক ছাত্রকে অ্যারিস্ততলও শুনিয়েছেন : ‘বেশ্যার কাছে একবার গেলে অভিজ্ঞতা, একাধিকবার গেলে কুঅভ্যাস।’
কে এই গৌরদা? কী তাঁর পরিচয়?
যুদ্ধের ঘনঘটা চারদিকে। নবেম্বর, ১৯৭১। বাজার করতে গেছি নিউ মার্কেটে। বলাকা সিনেমার সামনে, ফুটপাতে বই সাজিয়ে হকার চিৎকার করছে, ‘কলকাতা এক প্রমোদতরণী হা হা।’ কৌতূহল হয় খুব। পাকিস্তান বেতারে সকাল-সন্ধ্যেয় শাপান্ত করা হচ্ছে ভারতকে। কলকাতাকে।
‘কলকাতা এক প্রমোদতরণী’র লেখক রূপদর্শী। আগে নাম শুনিনি। আরো বই ইতস্তত ছড়ানো। ‘মনের বাঘ’। ‘লোলিটা’। ‘লেডি চ্যাটারলিজ লাভার’। কলকাতা থেকে প্রকাশিত। বাজারের টাকা মেরে দিয়ে চারটি বই কিনলুম। নবোকভের লোলিটা, লরেন্সের লেডি, গৌরকিশোর ঘোষের বাঘ পড়ে যৌন উত্তেজনা হলো, এডাল্ট হলুম। কিন্তু রূপদর্শীর প্রমোদতরণী মেজাজ বিগড়ে দিল। মস্কোপন্থী বিপ্লবী আমরা। ছাত্র ইউনিয়ন করি। প্রমোদতরণী ঘোরতর নকশালবিরোধী। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে ভরা।
মেজাজ ঝামেলা করলেও লেখার এমনই যাদু, মোহিত হয়ে দুইবার পড়ি। এক দিনেই।

সাত
বেলা প্রায় বারোটা। গা পোড়ানো খটখটে রোদ্দুর। ১৯৭৪ মে’র ২২ তারিখ। দমদম এয়ারপোর্ট। ঢাকা থেকে বিবি (বাংলাদেশ বিমানকে তখন বিবি বলতুম।) ছেড়েছে সকাল আটটায়। দমদমে পৌঁছুলুম সকাল আটটায়। সঙ্গে আমার একটি মাত্র ব্যাগ। তাও কাঁধে ঝোলানো। ব্যাগে দুটি শার্ট, দুটি প্যান্ট। একজোড়া স্যান্ডেল। টুপেস্ট। ব্রাশ। তোয়ালে। একটি পায়জামা। দুই কপি ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। পকেটে ভারতীয় ষাট পয়সা।
কোথায় উঠবো কিচ্ছু ঠিক নেই। গন্তব্যও অজানা। ষাট পয়সা দিয়ে কী করবো? জল ভাসে চোখে। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে একদিনও কাঁদিনি। মৃতপ্রায় মাকে ছেড়ে এসেছি, শঙ্কায় অস্থির।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফ্রি স্ট্রিট স্কুলের বাসায়, প্রায় গোটা রাত্রি তাঁর শিয়রে বসে। হাত ধরে ছিলেন আমার। ওই হাত ছাড়িয়ে নিয়ে, তাঁকে কিছুই না বলে, নিরুদ্দেশে যাত্রা।
সকালে বা এক সময় জানতে চাইবেন, কোথায় গেছি। এখনো ফিরছি না কেন। অস্থির হবেন। প্রত্যেকে চুপ। কিংবা আবোলতাবোল বলে বুঝ দিচ্ছেন। চার বছরের হেমা দাদির কোলে বসে জানিয়ে দেবে, ‘খোকন ছেলে নেই, কলকাতায় চলে গেছে।’
মা নিশ্চয় বিশ্বাস না করে ঘরময় চেয়ে থাকবেন, চোখ দিয়ে ইতিউতি খুঁজবেন।
আমি যে জেলে গিয়েছিলুম, মা জানতেন না। বলা হয় তাঁকে- হয় পাবনায়, না হয় চাটগাঁয় গেছি।
জানতেন তিনি, দুরন্ত খোকন কখন কোথায় উধাও হয়ে যায় ঠিক নেই। এক সময় ঠিকই ফিরে আসে, মায়ের কোলে মুখ গুঁজে পলায়ন-অপরাধে শাস্তির অপেক্ষায় থাকে। এক সময় বুকে জড়িয়ে ধরে বলবেন, ‘খবরদার আর যাবু না। গেলি শিকলে ব্যাদে (বেঁধে) রাখপোনে।’ আমার অল্পশিক্ষিতা মা জানেন না, চলে গেলে শিকলে বাঁধা যায় না।
একটার সময় দমদম এয়ারপোর্টে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টার, অফিস বন্ধ হয়ে যাবে।
বসে আছি অফিসে। ম্যানেজার বিরক্ত। কিছু বলছেন না মুখে। একবার চা খাইয়েছেন, দ্বিতীয়বার সাধছেন না। অফিস বন্ধ করলেই চলে যেতে বাধ্য আমি। খুবই ভদ্রতা দেখিয়েছেন, আর কত।
নাম জেনে ঠাঁই দিয়েছেন, এই যথেষ্ট।
নাম শুনে ভয় পেয়েছিলেন প্রথমে। ‘আপনি দাউদ হায়দার? জেল থেকে ছাড়া পেয়েই কলকাতায়? কর্মচারীদের কাছে অন্য নাম বলবেন।’
বিপদের কথা বলি তাঁকে। ‘না, আপনাকে রাখতে পারব না বাসায়, জানাজানি হলে বিপদ হবে। তাছাড়া আমার বউ অসুস্থ (পরে জানি অন্তঃসত্ত্বা)। শাশুড়ি আসবেন কাল।’
ম্যানেজার অতিশয় ডিপ্লোম্যাটিক। উপরন্তু দয়ালু। বললেন, ‘আমার ঘর থেকে যত খুশি ফোন করতে পারেন, তবে কলকাতার মধ্যে। বন্ধুদের ফোন করে বলুন আপনার সমস্যা।’
কলকাতায় আমার বন্ধু! –ও হা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে গোটা তিনেক চিঠি লিখেছিলুম, উত্তর দিয়েছেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘সাপ্তাহিক কবিতা’র জন্যে চিঠি লিখেছেন। পাঠিয়েছিলুম। ‘পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় তরুণ কবিদের মধ্যে আমার কবিতাই বেশি। কেন বেশি, সম্পাদক শক্তি চট্টোপাধ্যায় কৈফিয়ৎও দিয়েছেন।
জানতুম, সুনীল-শক্তি আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেন। ফোন করলুম। অপারেটর বললেন, ‘এখন নেই। বিকেলে চেষ্টা করবেন।’ মনে পড়ল, সাগরময় ঘোষের কথা। ‘দেশ’-এ গোটা কয়েক কবিতা লিখেছি। না, তিনিও নেই।
টেলিফোন বুকেই আনন্দবাজারের লিস্টে নাম দেখি সন্তোষ কুমার ঘোষ। ‘শ্রীচরণেষু মাকে’ পড়েছি। না, তিনিও অফিসে আসেননি।

সূত্র: সাপ্তাহিক ২০০০, ঈদ সংখ্যা ২০০৭ বর্ষ ১০

 কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়

জন্ম আমার কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়
ভেসে এসেছি তোমাদের এই তিলোত্তমা শহরে
কল্পিত ঈশ্বর আমার দোসর; পায়ে তার ঘুঙুর; হৃদয়ে মহৎ পূজো
চুনকামে মুখবয়ব চিত্রিত; আমি তার সঙ্গি,
যেতে চাই মহীরুহ ছায়াতলে, সহি নদীজলে; ভোরের পানে।
ঈশ্বর একান্ত সঙ্গি; জেনেছি ধূপ নেবানের ঘরে। তার পায়ের ঘুঙুর সে
আমাকে পরিয়ে পালালো, আমি হয়ে উঠলাম আমি।
ভেতরেও সে বাহিরেও সে; আমার আমি হয়ে বলেছি আমি,
মরণের নক্ষত্র দোদুল্যমান কালো ঘণ্টার রাজধানীতে বর্শার মতো দিন।
রাত্রির অলীক নটী, অন্ধ দগ্ধে নাচায় ভাই; আমার বিশ্বাস ছিল
প্রতিধ্বনি নেই, তিমিরে আমার যাত্রা; দেখা হয় আলখেল্লায়
সজ্জিত মিথ্যুক বুদ্ধ; বসে আছে বোধিদ্রুমের ছায়াতলে;
যিশু আরেক ভণ্ড; মোহাম্মদ তুখোড় বদমাস; চোখে মুখে রাজনীতি,
আমি প্রত্যেকের কাছে পাঠ নিতে চাইলুম; তোমাদের চৈতন্যে যে লীলাখেলা
তার কিছু চাই এ বেলা। দেখলো ঈশ্বর দেখলো আদম।
আদমের সন্তান আমি; আমার পাশে আমি?
আমি আমার জন্ম জানি না। কীভাবে জন্ম? আঁতুড় ঘরে কথিত
জননী ছাড়া আরে কে ছিল? আমায় বলেনি কেউ।
আমার মা শিখালো এই তোর পিতা, আমি তোর মাতা।
আমি তাই শিখেছি। যদি বলতো, মা তোর দাসী, পিতা তোর দাস;
আমি তাই মেনে নিতুম। কিংবা অন্য কিছু বললেও অস্বীকারের
উপায় ছিল না।
আমি আজ মধ্য যৌবনে পিতা মাতার ফারাক বুঝেছি। বুঝেছি সবই মিথ্যা
বুঝেছি কেউ কারও নয়; কেউ নয় বলেই তো বলি
একদিন সবকিছুই যাবে চলে।
Every things passes, one day every thing will go yet
We shall not recognise each other, and indirect love
remain hesitant as the desires of life time shall roam
the winds and blue sky.
এই তো সনাতন নিয়ম; ব্যতিক্রম নেই পরিবর্তিত অজাত শত্রু আমার।
প্রেম সে কি? কোথায় থাকে? কার জরায়ু থেকে নেমে আসে?
কেউ নিঃসঙ্কোচে বলতে পারো?
বারবার আমি বেয়োগের চৈতন্যে বাহু রাখি। স্মৃতি আমার অকাল পাথর।
জীবে প্রেম? মানুষে মানুষে ভালবাসা? প্রেম অশ্রু আমার
ভোঁতা। এ্যরিষ্টোটল, প্লেটো, আমার চৈতন্যে; তাদের চৈতন্যই
আমার বিশ্বাস।
নীটসের কথাই ঠিক; ঈশ্বর মরেছে আমার শৈশবে,
অতএব সে আমায় ঘুঙুর পরিয়ে পালালে সে আজ নেই,
তার জারজ সন্তানেরা অলীকের চৌমাথায় বসে পাণ্ডুর প্রেমের কথা বলে।
লোক জমে, বাহবা দেয়; ঔষধ কেনে; ঘরে ফেরে; দেখি সব ফিকে।
আমি জনমে জনমে শূন্য গর্ভে ফিরে আসি।
নূপুর মিশ্রিত অধীর সঙ্গীতের বিরহের কাল বৈশাখীর শ্বাশতের করি না বন্দনা।
আমাতে উল্লাস আছে লগ্ন নেই; সার্থক বুদ্ধিতে বিষ্ণু দে আজ কবি
আমার প্রিয়; অপ্রিয় সুধীর দত্তও নয় বটে,
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এড়াতে পারেননি এ বড় দুঃখের কথা।
যুগল স্তনে যৌবন দেখা দিলে তুমি বল প্রেম স্মৃতি।
একি তোমার নিজস্ব অভিলাষ? মাঝে মাঝে রাত্রি কালে হেটে যাই;
কোথা যাই সঠিক জানি না।
পথ জানে না আমার গন্তব্য কোথায়; আমি তার কোন কেন্দ্রে গিয়ে
আশ্রয় নেবো। এমন মমতা দেখে খুঁজে ফেরে চরণ চিহ্ন;
চরণ চিহ্ন সহসা হারিয়ে যায়।
শোণিতে খেলা নেই নিস্ক্রিয় নিশ্চল।
আমি তোমায় খুঁজেছি; সীমান্তে আত্মদান করেছ কিনা জানি না,
মহাকাল আমার পদতলে। নিমীলিত চক্ষে আকাঙ্ক্ষার স্পষ্টতা।
পুরানে আমার বিস্ময়; কি করে অসাধ্য সাধন করা যেত?
আমার বন্ধুদের চেয়েও বুদ্ধিদীপ্ত? আপন বিশ্বাসে আমার কাটলো
মিথ্যা তাই বলি, প্রেম মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা।
সব কবিই একই ফুটবল নিয়ে ঘুরছেন গোল স্টেডিয়ামে, রেফারী নেই
হ্যান্ডবল, ফাউল ধরছেন কেউ? আমরা দর্শক কিছুই বুঝি না খেলা দেখি
আশা মিটে গেলেই ঘরে ফিরি। গোল করার কায়দাও মনে রাখি না।
কিন্তু সবাই তো চৌকস খেলোয়াড় বলটা কাটতে পারেন ভালো;
তবে কেন ঘুরছেন?
সহীসের ঘোড়ার সাথে জীবনানন্দের দেখা হোলো একদিন
মধ্যরাতে আমার সাথে পাল্লা দিয়ে হেরে গেলো-
মনে তার প্রেম ছিল?
মূল্যহীন মূল্যবোধের কতটুকু বিজয়?
আমি দৃষ্টির আড়ালে উচ্চারিয়ে বলি বিশাল জনসভায়-
তিমিরে আমাদের যাত্রা; তুমি জানো না জানো কিছুই এসে যায় না
এই উড়ন চণ্ডীর, উড়নচণ্ডীরাই মহাপাগল, পাগলের কথার
দাম বিশ্ব ব্যাংকও জানে না।
সাবিত্রী তুমি কি বহ্নির কাছে নতজানু হবে? অমরত্ব হারাবে,
এসে আমার হাতে হাত রাখো; অমৃতের দিকে চোখ ফিরিও না
তোমায় সামনে বসিয়ে মন্থর করে এঁকে যাবো
সমস্ত শরীর চুল চিবুক।
এখন আকাবোকা সব শেষ
সামনে যে অন্ধকার আগামী উৎসবে আরো দ্বিগুণ হবে।
প্রতীক্ষায় লাভ নেই, আমার বক্ষে মাথা রাখো শোন আগমনী বার্তা
কালো মৃত্যুর দিন সমাগত,
তুমি শান্তির প্রেমের কথা বলো। বলেছে আদমের সন্তানেরা শান্তি কোনদিন
আসবে না, কৌতুক নয়। অন্ধ সংসারে সেই করে প্রেম।
পাতালে গিয়েছ কোন দিন? কিংবা আকাশ নীলিমায়?
দেখেছ এ্যাপোলো? মন্বন্তরে সেকি যায়নি ভেসে? স্বরচিত গানে
আনন্দ পাও? ইন্দ্রপাল লক্ষ কোরেছো কোনদিন?
বিজ্ঞাপন বড় সুন্দর একদিন কৃষ্টি হবে পায়রা আসবে কার ঘরে? কোন ঘরে
তোমারই স্মরণে?
তোমার মুখে স্তনে কিসের দাগ? ঘোমটায় কোথায় চলেছো তুমি?
পেছনে আমার ভাই; অন্ধ ছন্দে সেই কৃষ্ণ; রাধা নেই,
আমার পদপ্রান্তে নিঃসঙ্কোচে লুটাক আদমের সন্তান; ঈভের প্রেম
ফাঁদের অলীক প্রেমে আমি আলো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়
তোমাদের শ্বাশতীরে খুঁজে পাইনি। কেউ পায় না চলে গেছে,
সব চলে গেছে, চলে যায়; বুঝি তাই বলে যাই
Even when our eyes meet shall not recognise each other
Even we walk past each other we shall not see. One day
Our bodies shall be together. One day we shall be
tern from the struggles of life.
We shall have the silent procession and move
towards a redbirth, and I shall call you again and
again. And when you do not answer I shall
go to that phanton land
when we shall stand face
in perfect union. One day
you and I shall go to that landscape. And
yet no one shall recognise other.

কেন বলেছিলাম

পরমাণু-দেশে নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে
কথা বলতে চাই। বেয়োনেট উঁচিয়ে
আমার অস্থি-মজ্জা পাহারা দেবে,
এটাই তবে সাংবিধানিক?

কীভাবে গর্দান নেবে,
ভাবছো? তুমি কি সেই অস্ত্রধারী, আধিকারিক?

আজ রাতে পাখিদের উৎসব চলছিল
আমন্ত্রিত আমাকে একটি খড়কুটো দিল,
তাই নিয়ে উৎসাহে মেতে উঠি

−লক্ষ করি, চারপাশে বিরুদ্ধ ভ্রুকুটি

নিরস্ত্রীকরণে কেন আমি পাখির সঙ্গ নিয়েছিলাম
কেন বলেছিলাম, চাই বনজঙ্গলঘেরা একটি সবুজ গ্রাম?

 তোমার কথা

মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি

আকাশে জমেছে মেঘ, বাতাসে বৃষ্টির গান
রাত্তির বড় দীর্ঘ; কিছুতেই
ঘুম আর আসছে না ।একবার এপাশ, একবার ওপাশ, আর
বিশ্বচরাচর জুড়ে… নিথির স্তব্ধতা ।

মাঝে মাঝে মনে হয়
অসীম শূন্যের ভেতর উড়ে যাই ।
মেঘের মতন ভেসে ভেসে, একবার
বাংলাদেশে ঘুরে আসি ।

মনে হয়,মনুমেন্টের চূড়ায় উঠে
চিৎকার ক’রে
আকাশ ফাটিয়ে বলি;
দ্যাখো, সীমান্তে ওইপাশে আমার ঘর
এইখানে আমি একা, ভীনদেশী

ধৃতরাষ্ট্র-বিলাপ

জন্মান্ধ বললে ভুল হবে৷ ইদানীং আমার চোখ
ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে
বাতাস কি মুখরিত, আর্তনাদে?
সঞ্জয়, যুদ্ধের গতি কোন দিকে?
পাণ্ডবরা কী রচনা করেছে বূ্হ্য? অর্জুণ কী এখনো
কুরুক্ষেত্রে?
কোন্ মন্ত্রবলে প্রতিপক্ষ দুর্জয়, সঞ্জয়?
বলো, তবে কী শূন্য হাতে কেবলি বিলাপ, আমার? গর্ভগৃহে
পালিয়ে জীবন? না-কি
অন্ধতাই জীবন, করুণাঘন মৃত্যু?

 প্রেম

প্রেম দ্যাখো বয়স মানেনা কোনদিন
ছোটবড় তালার মতো সব বয়সের কপাটে ঝুলে পড়ে হঠাৎ
প্রেম, সবুজ নিসর্গ থেকে পলাতক কয়েদীর মতোন নিঃশব্দে বেরিয়ে
আসে দ্রুত
ঠাঁই নেয় বিভিন্ন লোকালয়ে; খেলা করে সকাল বিকাল
তোলপাড়ে ভেঙে যায় নীলিমার আজীবন আশীর্বাদ-গড়ে তোলে
সুখ-দুঃখ
পড়ে থাকে বয়স্কদের দারুণ চোখ
প্রেম, সেতো বয়স মানে নি কোনদিন- বুঝি তাই
তীক্ষ্ণ চকচকে সোনার ছুরি এনে বসিয়ে দেয় সকল প্রহরে
মেতে ওঠে ভয়াবহ বন্যার জলের মতো বাদশাহী হৃদয়ে-এবং
ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পারিবারিক স্নেহ-মমতা
অথচ শুধু বেঁচে থাকে পরস্পর হৃদয়ের সুন্দর দৃশ্যাবলী !

।২।
প্রেম, একটা ক্ষুধার্ত হিংস্র বাঘ; নিমেষে গ্রাস করে দীর্ঘকায় শরীর
প্রচণ্ড থাবায় কখনো আবার ছিড়ে নেয় লালিত মাংস-ছিটিয়ে দেয়
বিষাক্ত লবণ
জ্বলতে থাকে আজীবন !
প্রেম; য্যানো গোলাপ-নীলিমা-নিসর্গ-নক্ষত্রে মোড়া আদুরে পুতুল-
নির্জনে থাকেনা পড়ে; অথচ একবার উপযুক্ত হৃদয়ে ঠাঁই পেলে কেউই
রুখতে পারেনা সহজে এবং
সৃষ্টি করে বিশাল বাগান
যা কখনো ফেলে রেখে কোথাও যাওয়া যায় না; শুধু ঈশ্বরের মতো
ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে যায়মুহূর্তে !

বলেছিলাম

সমস্ত আবর্ত থেকে ফিরে আসো, বলেছি কি ?
সে কথা বলিনি৷

বলেছিলাম, আমাদের কালপর্বে যে-ভাঙন
উৎস কোথায় এই চণ্ড-সামাজিকতার ?

আজকে যে-স্তরগুলি তৈরি হয়ে আছে
আমরাই কি নির্মাণ করিনি ঘূর্ণিপাক ?

শববাহকেরা এখন বৃত্তের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে
শ্মশানযাত্রীরা নদীর ঠিকানা ভুলে
দণ্ডকারণ্যের দিকে ধাবমান

আর দেখো,
ভূমিকে নির্ভূম করে ভূস্বামীরা আগুন দিচ্ছে চুল্লীতে

সব প্রতিরোধ ভেঙে গেলে
কোনো সূচনা, প্রবাহ থাকবে না?

বলেছিলাম, বজ্র-ভরা দিনগুলো আবার ফিরে আসুক, স্রোতের
বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই।

বৃষ্টির সন্ধ্যায়

ভীষণ ক্ষুধার্ত, ভীষণ তৃষিত।
দিন যায় অনাহারে। অক্ষর বর্জিত
জ্বলন্ত সময়। ব্রাত্য মানুষের গল্প
কে লেখে?_ যেটুকু লেখা হয় অতীব সামান্য, অল্প

নিকট স্মৃতির মধ্যে জেগে আছে একটি ঘটনা। বাকি সব গৌণ।
মাতৃভাষায় যে শব্দ কাম, তথা যৌন
উথালপাতাল হলো বৃষ্টির সন্ধ্যায়।

মেঘের গর্জন। জলের নষ্টামি। বারান্দায়।

নস্টালজিয়ার নিম্নচাপ-উচ্চচাপ আছে। ভাবানুষঙ্গে হঠাৎ
জড়ো হলে বেড়ে যায় প্রবণতাময় সন্ধ্যা, রাত

Exit mobile version