***
পুরুষের আধিপত্য মানা তো দূরের কথা, বিনা-পুরুষেই নারী যেভাবে তার যৌনাচারের অনুশীলন করতে পারে, তা হচ্ছে হস্তমৈথুন (masturbation) ও সমরতি-কামনা (lesbianism) l এ দুটোই হচ্ছে পুরুষবিমুখী অভ্যাস। হস্তমৈথুন হচ্ছে যোনিগহবরকে অঙ্গুলি-সঞ্চালন দ্বারা উত্তেজিত করে যৌনসুখ উৎপাদন করা। আর সমরতি-কামনা হচ্ছে এক নারীর অপর নারীর সহিত প্রণয়ীর সম্পর্ক স্থাপন করে কামাসক্ত হওয়া। হস্তমৈথুন যে নারীসমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে, তা আমরা হ্যাভলক এলিস, ফ্রয়েড, ক্যাথারিন ডেভিস, এডওয়ার্ড কাপেন্টার স্টেকেল ও মল (Moll)-এর গ্রন্থসমূহ থেকে জানতে পারি। বর্তমান শতাব্দীর শেষার্ধে এ-সম্বন্ধে বিশেষ সমীক্ষা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কিনসে (Alfred Kinsey)। এই সমীক্ষা মেয়েদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে করা হয়েছে। বিভিন্ন বয়স-পর্যায়ে শতকরা কতজন মেয়ে ও পুরুষ হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়, তা কিনসের রিপোটের ভিত্তিতে দেওয়া হল :
(১) বিশ বছর বয়সের মধ্যে—
পুরুষ ৯০ শতাংশ।
মেয়ে ৩০ শতাংশ।
(২) চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যে—
পুরুষ ৯৫ শতাংশ।
মেয়ে ৮০ শতাংশ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ২০—৪০ বছর বয়সের মধ্যেই মেয়েদের মধ্যে হস্তমৈথুন প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। কিনসের রিপোর্ট থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে, কুমারী মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা খুবই ব্যাপকভাবে প্রচলিত; তবে বিবাহিত মেয়েরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়। কিনসের রিপোর্টের এক অংশে পড়ি এবং সেটাই বোধহয় বিবাহিত মেয়েদের হস্তমৈথুনে লিপ্ত হবার কারণ। কিনসে বলেছেন, ‘For perhaps three-quarters of all males, orgasm is reached within three minutes after the initiation of the sexual relation…Considering many upper level females who are adversely conditioned to sexual situations that they may require ten to fifteen minutes of the most careful stimulation to bring them to climax, and considering the fair number of females who never come to climax in their whole lives, it is, of course, demanding that the male be quite abnormal in his ability to prolong sexual activity without ejaculation if he is required to match the female partner.”
এ সম্পর্কে D. H. Lawrence-এর উক্তি–‘Woman should not experience the orgasm’ একটা অবাস্তব উক্তি।
একজন অস্তিবাদী (existentialist) লেখিকা যিনি মেয়েদের যৌনজীবন সম্বন্ধে অনুশীলন করেছেন, তিনি হচ্ছেন সিমোন দ্য বভোয়ার। তিনিও বলেছেন, ‘It is certainly true that woman’s sex pleasure is quite different from man’s.’ এজন্য গণিকারাও হস্তমৈথুনে প্রবৃত্ত হয়।
সমরতি-কামনায় (lesbianism) পুরুষকে পরিহার করে দুই নারী পরস্পর প্রেমাবদ্ধ হয়ে হস্তমৈথুন বা অন্ত কোনো উপায়ে নিজেদের কামাচার থেকে যৌনসুখ উপলব্ধি করে। সিমোন দ্য বভোয়ার বলেছেন, ‘The lesbian in fact, is distinguished by her refusal of the male and her liking for feminine flesh; but every adolescent female fears penetration and masculine domination, and she feels a certain repulsion for the male body; on the other hand, the female body is for her, the male, an object of desire.”
আবার এ-সম্বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Harold Roses বলেছেন, “As sexual modes have changed, increasing number of lesbian women have proclaimed the right to live their homosexual lives openly.”
কিন্তু এরূপ মনোবৃত্তি একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। পুরুষের সংলগ্ন হয়ে থাকাই মেয়েদের স্বাভাবিক ধর্ম। এর জন্য তাদের যে মাত্র পুরুষের আধিপত্য স্বীকার করতে হয়, তা নয়। অনেকসময় তারা পুরুষের হাতে দৈহিক পীড়নের জন্যও নিজেদের সমর্পণ করে। দৈহিক পীড়ন (masochism) থেকেই তাদের যৌনসুখ হয়। এ-সম্বন্ধে Havelock Ellis তাঁর ‘Psychology of Sex’ গ্রন্থে বলেছেন, “That the infliction of pain is a sign of love is widespread idea both in ancient and modern times. Lucian makes a woman say : He who has not rained blows on his mistress and torn her hair and her garments is not yet in love.”
Cervantes-ও তাঁর এক নভেলে এক নায়িকার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, ‘He does not know how to make me suffer a little. One cannot love a man who does not make one suffer a little.’
আবার Congreve-এর ‘Way of Life’-ে Millament বলেছেন : ‘One’s cruelty is one’s power.’ রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’-এও এলা অতীনের পা জড়িয়ে ধরে বলছে, মারো আমাকে অন্তু নিজের হাতে। তার চেয়ে সৌভাগ্য আমার আর কিছু হতে পারে না।’ বস্তুত মেয়েরা স্বেচ্ছাতেই পুরুষের আধিপত্য মেনে নেয়, এবং তার জন্য মারধোর খাওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকে। তবে পুরুষের দিক থেকে নিজের আধিপত্য তুলে ধরবার যে প্রয়াস নেই, তা বলছি না। বস্তুত অনেক স্থলেই মেয়ে ও পুরুষ পরস্পরের আধিপত্য তুলে ধরবার চেষ্টা করে। সেক্ষেত্রে প্রকাশ পায় দ্বন্দ্ব, সঙ্ঘর্ষ ও মারধোর। এই তে আমার বাড়ির পাশের ফ্ল্যাট থেকেই শুনতে পাই। স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই শিক্ষিত ও দুজনেই স্বাবলম্বী। স্বামী অফিস থেকে আগে ফিরে এসেছে। স্ত্রী শেষে ফিরে স্বামীকে তিরস্কার করে বলে—‘অফিস থেকে আগে ফিরেছে, চায়ের জলটা তো স্টোভে চাপিয়ে দিতে হয়, সেটাও পার না?’ এই নিয়ে দুজনে বচসা, তারপর ধস্তাধস্তি। স্ত্রী পাড়ার লোকের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে, “আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান।’ তারপর সবই নীরব। এতে তাদের দাম্পত্যজীবনের সুখ ব্যাহত হয় না; আমার এক বন্ধুর মা বলতেন : বিবাহের পর প্রথম বৎসর স্ত্রী তার স্বামীর কথা শোনে, দ্বিতীয় বৎসরে স্বামী তার স্ত্রীর কথা শোনে, আর তৃতীয় বৎসরে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কথা পাড়ার লোক শোনে।