আরও অনেক পূজা, যথা নাগপূজা, অশ্বত্থবৃক্ষ পূজা, হিন্দু দশাবতার প্রভৃতির কল্পনা, আমরা প্রাগার্যদের কাছ থেকে পেয়েছি। এছাড়া, আমরা আরও পেয়েছি শিল্প ও স্থাপত্য, লিপিপদ্ধতি, গোযানের ব্যবহার ইত্যাদি। ( এ-সম্বন্ধে বিশদ বিবরণের জন্য আমার ‘প্রি-আরিয়ান এলিমেণ্টস্ ইন ইণ্ডিয়ান কালচার’, ১৯৩১, দ্রষ্টব্য। )
বাঙলার মধ্যযুগের লোকায়ত দেবদেবীসমূহ যে নবোপলীয় যুগের, তা মঙ্গলকাব্যসমূহের অভ্যন্তরীণ প্রমাণ ( লহনা-খুল্লনা ও কালকেতুর কাহিনী তুলনা করুন ) থেকেই বুঝতে পারা যায়। একটা উদাহরণ দিলেই এটা স্পষ্ট হবে। মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলে ফুল্লরার বারমাস্যায় বর্ণিত হয়েছে : ‘কাতিক মাসেতে হৈল হিমের জনম। জগজ্জনে কৈল শীত নিবারণ বসন নিযুক্ত করিল বিধি সভার কাপড় অভাগী ফুল্লরা পরে হরিণের ছড়। আমি বহুবার বহু জায়গায় বলেছি যে আমাদের দেশের প্রাচীন সাহিত্যসমূহের রচনাকাল এক, আর তার কাহিনীকাল আর এক। উপরের উদ্ধৃতিতে ফুল্লরার ‘হরিণের ছড় পরাটা নবোপলীয় যুগের বা প্রাচীন অস্ট্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যই চণ্ডী-উপাসনার প্রকৃতকাল ইঙ্গিত করছে।
প্রাগৈতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে যে আলোচনায় আমরা প্রবৃত্ত হয়েছিলাম, তা এখানেই শেষ করলাম। এই আলোচনার ফলে, পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের লৌকিক জীবনচর্যার (অন্তত্র এটাকেই আমি কালচার’ বা ধর্ম বলেছি) বনিয়াদ গঠনে প্রাচীন মানবের যথেষ্ট অবদান আছে। সেটাই এই আলোচনার যুক্তি।